ফিলিপিনো পরিচালক লাভ ডায়েজ: এশীয় চলচ্চিত্রের এক অনন্য শিল্পী



সৈয়দ কামরুল হাসান
অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্ব দরবারে এশীয় চলচ্চিত্রের আলোচনায় জাপানের আকিরা কুরোসোয়া ও ভারতের সত্যজিৎ রায়ের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত। ভারতের মৃণাল সেন ও বুদ্ধদেব দাশগুপ্তও একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিজয়ী অথবা বিচারকের আসন অলঙ্কৃত করে সুনাম কুড়িয়েছেন। এই অতি-সংক্ষিপ্ত তালিকায় জাপানের অন্তত আরো দুজন পরিচালকের নাম যুক্ত করে নেওয়া যায়। এঁদের একজন টোকিও স্টোরি-খ্যাত ওজু এবং অপরজন কেনজি মিজোগুচি। গভীর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ও ইতিহাসচেতনা-সমৃদ্ধ কুরোসোয়া ও ধ্রুপদী শিল্পগুণসম্পন্ন সত্যজিতের উচ্চতর মান আর যিনি বজায় রাখতে পেরেছেন তিনি সম্ভবত ইরানের আব্বাস কিরোয়াস্তামি। ইরানের বেশ কজন গুণী পরিচালকদের মধ্য থেকে মজিদ মাজেদি ও আসগর ফারহাদির নামও এ-প্রসঙ্গে উল্লেখ করা সমীচীন; যদিও মহসিন মাখবালেফ ও তাঁর কন্যা সামিরা মাখবালেফের নাম যোগ করে এই তালিকা আরো দীর্ঘ করা সম্ভব। ওদিকে চীনের চলচ্চিত্রও যে পিছিয়ে নেই তা বিশ্বের নাম-করা চলচ্চিত্র উৎসবগুলিতে তাদের কৃতিত্ব দেখে সহজে সনাক্ত করা চলে। বিশ্বের তাবত্ চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের স্তম্ভিত করে দিয়ে কান, ভেনিস ও অস্কারে সেরা ছবির পুরস্কার জিতে নেয়—Chen Kaige-এর Farewell My Concubine (1993, Palm De ’or Cannes ), Zhan Immu-এর Raise the Red Lantern(1991, Silver Lion,Venice) এবং Ang Lee-এর Life of Pie (2012, Academy Awards-Best Director) | অতপর এ-কথা বুঝতে আর বাকি থাকে না যে চীনও বিশ্ব চলচ্চিত্রের রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হয়েছে। অতি সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্রও আলোচনায় উঠে এসেছে। তাদের সেরা পরিচালক কিম কাই দুক নানা উৎসবে সেরা পুরস্কার ঝুলিতে পুরে দেশের জন্য মূল্যবান সম্মান বয়ে এনেছেন। সেখানে রয়েছেন আন হুই সহ আরো কজন কুশলী পরিচালক। গত বছর (২০১৯) দক্ষিণ কোরিয়ার নবপ্রজন্মের পরিচালক বং-জুন-হো তাঁর ‘প্যারাসাইট’ ছবির জন্য যুগপৎ কান ও অস্কার জিতে চলচ্চিত্র দুনিয়ায় হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন।

আমার সৌভাগ্য যে, নানা দিক থেকে যোগাড় যন্ত্র করে এই কুশলী শিল্পীদের সেরা কাজগুলি ইতোমধ্যে দেখা হয়েছে, সেই সাথে তাদের চলচ্চিত্র ভাবনার সাথেও খানিকটা পরিচিত হয়েছি। কিছুকাল একরকম হাত গুটিয়ে বসে ছিলাম—লক ডাউন সিচিয়ুয়েশনে অফিস ও অন্যবিধ কাজ ঠিকঠাক রাখতে গিয়ে কখনো হাঁফিয়ে উঠলে ইতিহাস-ভূগোলহীন মালায়লাম কিংবা বলিউড বাদশাদের বর্ণোজ্বল কৃত্রিমতায় নিজেকে সঁপে দিয়ে বিনোদন লাভের চেষ্টা করেছি। কখনো সেসব ছবির একটু-আধটু চেখে ফেলে দিতে হয়েছে! এইরকম একটা অস্থিতিশীল সময়ে অনেকটা অলৌকিকভাবে যেন ফিলিপিনো পরিচালক লাভ ডায়েজের খোঁজ পাই। আমার কাছে তিনি যেন গুপ্তধনে-ঠাসা এক নিখোঁজ দ্বীপ। উপরে উল্লিখিত সেরা ধ্রুপদী চলচ্চিত্রকারদের থেকে অনেক দূরে তাঁর অবস্থান। আমার মনে হয়েছে তাঁর ছবির বিষয়বস্তু, নির্মাণ কৌশল ও বক্তব্য একবারে আলাদা, তিনি পুরোপুরি স্বতন্ত্র এবং বলা যায় চলচ্চিত্রের এক অনন্য শিল্পী।

