কায়সারবাগের কাকা-হুজুর



মঈনুস সুলতান
রেঙুনের সুলে প্যাগোডা। ছবি. লেখক

রেঙুনের সুলে প্যাগোডা। ছবি. লেখক

  • Font increase
  • Font Decrease

সারা দুপুর সেন্ট্রাল রেঙুনের হাটবাজার ঘেঁটে ঘামে গরমে লবেজান হয়ে আমি ও হলেণ আমাদের ঘুমন্ত কন্যা কাজরিকে কাঁধে নিয়ে সুলে প্যাগোডার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবি—এবার যাওয়া যায় কোথায়? আমাদের সামনে সুলে প্যাগোডার সুনশান সোনালি স্থাপত্য। তার চারপাশের চুনকাম করা শপিং কমপ্লেক্সে ক্রেতা বিক্রেতার কোনো পাত্তা নেই। দিন কয়েক হলো আমরা রেঙুনের হাটবাজারে বিস্তর ঘুরছি। খুঁজে খুঁজে খরিদ করছি বর্মার তাঁতে বোনা বস্ত্র, সোনালি ল্যাকারে রঞ্জিত লক্ষীপ্যাঁচা, টিক কাঠের ট্রে ও জেড পাথরের হাতি। কাজরি সব সময় স্থির থাকতে চায় না, সুতরাং তাকে নিয়ে বেশিক্ষণ বাজার-সওদা করা মুশকিল। তাই আমরা তাকে বিরতি দিতে প্রায়ই চলে আসি সুলে প্যাগোডার ভেতরের আঙিনায়। মন্দিরের হিমেল বাতাবরণে সে ওখানে ছোটাছুটি করতে ভালোবাসে। জনা কয়েক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীনীদের সাথে তার ভাবও হয়েছে। মাঝেমাঝে সে তাদের সাথে পালকের ঝাড়ু হাতে মন্দিরের বিগ্রহ ছড়ানো পরিসরে ঝাট দিতেও হাত লাগায়। এ মুহূর্তে সে ঘুমিয়ে পড়েছে, এবং আমাদের খুব পিপাসা পেয়েছে বলে আমরা কায়সারবাগ রেস্তোরাঁর দিকে হাঁটি।

সুলে প্যাগোডার পেছনভাগে ওয়ারলেস টাওয়ারের ছায়া ধরে হেঁটে আমরা কায়সারবাগ রেস্তোরাঁয় ঢুকি। খুব সস্তা কাঠ ও টিন দিয়ে সম্প্রতি তৈরি রেস্তোরাঁর ঘরটি আশপাশের অন্যান্য দোকানপাটের ডিজাইন থেকে ভিন্ন, এবং মানের দিক থেকে এক নজরে তার গরিবি হালতও খুব স্পষ্ট। এ রেস্তোরাঁয় আমরা আরো বার কয়েক এসেছি। সেন্ট্রাল রেঙুনে আসলে এখানে বসে এক পেয়ালা দুধপাত্তি চায়ের সাথে চালের রুটি দিয়ে সুজির হালুয়া—আমাদের পারিবারিক প্রিয় খাবারের তালিকায় পড়ে। এখানকার খদ্দেরদের বেশিরভাই বর্মার মুসলিম অভিবাসি সম্প্রদায়ের বেকার তরুণ। কায়সারবাগের বর্তমান স্বত্বাধিকারীর পরদাদা অনেক বছর আগে লখনৌ থেকে বর্মাটিক কাঠের ব্যবসা করতে রেঙুন এসেছিলেন। লখনৌ শহরে কায়সারবাগ নামে নবাবী আমলের মশহুর একটি প্রাসাদ আছে। রেস্তোরাঁর বর্তমান মালিক তার পুত্র সে স্মৃতিতে আদনা এ চা-খানার নামকরণ করেছেন। বয়সের দিক থেকে মুরব্বি হওয়ার কারণে সকলের কাছে তিনি কাকা-হুজুর বলে পরিচিত। তাঁর আসল নাম এ অব্দি আমাদের জানার সুযোগ হয়নি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/10/1536567592493.jpg
সেন্ট্রাল রেঙুনের দৃশ্যপট

