কালের স্বর্ণে লেখা দ্যুতিময় নাম শামসুর রাহমান



ধ্রুব সাদিক
অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

কালের ধুলোয় লেখা-র পূর্বলেখে লিখেছেন, কস্মিনকালেও সন্ন্যাসী কিংবা দরবেশ হওয়ার কথা ভাবেন নি তিনি, আমরণ তাঁর বিশ্বাস ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয়’ পঙক্তিতে। উল্লেখ করেছেন আরো, প্রত্যেক মানুষের জীবনই একটি ওডেসি, কারো ওডেসি ঘটনাবহুল, বৈচিত্র্যময়, বর্ণাঢ্য, কারো সেই পরিমাণ নয়। শ্রেষ্ঠ কবিতার ভূমিকায় আবার বলেছেন, শুধু দরবেশরাই পারেন পুরোপুরি নির্মোহ হতে, তাই নিজের কবিতা বাছাইয়ের কাজ এত কঠিন।

২০০৬ সালের ১৭ই আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে মহানগরী ঢাকার শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যেদিন শেষ নিঃশ্বাস তিনি ত্যাগ করেন, এক নিরবতা এবং কেমন নিস্তব্ধতা কি নেমে এসেছিল সে-সন্ধ্যায় রাষ্ট্র বাংলাদেশে? যেন একজন শেরপার মহাপ্রয়াণ হয়েছিল সেদিন, যিনি, বাংলা সাহিত্যের কাব্যকাঠামোর নববিন্যাস মানেই যার কবিতা, সেদিন বিদায় জানিয়েছিলেন মাতৃসমা পৃথিবীকে। যিনি জীবদ্দশায়ই বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত ছিলেন।

কালের পথ পরিক্রমায় জীবন ঘষে যারা আগুন জ্বেলেছেন সেইসব আলোর পথযাত্রীদের একজন শামসুর রাহমান। তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় নলিনীকিশোর গুহ সম্পাদিত সোনার বাংলা পত্রিকায় ‘ঊনিশশ ঊনপঞ্চাশ’ নামে, ১৯৪৯ সালে। এরপর বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত কবিতা পত্রিকায় ‘রূপালি স্নান’ কবিতাটি প্রকাশিত হলে কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে শামসুর রাহমানের। বিভিন্ন পত্রিকায় এ-সময় তাঁর কবিতা ছাপা হতে থাকে। তবে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় কবি হিসেবে পরিচিত হওয়ার অনেক পরে, ১৯৬০ সালে, ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ শিরোনামে। জীবনানন্দের ঈষৎ ছায়া পরিলক্ষিত হলেও কবিতার বইটিতে তাঁর মৌলিক কবিপ্রতিভার ছাপ স্পষ্ট ছিলো। কিন্তু দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘রৌদ্র করোটিতে’ প্রকাশিত হলে রীতিমতো হৈচৈ পড়ে যায়। বরিশালের এবং রূপসী বাংলার কবির প্রতি হয়তো একধরনের গভীর ভালো লাগা ছিলো কবির, যার কারণে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রবন্ধের বইটির নামই ছিল ‘আমৃত্যু তাঁর জীবনানন্দ’।

প্রগতির সূর্যসন্তান শামসুর রাহমান ১৯৫৮ সালে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে বিদ্রুপ করে লিখেন ‘হাতির শুঁড়’ কবিতা। কারাগারে অন্তরীণ শেখ মুজিবকে উদ্দেশ্য করে লিখেন ‘টেলেমেকাস’ কবিতাটি। ১৯৬৭ সালের ২২ জুন পাকিস্তানের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী রেডিও পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্প্রচার নিষিদ্ধ করলে সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা ‘দৈনিক পাকিস্তান’-এ কর্মরত থাকার পরও পেশাগত অনিশ্চয়তার তোয়াক্কা না করে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন শামসুর রাহমান। ১৯৬৮ সালে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান পাকিস্তানের সকল ভাষার জন্য অভিন্ন রোমান হরফ চালু করার প্রস্তাব করলে শামসুর রাহমান মাতৃভাষার উপর শোষকের খড়গের বিরুদ্ধে শুধু বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হননি, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লিখেন ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’-র মত হৃদয়স্পর্শী কবিতা। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে ‘আসাদের শার্ট’-এর মতো স্বজাতির করোটিতে গুলিবিদ্ধ চির-অমর কবিতাও লিখেছেন।