Lavrente Indico Diaz সংক্ষেপে Lav Diaz- এর জন্ম ১৯৫৮ সালে ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত আলোচিত দ্বীপপুঞ্জ— মিন্দানাওয়ে। সমুদ্র ও পাথুরে পর্বতমালায় ঘেরা বৃষ্টিবিধৌত উর্বর দ্বীপটিতে পাহাড়, সমুদ্র ও অরণ্যের বিরল সম্মিলন ঘটেছে। একইভাবে প্রাচীন লোকবিশ্বাস ও জাতিগোষ্ঠী এবং পরবর্তীতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টীয় ও মুসলিম ধর্মবিশ্বাস প্রভাবিত করেছে এই জনপদ। বর্তমানে মিন্দানাওয়ের জনগোষ্ঠীর প্রায় আড়াই কোটি জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ মুসলিম ধর্মাবলম্বী। বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ, অস্থিরতা ও সামরিক শাসনের নিষ্পেষণ এই জনপদের শান্ত ও নিরন্তর জীবনপ্রবাহ বারবার ব্যাহত করেছে। সনাতন ধর্মীয় ও শত বছরের লোকবিশ্বাস বারবার বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় অধিবাসীদের মানসগঠন একটা নিজস্ব অদ্ভুত রূপ পরিগ্রহ করেছে। সেই সাথে যোগ হয়েছে সমুদ্রতীরবর্তী মানুষের জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের সাথে খাপ খাওয়ানোর ধৈর্য্য ও বেঁচে-থাকার অপরিসীম আশাবাদ। রাজধানী থেকে অনেক দূরের অনগ্রসর এই জনপদ দেশের মৎস্য, ফলমূল (কলা, আনারস) ও কৃষিপণ্যের বড় যোগানদাতা। এই জনপদে চলচ্চিত্রকার লাভ ডায়েজের জন্ম ও বেড়ে-ওঠা। তাঁর খ্রিস্টীয় ধর্মবিশ্বাসী পিতা গভীর অরণ্যে তাদের বাসস্থান স্থাপন করে অরণ্যের অভ্যন্তরের গ্রামসমূহে ধর্মপ্রচারের কাজে নিয়োজিত হন। লাভ ছোটবেলা থেকে দেখেছিলেন কিভাবে প্রাচীন বিশ্বাস, সংস্কার ও আচার অনুষ্ঠানের সাথে নয়া রীতি ও ব্যবস্থার সংঘাত ঘটে। কিভাবে উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ ও অধিকারবঞ্চিত মানুষ নিয়তির কাছে আত্মসমর্পণ করে। আর কিভাবে প্রকৃতিকে এর অঙ্গীভূত করে নিয়ে গোটা ব্যবস্থা ও মানসগঠন একটা অজানা রহস্যময় আকার পায়—এই মিথস্ক্রিয়া ডায়েজের চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রধান ভিত্তি হিসাবে কাজ করেছে। এ-কারণে অর্থনীতির উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন ও হারভার্ডের ফেলো হওয়া সত্ত্বেও ছবির কাহিনী ও পটভূমির খোঁজে তিনি বারবার ফিরে গেছেন জাদুবাস্তবতার আবহে-ঢাকা তাঁর শৈশবের স্মৃতিঘেরা সেই জনপদে। এমনকি এখনো মাকিন যুক্তরাষ্ট্রে সপরিবারে বসবাস করলেও সময় পেলেই ছুটে যান সূদূর মিন্দানাওয়ে গড়ে-তোলা তাঁর প্রিয় কৃষি খামারে।

লাভ ডায়েজের চলচ্চিত্র নির্মানের শুরু ১৯৯১ সালে। ছোট বড় মিলিয়ে লাভ ডায়েজ পরিচালিত ছবির সংখ্যা—২৫, এর মধ্যে ১৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র। সবচেয়ে আলোচিত ও বিশ্ব-চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের কাছে সমাদৃত ছবিগুলির মধ্যে কয়েকটির নাম : Naked under the Moon (1999), Evolution of a Filipino Family(2004), Death in the land of Encantos (2007), Melancholie (2008), Norte, the End of history(2013), From What is Before (2014), A Lullaby to the sorrowful mystery (2016), The woman who left (2016), Season of the Devil (2018), The Halt(2019) | লাভ ডায়েজের ছবি Norte, the End of history ২০১৩ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে UN Certain Regard-সেকশনে প্রদর্শিত হয়। ২০১৪ সালে তাঁর অনবদ্য ছবি—From What is Before—লোকার্ণো উৎসবের সেরা ছবির পুরস্কার জিতে নেয়। ২০১৬ সালে, একই বছরে, তাঁর ২টি ছবি ২টি চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা চলচ্চিত্র হিসাবে পুরস্কৃত হয়। The woman who left—ভেনিসে গোল্ডেন লায়ন এবং A Lullaby to the sorrowful mystery—বার্লিনে গোল্ডেন বিয়ার পায়। ভেনিসের চলচ্চিত্র জুরি কমিটি ও বোদ্ধাগণ তাঁকে: “the ideological father of the New Phillipine” হিসাবে আখ্যায়িত করেন। পরিচালনা ছাড়াও লাভ ডায়েজ একজন চলচ্চিত্র সমালোচক, কবি ও সংগীতকার। এই ডিসেম্বরে লাভ ডায়েজ ৬২ বছরে পা দেবেন। নতুন নতুন ছবি নির্মাণের ভাবনা তাঁকে সক্রিয় ও সদাব্যস্ত রাখছে। তাঁর ভাষায়: “That’s the urgency to me—having the spiritual Journey,doing my cinema, taking care of my kids and my rice field, it’s the same.”

২.
রাজধানী থেকে অনেক দূরের একটি জনপদ, যার এক দিকে সমুদ্র যেখানে প্রায় সারাদিনই মাতাল ক্ষুব্ধ সাগর প্রচণ্ড গর্জনে বারবার এসে আছড়ে পড়ছে কালো শিলীভূত পর্বতমালায়। পাহাড়ের ঢালের অপর পাশটিতে কয়েকটি খাল, নালার দুইধারে ঘন বাঁশঝাড়, আরো নাম-না-জানা গাছপালায় ছাওয়া ঘন অরণ্যবেষ্টিত ছোট্ট জনপদ। সভ্যতার ছোঁওয়া লাগেনি, মাঝেমধ্যে বিদ্যুতের খুঁটি বসেছে মাত্র, কবে আলো আসবে কেউ জানে না। ভাঙা সেতু যানবাহনের চলাচল অগম্য করে রেখেছে। অরণ্যের জলমগ্ন ফাঁকা জমিগুলিতে মোষের পাল, টোপর মাথায় তাদের তত্ত্বাবধানে ২/১ জনকে চোখে পড়ে। থকথকে কাদায় হঠাৎ ২/১ জন গ্রামবাসি ছপ ছপ শব্দ তুলে এগিয়ে যায়। আর শব্দ বলতে সারাদিন পাখির কিচিরমিচির, অবিরাম কুকুরের ঘেউ ঘেউ, মোরগ-মুরগির খুঁটে খুঁটে খাবার তোলার ফাঁকে ফাঁকে নিয়মিত বিরতিতে ডাক গেরস্থালির আভাস দেয়। নজরে আসে উঁচু উঁচু কাঠের খুঁটির ওপর পাটাতন তুলে এক একটি খড়ে-ছাওয়া ঘরে বসবাসরত মানুষ, কিছু শান্ত স্বল্পবাক মানুষের কষ্টে-সৃষ্টের সংসার। অরণ্যের ফলমূল আহরণ ও পাখি শিকার, সামান্য জমিজিরাতে চাষাবাদ আর খালে-বিলে মাছ ধরা তাদের নিত্য ক্ষুন্নিবৃত্তির উপায়। এই অরণ্যের লতাপাতা তাদের অসুখ-বিসুখের নিদানও। আরো আছে অদৃশ্যে ভক্তি, ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস, সমুদ্র যে কালো শিলায় এসে মাথা কুটে মরছে সেখানে দেবতার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য পেশ, যে দুষ্ট আত্মা তাদের যাবতীয় ভোগান্তির কারণ বলে তারা মনে করে, তাকে তাড়ানোর নানা বিচিত্র কলাকৌশল—যার শেকড় শত সহস্র বছর ধরে তাদের বিশ্বাসের গভীরে প্রোথিত। কিন্তু এরই মধ্যে আছে একের জন্যে অন্যের গভীর সহমর্মিতা, জন্ম ও মৃত্যুতে যুথবদ্ধ আনন্দ ও শোকতাপ, জীবনসংগ্রামের লড়াই, শঙ্কা, হতাশা, সরল ঘৃণা, প্রেম ও পাপবোধ। ১৯৭০-৭২ সালে ফিলিপাইনের এমন একটি প্রত্যন্ত জনপদের প্রেক্ষাপটে লাভ ডায়েজের ছবি From What is Before-র গল্প আবর্তিত হয়েছে। সাড়ে ৫ ঘণ্টার দীর্ঘ ছবি। ঠিক প্রচলিত অর্থে নায়ক-নায়িকা নির্ভর কোনো নাটকীয় কাহিনী এতে নেই—এ যেন গোটা একটি জনপদেরই হারিয়ে যাওয়ার গল্প। সেদিক থেকে বলতে গেলে জনপদই এই ছবির মূল চরিত্র। এমনভাবে ছবিতে গোটা জনপদকে তুলে আনা হয়েছে যাতে আছে সমুদ্রের গর্জন, আকাশে মেঘ ডাকছে, সারাদিন টিপটিপ বৃষ্টিতে ভিজছে সবাই, বাঁশঝোপে বইছে হাওয়া—হাওয়ার সরসর শব্দ, কুপির আলোয় স্বল্পালোকিত রাতের গেরস্থালি—পরিচালক অনেকক্ষণ ক্যামেরা ফেলে রাখেন অরণ্যের ঝোপে-ঝাড়ে, কাদাজমা পথে ঘাটে, বৃষ্টিক্লান্ত বিষণ্ন আকাশে! কখন যে সেই জনপদ দর্শকের মনে ধীরে ধীরে জায়গা করে নেয় ঠিক আন্দাজ হয় না, কেননা সময়ের দিকে খেয়াল থাকে না, অনতিবিলম্বে একটা ঘোর গ্রাস করে নেয়। তারপর ধীরে ধীরে পরিচালক গল্পের মোড়ক খোলেন। গ্রামের অধিবাসীরা তাদের বাড়ির লাগোয়া জঙ্গলে বিচিত্র কিন্তু ভয়ঙ্কর কিছুর ডাক শুনতে পায়, আতঙ্কে ভরদুপুরে তারা দরজা জানালার খিল তুলে দেয়। একদিন খবর আসে চারণভূমি থেকে তিনটি মহিষ হারিয়ে গেছে, আরেক দিন হঠাৎ দুপুরবেলায় তিনটি বাড়ি আগুনে ভস্মীভূত হয়। একদিন দেখা যায় অরণ্যের ঢালে মাঝবয়সী অচেনা একটা লোকের লাশ পড়ে আছে, তার ঘাড়ের পেছনে গভীর কাটা দাগ। এইভাবে মানুষের মধ্যে দানা বাঁধে অজানা ভয়; এমনকি তারা ভাবতে শুরু করে এসবকিছু তাদেরই কোনো পূর্বকৃত পাপের ফল কিনা। গ্রামের এক বোন তার প্রতিবন্ধী ছোট বোনকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে—এই প্রতিবন্ধী বোনটিকে ভাবা হতো অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন যার কিনা আছে ঝাড়ফুঁকে ম্যালেরিয়া-হিস্টিরিয়াসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষগুলিকে সারিয়ে তোলার ক্ষমতা। প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে সেই কাজে লাগানো হয়, দুই বোনের আয়ের উৎসও সেই কাজ। কিন্তু প্রতিবন্ধী বোনটি সবার অলক্ষ্যে এক প্রতিবেশি যুবকের যৌন লালসার শিকার হয়ে একসময় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তার বোনটি তা মানতে পারে না। সে সমুদ্রের যে দেবতার কাছে প্রতিদিন বোনের রোগমুক্তির জন্য প্রার্থণার নৈবেদ্য সাজাত সেই সমুদ্রে বোনকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দেয়। ইতোমধ্যে গ্রামে একটি গির্জা বসেছে, যার পাদ্রি এইসব অপচিকিৎসা ও লোকবিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারে না, দুই বোন তার সামনেই তাদের আরাধ্য সমুদ্র-দেবতার কাছে আত্মাহুতি দেয়। ওদিকে প্রতিবন্ধী বোনটি যে-যুবকের যৌন লালসার অসহায় শিকার হয়েছিল, সেই যুবকও মানসিক অনুতাপে জর্জরিত হয়ে স্বীকারোক্তির পর ক্রুদ্ধ প্রতিবেশির হাতে নিহত হয়। ভয় ও বিষণ্নতা আরো ভারী হয়ে চেপে বসে গ্রামবাসির পর। একদা গ্রামে সামরিক বাহিনীর একটি ব্যাটেলিয়ন এসে হাজির হয়। কেন্দ্রে মারকোসের সরকার সামরিক আইন জারি করে, গ্রামবাসি ও স্কুল শিক্ষকদের আপত্তির মুখেও স্থানীয় স্কুলে বসে সেনাদের অস্থায়ী ক্যাম্প। গ্রামে সেনারা কারফিউ দেওয়ার ঘোষণা দেয়; তাদের কাছে খবর ছিল: এদিককার জঙ্গলে গেরিলাদলের ঘাঁটি রয়েছে। এক মহিলা সেনা কর্মকর্তাকে কাপড়বিক্রেতার ছদ্মবেশে গ্রামবাসীদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে তন্ন তন্ন করে দেখা হয় কোথাও কোনো ক্লু পাওয়া যায় কিনা। সরল গ্রামবাসির কাছে কিছুই পাওয়া যায় না। কিন্তু একদিন সত্যি একদল সশস্ত্র গেরিলাকে অরণ্যের গহীনে টহলরত দেখা যায়। তারা গ্রামের বাছাই-করা যুবকদের গাছে ঝুলিয়ে নৃশংসভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, পথচারীদেরও নানা জিজ্ঞাসায় আতঙ্কিত করে তুলছে। কিন্তু আরো কোনো এক গভীর অজানা ভয়ের ঘোরে কম্পিত ও আবিষ্ট সে জনপদের কেউ তাদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সামরিক বাহিনীর কারফিউ কিংবা গেবিলাদের প্রহরা অনুমোদন করে না। নীরবে বাড়িঘর রেখে তারা দূরের ভিন্ন কোনো জনপদে পালাতে শুরু করে। শুধু থেকে যায় এক প্রাচীন চাষী আর তার ছেলেবেলার বন্ধু একদা শহরবাসি এক কবি—ক্যান্সারের শেষ দিনগুলিতে তার বাসভূমিতে মরার আকাঙ্ক্ষায় যে ফিরে এসেছে। কবির একমাত্র কন্যা শহরবাসি—কবি সারাদিন তার পুরনো টাইপরাইটারে তার জনপদের এই চাপা আতঙ্ক নিয়ে কবিতা রচনায় ব্যপৃত হয়। বন্ধুকে জানায় মৃত্যুর পর তার অন্তিম ইচ্ছার কথা—না, খ্রিস্টীয় কিংবা কোনো নতুন রীতিতে নয়, তার সৎকার যেন করা হয় পূর্বপুরুষের “মালয়” রীতিতে, বস্তুত এ-কারণেই সে ফিরে এসেছে এই মৃত্যু উপত্যকায়। অনতিবিলম্বে কবির মৃত্যু হয়, খবর পেয়ে কবির শহরবাসি মেয়েটি আসে গেরিলাদলের অনুমোদন নিয়ে। বাড়ির পাশের বয়ে-যাওয়া ছোট নদী, যা গিয়েছে সাগরের ঠিকানায়, সেখানে কলার ভেলায় চিতা সাজানো হয়, চিতায় আগুন দেওয়া হয়। আর কেউ নেই কবির শেষযাত্রায়—শুধু তার ছোটবেলার বন্ধু আর মেয়েটি। হু হু আগুনে কবির শবদেহ পোড়ে, ধীরে ধীরে ভেসে যেতে থাকে কলার ভেলাটি। ক্যামেরার চোখ প্যান করে ঘন অরণ্যের মাথায় ঝুলে থাকা মেঘক্লান্ত আকাশে স্থিত হলে আপাতত যবনিকা নেমে আসে, পরদায় ভেসে উঠে ছবির কলাকুশলীদের নাম।

