শীত উপেক্ষা করে চলে তাদের জীবনযুদ্ধ
পৌষের শুরু থেকেই সারা দেশ শীতে কাঁপছে। মিলছে না সূর্যের দেখা। শীতের তীব্রতার সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। দেশের অন্যান্য জনপদের মতো নিম্ন তাপমাত্রা আর হাড় কাঁপানো শীতে নাকাল সাভারের জনজীবন।
শিল্পপ্রধান অঞ্চল সাভার। এখানকার বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে লাখো মানুষ। সকাল ৮ টা থেকে শুরু হয় তাদের জীবনযুদ্ধ। ১ ঘণ্টা মিলে দুপুরের খাবারের বিরতি। কাজ থেকে ফেরা হবে কখন তাও অনিশ্চিত। সারাদিনের জন্য প্রস্তুতি নিতে এই তীব্র শীতে তাদের বিছানা ছাড়তে হয় ভোর ৫টায়।
রান্না শেষে সকালের খাবার খেয়ে টিফিন বাটিতে খাবার নিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সকাল ৭টার দিকে কর্মস্থলে রওনা হয় কারখানার শ্রমিকরা।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে পথে হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় গার্মেন্টস কন্যা রাবেয়ার সঙ্গে। তিনি দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন অফিসে। তিনি বলেন, ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে থালা-বাসন পরিষ্কার করতে হয়। পানি তো বরফের মত ঠাণ্ডা হয়ে থাকে। ওই পানি দিয়েই রান্নাসহ বাসার সকল কাজ করে জীবিকার জন্য যেতে হয় কারখানায়।
গার্মেন্টসকর্মী রোমানা বলেন, আমার দুই মেয়ে পড়াশোনা করে। তারা সকালে স্কুলে যায়। তাদের জন্য রান্না করতে হয়, তাছাড়া সারাদিনের রান্না করার জন্য ঘুম থেকে উঠতে অনেক ভোরে। প্রথমে শীতে হাড় কাঁপলেও কিছুক্ষণ কাজ করলে আর শীত অনুভব হয় না। বাসার কাজ শেষে শীতের মধ্যেই সকাল ৮টার আগেই আবার পৌঁছাতে হয় কারখানায়।
এ ছাড়া তীব্র শীতে হাত-পা মোজায় ঢেকে ও নাক কান বেঁধে ভোরেই রিকশা নিয়ে বের হয় এখানকার রিকশা চালকরা। এই পোশাক শ্রমিকদের টাকার বিনিময়ে কারখানায় পৌঁছে দেন তারা। রিকশাচালক সাইদ বলেন, এই পোশাক শ্রমিকের টাকায় পুরো সাভার চলে। আমাদের মত রিকশা চালক, দোকানদার ও বাড়িওয়ালা সবাই থাকে এই শ্রমিকের বেতনের অপেক্ষায়। তীব্র শীতেও তাদের দমাতে পারে না। কাজ করে চলে আপন মনে। আর তাদের ভালবেসে আমিও শীত উপেক্ষা করে ভোরেই বের হই রিকশা নিয়ে।
এ ব্যাপারে শ্রমিক নেতা সারোয়ার বলেন, শ্রমিকরা গরিব। শীত-গরম যাই হোক, জীবিকার জন্য সবকিছু তুচ্ছ করেই কাজ করতে হয় তাদের। অনেকটা বাধ্য হয়েই শীতের আলস্য কবর দিয়ে নিজের স্বার্থে কাজ করতে হয়।