স্মৃতির আয়নায় আবু বকর চৌধুরী ও পিয়ারট্রি লেন



সাঈদ চৌধুরী
আবু বকর চৌধুরী

আবু বকর চৌধুরী

  • Font increase
  • Font Decrease

আমার শশুর আবু বকর চৌধুরী ছিলেন একজন সংস্কৃতিবান, সত্যবাদি ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। পরোপকারকে যিনি কর্তব্য মনে করতেন। মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সাদা মনের মানুষ ছিলেন। অন্যের আনন্দে আনন্দিত হতেন এবং অন্যের ব্যথায় ছিলেন ব্যথিত। আত্মমর্যাদাগত দিক দিয়ে অভিজাত শ্রেণির হলেও খোলামনে সবাইকে ভালোবেসে, সবার ভালোবাসায় ধন্য ছিলেন। গতকাল রাতে (০৯.১১.২০২১) তিনি চলে গেছেন মহান মাবুদের দরবারে। ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলাইহি রা-জিউ-ন। মরহুমের রুহের মাগফেরাত ও জান্নাতুল ফেরদৌস কামনা করছি। সেই সাথে শোক সন্তপ্ত পরিবার ও স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ যেন সবাইকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দান করেন।

আবুবকর চৌধুরী কেন জানি আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবাসার নজির স্থাপন করেছেন। সিলেট শহরে প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল, সেদিন থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তা অটুট ছিল। তাঁর মেয়ের জন্য আমাকে যখন পছন্দ করে বিয়ের কার্ড ছাপতে দেন, তখন আমি বিনীত ভাবে বারণ করেছিলাম, মেয়ের পছন্দ নিশ্চিত হবার জন্য। সেদিন আমার কথা তিনি রেখেছেন। এরপর এই পরিবারের সব কিছুতে শশুর মহোদয় আমাকে যে অগ্রাধিকার দিতেন তাতে মাঝে মধ্যে আমি বিব্রত বোধ করতাম। কারণ তাঁর একমাত্র ছেলে ও তিন মেয়ের সকলেই উচ্চ শিক্ষিত এবং অত্যন্ত যোগ্যতা সম্পন্ন পদস্থ কর্মকর্তা। দুই মেয়ের স্বামী তথা আমার ভায়রা দুজনই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারী আমি লন্ডন এসে পৌছি। দিনটি ছিল বুধবার। আকাশ ছিল খুবই পরিচ্ছন্ন। রোদেলা বিকেল। প্রিয়তমা স্ত্রী সহ আমার শশুর বিমান বন্দরে আমাকে স্বাগত জানালেন। হিথ্রো থেকে ইস্ট লন্ডন। পথের দুপাশে সারি সারি বাড়িঘর। মাঝে মাঝে ছায়াঘন বৃক্ষরাজি। দুষ্প্রাপ্য শ্যামলিমা। গোধুলী বেলায় নদী তীর হয়ে আসার পথে ঠান্ডার আমেজ অনুভব করেছি। তিনি আমার গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে দিলেন।

সূর্য তখন মালদহি আমের রঙ ধরেছে। আগের দিন নাকি কনকনে ঠান্ডা ছিল। গন্তব্যে পৌছে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। দেশ থেকে নিয়ে আসা হালকা উপহার সামগ্রী বের করতে গেলে উপস্থিত সকলে তাজ্জুব! তাদের চক্ষু যেন চড়ক গাছ! ব্যাগেজে সিলেট শহরের সাহিত্যিক-সাংবাদিক, রাজনীতিক ও সমাজসেবিদের শত শত ছবি! উপস্থিত অনেকে রহস্য না বুঝলেও আমার শশুর বিষয়টি ঠিকই বুঝেছেন। তিনি আমাকে ভাল সাংবাদিক জেনে প্রথম দেখাতেই জামাতা হিসেবে পছন্দ করেছিলেন। ছবিগুলো মনে হল তার পছন্দ হয়েছে। তিনি বললেন, আমি যেন আমার এই পেশায় সম্পৃক্ত থাকি।