From What is Before সিনেমার একটি দৃশ্য

তিনদিনে একটু একটু করে দেখা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার দীর্ঘ ছবি দেখা শেষ হলেও উঠে আসতে ইচ্ছা করে না, মায়া পড়ে থাকে। একেবারে আধুনিক কালে অর্থাৎ ২০১৪ সালে নির্মিত হলেও গল্প তথা জনপদের আবহ ঠিক রাখার জন্য ছবিটি শাদা কালোয় তোলা। সবসময় দেখা গেছে আকাশের একটাই রঙ—বর্ণহীন, মেঘাচ্ছন্ন, ঘোলাটে। বেশির ভাগ সময় জুড়ে বৃষ্টিপাত। কেউই যেন অভিনয় করেনি ছবিতে, গাঁয়ের একেবারে চাষভূষোরা উঠে এসেছে ফ্রেমে। সময় নিয়ে, শ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে কথা বলে ওরা; ক্যামেরা অপেক্ষা করে ততক্ষণ। ছবিতে কোনো যৌনতা নেই, ইঙ্গিতে বোঝানো হয়েছে অবৈধ যৌনতা। সবচেয়ে বড় সাতন্ত্র্য এই ছবিতে কোনো আবহ সংগীত নেই। অরণ্যের নানান আওয়াজ, কুকুরের ঘেউ ঘেউ, মোরগের বাঁক, মুরগি ছানাদের উচ্ছ্বসিত ছুটে চলার আওয়াজ, পাখির কিচিরমিচির, বাঁশবনে রাত্রিভর হাওয়ার চলাচল, পাহাড়ের ঢালে সমুদ্রের ক্রুদ্ধ গর্জন—বাস্তবের সব শব্দ জড়ো করে নিপুণভাবে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। পরিচালক যেন বলতে চেয়েছেন জীবনের মধ্যেই রয়েছে এর নিজস্ব স্বর ও সুর। এইভাবে জনপদ নিজেই হয়ে উঠেছে এক জীবিত সত্ত্বা, বয়ে-চলা জীবন যার চরিত্র। এক নিরাসক্ত ভঙ্গিতে লাভ ডায়েজ যেন শুধু তাকে তার নিজের মত করে বয়ে যেতে দিয়েছেন ।