সাহিত্যে কবিতার চিরন্তনতার ব্যাপারটি চলে আসে। ফলত অপশাসন, অপশাসকদেরকে সমুচিত জবাব দেওয়ার চিরন্তন একটি অনুষঙ্গ হিসেবে কবিতা চলে আসে। যেসকল কবি শুধু মাটি, মানুষ, সুন্দর ও স্বদেশকে আপন জ্ঞান করে জড়ভরত হয়ে থাকেন, নিজেকে সেরকম জড়ভরত করে রাখেননি শামসুর রাহমান। একজন দায়বদ্ধ কবির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ফলত কবির দায়বদ্ধতা থেকে অপশাসকদের অপশাসনের সমুচিত জবাব দেওয়ার এক মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে শামসুর রাহমানের ‘মেষতন্ত্র’ কবিতাটি আমাদের চোখে ধরা দেয়। ‘মেষতন্ত্র’ কবিতায় আমরা দেখতে পাই: শাসক ও জনতাকে কেন্দ্র করে মেষ ও মালিক বিষয় দুটি এসেছে। জনতা কথা বলতে পারে না; তাদের মুখ বোবা; তারা শুধু শাসকের হুকুম পালন করে, অথচ তারাই কিনা আবার উজ্জ্বল করে রাষ্ট্রের মুখ। কিন্তু কী নির্মম পরিস্থিতি! দিন-রাত-মাস-বছর চলে যায় জনতা টুঁ-শব্দটিও করতে পারে না। শাসকের শোষণে জনতা যেন অতিষ্ট ও নিরুপায় হয়ে দিনাতিপাত করে।

‘দিনদুপুরে ডাকাত পড়ে
পাড়ায় রাহাজানি,
দশের দশায় ধেড়ে কুমির
ফেলছে চোখের পানি।’
[মেষতন্ত্র]

এদিকে যে দেশের আপামর জনগণ যুদ্ধ করেছে নিজস্ব ভাষা, সমাজ, সংস্কৃতি, জাতিসত্তা, অথর্নীতি ও অধিকারের আশায়, সে রাষ্ট্রে কিভাবে গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক নীল ব্লেজারে চারিদিক আচ্ছাদিত থাকে নিশিদিন; স্বৈরাচারী আচরণ বহাল রেখে কিভাবে গণতন্ত্রের নামে হরণ করা হয় মানুষের অধিকার; শামসুর রাহমান লিখলেন:

‘ভোরবেলা ঘন
কুয়াশার তাঁবুতে আচ্ছন্ন চোখ কিছুটা আটকে গেলে তার
মনে হয় যেন সে উঠেছে জেগে সুদূর বিদেশে
যেখানে এখন কেউ কারো চেনা নয়, কেউ কারো
ভাষা ব্যবহার আদৌ বোঝে না; দেখে সে
উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ বিরানায়; মুক্তিযুদ্ধ,
হায়, বৃথা যায়, বৃথা যায়, বৃথা যায়।’
[উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ]

পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের কবিতা ও সংস্কৃতিকে হিন্দুয়ানি-জ্ঞান করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে উপড়ে ফেলতে চেয়েছিলো, তার বিপরীতে কবিতায় শামসুর রাহমানের মিথের ব্যবহার এবং জাতীয়তাবাদী চেতনা কবির অদম্য সাহসকে প্রতিনিধিত্ব করে। শামসুর রাহমানের ‘বন্দী শিবির থেকে’ কবিতার বইটির পুরাণ ব্যবহারের ধরনে স্পষ্টত দেখা যায়, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ সাম্প্রদায়িকতার চিহ্নসূত্র লুপ্ত করতে পেরেছিল। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,/ তোমাকে পাওয়ার জন্যে/ আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?/ আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন?’ ‘খাণ্ডবদাহন’ মিথটির ব্যবহার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জাতীয়তাবাদী চেতনার অন্তর্গত সৌরভ-সুগন্ধির স্মারক হয়ে উঠেছে। এছাড়া ‘প্রবেশাধিকার নেই’ কবিতায় ‘দুর্বাসা’ মুনি আর ‘প্রাত্যহিক’ কবিতায় ‘ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির’-এর মিথ ব্যবহারের মধ্যেও। যে চেতনা জাতির অধিকাংশ মানুষকে একই আবেগ আর স্বপ্নের ছায়ার নিচে নিয়ে এসেছিলো, ১৯৭১-এ দ্বিধাহীন চিত্তে প্রায় অস্ত্র ছাড়াই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ঘর ছাড়তে বাধ্য করেছিলো, আকুল স্বাধীনতার যে পিপাসা সর্বস্তরের মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছিল, সবাইকে একই স্বপ্নে শামিল করানোর এই কাজটি করেছিল মূলত জাতীয়তাবাদী চেতনার মধ্যকার শ্রেণিচেতনা। ‘বন্দী শিবির থেকে’ কবিতার বইয়ে কবি স্পষ্টভাবেই বলেছেন, স্বাধীনতার জন্য কারা কারা অপেক্ষা করছে বা আত্মত্যাগের জন্য ঘর ছেড়েছে। কবি তাঁর কবিতায় উল্লেখ করেছেন ‘হাড্ডিসার অনাথ কিশোরী’, ‘সগীর আলী, শাহবাজপুরের জোয়ান কৃষক’, ‘কেষ্টদাস, জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা’, ‘মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি’, ‘রুস্তম শেখ, ঢাকার রিক্শাওয়ালা’ আর ‘রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো সেই তেজী তরুণ’। একই প্রবণতা লক্ষ করা যায়, তিনি যখন স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত করেন ‘গ্রাম্য মেয়ে’ থেকে শুরু করে ‘মেধাবী শিক্ষার্থী’ হয়ে ‘মজুর যুবা’ পর্যন্ত।

নাগরিক জীবনের পরাঙ্মুখ ছায়া শামসুর রাহমান তাঁর কবিতায় উন্মোচন করেছেন। আধুনিক কবিতার প্রধানসব বৈশিষ্ট্য: নাগরিক জীবনের হতাশা, বিচ্ছিন্নতা, নৈরাশ্য, সংগ্রাম মনস্কতা, মানসিক ক্লান্তি, শহুরে জল ও গরলের পাশাপাশি সমকালীন রাজনীতিও বহুমাত্রিকতায় তাঁর কবিতার ছত্রেছত্রে ধরা দিয়েছে। এছাড়া, নাগরিকতার অনুষঙ্গ হিসেবে উঠে এসেছে তাঁর কবিতায় শহুরে প্রেম, প্রকৃতি, পরিবেশ-পরিস্থিতি, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ। এমনকি কবি নিজেও ‘ইকারুশের আকাশ’ কবিতার বইটিতে নিজেকে নাগরিক কবি হিসেবে তুলেও ধরেছেন। ফলতঃ শামসুর রাহমানকে নাগরিক কবি হিসেবে আখ্যায়িত করাটা সমীচীন। কিন্তু শুধুই নাগরিক কবি হিসেবে তাঁকে গণ্ডিবদ্ধ করাটা অসমীচীন শুধু নয় একদম অনুচিত। ‘মাতাল ঋত্বিক’-র সনেটগুচ্ছের ‘আমিও বনের ধারে’, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘আমার তৃষ্ণার জল’ সনেটগুলি ছাড়াও যার স্পষ্টত প্রমাণ পাওয়া যায় ‘রূপালি স্নান’, ‘কবিকে দিও না দুঃখ’, ‘দুঃখ পেতে থাকি’, ‘রেনেসাঁস’, ‘চাঁদ সদাগর’ প্রভৃতি কবিতায়।

