শর্টলিস্ট নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, ৩ নভেম্বর ‘ম্যান বুকার‘ পুরস্কার ঘোষণা



সাঈদ চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

২০২১ সালের বুকার প্রাইজ় নিয়ে বিশ্ব সাহিত্য অঙ্গনে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। নোবেল পুরস্কারের পরই ’বুকার প্রাইজ ফর ফিকশন’ সবচেয়ে আলোচিত এবং সম্মানীত। ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে যথার্থ যাচাই-বাছাই এবং অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়।

বৃটেন সহ দুনিয়াব্যাপী লেখক-পাঠকরা কারো কারো নাম প্রস্তাব করে থাকেন। জনগুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ সমূহ থেকে প্রথমে লংলিস্ট এবং পরে শর্টলিস্ট হয়। সবশেষে নির্বাচকদের বিচারে চূড়ান্ত বিজয়ীর নাম ঘোষিত হয়। আগামী ৩ নভেম্বর জানা যাবে কে হলেন বুকারজয়ী সৌভাগ্যবান।

প্রতি বছরের মত এবারো কর্তৃপক্ষ অসংখ্য বই থেকে বাছাই করে একটি তালিকা তৈরী করেন। এবার ১৩টি বই নিয়ে ‘লংলিস্ট’ বা দীর্ঘ তালিকা হয়। তারা আরো অনেক যাচাই-বাছাই শেষে এখন শর্টলিস্ট বা সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছেন। ছ’টি উপন্যাস আছে এই শর্টলিস্টে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখে ঘোষিত লিস্ট মোতাবেক কাঙ্ক্ষিত প্রাইজের জন্য লড়াই হয় ১৩ জন লেখকের ১৩টি বই। এরমধ্যে ২০১৭ সালে সাহিত্য নোবেল এবং ১৯৮৯ সালে বুকার পুরস্কার বিজয়ী জাপানি লেখক স্যার কাজুও ইশিগুরো ছিলেন দীর্ঘ তালিকায়। তার ‘ক্লারা এন্ড দ্য সান’ বইটি ছিল বিশেষ বিবেচনায়। ২০১৯ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জয়ী আমেরিকান লেখক রিচার্ড পাওয়ার্স-এর ‘বিউইল্ডারমেন্ট’ রয়েছে পুরস্কারের তালিকায়। তিনি ১৯৯১ সালে টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা বই পুরস্কার অর্জন করেন।

 ব্রিটিশ-ভারতীয় লেখক সঞ্জীব সাহোতার ‘চায়না রুম’ দীর্ঘ তালিকায় জায়গা করে নেয়। তার ‘দ্য ইয়ার অব দ্য রানআওয়েজ’ ২০১৫ সালের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল। কানাডীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক র্যাচেল কাস্কের ‘সেকেন্ড প্লেস’ এবারের দীর্ঘ তালিকায় স্থান পেয়েছে। ২০০৫ সালে তার ‘ইন দ্য ফোল্ড’ এই তালিকায় ছিল।

শ্রীলংকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট তামিল ঔপন্যাসিক অনুক অরুদপরগসম-এর ‘আ প্যাসেজ নর্থ’ বইটি তালিকাভুক্ত হয়েছে। তিনি দক্ষিণ এশীয় সাহিত্যের ডিএসসি পুরস্কার জিতেছেন। ব্রিটিশ-সোমালি লেখক নাদিফা মোহামেদের ‘দ্য ফরচুনম্যান’, আমেরিকান ঔপন্যাসিক ও কবি প্যাট্রিকা লকউডের ‘নো ওয়ান ইজ টকিং অ্যাবাউট দিস’, মার্কিন লেখক ম্যাগি শিপস্টিডের ‘গ্রেট সার্কেল’, দক্ষিণ আফ্রিকার ডেমন গ্যালগাট এর ‘দ্য প্রমিস’ তালিকায় আছে। ২০০৩ সালে তার ‘দ্য গুড ডক্টর’ এবং ২০১০ সালে ‘ইন এ স্ট্র্যাঞ্জ রুম’ সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল। 

কানাডীয় উপন্যাসিক ম্যারি লসনের ‘দ্য টাউন কল্ড সোলাস’ এবার দীর্ঘ তালিকায় স্থান পেয়েছে। ২০০৬ সালে তার ‘দ্য আদার সাইড অব দ্য ব্রিজ’ দীর্ঘ তালিকায় ছিল। এই তালিকায় আরো আছে মার্কিন লেখক নাথান হ্যারিসের ‘দ্য সুইটনেস অব ওয়াটার’, দক্ষিণ আফ্রিকার লেখক ক্যারেন জ্যানিংসের ‘অ্যান আইল্যান্ড’, এবং ব্রিটিশ লেখক ফ্রান্সিস স্পাফর্ডের ‘লাইট পার্পেচুয়াল’।

অবশেষে ছ’টি উপন্যাস শর্টলিস্ট হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার সাহিত্যিক ড্যামন গ্যালগাট-এর দ্য প্রমিস, আমেরিকান ঔপন্যাসিক ও কবি প্যাট্রিসিয়া লকউড-এর নো ওয়ান ইজ় টকিং আবাউট দিস, আমেরিকান ঔপন্যাসিক রিচার্ড পাওয়ার্স-এর বিউইল্ডারমেন্ট, শ্রীলঙ্কার অনুক অরূদপ্রগসম-এর আ প্যাসেজ নর্থ, ব্রিটিশ-সোমালি সাহিত্যিক নাদিফা মোহামেদ-এর দ্য ফরচুন মেন এবং আমেরিকান ঔপন্যাসিক ম্যাগি শিপস্টেড-এর গ্রেট সার্কেল।

এবছরের বিচারক কমিটির প্রধান হয়েছেন ইতিহাসবিদ মায়া জেসনফ। বুকার বিজয়ী পাবেন ৫০ হাজার পাউন্ড। বাংলাদেশী হিসেবে প্রায় ৫৯ লাখ টাকা।

‘ম্যান বুকার‘ বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম মর্যাদা সম্পন্ন পুরস্কার। বিগত এক বছরে প্রকাশিত পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের উপন্যাস থেকে বাছাই করা শ্রেষ্ঠটি এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ১৯৬৯ সাল থেকে এই পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এক সময় শুধুমাত্র কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশ এবং আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ২০০৫ সাল থেকে এই পুরস্কার আন্তর্জাতিক ভাবে বিশ্বময় সম্প্রসারিত হয়েছে। 

