নিউ বুকোউস্কি

  • শিল্প সাহিত্য ডেস্ক, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চার্লস বুকোউস্কি। অলংকরণ: রুদ্র হক

চার্লস বুকোউস্কি। অলংকরণ: রুদ্র হক

 

একটা ডেফিনেশন

বিজ্ঞাপন

প্রেম হইতেছে একটা লাইট যা
জ্বলতেছে রাতে, কুয়াশার ভিতরে

প্রেম হইতেছে একটা বিয়ার-ক্যাপ
বাথরুমে যাওয়ার পথে যা
খুইলা আসে

বিজ্ঞাপন

প্রেম হইতছে তোমার দরজার হারায়া যাওয়া চাবি
যখন তুমি মাতাল হয়া আছো

প্রেম হইতেছে তা-ই
দশ বছরে যা একবার ঘটে

প্রেম হইতেছে একটা অভিশপ্ত বিলাই

প্রেম হইতেছে অই কোণার
বুড়া নিউজবয়’টা যে
এর আশা ছাইড়া দিছে

প্রেম হইতেছে তা-ই যা তুমি মনে করো যে অন্য
লোকটা ধ্বংস করে দিছে

প্রেম হইতেছে তা-ই যা হারায়া যায়
বয়সের লগে যুদ্ধ করতে করতে

প্রেম হইতেছে ফোনের বাইজা উঠা,
একই ভয়েস অথবা আরেকটা
ভয়েস কিন্তু কখনোই ঠিক
ভয়েসটা না

প্রেম হইতেছে বেঈমানি করা
প্রেম হইতেছে ঘর না থাকা মানুশের
একটা গলিতে আগুন দেয়া

প্রেম হইতেছে স্টিল
প্রেম হইতেছে তেলাপোকা
প্রেম হইতেছে একটা চিঠির বাক্স

প্রেম হইতেছে ছাদে বৃষ্টি পড়া
একটা পুরান হোটেলে
লস এঞ্জেলেসে

প্রেম হইতেছে একটা কফিনে তোমার বাপের লাশ
(যে তোমারে হেইট করতো)

প্রেম হইতেছে পা-ভাঙ্গা একটা ঘোড়া
যে দাঁড়াইতে চাইতেছে
যখন ৪৫,০০০ লোক
দেখতেছে তারে

প্রেম হইতেছে যেমনে আমরা সিদ্ধ হই
লবস্টারের মতন

প্রেম হইতেছে সবকিছুই আমরা বলছিলাম
যা এইটা না

প্রেম হইতেছে নীলমাছি’টা যা তুমি
খুঁইজা পাও না

আর প্রেম হইতেছে একটা মশা

প্রেম হইতেছে ৫০ পদাতিক বাহিনি

প্রেম হইতেছে একটা খালি
পায়খানার প্যান, বিছনায়

প্রেম হইতেছে সান কোয়ান্টিনে একটা রায়ট
প্রেম হইতেছে একটা পাগলা-গারদ
প্রেম হইতেছে একটা গাধা যে দাঁড়ায়া আছে
মাছি ভন ভন করা রাস্তায়

প্রেম হইতছে একটা এম্পটি বারের চেয়ার

প্রেম হইতেছে হিনডেনবার্গ নিয়া একটা সিনেমা
কুঁচি কুঁচি কইরা কাটা
একটা মোমেন্ট যা এখনো চিল্লাইতেছে

প্রেম হইতেছে দস্তয়েভস্কি
জুয়া খেলতে বইসা আছে

প্রেম হইতেছে যা হামাগুড়ি দিয়া আসতেছে
মাটিতে

প্রেম হইতেছে তোমার নারী যে নাচতেছে
অপরিচিত এক বেটার লগে ঘঁষাঘঁষি করতে করতে

প্রেম হইতেছে একটা বুড়া মহিলা
যে চুরি করতেছে এক পিস
ব্রেড

আর প্রেম হইতেছে একটা শব্দ
যারে খুব বেশি ইউজ করা হয় আর
ইউজ করা হয়
খুব তাড়াতাড়ি।


বুঝতে পারা

ভ্যান গগ নিজের কান কাটছিলো
আর দিছিলো একটা
মাগীরে
যে অইটা ছুঁইড়া ফেলে দিছিলো
চরম
বিরক্তি নিয়া

ভ্যান, মাগীরা চায় না
কানগুলা
অরা চায়
টাকা

আমার মনেহয় এই কারণেই তুমি
এইরকমের গ্রেট একজন
পেইন্টার ছিলা: তুমি
তেমন কিছুই
বুঝতা না।