এখানে আমার প্রথম ঠিকানা ছিল ইস্ট লন্ডনের পিয়ারট্রি লেন। শ্যাডওয়েল বেসিনের পার্শ্ববর্তী সুবিশাল লেক সংলগ্ন বাসা। বৃহদাকার বাউন্ডারি সমৃদ্ধ। চমৎকার নৈসর্গিক পরিবেশ। বাসার নীচ তলায় বৈঠকখানা। দু’তলায় থাকেন আমার শশুর। আমি ৩য় তলায়। ঘরে বসে মনে হত সমুদ্রবর্তী কোথাও অবস্থান করছি।

আবুবকর চৌধুরী সুনামগঞ্জ দরগাপাশার পুরাতন জমিদার পরিবারের সদস্য। সিলেট শহরের কুমারপাড়ায় স্থায়ী বসবাস। বিলেত এসেছেন স্বাধীনতার আগে। এখানকার বাঙ্গালি কমিউনিটির সমৃদ্ধির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডা. হারিছ আলী প্রমুখ বেশ ঘনিষ্ট ছিলেন।

আমাকে ভালোবেসে বাড়ি কেনার পূর্ব পর্যন্ত কোন ভাড়া বাসায় যেতে দেননি। একসাথে থাকতে বাধ্য করেছেন। আমার সহধর্মিনী পেশায় একাউন্টেন্ট। তার একান্ত প্রয়াসে ২০০৩ সালে আমরা নিজস্ব বাসায় চলে আসি।

পিয়ারট্রি লেনে থাকাবস্থায় বাসার ঠিক সামনে শ্যাডওয়েল বেসিনের সবুজ মাঠে প্রায় প্রতিদিন তাঁকে নিয়ে ব্যায়াম ও পায়চারি করতাম। রোদেলা দিন হলে মাঠের শেষ প্রান্তে টেমস নদীর তীরে বসে সাহিত্য রচনা করতাম। যে স্থানটিতে বসে আমি লেখি, সেটিও এক ঐতিহাসিক জায়গা। ম্যাড্জ ডার্বি (MADGE DARBY) তার ঐতিহাসিক গ্রন্থ ওয়্যাপা’স পিপল্স (WAEPPA’S PEOPLE) লিখেছিলেন ঠিক এই জায়গায় বসে। আমার অনেকগুলো ভালো কবিতা ও গল্প টেমস তীরে এই নান্দনিক পরিবেশে লেখা হয়েছে।

শ্যাডওয়েল বেসিন ঘনিষ্ঠভাবে ওয়াপিংয়ের সাথে এবং বৃহত্তর অর্থে লন্ডনের ইতিহাসের সাথে আবদ্ধ। জো স্পেন্সার তার ব্রিফ হিস্ট্রি অফ ওয়াপিং গ্রন্থে (ZOE SPENCER’S BRIEF HISTORY OF WAPPING) লিখেছেন, ওয়াপিং মূলত একটি স্যাকসন বন্দোবস্ত ছিল। এটি ছিল টেমস নদীর পার্শ্ববর্তী একটি জলাশয়। ওয়াপল অর্থ বুদবুদ বা ফেনা (‘WAPOL’ MEANING ‘BUBBLE’)। এর থেকেই ওয়াপিং নামকরণ হয়েছে। ১৬শ শতাব্দী পর্যন্ত এটি বাগান সমৃদ্ধ নৌঘাট ছিল। ওয়াপিংয়ে সমুদ্র সংশ্লিষ্ট দীর্ঘ ইতিহাস আছে। ১৫৪৬ সালে লাইমহাউস থেকে যাত্রা করার আগে স্যার ওয়াল্টার রেলিহের (SIR WALTER RALEIGH) জাহাজটি ওয়াপিংয়ে সজ্জিত হয়েছিল। তরুণ জেমস কুক ওয়াপিংয়ের বাসিন্দা ছিলেন। ক্যাপ্টেন ব্লাইও ওয়াপিংয়ে বহু বছর বসবাস করেছেন।