৫২তম বুকার পুরস্কার বিজয়ীর নাম ১৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে ঘোষণা হল। সেরা হাসি হাসলেন স্কটিশ-আমেরিকান লেখক ডগলাস স্টুয়ার্ট। বিশ্ব সাহিত্যে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হল। তার ‘ শুগি বাইন‘ সেরা হিসেবে বেছে নিলেন বুকার পুরস্কার কমিটির বিচারক মন্ডলী। মাত্র ৪৪ বছর বয়সে তিনি এই মর্যাদা সম্পন্ন পুরস্কার পেলেন। বিজয়ী ঘোষণার পর তার হাতে স্মারক তুলে দেন প্রধান বিচারক মার্গারেট বাসবি। প্রদান করা হয় ৫০ হাজার ইউরোর অর্থমূল্য। বারাক ওবামা, মার্গারেট অ্যাটউড সহ বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা শুভেচ্ছা পাঠান স্টুয়ার্টের উদ্দেশ্যে।

২০২০ বুকার পুরস্কারের মনোনয়নের তালিকায় ছিল- দ্য নিউ ওয়াইল্ডারনেসের জন্যে ডায়ান কুক, এই মরনোয়ল বডির জন্যে সিৎসি ডাঙ্গারেমবাগা, বার্ন সুগার‘র জন্যে অবনী দোশি, হু দে ওয়াজ‘র জন্য গ্যাব্রিয়েল ক্রাউজে, মিরর এবং দ্য লাইট‘র জন্যে হিলারি মন্টেল, অ্যাপিরোগন‘র জন্য কলম ম্যাকক্যান, শ্যাডো কিং এর জন্যে মাজা মেনগিস্টের, সাচ আ ফান এজ‘র জন্যে কাইলি রেইড, রিয়েল লাইফ‘র জন্যে ব্র্যান্ডন টেইলার, রেডহেড বাই দ্য সাইড অফ দ্য রোড‘র জন্যে অ্যানি টেলার, শুগি বাইন‘র জন্যে ডগলাস স্টুয়ার্ট, লাভ অ্যান্ড আদার থট এক্সপেরিমেন্ট‘র জন্যে সোফি ওয়ার্ড, হাউ মাচ অফ দিজ হিলস ইস গোল্ড‘র জন্যে সি পাম জাং।

পুরস্কার জেতার পর স্টুয়ার্ট মুগ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নিজের মাকে প্রাণময় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, উপন্যাসের পরতে পরতে মা সম্পর্কে আমি পরিষ্কার করে বলেছি। তাকে ছাড়া এখানে আসতে পারতাম না। আমার কাজ কোন ভাবেই এখানে পৌঁছাত না। মাত্র ১৬ বছর বয়সে মাতৃ বিচ্ছেদের যন্ত্রনাকে অনুভব করেছিলেন স্টুয়ার্ট। অকালে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়া মাকেই নিজের লেখা প্রথম উপন্যাস উৎসর্গ করেছেন এই স্কটিশ লেখক। মা-ই ছিলেন তার সব থেকে কাছের মানুষ। মায়ের মাদকাসক্তি বেড়েই চলেছিল দিনের পর দিন। বার বার বুঝিয়েও লাভ হয়নি কোনো। ভেতর ভেতর অ্যালকোহল তাকে নিশ্চুপেই ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল। ‘শুগি বাইন‘ উপন্যাসে ওঠে এসেছে তার বেড়ে ওঠা আর নিজের জীবনের অসংখ্য স্মৃতি। মিশে আছে মায়ের মৃত্যু যন্ত্রণা, তার মূল্যবোধ, সামাজিক বেড়াজাল, উত্থান-পতনের কথা। রয়েছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক হৃদয়ভেদী আখ্যান। 

গ্লাসগোতে বেড়ে ওঠা স্টুয়ার্ট তার জন্মভূমি স্কটল্যান্ডবাসীকেও ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে গ্লাসগোর অধিবাসীদের। তিনি বলেন, গ্লাসগোবাসী মানুষের সহানুভূতি, রসবোধ, প্রেম ও সংগ্রাম এই বইয়ে মূল কেন্দ্রবিন্দু। গ্লাসগো স্কটল্যান্ডের বৃহত্তম এবং যুক্তরাজ্যের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। এটি গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপের উত্তর দিকের এক তৃতীয়াংশে অবস্থিত। এর দক্ষিণ-পূর্বে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ৯৬ মাইল দীর্ঘ সীমান্ত, উত্তর ও পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তর-পূর্বে উত্তর সাগর এবং দক্ষিণে আইরিশ সাগর অবস্থিত। মূল ভূখন্ড ছাড়াও দেশটির অনেক দ্বীপ রয়েছে। এক সময়কার বিশ্বের নেতৃস্থানীয় শিল্প শহর ছিল। স্কটিশ পানি সীমা উত্তর আটলান্টিক এবং উত্তর সাগর বেষ্টিত। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বৃহত্তম তেল মজুদ এরিয়া। এজন্যই গ্লাসগো ও অ্যাবরদিনকে স্কটল্যান্ড তৃতীয় বৃহত্তম শহর এবং ইউরোপের তেল রাজধানী বলা হয়।

ম্যান বুকার বিজয়ী ডগলাস স্টুয়ার্ট ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে এখন নিউইয়র্কে বসবাস করেন। গত দুই দশকে তিনি কাজ করেছেন কেলভিন ক্লেইন, বানানা রিপাবলিক, জ্যাক স্পেড প্রভৃতি বহুজাতিক সংস্থায়। রয়্যাল আর্ট কলেজ থেকে স্নাতক করার পরই তিনি পাড়ি দিয়ে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। ২৪ বছর বয়স থেকেই থাকেন নিউইয়র্ক শহর। এ বছরেই তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘লক অ’ শেষ করেছেন, যার পটভূমি গ্লাসগো ঘিরেই গড়ে উঠেছে। 

এ পর্যন্ত ম্যান বুকার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বিশ্বখ্যাত অনেক লেখক। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাজ্যের পি. এইচ. নিউবি - সামথিং টু আনসার ফর উপন্যাস, ১৯৭০ সালে যুক্তরাজ্যের বার্নিস রুবেনস- দ্য ইলেক্টেড মেম্বার উপন্যাস, ১৯৭১ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর ভি এস নাইপল- ইন অ্যা ফ্রি স্টেট ছোটগল্প, ১৯৭২ সালে যুক্তরাজ্যের জন বার্গার- জি উপন্যাস, ১৯৭৩ সালে যুক্তরাজ্য আয়ারল্যান্ডের জেমস গর্ডন ফারেল- দ্য সেইজ অফ কৃষ্ণপুর উপন্যাস, ১৯৭৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার নাডিন গর্ডিমার- দ্য কনজারভেশনিস্ট উপন্যাস ও যুক্তরাজ্যের স্ট্যানলি মিডলটন- হলিডে উপন্যাস, ১৯৭৫ সালে যুক্তরাজ্যের রুথ প্রয়ার ইয়াবভালা- হিট অ্যান্ড ডাস্ট  উপন্যাস , ১৯৭৬ সালে যুক্তরাজ্যের  ডেভিড স্টোরি- স্যাভাইল উপন্যাস,  ১৯৭৭ সালে যুক্তরাজ্যের পল স্কট- স্টেয়িং অন উপন্যাস, ১৯৭৮ সালে যুক্তরাজ্যের আইরিশ মুরডক- দ্য সী, দ্য সী উপন্যাস।

১৯৭৯ সালে যুক্তরাজ্যের পেনেলোপে ফিটজেরাল্ড- অফশোর দর্শনতাত্ত্বিক উপন্যাস, ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের উইলিয়াম গোল্ডিং- রায়টস অফ পেসেজ উপন্যাস, ১৯৮১ সালে ভারতের সালমান রুশদি- মিডনাইট চিলড্রেন উপন্যাস, ১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার  থমাস কেনিলি- শিন্ডলার্স আর্ক জীবনী উপন্যাস,  ১৯৮৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার  জন ম্যাক্সওয়েল কুতসি লাইফ অ্যান্ড টাইম অফ মাইকেল কে উপন্যাস, ১৯৮৪ সালে যুক্তরাজ্যের আনিতা ব্রুকনার- হোটেল ডু লাক উপন্যাস, ১৯৮৫ সালে নিউজিল্যান্ডের  কেরি হুম- দ্য বোন পিপল রহস্য উপন্যাস, ১৯৮৬  কিংস্লে অ্যামিস- দ্য ওল্ড ডেভিলস্ কমিক উপন্যাস, ১৯৮৭ সালে যুক্তরাজ্যের পেনেলোপে লাইভলি- মুন টাইগার উপন্যাস, ১৯৮৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার  পিটার কেরি- অস্কার অ্যান্ড লুসিন্ডা ঐতিহাসিক উপন্যাস।

১৯৮৯ সালে যুক্তরাজ্যের জাপানী কাজুও ইশিগুরো- দ্য রিমেইনস অফ দ্য ডে ঐতিহাসিক উপন্যাস, ১৯৯০ সালে যুক্তরাজ্যের এ. এস. বায়াত- পজেসন: অ্যা রোমান্স ঐতিহাসিক উপন্যাস, ১৯৯১ সালে নাইজেরিয়ান বেন ওকরি- দ্য ফ্যামিস্ড রোড উপন্যাস, ১৯৯২ সালে কানাডার মাইকেল ওন্ডাৎজি- দ্য ইংলিশ পেশেন্ট ও  যুক্তরাজ্যের        ব্যারি উন্সওর্থ- স্যাক্রেড হাঙ্গার ঐতিহাসিক উপন্যাস, ১৯৯৩ সালে যুক্তরাজ্য আয়ারল্যান্ডের রডি ডয়েল- প্যাডি ক্লার্ক হা হা হা উপন্যাস,  ১৯৯৪ সালে যুক্তরাজ্যের জেমস কেলম্যান- হাউ লেট ইট ওয়াজ, হাউ লেট উপন্যাস, ১৯৯৫ সালে যুক্তরাজ্যের প্যাট বার্কার- দ্য গোস্ট রোড যুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস, ১৯৯৬ সালে যুক্তরাজ্যের গ্রাহাম সুইফট লাস্ট অর্ডারস্ উপন্যাস, ১৯৯৭ সালে ভারতের অরুন্ধতী রায়- দ্য গড অফ স্মল থিংস উপন্যাস, ১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যের ইয়ান ম্যাক্ইউয়ান- অ্যামস্টারডাম উপন্যাস।

১৯৯৯ সালে  দক্ষিণ আফ্রিকার জন ম্যাক্সওয়েল কুতসি- ডিসগ্রেস উপন্যাস, ২০০০ সালে কানাডার মার্গারেট অ্যাটউড- দ্য ব্লাইন্ড অ্যাসাসিন ঐতিহাসিক উপন্যাস, ২০০১ সালে যুক্তরাজ্যের পিটার কেরি- ট্রু হিস্ট্রি অফ দ্য কেলি গ্যাং ঐতিহাসিক উপন্যাস, ২০০২ সালে কানাডার ইয়ান মার্টেল- লাইফ অফ পাই রোমাঞ্চকর উপন্যাস, ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার ডিবিসি পিঁয়ের- ভার্নন গড লিটল ব্ল্যাক কমেডি, ২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যের অ্যালান হলিংঘার্স্ট- দ্য লাইন অফ বিউটি ঐতিহাসিক উপন্যাস, ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্য আয়ারল্যান্ডের জন ব্যানভিল- দ্য সী উপন্যাস, ২০০৬ সালে ভারতের কিরণ দেশাই- দ্য ইনহেরিটেন্স অফ লস উপন্যাস, ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্য আয়ারল্যান্ডের অ্যান এনরাইট- দ্য গেদারিং উপন্যাস, ২০০৮ সালে ভারতের অরবিন্দ আদিগা- দ্য হোয়াইট টাইগার উপন্যাস।

