সবজি চাষেই বদলে গেলো গ্রামের নাম
সাভারের তেতুলঝোড়ার দক্ষিণ মেইটকা ও ভাকুর্তা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম এখন ‘চায়না গ্রাম’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। জীবিকার তাগিদে ও আর্থিক স্বচ্ছলতার উপায় খুঁজতে গিয়ে এই গ্রামের মানুষ শুরু করে সবজি চাষ। আর এই সবজি চাষে এখানকার কৃষকদের ভাগ্য বদলের সঙ্গে বদলে গেছে গ্রামের নামও। এই গ্রামগুলোর নাম এখন ‘চায়না গ্রাম’। দিন দিন চাহিদা বাড়তে থাকায় এইসব গ্রাম ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রাম বা জেলায় জমি ভাড়া নিয়েও অনেকে চাষ করছেন এই সবজি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, চট্টগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে বাজার সৃষ্টি হওয়ায় এই সবজি চাষে আগ্রহ পাচ্ছেন কৃষকরা। আর তাই বিষমুক্ত সবজি সংগ্রহ করে তা ভোক্তার কাছে সহজেই সতেজভাবে পৌঁছে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দেশে চায়নিজ খাবারের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়তে থাকে এসব সবজির। তাই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ও বাজারে চাহিদা অনুযায়ী কৃষকরা নিজে করছেন এই সবজি চাষ ও অন্যকে দিয়ে যাচ্ছেন উৎসাহ।
বুধবার (১ জানুয়ারি) সাভারের তেতুলঝোড়া ও ভাকুর্তা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে চায়না সবজি নামে খ্যাত ক্যাপসিক্যাম, চায়নাপাতা, লিকপাতা, চাংচিং ওনিয়ন, পিঙ্ক বাঁধাকপি, পার্সলি, বেবিকর্ন, সুইটকর্ন, বিট রুট, আইসবার্গ লেটুস, চেরি টমেটো, ব্রকোলি, লেমন গ্রাস, থাই জিনজারসহ প্রায় ২০ থেকে ২২ জাতের বিদেশি সবজি। বিদেশি সবজির পাশাপাশি এখানে বিভিন্ন রকম দেশি সবজিও চাষ করছেন কৃষকরা। সেই সঙ্গে অনেক দিনমজুর শ্রমিকের কর্মসংস্থানও হয়েছে এইসব গ্রামে। চায়না সবজি যেন এ গ্রামের আশীর্বাদ।
সবজি ক্ষেতে কাজ করতে আসা দিনমজুর নুরু মিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আগে একদিন কাজ পেতাম তো আরেকদিন কাজ পেতাম না। কোনমতে টানাটানি করে টানতে হতো সংসার। এই সবজি চাষ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই কাজ পাই, এখন আর সংসারে অভাবও নেই। এখন আমাদের জীবনের মানও ভালো হয়েছে।
অপর শ্রমিক মাহফুজ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এখানে যারা সবজি চাষ করে তারা অনেক ভালো। তাদের কাজ করে আমি আজ অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল। আমি আমার সন্তান নিয়ে অনেক ভালো আছি। এই কাজ করেই আমার সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েও সুন্দরভাবে সংসার চালাতে পারছি।
কৃষক মো. ফিরোজ মিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আগে শীতের সবজি যা ছিলো তার মধ্যে সব ধরনের সবজিই চাষ করা হতো। তবে এখন আমাদের এলাকা চাইনিজ সবজির ওপর নির্ভরশীল। এখানে অনেক প্রকার চাইনিজ সবজি চাষ করা হয়। ঢাকার চাইনিজ রেস্তোরাগুলো আমাদের উৎপাদিত সবজি দিয়েই চলে। আমাদের এখানকার উৎপাদিত সব সবজিই ওই চাইনিজ রেস্তোরাগুলোই কিনে নেয়।
চায়না সবজি চাষি রাফিন মাহমুদ রানা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমি দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম। দেশে এসে দেখি গ্রামে এই সবজি চাষ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। পরে বিদেশে যাওয়া বাদ দিয়ে সবজি চাষ শুরু করি। বর্তমানে প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করছি; তার মধ্যে ১৫ বিঘা বিভিন্ন চায়না সবজি। তবে আমাদের কেউ কোন সহযোগিতা করে না। আমরা যদি কৃষি ঋণ পেতাম তাহলে আরও বেশি জমিতে চাষ করতাম।
সবজি চাষি আনোয়ার ভাণ্ডারি বলেন, আমরা এই সব সবজির কোনো রকম সেবাই কৃষি অ্যাপ থেকে পাই না। কৃষি অ্যাপ থেকে সুবিধা পেলে আরও ভাল ফলন হবে।
তেতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকরুল আলম সমর বলেন, আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি বিনামূল্যে তাদের সার ও বীজ প্রদান করেছি। তা ছাড়া এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কৃষকরা খুব স্বল্প সময়ে ভালো দামে ভোক্তার নিকট পৌঁছাতে পারছেন।
সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, সাভারে প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে এই উচ্চ মূল্যসম্পন্ন সবজি চাষ হচ্ছে। ধীরে ধীরে এর প্রসার বাড়ছে। আমরা নিয়মিত তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। নতুন এই সবজি কিছু জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছেন কৃষকরা। যেহেতু এই সবজি বেশিদিন ধরে চাষ শুরু হয়নি, তাই কৃষি অ্যাপের সুবিধা পাচ্ছেন না কৃষকরা। খুব দ্রুত এসব সবজি কৃষি অ্যাপের আওতায় আনা হবে।