শরণার্থী সমস্যায় বিশ্ব জর্জরিত: ড. রূপ কুমার বর্মণ

  • মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ড. রূপ কুমার বর্মণ ও তার গ্রন্থ।

ড. রূপ কুমার বর্মণ ও তার গ্রন্থ।

২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবসে গবেষক ড. রূপ কুমার বর্মণ বলেছেন, 'বাস্তুচ্যুতি, রাষ্ট্রহীনতা, উদ্বাস্তু, শরণার্থী ও নাগরিকত্বের সমস্যায় সমগ্র পৃথিবী জর্জরিত।' কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ড. রূপ কুমার বর্মণ সেখানকার আম্বেদকার চর্চা কেন্দ্রের সমন্বয়ক এবং গত ২০ বছর ধরে এ বিষয়ে গবেষণা করছেন।

বার্তা২৪.কম'কে তিনি বলেন, 'বিশ্বজুড়ে বাড়ছে শরণার্থী সঙ্কট। বিশ্বে প্রতি দুই সেকেন্ডে একজন মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। বর্তমানে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আট কোটিও বেশি। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এ তথ্য জানিয়েছে। ইউএনএইচসিআর'র কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলায় একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। তিনি শরণার্থী সমস্যা হ্রাস করতে বিশ্বব্যাপী সংঘাত, সহিংসা ও নিপীড়িন বন্ধে রাজনৈতিক-আইনগত উদ্যোগের প্রতিও গুরুত্ব দিয়েছেন।'

বিজ্ঞাপন

ড. রূপ কুমার জানান, '২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৫৫/৭৬ ভোটে অনুমোদিত হয় যে, ২০০১ সালে থেকে জুন মাসের ২০ তারিখ আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস হিসেবে পালন করা হবে। এ কারণে এ দিনটি বাছাই করা হয় যে, ১৯৫১ সালে অনুষ্ঠিত শরণার্থীদের অবস্থান নির্ণয় বিষয়ক একটি কনভেনশনের ৫০ বছর পূর্তি হয় ২০০১ সালে।'

উল্লেখ্য, ২০০০ সাল পর্যন্ত আফ্রিকান শরণার্থী দিবস নামে একটি দিবস বিভিন্ন দেশে পালিত হয়ে আসছিলো। জাতিসংঘ পরবর্তীকালে নিশ্চিত করে যে, অর্গানাইজেশন অব আফ্রিকান ইউনিটি বা ওএইউ পরবর্তীকালে ২০ জুনকে আফ্রিকান শরণার্থী দিবস-এর পরিবর্তে আন্তর্জাতিকভাবে শরণার্থী দিবস হিসেবে ২০ জুনকে পালন করতে সম্মত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ড. রূপ কুমার বর্মণ শরণার্থী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা গ্রন্থ  Migration, State Policies and Citizenship- A Historical Study on India, Bangladesh and Bhutan'- এর প্রণেতা। বইটি ২০২০ সালে প্রকাশ করেছে দিল্লির Aayu Publications।

গবেষণায় ড. কুমার দক্ষিণ এশিয়া উপমাদেশের শরণার্থী সমস্যার মূল শেকড়ের সন্ধান করেছেন ১৯৪৭ সালের দেশভাগের ক্ষতে, যা এখনও রক্তক্ষরণ করছে। তিনি এ অঞ্চলের মানুষের, বিশেষ করে ছিটমহলের অধিবাসীদের নাগরিকতার সঙ্কট ও অধিকারের অবদমনের বিষয়গুলোও পর্যালোচনা করেছেন।  নেপাল, ভুটান, মায়ানমারের বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও ভাষাগোষ্ঠীর উদ্বাস্তুকরণ প্রক্রিয়াকেও নিবিষ্টতায় সমীক্ষা করেছেন তিনি। উপমহাদেশ ছাড়াও কোরিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার আভ্যন্তরীণ বিভেদ ও বিভাজনের ফলে উদ্বাস্তু হওয়া মানুষের নাগরিকতার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন ড. কুমার।

ড. রূপ কুমার বর্মণ বলেন, 'নাগরিকতা মৌলিক অধিকার ও প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই এই মৌলিক নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তারপরে রাজনৈতিক বিভাজন, নানাবিধ দ্বন্দ্ব-সংঘাতে মানুষের এই চিরায়ত অধিকার লঙ্ঘিত হয়ে লক্ষ-কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছেন।'

দক্ষিণ এশিয়ার শরণার্থী ইস্যু প্রসঙ্গে তিনি এ অঞ্চলের দেশগুলোর সাংবিধানিক বিধান, নাগরিকত্ব আইন, রাষ্ট্রহীনতার ধরণ এবং জাতি গঠন প্রক্রিয়ার নানা দিক শরণার্থী সমীক্ষার আলোকে পর্যালোচনা করার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন।