শামসুর রাহমানের শবযাত্রায়

  • সৈয়দ কামরুল হাসান
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

শহীদ মিনার, শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০০৬, বেলা ১০-৩০ মি :

মানুষের এই দীর্ঘ সারিতে সবাই এসে দাঁড়িয়েছেন। যুবক, যুবতী, শিশু-কিশোর, মাঝবয়সী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাও। হুইল চেয়ারে বসে প্রতিবন্ধীও লাইনে শামিল। কারো হাতে ফুল, কারুর বা মালা। যারা যুথবদ্ধ তারা ফুলের ডালি সাজিয়েছেন। শরতের ফিনফিনে নীল আকাশের নিচে ভাদ্রের উত্তপ্ত রৌদ্র শহীদ মিনারটায় আছড়ে পড়লেও তাকে কেউই আমলে নিচ্ছেন না। শহীদ মিনারটার একপাশে দাঁড়িয়ে চুপচাপ দেখছিলাম এই মৌন জনস্রোত। ভাবছিলাম মানুষের এই মিছিল যেন শামসুর রাহমানের রচিত কোনো এলিজি, হতে পারত তাঁরই কবিতার কোনো বিষয়বস্তু, যেখানে নিজেই তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন : ‘আমরা সবাই এখানে এসেছি কেন?/ এখানে কী কাজ আমাদের?’ মিছিল ধীরে এগিয়ে যায়। একসময় আমারো পালা আসে। রজনীগন্ধার ডাঁটাটি তাঁর পাশ দিয়ে শুইয়ে দিই। ফর্সা, ধবধবে কফিনে-মোড়ানো অবয়ব থেকে একটা জ্যোতির্ময় আভা যেন ঠিকরে পড়ছে। কবি নয়, শুয়ে আছেন যেন এক সন্তপুরুষ, মৃত নয় জীবন্ত যেন বা পুস্পকুণ্ডের ঘেরাটোপ থেকে তাকিয়ে আছেন তিনি। চারদিকে ছড়িয়ে-পড়া টিভি চ্যানেলের যত মাতামাতি, মাইকে কবির কবিতার পংক্তিমালায় নানান স্বরের ওঠানামা, শোকপুস্তকে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মানুষের দীর্ঘ সারিতে দু’চরণ লেখার আকুতি—এ-সবকিছু তাঁর সামনে দিয়ে মেঘের মত ভেসে যায়। এক সফেদ শূন্যতায় শুয়ে আছেন কবি, যেন তাঁর ঠোঁট নড়ছে আর ঝরে পড়ছে উজ্জল পংক্তিমালা : “এখানে দরজা ছিল, দরজার ওপর মাধবী-লতার একান্ত শোভা।/ এখন এখানে কিছু নেই, কিচ্ছু নেই।/ শুধু এক বেকুব দেয়াল, শেল-খাওয়া, কেমন দাঁড়ানো, একা।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে তাঁর জানাজা হবে। জানাজা পড়ার উদ্দেশ্যে মিনারের বেদী থেকে নেমে এবার আমরা মিছিল নিয়ে রাজপথে এসে দাঁড়ালাম। শামসুর রাহমানের শবযাত্রার মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মাঝ দিয়ে টিএসসিকে ডানে রেখে এগিয়ে চলল। এই পথ দিয়ে অনেক হেঁটেছেন তিনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়, বটতলা, লাইব্রেরী, মধুর ক্যান্টিন, চারুকলা, রমনা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (রেসকোর্স), হাকিম চত্বর তাঁর পদস্পর্শের স্মৃতিতে এখনো সজীব। ওইতো টিএসসি কিংবা হাকিম চত্বর। এখানে জাতীয় কবিতা পরিষদের অনেক অনুষ্ঠানই উদ্বোধন করেছেন তিনি। কবিতা পড়েছেন দূর মফস্বল থেকে আসা অচেনা একেবারে অতি তরুণদের সাথে বসে একই মঞ্চে। তাদের পাশে থেকে অভয় দিয়েছেন রাজপথের গনগনে রোদ্দুরে, বর্ষায়, প্রতিবাদী মিছিলে। রাজপথের সেই তরুণটিকে তিনি এঁকেছেন তাঁর কবিতায়; ‘ছেলেটা পাগল নাকি ?’— প্রতিবেশী বুড়ো বললেন খনখনে কণ্ঠে তাঁর।/ ‘পাগল নিশ্চয় , নইলে ঘরের নির্জনে কেন দেয়নি সে ধরা’ ভাবেন লাঠিতে ভর দিয়ে বুড়ো,/ ‘নইলে কেউ বুঝি মিটিং-মিছিলে যায় যখন তখন? সব পুঁজি খোয়ায়, ঘরের খেয়ে তাড়ায় বনের মোষ?/ জীবনের সকালবেলায় গোলাপের মতো প্রাণ জনপথে হারায় হেলায়?’

