ফুলে ফুলে সুসজ্জিত সাভারের বিরুলিয়া

  • মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

হালকা হাওয়ার মিষ্টি তালে দোলে টুকটুকে লাল গোলাপ। বাংলার রূপবৈচিত্র্যের মন মাতানো এমন দৃশ্যে বিমোহিত হয়ে বলতে ইচ্ছে করবে 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি'। এতো রূপ আর মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের দেখা মেলে রাজধানীর অদূরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে।  গ্রামগুলো এখন গোলাপ গ্রাম নামেই বেশি পরিচিত। আর এসব গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য প্রতিদিন ভিড় জমায় অসংখ্য দর্শনার্থী।

এখানে গোলাপ চাষ বেশি হলেও চাহিদা অনুযায়ী জিপসি, জার্বেরা, রজনীগন্ধা, গাঁদাসহ বেশ কিছু ফুল চাষ করছেন ফুল চাষিরা। এর মধ্যে জার্বেরা ফুল চাষের বিস্তার লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। যদিও এ ফুল বিদেশি, এমনকি চারাও সংগ্রহ করতে হয় বিদেশ থেকেই।

বিজ্ঞাপন

ফুল চাষে মোটা অংকের মূলধন প্রয়োজন হলেও চাহিদা ও লাভের পরিমাণ বেশি হওয়ায় জার্বেরা চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। আর আশুলিয়ায় টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জার্বেরা চারা উৎপাদনের ল্যাবরেটরি চালু হওয়ায় আশার সঞ্চার হয়েছে এখানকার ফুল চাষিদের মধ্যে।

জার্বেরা ফুল চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বিরুলিয়ার বাগ্নীবাড়ী, মইস্তাপাড়া, কাকাব, সামাইর, সাদুল্লাপুর, শ্যামপুর, আকরান গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, লাল-সবুজের বাংলার প্রকৃতির প্রকৃত রূপের সঙ্গে মিষ্টি গন্ধের হালকা বাতাস। যে দিকে চোখ যায় শুধু লাল আর সবুজ সমারোহে সাজানো গোলাপের বাগান। বাগানে মাঝে মধ্যেই দুই-একটি চোখে পড়ে সাদা গোলাপের। এছাড়া বিরুলিয়া, আকরান, আইঠর, ভাকুর্তা, মোগড়াকান্দা গ্রামের বিশাল এলাকা জুড়ে চোখে পড়বে বড় বড় ছাউনির। ভেতরে ঢুকলেই দেখা যায় সূর্যমুখী ফুলের মত ফুটে আছে লাল, হলুদ, সাদা, কমলা, গোলাপিসহ বেশ কয়েক রঙের জার্বেরা ফুল।

বিজ্ঞাপন

এসব গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করতে গাজীপুর থেকে এসেছেন আঁখি। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ইউটিউবে দেখে এখানে ঘুরতে এসেছি। এখানকার ছবির মত দৃশ্য দেখে মনটা ভরে গেছে।

ছবি: বার্তা২৪.কম

গোলাপ চাষি দেলোয়ার বার্তা২৪.কমকে বলেন, বছরে দুই ঈদ, ১৬ ডিসেম্বর, ১৪ ফেব্রুয়ারি, একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ ও পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন দিবসে আমাদের ফুল বেশি বিক্রি হয়। তার মধ্যে তুলনামূলক ১৪ ফেব্রুয়ারি ও একুশে ফেব্রুয়ারি বেশি ফুল বিক্রি হয়। এখন জানুয়ারি মাস, আমরা ফেব্রুয়ারি মাসের লক্ষ্য নিয়ে ফুল চাষ করেছি। আশা করি, এবার পর্যাপ্ত ফুল সরবরাহ করতে পারব।

বাগানে কাজ করছেন চাষিরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

অপর গোলাপ চাষি আজিজুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ইউটিউব, টেলিভিশন, পত্রিকা ও বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে আমাদের গ্রাম এখন অনেকেই চেনেন, জানেন।  ফুলপ্রেমীরা তুলনামূলক বেশি ভিড় জমান আমাদের এখানে। যা আমাদের খুব ভালো লাগে। কিন্তু অনেকে ছবি ও সেলফি তোলার জন্য বাগানে ঢুকে পড়ে। এতে অসাবধানতাবশত গাছ ভেঙে যায়। ফলে আমাদের ক্ষতি হয়। আগে লোকজন কম আসতো, বাগানে কোনো রোগ ছিল না। কিন্তু এখন মানুষের চাপে বাগানে রোগের প্রকোপ বেড়েছে।

জার্বেরা চাষি মীর মহিউদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, জার্বেরা চাষে মূলত মূলধনের পরিমাণ বেশি প্রয়োজন হয়। যেহেতু এটা দেশীয় ফুল না, তাই বিদেশি আবহাওয়ার সঙ্গে মিল রাখতে শেড তৈরি করতে হয়। সেই শেডের মধ্যে এটি চাষ করতে হয়। জার্বেরা চাষ অত্যন্ত ব্যয়বহুল, তবে লাভের পরিমাণও বেশি। জার্বেরার চারা বিদেশ থেকে আনতে হতো। তবে আশুলিয়ায় এর চারা উৎপাদন শুরু করেছে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি। এখান থেকে চারা পেলে আমাদের অনেক খরচ কমে যাবে।

পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও পল্লী মঙ্গল কর্মসূচির ল্যাবরেটরি প্রধান আতাহারুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে জানান, বাংলাদেশে এ ফুলের চারা উৎপাদন হতো না। আমরাই টিস্যু কালচারের মাধ্যমে রোগমুক্ত সুস্থ সবল চারা উৎপাদন শুরু করেছি। কিছু দিনের মধ্যেই চারা বিক্রি শুরু হবে। বিদেশ থেকে প্রতিটি চারা আনতে খরচ হতো ৭৫-৮০ টাকা। আশা করি, আমরা ৩৫-৪০ টাকায় এ চারা সরবরাহ করতে পারব।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ জানান, সাভারে ৩৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় দেড় হাজার চাষি ফুল চাষ করছেন। এর মধ্যে ১৫ হেক্টর জমিতে জার্বেরা চাষ হচ্ছে। এটি বিদেশি ফুল হওয়ায় চাষিদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। আমরা সব সময় তাদের পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।