২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যের হিলারি ম্যান্টেল- উলফ হল ঐতিহাসিক উপন্যাস, ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের হাওয়ার্ড জ্যাকবসন- দ্য ফিঙ্কলার কোশ্চেন উপন্যাস, ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যের জুলিয়ান বার্নস- দ্য সেন্স অফ অ্যান এন্ডিং উপন্যাস, ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের হিলারি ম্যান্টেল- ব্রিং আপ দ্য বডিজ উপন্যাস, ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের এলিয়ানর ক্যাটন- দ্য লুমিনারিজ উপন্যাস, ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার রিচার্ড ফ্লানাগান- দ্য ন্যারো রোড টু দ্য ডিপ নর্থ উপন্যাস, ২০১৫ সালে জ্যামাইকার মারলন জেমস- অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অফ সেভেন কিলিং উপন্যাস, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পল বিটি- দ্য সেলআউট ব্যঙ্গধর্মী উপন্যাস, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ সান্ডার্স- লিংকন ইন দ্য বার্ডো ঐতিহাসিক উপন্যাস, ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের অ্যানা বার্নস- মিল্কম্যান উপন্যাস, ২০১৯ সালে কানাডার মার্গারেট অ্যাটউড- দ্য টেস্টামেন্টস উপন্যাস ও যুক্তরাজ্যের বার্নার্ডাইন এভারিস্টো- গার্ল, উইমেন, আদার উপন্যাস।

বাংলাদেশী পাঠকের কাছে ‘ম্যান বুকার‘ পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচিতদের মধ্যে রয়েছেন, ২০০১ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী প্রখ্যাত লেখক স্যার ভিএস নাইপল। ‘ইন আ ফ্রি স্টেট’ এর জন্য তিনি ম্যান অব বুকার অর্জন করেন। পিস অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে ডেভিড গ্রুসম্যানকে সবাই চিনে। ব্যতিক্রমী একটি উপন্যাস লিখে ২০১৭ সালে বুকার প্রাইজ লাভ করেন তিনি।  ২০১০ সালে ফিলিস্তিনি এলাকায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে অবস্থান ও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। পুলিশের হাতে মারও খেয়েছেন ইসরায়েলের লেখক ও মানবাধিকার কর্মী ডেভিড গ্রুসম্যান।

অরুন্ধতী রায় ভারতীয় ঔপন্যাসিক, বুদ্ধিজীবী এবং পিস অ্যাকটিভিস্ট। তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে আছেন তার উপন্যাস ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ এর জন্য। ১৯৯৭ সালে উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী হৈচৈ পড়ে যায়। ১৯৯৮ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার লাভ করেন উপন্যাসটির জন্য। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি পরিবেশগত সংশ্লিষ্টতা এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়েও কাজ করেন। ভারতের আসাম রাজ্যের শিলংয়ে অরুন্ধতী জন্মগ্রহণ করেন।

সালমান রুশদি একজন ব্রিটিশ ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তার দ্বিতীয় উপন্যাস মিডনাইটস চিলড্রেন ১৯৮১ সালে বুকার প্রাইজ অর্জন করে। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত তার লেখা জঘন্য বিতর্কিত বই স্যাটানিক ভার্সেস বিশ্বের অনেক দেশেই নিষিদ্ধ। বইটি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। এর প্রতিবাদ হয় বিশ্বের সকল মুসলিম দেশে। বাংলাদেশে সহ বিভিন্ন দেমে বইটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে।

আরব বিশ্বের প্রথম সাহিত্যিক হিসেবে ২০১৯ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার জিতেছেন জোখা আলহারথি। মাতৃভূমি ওমানের রূপান্তর বিষয়ক উপন্যাস ‘সেলেস্টিয়াল বডিস’র জন্য এই পুরস্কার লাভ করেন তিনি। বৈচিত্র্যময় আরব সংস্কৃতির নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে এই উপন্যাসে। বিচারকরা আলহারথির ঐশ্বর্যময় কল্পনাশক্তি, লেখার চিত্তাকর্ষক শৈলি এবং কাব্যিক অন্তর্দৃষ্টির প্রশংসা করেন। উপন্যাসের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে আল-আওয়াফি গ্রামকে ঘিরে। একটি সনাতনী সমাজ থেকে ঔপনিবেশ-উত্তর যুগে যে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল ওমান, তিন বোনের মাধ্যমে সেই পরিবর্তন, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ওমানিরা কীভাবে এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে তা দেখাতে চেয়েছেন জোখা আলহারথি।

লেখক: লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক, কবি ও কথাসাহিত্যিক।

ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মনের বীক্ষণে দলিত, তপশিলি, নিম্নশ্রেণির ইতিহাস



সাৰ্থক লাহা
ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মন

ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মন

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাস চর্চা দীর্ঘকাল ধরে মূলত রাজনীতি, রাজনৈতিক চিন্তা, রাজবংশ, রাজা-রাজত্বের মধ্যে সীমায়িত ছিল। আবার একইসাথে ইতিহাসের সংজ্ঞায়নে কেউ কেউ বলেছেন মহান মহান মানুষের জীবন অবতারনা বা আলোচনার নামই হল ইতিহাস। থমাস কার্লাইলের ভাষায়, 'ইতিহাস হল অসংখ্য মহান মানুষের আত্মজীবনির সারবস্তু’।

মূলত একটা সময় ইতিহাস মানে নেপোলিয়ান, আলেকজান্ডার, অশোক, সমুদ্রগুপ্ত, আকবর প্রমুখ মানুষদের জীবনীগাঁথা ও তাঁদের সময়কালকেই বোঝা হতো। কিন্তু ইতিহাসের যে অন্য অনুষঙ্গ আছে বা ইতিহাস যে সমস্ত শ্রেণির মানুষের ইতিবৃত্ত সেটা বুঝতে বেশ কয়েক শতাব্দী অপেক্ষা করতে হয়।

মূলত গত শতাব্দীর ৮০’র দশক থেকে নিম্নবর্গের কথা ঐতিহাসিক কলমে উন্মোচিত হয়। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন উঠেছে ‘নিম্নবর্গের মানুষ কি সত্যিই কথা বলতে পারে?’- এই প্রশ্নের উত্তরে সজ্জিত উপাত্ত নিয়ে ইতিহাসে যে দলিত শ্রেনি, তপশিলি জাতির উচ্চারনও সমানভাবে প্রতীয়মান, সেই জায়গাটি বাংলা ভাষায় ইতিহাসচর্চার আলোকে যিনি সম্মুখে আনেন তিনি হলেন অন্যতম ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মন। যার কলমে বিভিন্ন গ্রন্থে দলিত শ্রেনি, তপশিলি শ্রেণির তথা নিম্নশ্রেনির ইতিহাস, আত্মকথন, স্বকীয় রচনাগুলি পরিস্ফুটিত হয়েছে। লেখকের ‘সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ গ্রন্থটিও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।