বিজ্ঞাপন

সেই রাজপথে পা ফেলতেই পথ আমাকে টেনে নিয়ে গেল আরো পেছনের দিনগুলোতে।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ, আমরা যারা মফস্বল শহরের নবীন লিখিয়ে আধুনিক কবিতার খোঁজখবর করতে শুরু করেছি, চাঁদা তুলে ছাপছি একুশের সংকলন, হাতে লিখে বের করছি দেয়াল পত্রিকা—সেসকল দিনে একদা ছোট্ট কিশোরগঞ্জ শহরে ঈশা খাঁর উত্তর পুরুষদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত পাবলিক লাইব্রেরীর বিপুল সংগ্রহশালায় খুঁজে পাই শামসুর রাহমানের দু’টি কবিতার বই ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে,’ এবং ‘রৌদ্র করোটিতে’। পরে জেনেছি এ দুটি কবির প্রথম প্রকাশিত বই। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের আধুনিক কবিতার ওপর হাসান হাফিজুর রহমানের বিখ্যাত আলোচনা পড়ে ফেলেছি, কিন্তু এত প্রশংসা যে শামসুর রাহমানকে নিয়ে তাকেই পড়া হয়নি। তখনও পড়িনি আল মাহমুদ কিংবা শহীদ কাদরী। শামসুর রাহমানের ওই দুটি বই পড়ার পর মনে হলো একেবারে নতুন স্বাদের কবিতা ভিন্ন এক কাব্য ভাষায়। কেমন একটা ঘোর-লাগা জগত্— মধ্যবিত্তের স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের অনুষঙ্গে কাব্যময় সেই জগত্—যেখানে নিয়ত খেলা করে রোদ ও জ্যোছনা, পার্কের নি:সঙ্গ বেঞ্চ, সেখানে ভাগাভাগি করে ঘুমায় এক নি:সঙ্গ খঞ্জ, রোঁওয়া-ওঠা-কুকুর আর ঝরাপাতা। মাথা থেকে কিছুতেই তাড়াতে পারি না যে দৃশ্যাবলী এঁকেছেন তিনি কবিতায়; ‘রোয়াওঠা কুকুরের সাহচর্য্যে গ্রীষ্মের গোধূলি হয়তো লাগবে ভালো / রাত্রি এলে চাঁদ হয়তো অদ্ভুত স্বপ্ন দেবে তার সত্তার মাটিতে / বিষাদের ঘরে কেউ জাগাবেনা তাকে/ পার্কের নি:সঙ্গ খঞ্জটাকে।’ মনের মধ্যে আজো দাগ কেটে বসে আছে রৌদ্র করোটির সেই বিখ্যাত চরণ; ‘আমাদের বারান্দায় ঘরের চৌকাঠে / কড়িকাঠে চেয়ারে টেবিলে আর খাটে/ দু:খ তার লেখে নাম’। শামসুর রাহমানের ওই দুটি কাব্যগ্রন্থ পড়ার সুবাদে একালের কবিতার প্রাসাদে উঠবার একটা সিঁড়ি পেয়ে গেলাম, তিনি যেন অঙ্গুলি নির্দেশে দেখিয়ে দিলেন আধুনিক কবিতার যাত্রাপথটা। একে একে তাঁর বইগুলি পড়তে থাকি— ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, ‘নিরালোকে দিব্যরথ’, ‘নিজ বাসভূমে’, ‘বন্দী শিবির থেকে’, ‘ইকারুসের আকাশ’, ‘ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা’, ‘আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি’, ‘মাতাল ঋত্তিক’, ‘উদভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’, ‘শূন্যতায় তুমি শোকসভা’—যা কিছু প্রকাশ পাচ্ছে তার সবকিছু। পড়লাম তাঁর লেখা অনবদ্য স্মৃতিগদ্য—‘স্মৃতির শহর’, এমনকি বই হয়ে বাজারে আসার আগেই কোনো এক