কাকা-হুজুরের বয়স হলেও তাকদ এবং তনদুরুস্তির দিক থেকে তিনি এখনো দড়ো আছেন। তাঁর দীর্ঘ কোঁকড়ানো দাড়ি মেহদি রঞ্জিত। উপর ও নিচের পাটি মিলিয়ে তাঁর মোট চারটি দাঁত খোয়া গেছে। তাই হাসলে তাঁর মুখমণ্ডলকে শিক-ভাঙ্গা জানালার মতো দেখায়। কারণে অকারণে তিনি লখনৌয়ের কবি তকী মীরের কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দিতে পছন্দ করেন। তাঁর কাউন্টারে ক্যাশবাক্সের পাশে ১৮৮৯ সালে লখনৌ থেকে ছাপা মীরের কবিতার একখান দিওয়ান হামেশা মজুদ থাকে। দিওয়ানের পাতাগুলো জিল ছিঁড়ে ঝুরঝুরে হয়ে গেছে। তাই তিনি শের-শায়েরীর কেতাবখানা তাঁতের কাপড়ে তৈরি বস্তনীতে সিজিলমিছিল করে রাখেন।

বেশ কিছুক্ষণ হলো আমরা কায়সারবাগে এসে বসেছি। কাকা-হুজুর আমাদের কোনো খোঁজখবর নিচ্ছেন না দেখে একটু অবাক লাগে। তাঁর খালি কাউন্টারে একটি আগরবাতি অযথা পুড়ে পুড়ে খুশবু ছড়াচ্ছে। আমরা পিপাসার্ত, তাই তাঁর খোঁজে কিচেন থেকে যে ফোঁকর দিয়ে চা-নাশতা সাপ্লাই দেওয়া হয়, তার সামনে এসে দাঁড়াই। রান্নাঘরে জ্বলন্ত চুলার উপর মস্ত এক হান্ডিতে কাকা-হুজুর হাতা দিয়ে কিছু নাড়ছেন। আমার সাথে চোখাচোখি হতেই তিনি কপালের ঘাম মুছে বলেন, ‘জেরা ইন্তেজার করো বেটা, আখনি পাকা রাহা হ্যায়।’ সাথে সাথে আমার নাকে এসে লাগে মশলাদার খুশবু। আমাদের কিন্তু বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না, গামছায় হাত মুছতে মুছতে দু’পেয়ালা লাচ্ছি হাতে কাকা-হুজুর আমাদের সামনে এসে দাঁড়ান। তারপর খুব স্নেহের স্বরে হলেণের কাঁধে হাত রেখে বলেন, ‘বহুত পেরেশান লাগতা হ্যায়.. বাচ্চেলোক, শরবত লাচ্ছি পিয়া করো, আল্লাকা নাম লিয়া করো।’

আমরা হাতপাখা দিয়ে মাছি তাড়িয়ে ধীরেসুস্থে লাচ্ছি পান করতে থাকি। কাকা-হুজুর এখন কাউন্টারে বসে চশমা চোখে বস্তনী খুলে ঘাঁটছেন তকী মীরের শের-শায়েরী। আজ থেকে হপ্তা দুয়েক আগে পয়লা যেদিন তাঁর চা-খানায় আমরা এসে হাজির হই, তিনি আমাদের দিকে খুব তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে ছিলেন। শ্বেতাঙ্গীনী হলেণের গাত্র বর্ণই বুঝি তাঁর অবাক হওয়ার কারণ। কপালে ভাঁজ ফেলে তিনি আমার নাম জানতে চেয়েছিলেন। আমি জবাবে ‘মঈনুস সুলতান’ বললে তিনি আমাকে শুধরে দিয়ে বলেন, ‘মোহাম্মদ মঈনুস সুলতান বলো বেটা।’ নামে মোহাম্মদ সংযোজনের তাঁর প্রস্তাব আমি বিনা বাক্যব্যয়ে কবুল করে নিলে—তিনি ভুরু কুঁচকে হলেণকে দেখিয়ে জানতে চান, ‘কৌণ হ্যায় উ হাসিন আওরত?’ জবাবে আমি কনফিডেন্টলি তাকে শাদি করা বেগম জানালে, তিনি শিক-ভাঙ্গা জানালা খোলার অভিব্যক্তিতে হো হো করে হেসে বলেন,  ‘তুমকো জরুর মীর ছাহেব ক্যা শ্যার শুনানো হোগা।’ তারপর তিনি বস্তনী বিছরিয়ে তকী মীরের দিওয়ান খোলেন। কিতাবখানার বয়স দেখে হলেণ রীতিমতো অবাক হয়। একটি হলুদ হয়ে আসা পৃষ্ঠা দেখিয়ে কাকা-হুজুর পড়েন, “মুহব্বৎসে হ্যায় ইন্তেজাম-এ জহাঁ/ মুহব্বৎসে গর্দিসমেঁ হ্যায় আসমাঁ।” অর্থাৎ “ভালোবাসার জন্যই তো সবকিছু/ আশমান ও তো চরকির মতো ঘুরছে তার টানে।” আচমকা শায়েরবাজিতে খানিক বিব্রত হলে কাকা-হুজুর কিতাব বন্ধ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, “ভুখা হ্যায় তুম দুনো, ঠিক হ্যায়, পয়লা আল্লাকা নাম লাও, ইসকা বাদ হালওয়া রুটি খিলাও। ইয়ে খানে কা লিয়ে কই পয়সা উইসা দেনে কা জরুরত নেহি।”