ইতিহাসচর্চা বস্তুনিষ্ঠতা, বিজ্ঞানবাদিতা, নিরপেক্ষতা সহ নানা নতুন অনুষঙ্গ নিয়ে ক্রমশই অগ্রবর্তী হচ্ছে। ইতিহাসবেত্তাদের কলমে ক্রমশই পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, মহামারি, বিজ্ঞান, ক্রীড়াসহ নানাবিধ চর্চা বিশ শতকে নানা আবর্ত আলোচিত হতে দেখা যায়।

মুখ্যত বাংলা ভাষায় জাতপাত, জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ বিষয়ক আলোচনার আবর্ত দীর্ঘকাল যাবৎ ইতিহাসচর্চাকারীদের কলমে অপাংক্তেয় অবস্থাতেই থেকে গিয়েছিল। ঔপনিবেশিক কালপর্বে এবং সাম্প্রতিকে কিছুক্ষেত্রে জাতিচেতনা, দলিত আন্দোলন নিয়ে লেখালেখি হলেও মূলত তা ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যেই সীমায়িত। কাজেই কলকাতার গাঙচিল প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত রূপ কুমার বর্মনের ‘সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ এই গ্রন্থটি জাতপাতের ও আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিকনির্দেশক গ্রন্থ তা বলাই যায়।

লেখক মূলত সমকালীন পশ্চিমবঙ্গকে এক্ষেত্রে অনুধাবন করেছেন। অসংখ্য সাক্ষাৎকার ও ক্ষেত্রসমীক্ষা সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযোজন এবং অসংখ্য প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্তিকরনের প্রয়াসের ফসল এই গবেষণা গ্রন্থটি। শিরোনামেই ধরা পড়েছে গ্রন্থের মূল নির্যাস। যার মধ্যে সমকালীন পশ্চিমবঙ্গের জাতপাত, জাতি-হিংসা, তপশিলিদের সামাজিক স্তরীকরণে কী অবস্থা, অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা, নারীদের বৈষম্যকরনের পাশাপাশি ডান-বাম রাজনীতির আবহে এই তপশিলি জাতির চিত্রপটের স্বরূপ অনুধাবন, জাতিকেন্দ্রিক রচনা, কিছু ব্যক্তিত্বের বর্ননের সাথেও সরকারী নীতি, বিভাগ স্থাপন, প্রতিস্থান নির্মান ও নামকরন প্রভৃতি নানাবিধ বিষয়ের সংযুক্তকরুন বইটিকে এক অনন্য মাত্রা দান করেছে।

রুপ কুমার বর্মনের গ্রন্থটিতে ভূমিকা, অধ্যায়ীকরন, উপসংহার, সুদীর্ঘ গ্রন্থ তালিকা সহ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারের সন্নিবিষ্টকরন পরিলক্ষিত করতে পারি। গ্রন্থ তালিকায় প্রাথমিক তথ্যাদি সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক রচনা, অফিসিয়াল ও লেখ্যাগারের তথ্যাদি ও বৈদেশিক গ্রন্থের প্রয়োগ গ্রন্থটির প্রামাণ্যতাকে নির্দেশ করে। অতিরিক্ত তথ্যাদির এই ব্যবহার গ্রন্থটিকে আরো প্রাঞ্জল করেছে।

গ্রন্থটির ভূমিকাংশে জাতপাত এবং জাতি, বর্ণবাদের উৎপত্তির ব্যাখ্যা থেকে শুরু করে প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগের বর্ণবাদের বিকাশ এবং ক্রমশই যে জাতপাতের ভারতীয় সমাজে নিম্নবর্ণীয়দের প্রান্তিকায়িত করার আভাস তার ব্যাখ্যা দেখতে পায়। লেখক ইসলামিক এবং ঔপনিবেশিক সময়কালেও গ্রন্থগুলি অবলোকন করে ভারতীয় সমাজের নিম্নবর্ণীয়দের কি অবস্থান, তারা কিভাবে জাতি বৈষম্যের শিকার সেই ব্যাখ্যা করেছেন এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন আইন এবং প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা মধ্য দিয়ে নিম্নবর্ণীয়দের অবস্থা যে ক্রমিক প্রভু-দাস সম্পর্কের (patron-client Relationship) বন্ধনে নিমজ্জিত হয়েছে। এবং প্রান্তিকিকরন হয়ে যাওয়ার যে ব্যাখ্যা সেটা আমরা দেখতে পাই এবং স্বাধীনতার সময়কালে ভারতের নিম্ন বর্ণের জাতি জাতি হিংসা অবসানের যে প্রচেষ্টা এবং সেই প্রচেষ্টায় তপশিলি জাতি এবং জনজাতীয় অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতির স্বরূপ কতটা বিকাশমূলক হয়েছে তার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এবং খুব সুস্পষ্টভাবে ভারতীয় প্রেক্ষিতে পরিবর্তনের অনুধাবন করার চেষ্টা করেছেন এবং সমকালীন পশ্চিমবঙ্গেও জাতপাতের যে ধারাবাহিকতা সেটির আলোচনা করেছেন।

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তপশিলি জাতি ক্রমিক কিভাবে মৌখিক তথা বাহ্যিক এবং মানসিক জাতপাতের শিকার হচ্ছে সেই নব ব্যাখ্যাও এক্ষেত্রে সুস্পষ্ট।

গ্রন্থটির বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে এই জাতপাত, জাতি-রাজনীতি, জাতি-হিংসা, জাতি-বৈষম্য এই বিষয়গুলি পরিস্ফুটিত হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে পশ্চিমবঙ্গে জাতপাত, জাতি হিংসা এবং সামাজিক সংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক স্তরীকরণের ক্ষেত্রে জাতপাতের যে গুরুত্বপূর্ণ সেই ব্যাখ্যা যেমন আলোচিত হয়েছে তেমনি অন্য মেরুতে পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চলে চলতে থাকা বাচিক, মানসিক, ব্যবহারগত জাতপাতের যে অন্ধকার দিক সেটি লেখক তুলে ধরেছেন।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে স্বাধীনতার পর্বে পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তনকালীন রাজনীতি জাতপাত বা জাতি রাজনীতি কে কতটা ত্বরান্বিত করেছে এবং তপশিলি জাতির বিকাশ তথা উন্নয়ন নাকি তপশিলিরা রাজনীতির শিকার হয়েছে সেই ব্যাখ্যায় আমরা মূলত সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত পর্যবেক্ষিত হতে দেখি।