নদী পথে মালামাল পরিবহনের ঘাট হিসেবে এটি ব্যবহৃত হত। আমার জন্মভূমি সিলেট সদর উপজেলার বাদঘাটের সাথে একটা অদ্ভুত মিল আমি খুঁজে পাই। ভারত থেকে নদীপথে সিঙ্গেরখাল নদী দিয়ে মালবাহী স্টিমার এসে বাদাঘাট এলাকায় থামত। আর এখানে এশীয় অঞ্চল থেকে চাল, তামাক ইত্যাদি পণ্য নিয়ে লন্ডনে আগত জাহাজগুলী আনডাউন হয়। কেন জানি ইতিহাসের চোরাবালিতে আমাদের জাহাজি শ্রমিকদের ছোঁয়া আমি অনুভব করি।

প্রায় ৪০০ বছর ধরে টাওয়ার হ্যামলেটসে বাঙালির বসবাস। জাহাজের নাবিক কিংবা শ্রমিক হিসেবে তারা প্রথম এসেছিলেন। বিভিন্ন দেশ হয়ে এক সময় ইস্ট ইন্ডিয়া ডক কোম্পানিতে কাজ নিয়ে এসে ওঠেন পূর্ব লন্ডনের ওয়াপিং ও শ্যাডওয়েল এলাকায়। এদের মাধ্যমেই টাওয়ার হ্যামলেটসে বাঙালির বসতি শুরু। গত শতাব্দীর মধ্যভাগে সীমিত সংখ্যক উচ্চ শিক্ষার জন্য এসেছেন। তবে ভাওচার ভিসায় ব্যাপকভাবে ব্রিটেনে আসা শুরু হয়। আমার শশুর তাদের অন্যতম।

আবুবকর চৌধুরীর বর্ণনা মোতাবেক, শ্রমিক ও অধিকার বঞ্চিত মানুষের স্বার্থ রক্ষা আন্দোনের সূতিকাগার ছিল এই এলাকা। ১৬৬৬ সালে নাবিক ও শ্রমিকদের স্বল্প বেতনের বিরুদ্ধে ডিউক অব অ্যালবামার (DUKE OF ALBEMARLE) নিরাপত্তা কর্মিদের সাথে ভয়াবহ দাঙ্গার ঘটনা এখানেই ঘটেছে। ১৮০০ সালে ডক আইন (LONDON DOCK ACT) পাস হয় এবং এখানে লন্ডন ডক স্থাপিত হয়। তখন দরিদ্র জনগনকে ন্যূনতম মূল্য দিয়ে বিনা ক্ষতিপূরণে তাড়িয়ে দেয়া হয়। আজকের এই অভিজাত ভবন সমূহের নিচে চাপা পড়ে আছে অনেক গরীব মানুষের বাড়িঘর ও ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভাবতে কষ্ট হয়!

সে যাক, একসময় ওয়াপিংয়ে নৌবাহিনীর সৈনিকদের বসবাস ছিল। এখান থেকেই জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা হত। নদীপথে নাবিকদের সাথে প্রায়ই জলদস্যুদের রক্তাক্ত লড়াই সংঘটিত হয়। নিরাপত্তার জন্য চোর-ডাকাত প্রতিরোধে তখন প্রতিবছর ব্যয় ছিল প্রায় অর্ধ মিলিয়ন পাউন্ড। দণ্ডপ্রাপ্ত বিদ্রোহী ও জলদস্যুদের সাউথওয়ার্কের মার্শালিয়া জেলখানা থেকে ওয়াপিংয়ে এক্সিকিউশন ডকে নিয়ে আসা হয়। এখানে তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তাদের দেহগুলি তখন খাঁচায় ফেলে রাখা হয়।

১৭৯৮ সালে লন্ডনে নদী পুলিশ বাহিনী (RIVER POLICE FORCE) প্রতিষ্ঠা করা হয়। থেমস পুলিশ সদর দফতরটি (THAMES POLICE HEADQUARTERS) আজও ওয়াপিংয়ে অবস্থিত। বিভিন্ন দেশ থেকে ট্রেনিংয়ে আশা চৌকস পুলিশ অফিসারগন এখানে এসে অভিজ্ঞতা নিয়ে যান।