ভেনিসে পুরস্কারপ্রাপ্ত তাঁর ২০১৬ সালের ছবি—The woman who left-ও শাদা কালোয় চিত্রায়িত। সেখানেও তা ছিল ছবির গল্পের চাহিদা কিংবা দাবি। সেখানে গল্প অনুসরণ করে ক্যামেরা নেমে গেছে দূর গাঁয়ে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যে আসলে চারপাশের অনুষঙ্গে রয়েছে—এটা বলা যায় তাঁর একটি আবিষ্কার। এই কৌশল মোক্ষমভাবে তিনি ব্যবহার করেছেন তাঁর আরেকটি দুর্দান্ত ছবি Norte, the End of history-তে। ৪ ঘণ্টা ১০ মিনিটে সমাপ্ত ছবিটি যদিও রঙিন, কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসাবে সেখানেও ব্যবহার করা হয়েছে জীবন থেকে নেওয়া শব্দাবলি—রাতে কাজ করে ফেরা শ্রমিকদের পায়ের আওয়াজ, রাত্রির নিঃসঙ্গ পথের কুকুর, তারা ডাকছে; কখনোবা সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ বেলাভূমে এসে আছড়ে পড়ছে। এই ছবিও ফিলিপাইনের জনজীবনের বাস্তবতা, রাজনীতি ও ইতিহাসের গভীরে প্রোথিত। এখানেও গল্পের প্রেক্ষিত হিসাবে লাভ ডায়েজ বেছে নেন শহরের বাইরে (এমনকি শহরতলীরও নয়) ছিটকে-পড়া ছিন্নভিন্ন মানুষ—আধপেটা খেয়ে হাইওয়ের ধারে গভীর রাতে কোনো রোয়াকে বসে যারা দূর শহরের আলোকমালার দিকে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে। এক শ্রমিকের পরিবার যার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি দুর্ঘটনায় পতিত হলে তার স্ত্রী, তাদের দুই শিশু সন্তান ও তাদের ওপর নির্ভরশীল স্ত্রীর ছোটবোনসহ গোটা পরিবারটি শোচনীয় অবস্থার মুখোমুখি হয়। বাধ্য হয়ে তারা স্থানীয় মহাজন তথা পেশাদার অর্থলগ্নীকারী এক মহিলার দারস্থ হয় এবং তার কাছে সংসারের প্রয়োজনে ঘরের মালামাল বিক্রি করে দিয়েও বিপুল দেনা অপরিশোধ্য থেকে যায়। এই প্রেক্ষাপটে, এলাকায় বসবাসরত আইনের এক মেধাবী ছাত্রের (যে কিনা আইনের কোর্স শেষ করার ব্যাপারে ইতোমধ্যে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে এবং অথলগ্নীকারী পূর্বোক্ত মহিলার কাছে যারও কিছু দেনা আছে) হাতে মহিলা ও তার কন্যা খুন হয়। ঘটনাক্রমে পুলিশ এসে সন্দেহবশত পূর্বোক্ত দুর্ঘটনাকবলিত শ্রমিককে গ্রেফতার করে, পুলিশের ধারণা দেনাপাওনা নিয়ে মহিলার সাথে আগে সংঘটিত এক বচসার জের হিসাবে এই খুন সেই করেছে। মিথ্যা অভিযোগে শ্রমিকের সশ্রম কারাদণ্ড হয়, ওদিকে ছোট দুই শিশু সন্তান ও নিজের বোনকে বাঁচানোর জন্য শ্রমিকের স্ত্রী ফেরি করে বাড়ি বাড়ি সবজি বিক্রি করার কঠোর জীবিকা বেছে নেয়। একদিন জেল থেকে স্বামীকে দেখে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তারও প্রাণহানি ঘটে। ওদিকে প্রকৃত খুনি আইনের ছাত্রটি তীব্র অপরাধবোধে তাড়িত হয়। ধীরে ধীরে সে মানসিক সুস্থতা হারিয়ে ফেলে। মাত্র ৩/৪টি চরিত্র নিয়ে সাজানো গল্প গোটা মানবজীবনের গভীরে আলো ফেলেছে। অপরাধ, বিচার বিভাগের তদন্তে দুর্বলতা, অপরাধবোধে সংকটাপন্ন মনস্তত্ত্ব নিয়ে অসাধারণ ছবি। মুখ্য চরিত্রটি বারবার দস্তয়েভস্কির “ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট”-এর নায়ক রাসকলনিকভের কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু পরিচালক গল্প শেষ করেন না—খুনের মিথ্যা অভিযোগে দণ্ডিত শ্রমিকের কারাগারে দিন কাটে, তার স্ত্রীর বোনটি ছোট ছোট ২টি শিশু নিয়ে নতুন সংকটের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়, ওদিকে প্রকৃত খুনি আইনের ছাত্রটি স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে ধরা দেয় না, কিন্তু মানসিকভাবে নিজের মধ্যে অপরাধবোধে ছিন্নভিন্ন হতে থাকে। সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এই গল্পের কোনো পরিণতি কিংবা সমাধান নাই, এমনকি আশুকালে আশা করা যায় এমন কোনো সমাধানের আভাসও নাই ছবির শেষে। বোধ হয় তা দেখানো পরিচালকের অন্বিষ্টও নয়, হয়তো বা তিনি মনে করেন এই গল্পের কোনো সহজ পরিণতি থাকতে পারে না। একজন শিল্পী হিসাবে তিনি শুধু পারস্পেক্টিভটা তুলে ধরতে পারেন। তিনি ছবির নাম দেন ইতিহাসের অন্তিমের ধারাভাষ্য। এই ইতিহাস বলতে হয়তো তিনি তাঁর নিজের দেশের ইতিহাসকেই বুঝিয়েছেন, কিন্তু সিনেমা নির্মাণে তাঁর দক্ষতা ও শক্তি ছবিটিকে যে মাত্রায় উন্নীত করেছে তা বিশ্বমানের।