গ্রন্থটির তৃতীয় অধ্যায় মূলত বাংলার নিম্নবর্ণীয়দের নিজস্ব স্বকীয় লেখনীর মাধ্যমে তাদের অবস্থা নির্ণয়ের বা নির্মাণের আলোকে উঠে এসেছে। খুব সুন্দর ভাবেই লেখক বিভিন্ন জীবনী সাহিত্য, সৃজনধর্মী সাহিত্য অবলোকন এবং ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গে নিম্নবর্ণের উত্থানের প্রশ্নটিই উত্থাপন করেছেন। গ্রন্থটির চতুর্থ অধ্যায়ে বাংলার তপশিলি সমাজের থেকে রাজনীতিতে প্রতিনিধিত্বকরণ এবং বেশ কিছু নিম্নবর্ণীয় মানুষের বিস্মৃত স্মৃতির নতুন করে চর্চা এবং চর্যার জগতে আনার আলোকে রচিত হয়েছে।

জাতপাত, জাতি-বৈষম্য, জাতি রাজনীতি এই শব্দবন্ধগুলি ভারতীয় সমাজের আদি থেকে বর্তমান পর্যন্ত সমানভাবেই বহমান হয়ে রয়েছে। সমাজে অন্যকে দেখার মানসিকতা, প্রভু-দাসত্বের সম্পর্ক উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণের রূপক বর্তমান বিশ্বায়ন এবং প্রযুক্তির যুগেও সমভাবেই জাজ্বল্যমান সেটি পরিস্ফুটিত হয়েছে। গ্রন্থটি অনুধাবন করলে আমরা এই বিষয়টির সুস্পষ্ট বর্ণনা ফুটে উঠতে দেখতে পারি। কাজেই শুধুমাত্র ইতিহাস চর্চার আলোকে বা ইতিহাস পাঠকদের কাছেই নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে এই বইটির এক অন্যকথনের গল্প বলে যে গল্প জাতপাত, জাতি হিংসা, বৈষম্য প্রভৃতি বিষয়ের সংযোজনে জাতপাতের ইতিহাসে এই গ্রন্থটির গুরুত্বকে বর্নিত করে।

অনেক প্রশ্নের জবাব রূপ কুমার বর্মনের সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ গ্রন্থটি সজ্জা, জাতি ইতিহাসের নানা আঙ্গিকে বর্ননা, নির্ভরযোগ্য গ্রন্থতালিকা এবং সার্বিক-সুস্পষ্ট বর্ননা গ্রন্থটিকে অনন্য মাত্রা দান করে। হাল আমলে দাঁড়িয়ে জাতপাতের বর্ননা, আঞ্চলিক প্রেক্ষিত, জাতি-হিংসার নানা দিকের উন্মোচন এবং বিভিন্ন তথ্যাদির প্রয়োগে সার্বিকভাবে সমকালীন বাংলার জাতপাতের ইতিহাস নির্মানের ক্ষেত্রে এক দিকনির্দেশক পাঠ হয়ে উঠেছে রূপ কুমার বর্মনের ‘সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ গ্রন্থটি।

গ্ৰন্থ আলোচনা
সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ: জাতপাত, জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ
রূপ কুমার বর্মণ
গাঙচিল প্রকাশনী, কলকাতা, ২০২২, দাম- ৪০০ টাকা
.....

সাৰ্থক লাহা, গবেষক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

;

নজরুল পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর শেষ ইচ্ছা



সোমঋতা মল্লিক
নজরুল পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর শেষ ইচ্ছা

নজরুল পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর শেষ ইচ্ছা

  • Font increase
  • Font Decrease

“তোমার মহাবিশ্বে কিছু হারায় না তো কভু।

আমরা অবোধ, অন্ধ মায়ায় তাই তো কাঁদি প্রভু।।"

১৪ মে, সকাল। কলকাতার রবীন্দ্র সদনে সমবেত কণ্ঠে ধ্বনিত হল এই নজরুল সঙ্গীত। বহুল প্রচলিত গানটি এই বিশেষ দিনে আমার কাছে ধরা দেয় অন্যরূপে। সমুখে শায়িত রয়েছেন সদ্য প্রয়াত কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ শ্রীমতী কল্যাণী কাজী। নিথর দেহে পুষ্পের অঞ্জলি। তাঁকে ঘিরে তাঁর আপনজনদের এই মর্মস্পর্শী উচ্চারণ মনকে ব্যাকুল করে।

তাঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘ ১২-১৩ বছরের আত্মিক সম্পর্ক। ছায়ানট (কলকাতা)-এর হাত ধরেই যদিও এই সম্পর্ক শুরু হয়, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমাদের পরিবারের একজন। তাঁর কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি তা অবর্ণনীয়। আমার জীবনে এই প্রথম নজরুল জন্মজয়ন্তী যেদিন কল্যাণী কাজী আর সশরীরে আমাদের মধ্যে নেই। একথা ভাবলেই চোখ ভরে ওঠে জলে। বছরের এই বিশেষ দিনগুলিতে তাঁর সাথে দেখা হলে মনে হত, কি অসীম ভালোবাসায় তিনি আমাদের প্রাণের কবিকে অন্তরে ধারণ করেন। আর পাঁচজন শিশুর মতো তিনিও নজরুলকে ভালোবেসেছেন শৈশবেই।


'অন্তরঙ্গ অনিরুদ্ধ' বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, "ছেলেবেলা থেকেই আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। 'প্রভাতী', ‘লিচুচোর’ থেকে শুরু করে ‘বিদ্রোহী', 'আমার কৈফিয়ৎ’ ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’, ‘ইন্দ্রপতন’ প্রভৃতি কবিতা বিভিন্ন বয়সে মনে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। ছবিতে তাঁর ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল আর বড় বড় ভাবালু চোখ দুটোর দিকে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতাম। খুব কাছ থেকে তাঁকে দেখার ইচ্ছা হত। মনে পড়ছে, একবার গৃহশিক্ষককে অনুরোধ করেছিলাম তাঁকে দেখতে নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু কেন জানি না শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়ে ওঠেনি। নিয়তি সেদিন অলক্ষ্যে নিশ্চয় হেসেছিলেন। নয়ত যে মানুষটাকে শুধু মাত্র চোখের দেখা দেখবার জন্য সেদিন ব্যাকুল হয়েছিলাম - পরবর্তী জীবনে তাঁরই পরিবারের একজন হয়ে তাঁর কাছে থেকে তাঁকে সেবা করার সুযোগ পেলাম কি করে? একেই বোধহয় বলে ‘বিধিলিপি’!