শ্যাডওয়েল বেসিনের উভয় প্রান্তে স্টিলের সেতুগুলি বেশ চমৎকার। ব্রিজগুলি ওয়াপিংয়ের ভিতর এবং বাইরে অ্যাক্সেসের একমাত্র মাধ্যম। শ্যাডওয়েল বেসিনটি ওয়াপিং ডকগুলির সর্বশেষ স্থাপনা। ডার্টমুর কারাগারের (DARTMOOR PRISON) স্থপতি ড্যানিয়েল আলেকজান্ডার (DANIEL ALEXANDER) লন্ডন ডক ডিজাইন করেছিলেন। তার ক্লাসিকাল নকশা এখনো প্রশংসিত। এখানে হাউজবোট এবং লিভ-ইন ইয়টও পাওয়া যায়।

শ্যাডওয়েল অঞ্চল উন্নয়নের প্রাণপুরুষ টমাস নেল (THOMAS NEALE) ১৬৫৬ সালে শ্যাডওয়েল বেসিনের সেন্ট পলস চ্যাপেলটি তৈরি করেছিলেন। এটি ১৮২১ সালে পুন:নির্মাণ করা হয়। এখানকার প্রায় আবাসস্থল ছোট কাঠের ফ্রেমে ইট দিয়ে পূর্ণ ছিল। পেলিকান সিঁড়ির দিকে যাওয়ার জন্য একটি ছোট্ট এলি রয়েছে। যখন নদীর জোয়ার কম হয় তখন নীচের দিকে যাওয়া যায়। হাইওয়ে এবং নদীর মধ্যবর্তী এ জায়গাটি ভিক্টোরিয়ান ব্রিটেনের অন্যতম সংযোগস্থল।

১৯৮৬ সালে রূপার্ট মারডোকের নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (RUPERT MURDOCH’S NEWS INTERNATIONAL) এর মুদ্রণ কাজ এখান থেকে শুরু হয়। অবশ্য ২০০৮ সালে নিউজ ইন্টারন্যাশনাল এর প্রিন্টিং অপারেশন হার্টফোর্ডশায়ার চেশান্টে স্থানান্তরিত হয়েছে।

শ্যাডওয়েল বেসিনের সাথে ভাল পরিবহণ সুবিধা রয়েছে। ওয়াপিং ওভারগ্রাউন্ড স্টেশন এবং শ্যাডওয়েল ডিএলআর ও শ্যাডওয়েল আন্ডারগ্রাউন্ড সহজে ইস্ট লন্ডন এবং সাউথ লন্ডনের সাথে সংযুক্ত। এছাড়া নিকটবর্তী টাওয়ার হিল আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন থেকে ডিস্ট্রিক এবং সার্কেল উভয় লাইন যাতায়াত করে।

বর্তমানে এই এলাকায় বাংলাদেশী সহ বহু জাতিক মানুষ বাস করেন। শ্যাডওয়েল বেসিন আউটডোর একটিভিটিজ সেন্টার এখানে বেশ সক্রিয়। তারা দক্ষতার সাথে জল ভিত্তিক দুঃসাহসিক ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করে। সুযোগ সুবিধা এবং সরঞ্জামের ব্যবহার সাশ্রয়ী রাখতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমস্ত ক্রিয়াকলাপ জাতীয়ভাবে স্বীকৃত যোগ্যতর কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত হয়। কেন্দ্রটি আরওয়াইএ এবং বিসিইউ দ্বারা অনুমোদিত শিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃত। অ্যাডভেঞ্চার ক্রিয়াকলাপ লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত।

লন্ডনে যাপিত জীবনের প্রথম ঠিকানা পিয়ারট্রি লেন। আমার শশুরের প্রিয় পছন্দের জায়গা। এটি লন্ডনের সমস্ত নদীর তীরবর্তী একটি জায়গা। ওয়াপিং চেলসির বিলাসবহুল বাঁধ, লন্ডন ব্রিজের চকচকে টাওয়ার এবং সাউথ ব্যাংকের সাংস্কৃতিক হাব বেষ্ঠিত অঞ্চল। আমার অনেক কবিতার জন্ম হয়েছে এই টেমস তীরে। স্পন্দিত এই পিয়ারট্রি লেন থেকে স্মৃতির ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে অনেক গল্পমালা।