Norte, the End of history সিনেমার একটি দৃশ্য

লাভ ডায়েজকে আলোচকরা Slow cinema movement-এর অগ্রপথিক বলেছেন। তাঁর কোনো কোনো ছবির দৈর্ঘ্য ১০ ঘণ্টারও বেশি। তার ছবি দেখতে বসে মনে হয় এ-যেন পড়ছি দীর্ঘ কোনো উপন্যাস, কোনো তাড়া নেই—একেকটি ছবি বইয়ের পাতা মুড়ে রাখার মতো, বিরতি দিয়ে দিয়ে ২/৩ দিনে দেখা শেষ হয়। আবার ঠিক তা সিকোয়েল দিয়ে গাঁথা ধারাবাহিক মেজাজেরও নয়। কেননা সবটা মিলে, সবটা জুড়ে তাঁর ছবি। লাভ ডায়েজের ছবি আমাদের অভ্যস্ত চলচ্চিত্র দর্শনে এবং উপভোগে একটা দারুণ ঝাঁকুনি দেয়। কিন্তু আশ্চর্য কুশলতার সাথে তিনি তার দর্শকদের ধরে রাখেন। একেকটি ছবি অন্যটির তুলনায় বিষয়বস্তু ও বক্তব্যে, তার কাব্যিক গভীরতায় কখনো এতটাই বিশিষ্ট যে, তাঁর দীর্ঘ ছবিগুলি জুরিরা দেখেছেন (বলা চলে দেখতে বাধ্য হয়েছেন) ও পুরস্কার প্রদানের স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। হালফিল জমানায় যেখানে দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়ে উঠেছে ছবির কাহিনী, কি নাটকীয়তায়, কি চোখ ধাঁধানো রঙে, যৌনতায়, ডিজিটাল কারিগরি সম্বল করে যেভাবে দর্শককে দু আড়াই ঘণ্টার প্যাকেজে মুড়ে ফেলা হয়েছে, সেখানে একবিংশ শতকে এসেও লাভ ডায়েজ বলছেন স্থিতধী হতে ; তাঁর মতে ‘ধৈর্য্য’ প্রাচ্যের বৈশিষ্ট্য, তিনি বলছেন—পাশ্চাত্যের সঙ্গে ঠিক এখানে আমাদের তফাতও বটে। ২০১৭ সালে Sight & Sound Magazine-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন: “Art is a commitment to the beauty of the Soul.” আর সব মহান শিল্পীর মতো তিনিও আমাদের জানান “আত্মার সৌন্দর্যই” তাঁর অন্বেষা । আর তাঁর স্থির বিশ্বাস হলো এই অন্বেষণে চাই গভীর অভিনিবেশ ও ধৈর্য্য।

৩.
From What is Before—ছবিটির কাছে আবার ফিরে যাই। যেখানে এক রহস্যময় জনপদে বাস্তবতা ও ফ্যান্টাসি, জীবন ও মৃত্যু, সত্য ও কিংবদন্তী মুখোমুখি হয়েছে। এই ছবি দেখতে গিয়ে বারবার আমার তারাশংকরের “হাঁসুলী বাঁকের উপকথা” উপন্যাসের কথা মনে পড়ছিল। এক অন্ত্যজ জাতিগোষ্ঠীর জীবনসংগ্রাম, যুগ পরিবর্তনের সাথে তাদের অর্থনীতি, আচার অনুষ্ঠান ও বিশ্বাস বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম এবং পরিশেষে তাদের অসহায় আত্মসমর্পণ ও হাঁসুলী নদীর বাঁকে সেই জনপদের বিলুপ্তি নিয়ে এটি বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম সেরা কাজ। উপন্যাসটি নিয়ে ১৯৬২ সালে পশ্চিম বঙ্গের গুণী পরিচালক তপন সিনহা ছবি বানিয়েছিলেন। শাদা কালোয় তোলা ছবিটি দেখতে গিয়ে আমি এর খারাপ প্রিন্টে বিরক্ত হয়েছি বারবার, সংলাপও অস্পষ্ট।

আমার মনে প্রশ্ন জমেছে; আমাদের এখানে (বাংলাদেশে) কি এমন ছবি তৈরি হয়েছে? সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর “কাঁদো নদী কাঁদো” উপন্যাসে বাকাল নদী মরে যায়—জনপদের মানুষ রাতে শুনতে পায় কারুর কান্নার শব্দ, শহীদুল জহিরের “সে রাতে পূর্ণিমা ছিলো” উপন্যাসে জোছনারাতে খুন সংঘটিত হয় আর ঘুমের মধ্যে এক নারী হেঁটে গিয়ে বিলের পানিতে নগ্ন হয়ে নেমে গোসল করে ফিরে আসে; কিংবা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের “খোয়াবনামা”র কাৎলাহার বিলের তীরের পাকুড় গাছে আরূঢ় মুন্সীর ইশারায় বিল পাড়ি দেয় গজার মাছের ঝাঁক, তমিজের বাপ বিলের পানিতে দাঁড়িয়ে তা অবলোকন করে রাতভর! এইসব নিয়ে কি তৈরি হয়েছে আমাদের এখানে কোনো ছবি?