ঈদসংখ্যায় পড়ে ফেললাম তাঁর উপন্যাস ‘অক্টোপাস’। ততদিনে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। কলাভবনের করিডোরে আমাদের প্রথম যৌবন উচ্চকিত উন্মাদনায় নতুন নতুন ব্যঞ্জনায় শামসুর রাহমানকে আবিষ্কার করছে। হরতাল, মিছিল, দাবী-দাওয়া, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ভরা শামসুর রাহমানের কবিতা। ২-৪ টে নয়, অসংখ্য উজ্জ্বল পঙ্ক্তিমালা তাঁর হাতে কবিতার দুর্লভ লালিত্যে ধরা দিয়েছে। তিনি যেন আমাদের নেরুদা, আমাদের নাজিম হিকমত। বর্ণমালা, আমার দু:খিনী বর্ণমালায় তিনি বর্ণমালাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন : ‘তোমাকে উপড়ে নিলে, বলো তবে কী থাকে আমার ?’ মুক্তিযুদ্ধের অবরুদ্ধ দিনে ‘বন্দি শিবির থেকে’ সেই শব্দকে তিনি দেখেছেন: ‘আমার প্রতিটি শব্দ পিষ্ট ফৌজি ট্রাকের তলায়,/ প্রতিটি অক্ষরে গোলা বারুদের/ গাড়ির ঘর্ঘর,/ দাঁতের তুমুল ঘষ্টানি,/ প্রতিটি পঙ্ক্তিতে শব্দে প্রতিটি অক্ষরে/ কর্কশ সবুজ ট্যাঙ্ক চরে, যেনবা ডাইনোসর।’ তাঁর চারপাশের সে-সময়কার চিত্র তিনি যেভাবে এঁকেছেন, তা হয়ে উঠেছে নৃশংস নরহত্যার অমোচনীয় ছবি : ‘সমস্ত শহরে সৈন্যেরা টহল দিচ্ছে,/ যথেচ্ছ করছে গুলি, দাগছে কামান/ এবং চালাচ্ছে ট্যাংক যত্রতত্র। মরছে মানুষ,/ পথে ঘাটে ঘরে, যেন প্লেগবিদ্ধ রক্তাক্ত ইঁদুর।’ কিন্তু যে কোনো মহৎ কবির মত তিনি মানুষের আত্মাহুতিতে দেখেছেন অবিনশ্বর প্রেরণার আভাস। তিনিইতো ‘আসাদের শার্র্ট’-এ লিখেছেন—‘ডালিম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর-শোভিত / মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে-শার্ট/ শহরের প্রধান সড়কে/ কারখানার চিমনি-চূড়োয়/ গমগমে এভেন্যুর আনাচে-কানাচে/ উড়ছে, উড়ছে অবিরাম।’ আর স্বাধীনতা নিয়ে এতদঞ্চলের মানুষের হাজার বছরের যে স্বপ্ন, যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে একদা নজরুল ‘বিদ্রোহী’ লিখেছিলেন, সেই স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাংলাসাহিত্যের সেরা আধুনিক কবিতাটি তো তারঁই হাত দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলো। পাঠকের পক্ষে (কিংবা স্বাধীনতাকামী যে কারুর পক্ষেই) এই দীর্ঘ কবিতার মোহ অগ্রাহ্য করা কঠিন: ‘স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন/ স্বাধীনতা তুমি উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন,/ স্বাধীনতা তুমি বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদির রঙ।… স্বাধীনতা তুমি বাগানের ঘর, কোকিলের গান/ বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,/ যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।’