‘আমিও বনের ধারে মধ্যে-মধ্যে একা চলে আসি
শহর পেছনে ফেলে। কোলাহলহীন বেলা কাটে
ঘাসে বসে ঝিলের ঝিলিক আর বীতশস্য মাঠে
পাখি দেখে, শিস বাজে ঘন ঘন; ক্লান্ত শীর্ণ চাষী,
সূর্যসেঁকা, বৃক্ষতলে স্বপ্ন শোঁকে, আশ্রয়-প্রত্যাশী
পান্থজল লম্বা পায়ে বসতির দিকে পথ হাঁটে
এবং সূর্যের চোখ বুজে আসে মেঘাচ্ছন্ন খাঁটে।’
[আমিও বনের ধারে]

যেসকল বৈশিষ্ট্য থাকলে একজন কবি তাঁর ভাষার ও জাতির বড় কবি বলে পরিগনিত হয়ে থাকেন, সেসব বৈশিষ্ট্যের অধিকাংশই শামসুর রাহমানের ছিল। স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত যে বৈশিষ্ট্যটি খালি চোখে ধরা পড়ে সেটা হলো, তাঁর কবিতার একটি বড় অংশের রূপ-রূপান্তরের ইতিহাস রাষ্ট্র বাংলাদেশের রূপ-রূপান্তরের ইতিহাসের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলেছে।

শামসুর রাহমানকে নিয়ে একটি প্রবন্ধে হুমায়ূন আজাদও উপরের নির্মোহ সত্যটি তুলেও ধরেছেন- “আধুনিক কবি শামসুর রাহমান আত্মপ্রকাশে তিরিশের উত্তরসূরি আধুনিক কবি ও কবিতাকে অক্ষুন্ন রেখেছেন। শামসুর রাহমানতো পঞ্চাশের কাব্যপ্রতিভা তাই তাঁর স্বাতন্ত্র্য অবশ্যম্ভাবী। তিরিশের কবিতার কাব্যপ্রতিভার মধ্যে শামসুর রাহমান তার সঙ্গে গেঁথেছেন বাস্তবতা ও অব্যবহিত প্রতিবেশ ও সময়। শামসুর রাহমান সমকালে বিস্তৃত ও বাস্তবতাকে ধারণ করেছেন। তার কবিতায় উঠে এসেছে জাতীয় চেতনার প্রতিটি দ্রোহ, উন্মাতাল, আবহ, উত্তাপ, গণমুক্তির মূখর শব্দামালা। শামসুর রাহমানের কৃতিত্ব এখানেই যে তিনি বাস্তব প্রতিবেশকে ব্যাপক বিস্তৃত বাস্তবতাকে তাঁর কবিতায় ধারণ করেছেন নিজ স্বভাবে। তাইতো তিনি বাংলাদেশের একমাত্র প্রধান কবি রূপে স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। পঞ্চাশের দশক থেকে নতুন শতাব্দীর শুন্য দশক পর্যন্ত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শামসুর রাহমানের কবিতা যে চেতনা ও আকর্ষণের জোরেও দীপ্যমান তা হলো তার কাব্যশৈলী, উপমা, প্রতীক, শিল্পরূপ ভাষার সারল্য, আধুনিক কবিতার শব্দ ও চিত্রকল্প কাব্য ভাষার গেীরবময় এতিহ্যে ও গভীর ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গি তার কবিতাকে যুগে যুগে মানুষের সুখ ও দুঃখের সাথী করেছে।”

শামসুর রাহমানের জন্ম পুরনো ঢাকার মাহুতটুলি এলাকায় নানাবাড়িতে, ২৩ অক্টোবর ১৯২৯ সালে। পৈতৃক বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রামে। প্রয়াণের ১৪ বছর পরে ফিরে তাকালে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে, যে ৭৭ বছরের এক জীবনে কি লিখেননি শামসুর রাহমান! কবিতা ছাড়াও শিশুসাহিত্য, অনুবাদ, গল্প, উপন্যাস, আত্মজীবনী, প্রবন্ধসহ সাংবাদিক ও সাহিত্য-গদ্য নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সবমিলিয়ে শতাধিক গ্রন্থ। জনপ্রিয় কিছু গানের গীতিকারও তিনি। তাঁর কবিতা অনূদিত হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায়। অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও সম্মাননাও লাভ করেছেন শামসুর রাহমান। অনেক প্রতিষ্ঠানই তাঁকে সম্মানিত করতে পেরে নিজেরাই এমনকি সম্মানিত বোধ করেছে। ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ভূষিত করে কবিকে সম্মান সূচক ডি.লিট উপাধিতে।