আজ পিতৃতুল্য আবুবকর চৌধুরী চলে গেছেন না ফেরার দেশে। যিনি নিজের চিন্তা না করে আমাদের চিন্তা করতেন। সারাটা জীবন অন্যের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ছিলেন। ভালো কাজ এবং মানুষের সেবা ও আতিথেয়তার মাঝে তিনি আনন্দ পেতেন। নিজের দেশটাকে আরো সুন্দর দেখতে ব্যাকুল ছিলেন। তাঁর অন্তর ছিল সদা দ্যূতিময়। কোন ভয় ভীতি ছিলনা। অনায়াসে সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারেন। সকলকে সেবাদান ও সম্মান করেই হয়েছিলেন সম্মানিত। মহান আল্লাহ তাঁকে মমতার চাদরে আবৃত করুন।

লেখক: লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক, কবি ও কথাসাহিত্যিক

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;

বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্বে শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ও মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ও কিশোরগঞ্জ নিউজ'র নিয়মিত লেখক।

বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি,শিল্প, সংগীত, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার বহুল কার্যক্রম নিয়ে দেশের প্রাচীনতম ও অগ্রণী প্রতিষ্ঠা নবঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র এক সভা এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শনিবার (১১মার্চ ২০২৩) বিকেল ৪-৩০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় নাট্যশালার কনফারেন্স হলের ভিআইপি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বরেণ্য শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্হিতিতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা
কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ। এতে সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সঞ্চালনা করেন।

সভায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সদস্য বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর লেখক, কমামিস্ট ও গীতিকার শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ’র কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা গঠনের দায়িত্ব আরোপ করে তার হাতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র ইশতেহার তুলে দেন বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং অন্যান্য নেতৃবর্গ ।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গীয়'র জার্মানির সভাপতি কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক আমিনুর রহমান বেদু, রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবিশ, ইউনেস্কোর ব্রান্ড এম্বাসেডর নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাত, বঙ্গীয়'র সভাপতি পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, বঙ্গীয়'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলী নিয়ামত, কবি নাঈম আহমেদ, বঙ্গীয়'র কেন্দ্রীয় সদস্য কবি মীনা মাশরাফী, কবি পারভিন আক্তার সহ প্রমুখ।

সভার প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র সম্মিলন উদযাপন বিষয়ক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কবি আজিজুর রহমান আজিজকে আহবায়ক এবং সংগীতশিল্পী শামা রহমানকে সদস্য সচিব করে উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে বঙ্গীয়র সভাপতি পর্ষদের সকল সদস্য, রবীন্দ্র একাডেমির নির্বাহী শাখার সকল সদস্য, বঙ্গীয়র যুগ্ম সম্পাদকবৃন্দসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্টজনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।

দ্বিতীয় পর্বে অযুত তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু সম্মিলন, দ্বিশতজন্মবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মরণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে লেখক কবির আলোচনা সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড নেশন্সের ব্রান্ড এম্বাসেডর জনাব নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাতকে সভাপতি পর্ষদের সদস্য, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবির ঢালীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , সংস্কৃতি সেবক রোকনউদ্দীন পাঠানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, কবি আনোয়ার কামালকে লিটল ম্যাগ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সাংবাদিক শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে নির্বাহী সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক, কবি মীনা মাশরাফীকে নীলফামারী জেলার সমন্বয়ক, জনাব এ এইচ এম সালেহ বেলালকে গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা লেখক কবি আবদুল হালিম খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, কবি মানিক চন্দ্র দে, কবি অর্ণব আশিক, কবি বাবুল আনোয়ার, দৈনিক বঙ্গজননীর সম্পাদক কামরুজ্জামান জিয়া, কবি শাহানা জেসমিন, কবি গবেষক আবু সাঈদ তুলু, চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. বিশ্ব রায় (কলকাতা), বঙ্গীয় চট্রগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফ্যাশন ডিজাইনার আমিনা রহমান লিপি, শিল্পী শাহরিয়ার পিউ, কবি সোহরাব সুমন, কবি সরকার পল্লব, কবি রহিমা আক্তার মৌ, কবি লিলি হক, কবি আকমল হোসেন খোকন, শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, হিরা পারভেজ, ড. দিপু সিদ্দিকী, শিক্ষক ও কবি রওশন ই ফেরদৌস, কবি পারভীন আক্তার, কবি শিল্পী মাহমুদা, পূর্বধলার মো. জাকির হোসেন তালুকদার, কবি আনারকলি, কবি অপরাজিতা অর্পিতা, ডা. নূরুল ইসলাম আকন্দ, আবৃত্তিশিল্পী যথাক্রমে রূপশ্রী চক্রবর্তী, রবিউল আলম রবি সরকার, জেবুন্নেছা মুনিয়া, চন্দনা সেনাগুপ্তা, কবি সংগঠক রাজিয়া রহমান, কবি শামীমা আক্তার, শিল্পী সাদিয়া শারমিন, কবি কনক চৌধুরী, কবি তাসলিমা জামালসহ প্রমুখ।