এই বিরল ব্যক্তিত্বের খুব কাছের মানুষ হয়েও, দুর্ভাগ্যবশত আমি সুস্থ অবস্থায় তাঁকে পাইনি। আমি এ বাড়ীর ছোট বউ হয়ে আসার বেশ কয়েক বছর আগেই বিস্মৃতি তাঁর চেতনার ওপর কালো পর্দা টেনে দিয়েছিল। তবুও আমাদের সবার প্রিয় ‘মামনি’ প্রমীলার স্নেহচ্ছায়ায় থেকে, তাঁর যতটুকু সেবা করার সুযোগ পেয়েছি তাতেই আমি ধন্য।"


এভাবেই কাজী অনিরুদ্ধর সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হওয়ার সুবাদে নজরুল পরিবারের একজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বহু অন্তরঙ্গ আড্ডায় তিনি পরিবারিক স্মৃতিচারণা করতেন।

প্রথমবার তাঁর শ্বশুরবাবা কে সামনে থেকে দেখার অনুভূতির বর্ণনা যখনই দিতেন, মনে হত আমরাও সেই সময়ে উপস্থিত হয়েছি। তাঁর কথা বলার ভঙ্গি ছিল অসাধারণ। অতি সামান্য ঘটনাও তাঁর বাচনভঙ্গিতে হয়ে উঠত অসাধারণ।

তাঁকে ঘিরেই জমে উঠত আড্ডা। কখনও কথা, আবার কখনও গেয়ে উঠতেন একের পর এক নজরুল সঙ্গীত। নিয়মিত দূরদর্শনে নজর রাখতেন কোন্ শিল্পী কিভাবে নজরুলের গান গাইছেন। বিভিন্ন চ্যানেলের প্রভাতী অনুষ্ঠান দেখতে খুবই ভালোবাসতেন। পরিচিত শিল্পী হলে অনুষ্ঠানের পরেই চলভাষের মাধ্যমে অভিনন্দন জানাতেন। এভাবেই তিনি ভালোবাসায় আবদ্ধ করে রাখতেন সকলকে।

নজরুল চর্চার সঙ্গে যুক্ত যে কোন ব্যক্তি/সংগঠনকে তিনি আপন করে নিতেন। তাঁর পূর্ণদাস রোডের বাড়িতে ছিল নজরুল প্রেমীদের নিত্য যাতায়াত। নজরুল বিষয়ক আলোচনায় তাঁর ক্লান্তি ছিলনা। যে কোন সময়, যে কোন পরিস্থিতে তিনি পাশে থেকেছেন। ২০১৭ সালে কলকাতার বুকে প্রথম নজরুল মেলার আয়োজন করে ছায়ানট (কলকাতা), উদ্বোধক কল্যাণী কাজী। শিশুদের জন্য নজরুলের লেখা ২৫টি ছড়া ও কবিতা নিয়ে ২০২১ সালে ছায়ানটের উদ্যোগে কল্যাণী কাজীর কণ্ঠে ‘শিশু কিশোরদের নজরুল’ শিরোনামে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। পরম যত্নে তাঁর হাতে গড়া দল 'বিষের বাঁশী' ছায়ানট (কলকাতা) - এর বহু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে।


নজরুল সঙ্গীতের শিক্ষা তিনি কিভাবে পেয়েছিলেন সেই বিষয়ে কল্যাণী কাজী স্মৃতিচারণা করেছেন, "সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিল্পী শ্রী ধীরেন্দ্র চন্দ্র মিত্রের কাছে গান শেখার সুযোগ পাই। কিন্তু আজ আমার মনে হচ্ছে আমি সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারিনি। বাংলা গানের সাথে সাথে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেও যাতে ব্যুৎপত্তি লাভ করতে পারি,  তিনি তার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। কিন্তু আমার তখন চটুল গানের দিকেই ঝোঁক বেশি, তাই রাগ সঙ্গীতের জটিল পথে চলতে মন চাইত না। যতদিন যাচ্ছে ততই বুঝতে পারছি গলাকে স্ববশে রেখে গান গাইতে হলে, বিশেষ করে নজরুল গীতিকে প্রাণবন্ত করতে রাগ সঙ্গীত চর্চা খুবই দরকার।

আজ সঙ্গীতের শিক্ষকতা করতে গিয়ে নজরুল গীতির সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের সব রকমের বাংলা গানের চাহিদা যে মেটাতে পারি, তারজন্য আমি আমার গুরু শ্রদ্ধেয় শ্রী ধীরেন্দ্র চন্দ্র মিত্রের কাছে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ। সেদিন যদি তিনি জোর করে খেয়াল, ঠুংরী, দাদরা, গীত, গজল এর সাথে সাথে কীর্তন, পুরাতনী, রাগপ্রধান প্রভৃতি গান না শেখাতেন, তবে গানের অনেক ধারাই আমার অজানা থেকে যেত। কাজী নজরুলের গানের সঙ্গে প্রকৃত পক্ষে তিনিই আমায় প্রথম পরিচয় করান। প্রথম যে নজরুল গীতিটা শিখিয়েছিলেন সেটা হল হাম্বির রাগে নিবদ্ধ 'আজো কাঁদে কাননে কোয়েলিয়া'। এরপর তিনি শেখালেন 'ভোরের ঝিলের জলে', 'প্রথম প্রদীপ জ্বালো', 'শাওন আসিল ফিরে', 'ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি' প্রভৃতি নজরুলের রাগভিত্তিক গানগুলো।


আমার স্বামী অনিরুদ্ধ যখন নজরুল গীতির স্বরলিপির বই 'রাগবিচিত্রা'-র প্রস্তুতি নেন, তখন আমিই হাম্বির রাগের গানটির স্বরলিপির কাজে সাহায্য করেছিলাম। তিনি গানটা জানতেন না। অপ্রচলিত গানটা পরে খুবই জনপ্রিয় হয়েছে।" 

তিনি অসুস্থ ছিলেন বেশ কয়েকমাস, কিন্তু তাঁর জীবনীশক্তি ছিল প্রবল। জীবনের বহু দুঃসময়কে তিনি জয় করেছিলেন অবলীলায়। ১২ মে ভোরে নজরুল অনুরাগীদের চোখের জলে ভাসিয়ে অনন্তলোকে পাড়ি দিলেন তিনি।

তাঁর কন্যা অনিন্দিতা কাজী বলেছেন মায়ের শেষ ইচ্ছের কথা। শোকবার্তায় অনিন্দিতা লিখেছেন - "মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁর নিজের বাড়িতে (৭৪ এইচ, পূর্ণদাস রোড, ট্রায়াঙ্গুলার পার্ক) দাদু ও ঠাকুমার স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটা আর্কাইভ হবে।"

আমরা সকলেই চাই তাঁর শেষ ইচ্ছে পূরণ হোক।

সোমঋতা মল্লিক, নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ও গবেষক। সভাপতি, ছায়ানট (কলকাতা)।

;

বাজারে এলো আতিফ ওয়াফিকের বই ‘এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া’ 



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এইচ এম আতিফ ওয়াফিক, যোগাযোগের ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ, তার সর্বশেষ বই "এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া" বাজারে এসেছে। এই বইটি আজকের পাঠকদের দ্রুত-গতির বিশ্বে সঠিক আচরণের শিল্প সম্পর্কে একটি সমসাময়িক দৃষ্টিভঙ্গি সরবরাহ করবে বলে লেখক মনে করেন।

একটি সমাজে যেখানে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, "এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া" সেই ব্যক্তিদের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ হিসাবে কাজ করবে বলে লেখক মনে করেন। বিশেষ করে আজকের স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রী দের এই বই টি অনেক কাজে আসবে। এই বইটি পাঠকদের আধুনিক আচরণের সূক্ষ্মতা আয়ত্ত করতে সাহায্য করার জন্য ব্যবহারিক পরামর্শ এবং কার্যকরী টিপস প্রদান করে৷

"এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া" যত্ন সহকারে গবেষণা করা হয়েছে, পাঠকদের সমসাময়িক শিষ্টাচারের নিয়ম সম্পর্কে সর্বশেষ অন্তর্দৃষ্টি এবং নির্দেশিকা প্রদান করে। এর সহজ ভাষা এবং উপস্থাপন উদাহরণ সহ, সমস্ত পটভূমির পাঠকদের জন্য উপযুক্ত, তারা তাদের সামাজিক দক্ষতা পোলিশ করতে চাইছে বা তাদের পেশাদার চিত্র উন্নত করতে চাইছে।

এইচ এম আতিফ ওয়াফিক একজন অন্বেষিত যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, তার আকর্ষক কথা বলার ব্যস্ততা এবং অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ পরামর্শের জন্য পরিচিত। বর্তমানে তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স এ ।

রিডিং ক্যাফে, বনানীতে বইটি উন্মোচনের সময়, জনাব ববি হাজ্জাজ (একজন অক্সফোর্ড স্কলার), জনাব সোলায়মান শুকন (একজন বাংলাদেশী যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ), জনাব শাহরিয়ার নাফীস (সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার), জনাব হাসান মাহমুদ (প্রতিষ্ঠাতা, স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ার্স), জনাব বেনজির আবরার (প্রতিষ্ঠাতা, এক্সিলেন্স বাংলাদেশ), মিসেস আফরুজা তানজি (রাষ্ট্রদূত, ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড), মিসেস শারমিন কবির (প্রতিষ্ঠাতা, রিতু), মিসেস ইশরাত নাহের ইরিনা (প্রতিষ্ঠাতা, প্রেসক্রিপশন বাংলাদেশ), জনাব ফাহিন আরাফিন (ক্রিয়েটিভ হেড, স্বপ্ন), জনাব সালেহীন মাহবুব (বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ), মিসেস ফারহানা শারমিন (ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজিস্ট, রিমার্ক এইচবি), এবং আরও অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী প্রিয় শিক্ষার্থীউপস্থিত ছিলেন।

;

কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ'



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ'

কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ'

  • Font increase
  • Font Decrease

আধুনিক বাংলা সাহিত্যে তিনি একক ও অনন্য। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। যার অগ্নিঝরা লেখনি ত্রস্ত করেছে ঔপনিবেশিক শাসকদের। যার বই বার বার বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যাকে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছে দিনের পর দিন।

নজরুল শতবর্ষ আগে বন্দি ছিলেন কলকাতার আলীপুর সেন্ট্রাল জেলখানায়। নজরুল বিষয়ক সংগঠন ছায়ানট কলকাতা শিল্প, সঙ্গীত, সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা-গবেষণার পাশাপাশি নজরুল স্মৃতিধন্য হেরিটেজ স্থান ও স্থাপনাসমূহ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সক্রিয় রয়েছে। ছায়ানট কলকাতার সভাপতি, বিশিষ্ট শিল্পী, সোমঋতা মল্লিক কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের নজরুলতীর্থগুলো নিজে গিয়ে সেগুলো রক্ষার প্রশাসনিক ও নাগরিক তৎপরতা চালিয়ে ছিলেন। যার ফলে এবছর নজরুল জয়ন্তীতে কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে স্থাপিত হয়েছে 'নজরুল কক্ষ'।


ছায়ানট কলকাতা সভাপতি সোমঋতা মল্লিক বার্তা২৪.কম'কে জানান, গত ১৪ ডিসেম্বর,২০২২ তারিখে ছায়ানট (কলকাতা) তথ্য সহ WBHIDCO - এর কাছে এই মর্মে আবেদন করে যে, নজরুল স্মৃতি বিজড়িত আলিপুর জেল মিউজিয়ামে কাজী নজরুল ইসলাম যে জায়গায় বন্দি হিসেবে ছিলেন, সেই জায়গাটি চিহ্নিত করা এবং নজরুল মূর্তি স্থাপন করার জন্য।

তিনি বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি,২০২৩ তারিখে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে নজরুলের আগমনের শতবর্ষকে স্মরণ করে ছায়ানট (কলকাতা) এবং আলিপুর মিউজিয়াম যৌথভাবে একটি অনুষ্ঠানও পালন করে।

শনিবার (২৬ মে) আমরা সত্যিই আনন্দিত, আমাদের এই প্রস্তাব তাঁরা বিবেচনা করেছেন এবং আলিপুর মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ' তৈরি হয়েছে, জানান সোমঋতা মল্লিক।

;