সহায়ক গ্রন্থ ও পত্রিকা
১। শামসুর রাহমান নিঃসঙ্গ শেরপা, হুমায়ুন আজাদ, বাংলা একাডেমি, ১৯৮৩।
২। আধুনিক কবি ও কবিতা, হাসান হাফিজুর রহমান, বাংলা একাডেমি, ১৯৭৩।
৩। মুক্তিযুদ্ধের কবিতা, রফিকুল ইসলাম, সাহিত্য পত্রিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;

বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্বে শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ও মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ও কিশোরগঞ্জ নিউজ'র নিয়মিত লেখক।

বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি,শিল্প, সংগীত, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার বহুল কার্যক্রম নিয়ে দেশের প্রাচীনতম ও অগ্রণী প্রতিষ্ঠা নবঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র এক সভা এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শনিবার (১১মার্চ ২০২৩) বিকেল ৪-৩০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় নাট্যশালার কনফারেন্স হলের ভিআইপি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বরেণ্য শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্হিতিতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা
কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ। এতে সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সঞ্চালনা করেন।

সভায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সদস্য বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর লেখক, কমামিস্ট ও গীতিকার শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ’র কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা গঠনের দায়িত্ব আরোপ করে তার হাতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র ইশতেহার তুলে দেন বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং অন্যান্য নেতৃবর্গ ।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গীয়'র জার্মানির সভাপতি কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক আমিনুর রহমান বেদু, রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবিশ, ইউনেস্কোর ব্রান্ড এম্বাসেডর নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাত, বঙ্গীয়'র সভাপতি পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, বঙ্গীয়'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলী নিয়ামত, কবি নাঈম আহমেদ, বঙ্গীয়'র কেন্দ্রীয় সদস্য কবি মীনা মাশরাফী, কবি পারভিন আক্তার সহ প্রমুখ।

সভার প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র সম্মিলন উদযাপন বিষয়ক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কবি আজিজুর রহমান আজিজকে আহবায়ক এবং সংগীতশিল্পী শামা রহমানকে সদস্য সচিব করে উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে বঙ্গীয়র সভাপতি পর্ষদের সকল সদস্য, রবীন্দ্র একাডেমির নির্বাহী শাখার সকল সদস্য, বঙ্গীয়র যুগ্ম সম্পাদকবৃন্দসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্টজনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।

দ্বিতীয় পর্বে অযুত তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু সম্মিলন, দ্বিশতজন্মবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মরণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে লেখক কবির আলোচনা সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড নেশন্সের ব্রান্ড এম্বাসেডর জনাব নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাতকে সভাপতি পর্ষদের সদস্য, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবির ঢালীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , সংস্কৃতি সেবক রোকনউদ্দীন পাঠানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, কবি আনোয়ার কামালকে লিটল ম্যাগ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সাংবাদিক শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে নির্বাহী সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক, কবি মীনা মাশরাফীকে নীলফামারী জেলার সমন্বয়ক, জনাব এ এইচ এম সালেহ বেলালকে গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা লেখক কবি আবদুল হালিম খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, কবি মানিক চন্দ্র দে, কবি অর্ণব আশিক, কবি বাবুল আনোয়ার, দৈনিক বঙ্গজননীর সম্পাদক কামরুজ্জামান জিয়া, কবি শাহানা জেসমিন, কবি গবেষক আবু সাঈদ তুলু, চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. বিশ্ব রায় (কলকাতা), বঙ্গীয় চট্রগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফ্যাশন ডিজাইনার আমিনা রহমান লিপি, শিল্পী শাহরিয়ার পিউ, কবি সোহরাব সুমন, কবি সরকার পল্লব, কবি রহিমা আক্তার মৌ, কবি লিলি হক, কবি আকমল হোসেন খোকন, শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, হিরা পারভেজ, ড. দিপু সিদ্দিকী, শিক্ষক ও কবি রওশন ই ফেরদৌস, কবি পারভীন আক্তার, কবি শিল্পী মাহমুদা, পূর্বধলার মো. জাকির হোসেন তালুকদার, কবি আনারকলি, কবি অপরাজিতা অর্পিতা, ডা. নূরুল ইসলাম আকন্দ, আবৃত্তিশিল্পী যথাক্রমে রূপশ্রী চক্রবর্তী, রবিউল আলম রবি সরকার, জেবুন্নেছা মুনিয়া, চন্দনা সেনাগুপ্তা, কবি সংগঠক রাজিয়া রহমান, কবি শামীমা আক্তার, শিল্পী সাদিয়া শারমিন, কবি কনক চৌধুরী, কবি তাসলিমা জামালসহ প্রমুখ।

;

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব



মাহমুদ হাফিজ
কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় শুরু হয়েছে রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসব। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতি সভাগৃহে বিকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, পরিব্রাজক ও ভ্রমণগদ্য সম্পাদক মাহমুদ হাফিজ, স.ম. শামসুল আলম, নাহার আহমেদ, ড. নাঈমা খানম প্রমুখকে সম্মানিত করা হয়।

বিকালে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা। বিশিষ্ট নাট্যকার চন্দন সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও কবি সব্যসাচী দেব। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাধারণ সম্পাদক কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য। এতে সমাপণী বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি কবি স্বপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।

আজ ও আগামীকাল ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি হলে বিকাল থেকে কবিতা ও গল্পপাঠ, আলোচনা, শ্রুতিনাটক, সঙ্গীত অনুষ্ঠিত হবে। রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, নেপাল, আসাম, ত্রিপুরার কয়েশ’ কবি লেখক অংশগ্রহণ করছেন।

;

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাকালে বন্ধ থাকার পর আবারো 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কার্যক্রমে ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ রচিত 'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের একশত কপি শুভেচ্ছামূলক প্রদান করা হবে। 

উল্লেখ্য, আগেও ইংরেজি নববর্ষে এবং ভাষার মাসে শত বিশিষ্টজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থ উপহার দিয়েছিল ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ. এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প-সাহিত্য-সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আনসার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার নামে গঠিত 'শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশন'। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল স্থানীয় নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে জানানো হয়েছে যে, বরকতময়, নেয়ামতপূর্ণ মাহে রমজানের সঙ্গে অন্য কোনো মাসের তুলনা চলে না। রোজা হলো মাহে রমজানে অবশ্য পালনীয় ফরজ আমল, যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নিজে দেবেন। মানবজীবনে রোজা একজন বান্দার আত্মীক ও শারীরিক কল্যাণের ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। তদুপরি, রমজান মাসকে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা তাঁর অপার ক্ষমা, দয়া আর অপরিসীম করুণা দিয়ে বান্দাদেরকে উপহার দিয়েছেন। রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত রোজা সঠিকভাবে পালন করলে রোজাদার নবজাতক শিশু মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানব জীবনে ও সামাজিক ব্যবস্থায় রমজান মাস ও রোজার গুরুত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে ফাউন্ডেশন প্রদত্ত গ্রন্থে। এ গ্রন্থ রমজান মাসের তাৎপর্য এবং রোজার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পাঠকদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে ৩০টি সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ের মাধ্যমে।