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/10/1536567706425.jpg
কায়সারবাগে আদি কাঠের বাড়ি

ব্যাস্, মুফতে পয়লা দিন হালওয়া রুটি খিলানোর পর থেকে তাঁর সাথে আমাদের চাচা-ভাতিজার জানপহচান সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায়। সেন্ট্রাল রেঙুনে আসলেই আমরা একবার করে কায়সারবাগে হাজিরা দিই। কিন্তু আজ কেন জানি কাকা-হুজুর নীরব হয়ে আছেন। হলেণ কায়সারবাগের দেয়ালে লটকানো একটি বড়সড় পিকচার ফ্রেমের দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ফটোগ্রাফ আগে আমরা খেয়াল করে দেখিনি। ছবিতে বর্মী কেতায় চমৎকার একটি কাঠের বাড়ির নিচে বড়বড় হরফে ইংরেজিতে হাতে লেখা ‘কায়সারবাগ’। আমি কৌতূহলী হয়ে ছবিটি কিসের তা জানতে চাইলে তিনি দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে যা বলেন, তার সারমর্ম হচ্ছে—মন্দিরের মতো চূড়োওলা টালির ছাদের প্রান্তে কাঠের ঝালর লাগানো সুদর্শন এ বাড়িটি তাঁর পরদাদা তৈরি করিয়েছিলেন পারিবারিক বাসস্থান হিসাবে। ওখানে একান্নবর্তী পরিবারের তিন প্রজন্ম একসাথে বাস করত। বাড়িটির নিচ তলার হলঘরে তেতাল্লিশ বছর আগে কাকা-হুজুর চালু করেছিলেন টি-স্টল কাম রেস্তোরাঁ। বর্মায় গোপনভাবে পরিচালিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত কিছু মুসলমান ছেলেপিলে এ চা-খানায় এসে বসত। পুলিশ তাড়া করলে তিনি তাদের কায়সারবাগের ছাদের কুঠুরিতে লুকিয়ে রাখতেন। বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশ তাঁর পিতামহের হাতে তৈরি কাঠের সুন্দর বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। আজকাল সে ধরনের বাড়ি আবার তৈরি করা খুবই মুশকিল। বর্মাটিক কাঠ বাজারে পাওয়া যায় না, অলঙ্কৃত ছাদ তৈরি করার হাতযশওলা করিগররাও বিগত হয়েছেন। এ রকমের একটি ঘর তৈরির রসদপত্রও দারুণভাবে এক্সপেনসিভ। কাকা-হুজুরের সে কিমত নেই। তাই তিনি সাদামাটা কাঠ ও টিন দিয়ে নতুন ঘর বানিয়ে আবার কায়সারবাগ রেস্তোরাঁটি চালু করেছেন। ঘটনা শুনে আমি ও হলেণ তাকে হামদর্দির সাথে সহানুভূতি জানাই। তিনি ম্লান হেসে—সব আল্লাতালার ইচ্ছা বলে তকী মীরের আরেকটি শের আবৃত্তি করে শোনান, “জফায়েঁ দেখ লিয়ে, বেবফাইয়া দেখি/ ভলা হুয়া কেহ্ তেরি সব বুরাইয়াঁ দেখি।” অর্থাৎ “প্রভু তোমার অসীম দয়ার সাথে আশা দিয়ে আশহত করার নির্মমতাও দেখলাম/ তোমার খারাপ দিকটা দেখতে পেয়ে কিন্তু ভালোই হলো।”

এ শের শুনে অবশেষে বিষণ্ণ মনে কাকা-হুজুরের কাছ থেকে বিদায় নিতে যাই। তিনি হাত নেড়ে বলেন, “বয়ঠো বাচ্চালোক, জেরা বয়ঠো, আভি আরেক দফা পরওয়াদেগার কি নাম লাও, ইস কা বাদ থোড়া আখনি খিলাও।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;