;

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব



মাহমুদ হাফিজ
কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় শুরু হয়েছে রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসব। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতি সভাগৃহে বিকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, পরিব্রাজক ও ভ্রমণগদ্য সম্পাদক মাহমুদ হাফিজ, স.ম. শামসুল আলম, নাহার আহমেদ, ড. নাঈমা খানম প্রমুখকে সম্মানিত করা হয়।

বিকালে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা। বিশিষ্ট নাট্যকার চন্দন সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও কবি সব্যসাচী দেব। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাধারণ সম্পাদক কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য। এতে সমাপণী বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি কবি স্বপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।

আজ ও আগামীকাল ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি হলে বিকাল থেকে কবিতা ও গল্পপাঠ, আলোচনা, শ্রুতিনাটক, সঙ্গীত অনুষ্ঠিত হবে। রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, নেপাল, আসাম, ত্রিপুরার কয়েশ’ কবি লেখক অংশগ্রহণ করছেন।

;

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাকালে বন্ধ থাকার পর আবারো 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কার্যক্রমে ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ রচিত 'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের একশত কপি শুভেচ্ছামূলক প্রদান করা হবে। 

উল্লেখ্য, আগেও ইংরেজি নববর্ষে এবং ভাষার মাসে শত বিশিষ্টজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থ উপহার দিয়েছিল ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ. এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প-সাহিত্য-সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আনসার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার নামে গঠিত 'শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশন'। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল স্থানীয় নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে জানানো হয়েছে যে, বরকতময়, নেয়ামতপূর্ণ মাহে রমজানের সঙ্গে অন্য কোনো মাসের তুলনা চলে না। রোজা হলো মাহে রমজানে অবশ্য পালনীয় ফরজ আমল, যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নিজে দেবেন। মানবজীবনে রোজা একজন বান্দার আত্মীক ও শারীরিক কল্যাণের ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। তদুপরি, রমজান মাসকে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা তাঁর অপার ক্ষমা, দয়া আর অপরিসীম করুণা দিয়ে বান্দাদেরকে উপহার দিয়েছেন। রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত রোজা সঠিকভাবে পালন করলে রোজাদার নবজাতক শিশু মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানব জীবনে ও সামাজিক ব্যবস্থায় রমজান মাস ও রোজার গুরুত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে ফাউন্ডেশন প্রদত্ত গ্রন্থে। এ গ্রন্থ রমজান মাসের তাৎপর্য এবং রোজার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পাঠকদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে ৩০টি সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ের মাধ্যমে।

