অলির ৬ কবিতা
ব্যথাবেদানা
একটা মামুলি প্রেসক্রিপশনের অভাবে
আমাদের সেরে ওঠা হয় না
আমাদের অসুখ সারে না
ওষুধের গন্ধেভরা পৃথিবীতে
প্রেসক্রিপশনের উল্টোপিঠেই থাকে আরোগ্যনির্দেশিকা—
আমরা যারা সাধারণত সাধারণ
আমরা যারা অসাধারণত...
আমরা বিশ্বাস এনেছি, অসুখ একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং তা অগণতান্ত্রিক নয়—
এবং আমরা সারিবদ্ধভাবে অসুখ ও বঞ্চনার শিকার;
আমরা বেদানার মতো ফেটেফুটে থাকি, 'ভিটামিন সি'সমেত—
রার্তনাদ
সন্দেহের মতো দানাদার এই সন্ধ্যা;
ঘরে ফেরা মানে ঘরেই ফেরা
আর কোথাও নয়,
নিয়তির মতো নিমপাতা দোলে অসুখী বাতাসে
আর
নেমে
যেতে যেতে
ফুরিয়ে যায়
সন্ধ্যা
ঘড়ির বাইরে বাড়ছে রাত ও রার্তনাদ।
সংবিধিবদ্ধ
পেইনকিলারের পাশে দ্বিধাহীন সে ঘুমিয়ে পড়েছে, ব্যথাকাতরতা নিয়ে। আমি তার মুখশ্রী হতে মুছে দিয়ে আসি আমার হাতের স্পর্শদানা—
আমাদের প্রেম।
আহা, আমাদের ভালোবাসা।
শতাব্দ ধরে একে অন্যকে সহ্য করে আমরা প্রতীষ্ঠা করেছি সংসার। এইসব অনুভূতির একটাই অনুবাদ— আমাদের মনে সুখ নেই, নেই তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার মতো বড় কোনো অসুখ!
এইরূপে,
আমাদের ভালোবাসা বোঝা-না বোঝার দ্বিধা হতে জন্মেছে কিছু ঘাস— তার নিচেই রচিত আমাদের পৃথক কবর।
অথচ,
আমরা ভালো না বাসলেও, পৃথিবীতে একসাথে না থাকলেও, পৃথক কবরেই ঘুমাতাম!
কী লাভ! ভালোবেসে—
অতি-কথোপকথন
ধীরবাতাসে পাতাপতনের শব্দের পাশে জেগে থাকে গাছ— মানুষকে টের পেতে পেতে। এক সংকট হতে মানুষ বের হয়ে, পেয়ে ফেলে আরেক, মহামারি হতে মহামারি অবধি এই ছুটে চলা—
গাছ টের পায়, আমাদের দীর্ঘশ্বাস—
গাছ বোঝে, ঘর তোলা হয়ে গেলে পাখি ঘুরে ঘুরে দেখে তার শিল্পকর্মকাজ, করে যৌনক্রিয়া ও বংশবৃদ্ধি, ততদিনে পাখি শিকারের তীরবিদ্যা জেনে ফেলি আমরা— তাতে কী!
আদতে মানুষের কিছু করার নেই;
সে পেতে চায় গাছের স্বভাব, পাখির জীবন, চায় কতো কী— পায় নাকো।
প্রথাশিল্প
এখানে কেউ মিথ্যা কথা বলে না, এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা।
খুব বেশি দরকার না হলে এখানে কেউ মিথ্যা কথা বলে না, এটা অর্ধসত্য।
পূর্ণসত্য হচ্ছে, দরকার না হলেও এখানে মিথ্যা কথা বলার রেওয়াজ-রেকর্ড আছে।
এখানে মিথ্যা বললে খুব একটা অসুবিধা হয় না।
কারণ এটা দীর্ঘ বছর ধরে চলমান ও প্রচলিত।
যে কোনো মিথ্যা এখানে বলে দেখুন-
আমরা হেসে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখি আপনার সমস্থ মিথ্যাকে।
দেখুন, আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম কতো ভালো!
দেখুন, আমরা সত্যের পক্ষে কীভাবে কতোটা লড়াই করছি...
ভয়েস ওভার
এই মড়ক-লাগা পৃথিবী আমি নেবো না। এটা ফেরত নিন।
প্লিজ, আমাকে আরেকটা পৃথিবী দেখান, নতুন পৃথিবী। একই কালার কিন্তু অন্য ডিজাইন। আছে না?
মানে, ধরেন, একটু গ্রিন... তার উপর ব্লু এর কম্বিনেশন। অনেকটা এটার মতোই...কিন্তু সিম্পল হতে হবে...সিম্পল মানে বুঝছেন তো?
গাছ-পালা, নদী, সাগর, পাহাড়, পশু, পাখি, আকাশ, বাতাস সব থাকবে। শুধু মানুষ থাকবে না। জাস্ট সিম্পলের মধ্যে গরজিয়াস একটা পৃথিবী দেখান, প্লিজ।
কবির আত্মপরিচয়
সোমেশ্বর অলি। দীর্ঘ বছর ধরে কবিতা লিখছেন। কোনো গ্রন্থ প্রকাশ হলে হয়তো তাকে 'শূণ্য দশকের কবি' ট্যাগ দেয়া যেত! অলির কোনো বই নেই, করেন নি। গানের জগতে গীতিকার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এক সময় সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অলি এখন কাজ করছেন ইবুক নিয়ে, ইবিএস গ্রুপের 'বইঘর' অ্যাপে।