আমাদেরও তো গল্প আছে, কিন্তু তা নিয়ে বানাতে হলে চাই লাভ ডায়েজের মত শক্তিমান পরিচালক, চাই প্রয়োজনীয় পৃষ্টপোষক। আর হ্যাঁ সেই সঙ্গে চাই তেমনি রুচিবান দর্শকও!

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;

বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্বে শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ও মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ও কিশোরগঞ্জ নিউজ'র নিয়মিত লেখক।

বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি,শিল্প, সংগীত, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার বহুল কার্যক্রম নিয়ে দেশের প্রাচীনতম ও অগ্রণী প্রতিষ্ঠা নবঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র এক সভা এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শনিবার (১১মার্চ ২০২৩) বিকেল ৪-৩০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় নাট্যশালার কনফারেন্স হলের ভিআইপি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বরেণ্য শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্হিতিতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা
কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ। এতে সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সঞ্চালনা করেন।

সভায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সদস্য বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর লেখক, কমামিস্ট ও গীতিকার শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ’র কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা গঠনের দায়িত্ব আরোপ করে তার হাতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র ইশতেহার তুলে দেন বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং অন্যান্য নেতৃবর্গ ।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গীয়'র জার্মানির সভাপতি কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক আমিনুর রহমান বেদু, রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবিশ, ইউনেস্কোর ব্রান্ড এম্বাসেডর নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাত, বঙ্গীয়'র সভাপতি পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, বঙ্গীয়'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলী নিয়ামত, কবি নাঈম আহমেদ, বঙ্গীয়'র কেন্দ্রীয় সদস্য কবি মীনা মাশরাফী, কবি পারভিন আক্তার সহ প্রমুখ।

সভার প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র সম্মিলন উদযাপন বিষয়ক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কবি আজিজুর রহমান আজিজকে আহবায়ক এবং সংগীতশিল্পী শামা রহমানকে সদস্য সচিব করে উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে বঙ্গীয়র সভাপতি পর্ষদের সকল সদস্য, রবীন্দ্র একাডেমির নির্বাহী শাখার সকল সদস্য, বঙ্গীয়র যুগ্ম সম্পাদকবৃন্দসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্টজনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।

দ্বিতীয় পর্বে অযুত তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু সম্মিলন, দ্বিশতজন্মবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মরণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে লেখক কবির আলোচনা সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড নেশন্সের ব্রান্ড এম্বাসেডর জনাব নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাতকে সভাপতি পর্ষদের সদস্য, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবির ঢালীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , সংস্কৃতি সেবক রোকনউদ্দীন পাঠানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, কবি আনোয়ার কামালকে লিটল ম্যাগ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সাংবাদিক শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে নির্বাহী সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক, কবি মীনা মাশরাফীকে নীলফামারী জেলার সমন্বয়ক, জনাব এ এইচ এম সালেহ বেলালকে গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা লেখক কবি আবদুল হালিম খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, কবি মানিক চন্দ্র দে, কবি অর্ণব আশিক, কবি বাবুল আনোয়ার, দৈনিক বঙ্গজননীর সম্পাদক কামরুজ্জামান জিয়া, কবি শাহানা জেসমিন, কবি গবেষক আবু সাঈদ তুলু, চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. বিশ্ব রায় (কলকাতা), বঙ্গীয় চট্রগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফ্যাশন ডিজাইনার আমিনা রহমান লিপি, শিল্পী শাহরিয়ার পিউ, কবি সোহরাব সুমন, কবি সরকার পল্লব, কবি রহিমা আক্তার মৌ, কবি লিলি হক, কবি আকমল হোসেন খোকন, শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, হিরা পারভেজ, ড. দিপু সিদ্দিকী, শিক্ষক ও কবি রওশন ই ফেরদৌস, কবি পারভীন আক্তার, কবি শিল্পী মাহমুদা, পূর্বধলার মো. জাকির হোসেন তালুকদার, কবি আনারকলি, কবি অপরাজিতা অর্পিতা, ডা. নূরুল ইসলাম আকন্দ, আবৃত্তিশিল্পী যথাক্রমে রূপশ্রী চক্রবর্তী, রবিউল আলম রবি সরকার, জেবুন্নেছা মুনিয়া, চন্দনা সেনাগুপ্তা, কবি সংগঠক রাজিয়া রহমান, কবি শামীমা আক্তার, শিল্পী সাদিয়া শারমিন, কবি কনক চৌধুরী, কবি তাসলিমা জামালসহ প্রমুখ।

;

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব



মাহমুদ হাফিজ
কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় শুরু হয়েছে রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসব। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতি সভাগৃহে বিকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, পরিব্রাজক ও ভ্রমণগদ্য সম্পাদক মাহমুদ হাফিজ, স.ম. শামসুল আলম, নাহার আহমেদ, ড. নাঈমা খানম প্রমুখকে সম্মানিত করা হয়।

বিকালে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা। বিশিষ্ট নাট্যকার চন্দন সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও কবি সব্যসাচী দেব। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাধারণ সম্পাদক কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য। এতে সমাপণী বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি কবি স্বপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।

আজ ও আগামীকাল ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি হলে বিকাল থেকে কবিতা ও গল্পপাঠ, আলোচনা, শ্রুতিনাটক, সঙ্গীত অনুষ্ঠিত হবে। রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, নেপাল, আসাম, ত্রিপুরার কয়েশ’ কবি লেখক অংশগ্রহণ করছেন।

;

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাকালে বন্ধ থাকার পর আবারো 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কার্যক্রমে ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ রচিত 'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের একশত কপি শুভেচ্ছামূলক প্রদান করা হবে। 