'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের লেখক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ। তাঁর পিতা: ডা. এ.এ, মাজহারুল হক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা: নূরজাহান বেগম, সমাজসেবী। ড. মাহফুজ পারভেজের জন্ম: ৮ মার্চ ১৯৬৬, কিশোরগঞ্জ শহরে। পড়াশোনা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচ,ডি)। পেশা: অধ্যাপনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি, গবেষণা ও সাহিত্য সাধনায় ব্রতী। প্রকাশিত গ্রন্থ কুড়িটি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- গবেষণা-প্রবন্ধ: বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরো। দ্বিশত জন্মবর্ষে বিদ্যাসাগর। উপন্যাস: পার্টিশনস, নীল উড়াল। ভ্রমণ: রক্তাক্ত নৈসর্গিক নেপালে। গল্প: ইতিহাসবিদ, ন্যানো ভালোবাসা ও অন্যান্য গল্প। কবিতা: মানব বংশের অলংকার, আমার সামনে নেই মহুয়ার বন, গন্ধর্বের অভিশাপ। অধ্যাপনা ও গবেষণা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের শীর্ষতম মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর এবং কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা কিশোরগঞ্জ নিউজ'র উপদেষ্টা সম্পাদক রূপে সংযুক্ত রয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের  'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজিত হবে রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক, ইতিহাসবিদ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ। সমন্বয় কমিটিতে আরো রয়েছেন কিশোরগঞ্জ নিউজ'র প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ ইসকান্দার আলী স্বপন, সাংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু ও চিকিৎসক নেতা ডা. গোলাম হোসেন।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে আরো জানানো হয় যে, ইতিপূর্বে ঘোষিত ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর সম্মাননা বক্তৃতা ২০২০ এবং ২০২১ করোনাকালের বিরূপ পরিস্থিতিতে স্থগিত থাকায় তা যৌথভাবে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. এএ মাজহারুল হক এবং সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' কর্তৃক কিশোরগঞ্জের জীবিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জীবনব্যাপী বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করতে ২০১৫ সাল থেকে এ সম্মাননা বক্তৃতা আয়োজন করা হচ্ছে, যা বক্তৃতা ও লিখিত আকারে প্রদান করেন মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' গতানুগতিক সম্মাননার বদলে ব্যক্তির কর্ম ও কীর্তির বিশ্লেষণমূলক-মূল্যায়নভিত্তিক সম্মাননা বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত স্বরূপ চিহ্নিত করে এবং এরই ভিত্তিতে জ্ঞাপন করা হয় যথাযথ সম্মান। সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি লিখিত আকারে বক্তৃতা-পুস্তিকায় চিত্রিত হন সম্মাননা প্রাপ্তগণ। মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এই বুদ্ধিবৃত্তিক-একাডেমিক আবহে ধারাবাহিকভাবে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে, যা কিশোরগঞ্জে তো বটেই, বাংলাদেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। শুরু থেকে সম্মাননা বক্তৃতা প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. মাহফুজ পারভেজ, যিনি কিশোরগঞ্জে পাবলিক লেকচার সিরিজের মাধ্যমে গণবুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর তৈরির পথিকৃৎ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রথম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান শিক্ষাবিদ প্রাণেশ কুমার চৌধুরী, ২০১৬ সালে দ্বিতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান দীপ্তিমান শিক্ষকদম্পতি: অধ্যক্ষ মুহ. নূরুল ইসলাম ও বেগম খালেদা ইসলাম, ২০১৭ সালে তৃতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘প্রজ্ঞার দ্যুতি ও আভিজাত্যের প্রতীক: প্রফেসর রফিকুর রহমান চৌধুরী’ এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘ঋদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র: শাহ্ মাহতাব আলী’। ২০১৯ সালে পঞ্চম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা দেয়া হয় 'স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষায় পথিকৃৎ চিকিৎসক-দম্পতি' প্রফেসর ডা. আ ন ম নৌশাদ খান ও প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুনকে। ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ প্রদান করা হয় নাসিরউদ্দিন ফারুকী, ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হককে। এ উপলক্ষে ‘কিশোরগঞ্জে আইন পেশার নান্দনিক বিন্যাস’ শীর্ষক সম্মাননা বক্তৃতা বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ প্রদান করা হয়েছে ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু.আ. লতিফ,  মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ ঊষা দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরীকে, যারা কিশোরগঞ্জের সামাজিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসে স্বকীয় কৃতিত্বের প্রভায় উজ্জ্বল। জীবনব্যাপী কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের জন্য শৈল্পিক দ্যোতনায় নান্দনিক বর্ণালী সৃজন করেছেন এই তিন গুণান্বিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ জানান, ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২০ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২১ একসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা মার্চ মাসের শেষ দিকে আয়োজিত হবে।

;