মোস্তফা মহসীনের ছয়টি কবিতা
ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট
বৃষ্টির উত্তাল ভেঙে হাতের মুঠোয় চেপেছো ধ্রুপদী শূন্যতা। তার আগেই পা দিয়ে
মাড়িয়ে এসেছ সর্বগ্রাসী প্রেম। অভিমান ছোঁয়া ধমনিতে ছড়িয়েছে রক্তের ছলাৎ।
কামনায় আত্মনাশি ঘুম। আলোড়িত বশীভূত তোমাকেই শেষ দখলে রাখে স্বপ্নের
ঐকিক নিয়ম! স্বপ্ন প্রত্যাখ্যান করো জান্তব আর্তনাদে; তখন তোমাকে স্বাগত
জানায় স্থলভরা হাজার শিশির। ২০ ভেজা বিষাদতাড়িত নীল (স্বপ্ন ভেজাতেই কি
জীবনের সব সুখ?) তাকিয়েই দেখো, দেখো না। তোমার জন্যে রৌদ্রডানা মেলে
দিয়েছে কি সুন্দর দিন! জীবনের প্রতিবিম্ব হাতে রঙিন পোশাকে দাঁড়িয়েছে এক
রাজপুত্র। মগ্নচৈতন্যের তলদেশ থেকে জেগেছে চাঞ্চল্য। চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে
রক্তে, রক্ত থেকে স্নায়ু...অলৌকিক তরঙ্গধারায়...
টাট্টুঘোড়া বটে
মনকাড়া প্রতিযোগিতার এক ঘোড়দৌড়
গতিমুখ পাল্টে
প্রিয় লাল ঘোড়াটা দাবড়ে
মুখে ঘাস নয়;বাঁক বদলের
হাওয়ায় হাওয়ায়
দিচ্ছো আজ নাটকীয় রুপ!
রঙিন মার্বেল
যেভাবে মাটিতে ঝাঁক বেঁধে
আচড়ে- ছিটকে পড়ে ইতিউতি
সেরকম
ছিটকে গড়ানো রুপঅন্ধ ঘোড়াদের
খাওয়াতে খাওয়াতে
নাকানিচুবানি
সুরভি তুমিও; মনবদলের
এক পাকা ঘোড় সওয়ারী!
পেরিয়ে জঙ্গল উঁচু-নীচু জলাশয়
টগবগ টগবগ হ্রেষা
হ্রেষা ধ্বনি সুমধুর। জিনে বসে
কোমড় দুলিয়ে ভাবো
চড়তে চড়তে...
চড়াতে চড়াতে কি যে সুখ!
টাট্টুঘোড়া বটে তুমি তো পুরুষ!
আঙুলে ঘামের আবরণ-মতো
স্মৃতিময় চকচকে দ্যুতি
বিদ্যুৎ খেলেছে সারামুখ
মানো নি কখনো লিঙ্গের শাসক!
মূলগত
নারীবাদী তুমি তা-ই
বাইরে শক্তির আলোকতরঙ্গ
ভেতরে ভেতরে প্রস্রবণ
বিকেল গড়িয়ে গোধূলির পথে...
তখন আরোও রাঙালো দুঃখের চোট!
ইনসোমনিয়া
বিরাজমান নীরবতার পর ঘরটিতে
মশাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে কি বাড়েনা!
এমতো মীমাংসা বাকী রেখে
হাতের তালুতে তুমি
আজ রাতে ছোঁয়ালে একটু
উষ্ণতার সমঝোতা।
স্মৃতিলোকে নড়েচড়ে বসে দু-তিনটা
চামচিকা
নিহত হবার আগে যারা
গৃহ অধিকার দ্বন্দ্বে মানব জাতির দিকে
ছুঁড়ে দিয়েছিলো
প্রাণ-বিদ্ধ জপমালা!
না-ঘুম- না
জাগরণে
ঘনবসতিতে করোনার মিথস্ক্রিয়া
একটি নভেল ভাইরাস
মৃতের সংখ্যায় নাকি-
রক্তপাতহীন থার্ড ওয়াল্ডওয়ারে হতে যাচ্ছে; কর্তা?
প্রাণঘাতী সংক্রমণ
এড়ানোর মতো
নেই তামাম মাখলুকাতে
কোনো টিকা!