বিজ্ঞাপন

কবির সাথে মুখোমুখি সাক্ষাতের সুযোগ ঘটলো এর পরপরই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায়ই অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানীতে (গাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত) সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করার সুবাদে একেবারে যেন সংস্কৃতির বৈঠকখানায় এসে পা রাখলাম। সেখানে এসে সবাইকে পাওয়া গেলো শওকত ওসমান কি পটুয়া কামরুল হাসান; কে নেই সেখানে? দেখলাম সেখানেও দিব্যি আলো ছড়িয়ে আছেন এই রাজসিক কবি। হ্যাঁ সন্ধানীর বিশেষ সংখ্যার জন্য লেখা সংগ্রহের ছুতোয় তাঁর ওখানে যাওয়ার সুযোগ ঘটলো প্রথম, দৈনিক বাংলায় তাঁর বিশাল সম্পাদকীয় কক্ষে। চেহারা ছবি তো মুখস্থই ছিল, কিন্তু তাঁর অপূর্ব গৌরকান্তি, রুচিশীল পরিপাটি বেশভূষা আর নম্র, সুরেলা কাঁপা কাঁপা গলার আওয়াজ কাছ থেকে উপভোগ করলাম। নির্ধারিত তারিখে লেখা দিয়ে দিয়েছেন তিনি, কখনোই তারিখ ভুল হয়নি তাঁর। পরে সাক্ষাৎকারও নিয়েছি পুরনো ঢাকায় সৈয়দ আওলাদ হোসেন লেনের বাসায় গিয়ে। একদিন তাঁর শ্যামলীর বাসায়ও গিয়েছিলাম। পিজি হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় তাঁর দীর্ঘ লড়াইয়ের দিনগুলিতে দেশবাসীর মতো আমিও কাটিয়েছি উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় ভরা প্রতিটি প্রহর। কে জানে শেষ শয্যায় তাঁর চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়েছিলো কিনা! তিনিই তো লিখেছিলেন : ‘কবির অশ্রুর চেয়ে দামি মায়াময় অন্য কিছু আছে কি জগতে?’

শবযাত্রার মিছিলটি একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে এসে শেষ হলো। বিশাল মসজিদ উপচানো মুসল্লীরা সবুজ লন ছাপিয়ে রাস্তায়, জানাজায় শরীক। তাঁর কফিনের ফুলবাহী বিশাল ট্রাকবহর মিছিলের পিছু পিছু এসেছে। জানাজা শেষে বনানী যাবে, মায়ের পাশে কবির শেষ শয্যায়।

অপরাহ্নের আলো এসে তীর্যক হয়ে ছুঁয়েছে জনাকীর্ণ শাহবাগের রাজপথ। সে আলোয় জনস্রোতে নিজেকে মিশিয়ে দিই। ঘোর-লাগা চেতনায় টাপুর টুপুর ঝরে পড়ে কবির অমর পংক্তিমালা : ‘আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে/ কেমন নিবিড় হয়ে। কখনো মিছিলে কখনো-বা/ একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়—ফুল নয়, ওরা/ শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধে ভরপূর।’ ফিসফিসিয়ে বললাম—‘বিদায় রাহমান ভাই’।

[আধুনিক বাংলা কবিতার বরপুত্র, স্বাধীনতা ও মুক্তি চেতনার কবি শামসুর রাহমান ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট সন্ধ্যায় ইহলোক ত্যাগ করেন। মৃত্যুর আগে পিজি হাসপাতালে দীর্ঘ ১২ দিন তিনি কোমায় ছিলেন। পরদিন ১৮ আগস্ট বেলা ১০টায় তাঁর মরদেহ সর্বসাধারণের জন্য শহীদ মিনারে আনা হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাজা শেষে বনানী গোরস্থানে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হন। কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সেদিন শহীদ মিনার ছিল লোকে লোকারণ্য, শবমিছিলে মানুষের ঢল নেমেছিলো। অন্যান্যদের সাথে লেখক ছিলেন সেই শবযাত্রায়। সেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে এই স্মৃতিচারণা। ]