আমার বাগান

রইদে আর বৃষ্টিতে
আর দিনে আর রাইতে

পেইন হইলো একটা ফুল
পেইন হইলো সবগুলা ফুল

সবসময় ফুটে উঠতেছে

খাঁচার ভিতরে কিছু গান জন্মায়

আমি লিখি কবিতা, দুশ্চিন্তা, হাসি
হাসাহাসি
ঘুম
কিছু সময় ধইরা করতে থাকি
প্রায় আমাদের সবার প্রায়
আমাদের সবারই মতো;
অনেক সময় আমি সবাইরে জড়ায়া ধরতে চাই
দুনিয়ার সব মানুশরে
আর বলি,
হায় খোদা এই সেই সবকিছু অরা চাপায়া দিছে
আমাদের উপ্রে,
আমরা তো সাহসী আর ভালো
যদিও আমরা স্বার্থপর
আর একজন আরেকজনরে খুন করি আর
নিজেদেরকে খুন করি,
আমরাই হইতেছি লোকজন
যারা খুন করার জন্য আর মারা যাওয়া জন্য জন্মাইছি আর অন্ধকার ঘরগুলাতে কান্দি
আর অন্ধকার ঘরগুলাতে ভালোবাসাবাসি করি,
আর অপেক্ষা করি, আর
অপেক্ষা করি আর অপেক্ষা করি আর অপেক্ষা করি।
আমরা হইতেছি লোকজন।
আমরা কিছুই না
আর।


একটা সুতা ধইরা টান দিলে, পাপেট’টা নইড়া উঠবো…

সব মানুশেরই বুঝা দরকার
যে এই সবকিছুই হাওয়া হয়া যাইতে পারে খুব
তাড়াতাড়ি:
বিলাইটা, মেয়েমানুশটা, চাকরিটা,
গাড়ির সামনের চাকাটা,
বিছনাটা, দেয়ালগুলা, রুমটা;
আমাদের সব দরকারি জিনিসগুলা
ভালোবাসাও
দাঁড়ায়া আছে বালির উপরে -
আর যে কোন একটা কারণেই,
ব্যাপার না যে কতোটা আন-রিলেটেড:
হংকংয়ে একটা বাচ্চা পোলার মইরা যাওয়া
অথবা ওমাহা’তে একটা বরফ-ঝড়…
তোমার সর্বনাশ হয়া উঠতে পারে।
তোমার সব চিনা-মাটির জিনিস ভাইঙ্গা পড়বে
রান্নাঘরের ফ্লোরে, তোমার প্রেমিকা আইসা ঢুকবে
আর তুমি দাঁড়ায়া থাকবা, মাতাল,
এই সবকিছুর মাঝখানে আর শে জিগাবে:
হায় খোদা, কি হইছে এইখানে?
আর তুমি উত্তর দিবা: আমি জানি না,
আমি জানি না…


সবার লগে একলা

মাংস ঢাইকা রাখে হাড়টারে
আর অরা একটা মনরে রাখে
সেইখানে আর
অনেক সময় একটা আত্মা,
আর মেয়েমানুশগুলা ভাঙ্গে
ফুলদানিগুলা দেয়ালে ছুঁইড়া মাইরা
আর বেটামানুশগুলা খাইতে থাকে
অনেক বেশি
মদ
আর কেউ খুঁইজা পায় না
কাউরে
কিন্তু খুঁজতে
থাকে
হামাগুড়ি দিয়া উঠতে থাকে
আর নামতে থাকে
বিছানাগুলাতে।
মাংস ঢাইকা রাখে
হাড়টারে আর মাংস
খুঁজতে থাকে
মাংসের চে
বেশি কিছু।

এইখানে চান্সই নাই
কোন:
আমরা সবাই বান্ধা
একটা নিয়তির
কাছে।

কেউ কখনোই খুঁইজা পায় না
কাউরে।

শহরের ময়লার ডিপোগুলা ভরাট হয়া উঠে
আবর্জনার স্তুপগুলা ভরাট হয়া উঠে
পাগলা-গারদগুলা ভরাট উঠে
হাসপাতালগুলা ভরাট হয়া উঠে

আর কোন কিছুই হয় না
ভরাট।


চার্লস বুকোউস্কি ও ইমরুল হাসান

চার্লস বুকোউস্কি জার্মান-আমেরিকান কবি। বাংলায় তার কবিতার ভাষান্তর যারা করছেন তাদের মধ্যে কবি ইমরুল হাসান অন্যতম। ইমরুলের ভাষাভঙ্গির বৈচিত্রের কারণেই বুকোউস্কি যেন আরও তীব্র হয়ে হানা দেন তার কবিতা নিয়ে, এই বাংলায়। ইমরুল হাসানের ভাষ্যে, “বুকোউস্কির কবিতা অনেকবেশি ডাইরেক্ট, হার্শ আর ‘রিয়েল-লাইফ’ ফিলিংসের ঘটনা।”  ইমরুল হাসান একজন কবি, ক্রিটিক, ফিকশন-রাইটার ও ট্রান্সলেটর। জন্ম ১৯৭৫ সালে। থাকেন ঢাকায়।