তা-ই শুনে বন্ধু ডিরেক্টর তাঁর
‘নিঃসঙ্গতার সাপলুডু‘র শেষমুভি দৃশ্যে ছুঁড়ে দিয়েছেন-
রহস্যের ঘুর্ণিবার্তা;
অথচ কাঁপেনা দ্যাখো বৃক্ষশাখা
কাঁপে শুধু
চক্ষুহীন কোটরের মতো
পাল্লাহীন তোমার জানালা!
বরাভয়
তোমার শরীর থেকে উষ্ণতার ভাগ
নিচ্ছি
তিনফুট দূরে বসে থেকে
লোভি বিড়ালের মতো ছলাকলা
গুপ্ত রেখে
তোমাকে না ছুঁয়ে বসে থাকাটায়
নেই তো কোনো গ্লানিমা!
দেবতার ছোঁয়াগুলি ভালোবাসা হয়ে
স্পর্শ করলো জমিনে...পৃথিবীর কঠিন অসুখ!
একটি সবুজ পাতা দুলতে দুলতে
ঝরবার আগে আঁধারের টুটি চেপে
বললো;কখনো
ভয় পেয়ো না! না না না!
দেহাত্মবাদ: শিখবো; শেখাবো
আর শক্তিময় শিশ্ন পূর্ণ হোক
রক্তের মায়াবী সঞ্চালনে
যেহেতু ক্ষমতাদাতা
অপ্রসন্ন হয়েছেন;অতিরিক্ত
ক্ষমতা-প্রয়োগ জনিত ভ্রান্তিতে!
মাংস-মেদ-মজ্জা
ধারণ করেছে যে সুরাময়
শোণিত সঘন
ঘামের আবেগে হোক জল
থরোথরো প্রস্ফুটিত;
গ্রীষ্মের মৌসুম জুড়ে ফুটেছে কুসুম
ও সোনালু ফুল!
ভালোবাসার ঠাসবুননে
হুড়বিড় দ্যাখো সঙ্কীর্তন
কোন সেই সাধু যে বলেছে,-
সঙ্গমে লাগেনা নাকি কোনো
মেহনত?
ডাকো তাঁকে
বলো: প্রেষণায় আঁকড়ে ধরেছে
দেহাত্মবাদের নীতি-ব্যাকরণ
ফর্সা ত্বকে পরিচর্যা নিতে
দরজায় কড়া নাড়ে
রুপ সচেতন এক অচেনা মানুষ
যৌবনের ঔদ্ধত্যকে ফাঁকি দিয়ে
তুমি তাঁকে কী করে শেখাবে-
চার্বাক দর্শন?
মাথায় ঘুরছে বর্ষা...
অঝোর বর্ষণ নয় দাও সঞ্জীবনী সুধা
সাম্যবাদীমন্ত্রে আকাশে উড়ুক
ভুলোমনে ফেলে রাখা কনডম
... লাল অন্তর্বাস আর অপ্রকাশিত ব্রা
খোলামনে তাহলে কেবল
উষ্ণতার মুখে আঁড়ি দিতে পারি: প্রিয়তম স্মৃতিচাষা!
সাত স্বপ্নের রাত
ঘোরলাগা তন্দ্রা দুলে দুলে
দোলাতেই থাকে
মাথা
আঙুল ছুঁইয়ে ওই বাহুতে তখন
কী দেখেছো: প্রেসারের পরিমাপ
নাকি আত্মবিশ্বাসের ওঠানামা?
তোমার পাহাড়ে তখনো বরফ
শরীরে আগুন-অভিমান
ঘরময় ইতস্তত ঘুরছিলো
খামখেয়ালীতে পূর্ণ দীর্ঘশ্বাস
বায়ুসেচে
আনলে শীতল কিছু উদ্বিগ্নতা
ঘুম আর জাগরণে অতঃপর
কাগজী লেবুর রসে হাইড্রেট হলো
ধমনী ও শিরা।
আত্মার ভেতরে প্রাণবন্ত রক্তচাপ
অন্ধকার হাতড়ানো
অন্য মানুষেরা
তাঁদের জীবনে
তোমাকেই চায়
রোমান্টিক নায়কেরা যেভাবে হাতটি
ভাঁজ করে
মাথা ডানপাশে কাত করে
চোখ দিয়ে
কিউপিড এর তীরে তোমাকে বিক্ষত করে।