উল্লেখ্য, আগেও ইংরেজি নববর্ষে এবং ভাষার মাসে শত বিশিষ্টজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থ উপহার দিয়েছিল ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ. এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প-সাহিত্য-সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আনসার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার নামে গঠিত 'শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশন'। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল স্থানীয় নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে জানানো হয়েছে যে, বরকতময়, নেয়ামতপূর্ণ মাহে রমজানের সঙ্গে অন্য কোনো মাসের তুলনা চলে না। রোজা হলো মাহে রমজানে অবশ্য পালনীয় ফরজ আমল, যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নিজে দেবেন। মানবজীবনে রোজা একজন বান্দার আত্মীক ও শারীরিক কল্যাণের ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। তদুপরি, রমজান মাসকে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা তাঁর অপার ক্ষমা, দয়া আর অপরিসীম করুণা দিয়ে বান্দাদেরকে উপহার দিয়েছেন। রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত রোজা সঠিকভাবে পালন করলে রোজাদার নবজাতক শিশু মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানব জীবনে ও সামাজিক ব্যবস্থায় রমজান মাস ও রোজার গুরুত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে ফাউন্ডেশন প্রদত্ত গ্রন্থে। এ গ্রন্থ রমজান মাসের তাৎপর্য এবং রোজার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পাঠকদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে ৩০টি সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ের মাধ্যমে।

'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের লেখক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ। তাঁর পিতা: ডা. এ.এ, মাজহারুল হক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা: নূরজাহান বেগম, সমাজসেবী। ড. মাহফুজ পারভেজের জন্ম: ৮ মার্চ ১৯৬৬, কিশোরগঞ্জ শহরে। পড়াশোনা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচ,ডি)। পেশা: অধ্যাপনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি, গবেষণা ও সাহিত্য সাধনায় ব্রতী। প্রকাশিত গ্রন্থ কুড়িটি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- গবেষণা-প্রবন্ধ: বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরো। দ্বিশত জন্মবর্ষে বিদ্যাসাগর। উপন্যাস: পার্টিশনস, নীল উড়াল। ভ্রমণ: রক্তাক্ত নৈসর্গিক নেপালে। গল্প: ইতিহাসবিদ, ন্যানো ভালোবাসা ও অন্যান্য গল্প। কবিতা: মানব বংশের অলংকার, আমার সামনে নেই মহুয়ার বন, গন্ধর্বের অভিশাপ। অধ্যাপনা ও গবেষণা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের শীর্ষতম মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর এবং কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা কিশোরগঞ্জ নিউজ'র উপদেষ্টা সম্পাদক রূপে সংযুক্ত রয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের  'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজিত হবে রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক, ইতিহাসবিদ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ। সমন্বয় কমিটিতে আরো রয়েছেন কিশোরগঞ্জ নিউজ'র প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ ইসকান্দার আলী স্বপন, সাংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু ও চিকিৎসক নেতা ডা. গোলাম হোসেন।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে আরো জানানো হয় যে, ইতিপূর্বে ঘোষিত ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর সম্মাননা বক্তৃতা ২০২০ এবং ২০২১ করোনাকালের বিরূপ পরিস্থিতিতে স্থগিত থাকায় তা যৌথভাবে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. এএ মাজহারুল হক এবং সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' কর্তৃক কিশোরগঞ্জের জীবিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জীবনব্যাপী বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করতে ২০১৫ সাল থেকে এ সম্মাননা বক্তৃতা আয়োজন করা হচ্ছে, যা বক্তৃতা ও লিখিত আকারে প্রদান করেন মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' গতানুগতিক সম্মাননার বদলে ব্যক্তির কর্ম ও কীর্তির বিশ্লেষণমূলক-মূল্যায়নভিত্তিক সম্মাননা বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত স্বরূপ চিহ্নিত করে এবং এরই ভিত্তিতে জ্ঞাপন করা হয় যথাযথ সম্মান। সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি লিখিত আকারে বক্তৃতা-পুস্তিকায় চিত্রিত হন সম্মাননা প্রাপ্তগণ। মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এই বুদ্ধিবৃত্তিক-একাডেমিক আবহে ধারাবাহিকভাবে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে, যা কিশোরগঞ্জে তো বটেই, বাংলাদেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। শুরু থেকে সম্মাননা বক্তৃতা প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. মাহফুজ পারভেজ, যিনি কিশোরগঞ্জে পাবলিক লেকচার সিরিজের মাধ্যমে গণবুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর তৈরির পথিকৃৎ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রথম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান শিক্ষাবিদ প্রাণেশ কুমার চৌধুরী, ২০১৬ সালে দ্বিতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান দীপ্তিমান শিক্ষকদম্পতি: অধ্যক্ষ মুহ. নূরুল ইসলাম ও বেগম খালেদা ইসলাম, ২০১৭ সালে তৃতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘প্রজ্ঞার দ্যুতি ও আভিজাত্যের প্রতীক: প্রফেসর রফিকুর রহমান চৌধুরী’ এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘ঋদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র: শাহ্ মাহতাব আলী’। ২০১৯ সালে পঞ্চম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা দেয়া হয় 'স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষায় পথিকৃৎ চিকিৎসক-দম্পতি' প্রফেসর ডা. আ ন ম নৌশাদ খান ও প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুনকে। ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ প্রদান করা হয় নাসিরউদ্দিন ফারুকী, ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হককে। এ উপলক্ষে ‘কিশোরগঞ্জে আইন পেশার নান্দনিক বিন্যাস’ শীর্ষক সম্মাননা বক্তৃতা বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ প্রদান করা হয়েছে ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু.আ. লতিফ,  মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ ঊষা দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরীকে, যারা কিশোরগঞ্জের সামাজিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসে স্বকীয় কৃতিত্বের প্রভায় উজ্জ্বল। জীবনব্যাপী কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের জন্য শৈল্পিক দ্যোতনায় নান্দনিক বর্ণালী সৃজন করেছেন এই তিন গুণান্বিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ জানান, ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২০ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২১ একসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা মার্চ মাসের শেষ দিকে আয়োজিত হবে।

;