'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের লেখক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ। তাঁর পিতা: ডা. এ.এ, মাজহারুল হক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা: নূরজাহান বেগম, সমাজসেবী। ড. মাহফুজ পারভেজের জন্ম: ৮ মার্চ ১৯৬৬, কিশোরগঞ্জ শহরে। পড়াশোনা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচ,ডি)। পেশা: অধ্যাপনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি, গবেষণা ও সাহিত্য সাধনায় ব্রতী। প্রকাশিত গ্রন্থ কুড়িটি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- গবেষণা-প্রবন্ধ: বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরো। দ্বিশত জন্মবর্ষে বিদ্যাসাগর। উপন্যাস: পার্টিশনস, নীল উড়াল। ভ্রমণ: রক্তাক্ত নৈসর্গিক নেপালে। গল্প: ইতিহাসবিদ, ন্যানো ভালোবাসা ও অন্যান্য গল্প। কবিতা: মানব বংশের অলংকার, আমার সামনে নেই মহুয়ার বন, গন্ধর্বের অভিশাপ। অধ্যাপনা ও গবেষণা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের শীর্ষতম মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর এবং কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা কিশোরগঞ্জ নিউজ'র উপদেষ্টা সম্পাদক রূপে সংযুক্ত রয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের  'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজিত হবে রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক, ইতিহাসবিদ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ। সমন্বয় কমিটিতে আরো রয়েছেন কিশোরগঞ্জ নিউজ'র প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ ইসকান্দার আলী স্বপন, সাংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু ও চিকিৎসক নেতা ডা. গোলাম হোসেন।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে আরো জানানো হয় যে, ইতিপূর্বে ঘোষিত ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর সম্মাননা বক্তৃতা ২০২০ এবং ২০২১ করোনাকালের বিরূপ পরিস্থিতিতে স্থগিত থাকায় তা যৌথভাবে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. এএ মাজহারুল হক এবং সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' কর্তৃক কিশোরগঞ্জের জীবিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জীবনব্যাপী বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করতে ২০১৫ সাল থেকে এ সম্মাননা বক্তৃতা আয়োজন করা হচ্ছে, যা বক্তৃতা ও লিখিত আকারে প্রদান করেন মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' গতানুগতিক সম্মাননার বদলে ব্যক্তির কর্ম ও কীর্তির বিশ্লেষণমূলক-মূল্যায়নভিত্তিক সম্মাননা বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত স্বরূপ চিহ্নিত করে এবং এরই ভিত্তিতে জ্ঞাপন করা হয় যথাযথ সম্মান। সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি লিখিত আকারে বক্তৃতা-পুস্তিকায় চিত্রিত হন সম্মাননা প্রাপ্তগণ। মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এই বুদ্ধিবৃত্তিক-একাডেমিক আবহে ধারাবাহিকভাবে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে, যা কিশোরগঞ্জে তো বটেই, বাংলাদেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। শুরু থেকে সম্মাননা বক্তৃতা প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. মাহফুজ পারভেজ, যিনি কিশোরগঞ্জে পাবলিক লেকচার সিরিজের মাধ্যমে গণবুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর তৈরির পথিকৃৎ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রথম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান শিক্ষাবিদ প্রাণেশ কুমার চৌধুরী, ২০১৬ সালে দ্বিতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান দীপ্তিমান শিক্ষকদম্পতি: অধ্যক্ষ মুহ. নূরুল ইসলাম ও বেগম খালেদা ইসলাম, ২০১৭ সালে তৃতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘প্রজ্ঞার দ্যুতি ও আভিজাত্যের প্রতীক: প্রফেসর রফিকুর রহমান চৌধুরী’ এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘ঋদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র: শাহ্ মাহতাব আলী’। ২০১৯ সালে পঞ্চম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা দেয়া হয় 'স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষায় পথিকৃৎ চিকিৎসক-দম্পতি' প্রফেসর ডা. আ ন ম নৌশাদ খান ও প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুনকে। ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ প্রদান করা হয় নাসিরউদ্দিন ফারুকী, ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হককে। এ উপলক্ষে ‘কিশোরগঞ্জে আইন পেশার নান্দনিক বিন্যাস’ শীর্ষক সম্মাননা বক্তৃতা বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ প্রদান করা হয়েছে ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু.আ. লতিফ,  মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ ঊষা দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরীকে, যারা কিশোরগঞ্জের সামাজিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসে স্বকীয় কৃতিত্বের প্রভায় উজ্জ্বল। জীবনব্যাপী কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের জন্য শৈল্পিক দ্যোতনায় নান্দনিক বর্ণালী সৃজন করেছেন এই তিন গুণান্বিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ জানান, ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২০ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২১ একসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা মার্চ মাসের শেষ দিকে আয়োজিত হবে।

;