মাদল হাসানের ‘মার্কেজ কিংবা রবীন্দ্রনাথ’ এবং অন্যান্য
মার্কেজ কিংবা রবীন্দ্রনাথ
আমাকে তুমি বিক্রি করো কেন আনিস?
জগদীশ গুপ্তের ‘লঘু-গুরু’ সম্পর্কে সে-সময়ের মন্তব্য
আজ ভুল মনে হচ্ছে আমার ; সত্যই সবচে সভ্য ;
আমারই চেতনার রঙে চিন্তার চৌবাচ্চায় চারবেলা চানিস
তবু আমারই নাম কিনা ঘৃণা’ ; ‘শালা এতকিছু জানিস?
চা নিস ’ ব’লে বাহবা দেয় এক মার্কসিস্ট নব্য
জিস্ট বুঝে এই বাণী-বরষার ; সিস্ট ভেঙে হয়ে যায় ভব্য
সায়ান রঙের এক সায়াহ্ন বায়ান্নোর মতো বলে, নো নো
সুর বলে, সে কী চায়? কথা বলে, সে কী চায়? শ্রোতা বলে, সে কী চায়?
ডুপিলকেট ডিসকোর্স হাতে দু’পক্ষেরই ‘জিতেছি’ বলা শোনো
সে কোন সুনসান সময়া? ব্যালকনিতে ব্যাধি এসে আঁধিকে বিছায়
বিছার কামড় কিংবা যজ্ঞের ঘি চায়? নাকি, ছন্দময় ছদ্ম কোনো ছি চায়?
‘পচবি’ ব’লে কি তসবি জপো? এ-ডুয়েল ডুকরে ওঠা ড্র কোনো
শমে আসা সঙ্গমের মতো জমে ভাষা ভঙ্গমের ক্ষত ; হুঁ নয়, যৌথ এক জ্বি চায়
হে মোর চিত্ত পূণ্যতীর্থ ; আলাপ ঢের তো হ’লো ; স্থির তো ? বেশ ধীর তো ; মীড় তো দোনো...
ম্যারাডোনা
পরিদর্শনে এসে স্কুলের বড়আপা
কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলেন,
‘বলো তো বাচ্চারা, ম্যারাডোনা কে ছিলেন?’
একজন বললো, তিনি ছয়জনকে কাটিয়ে গোল দিয়েছিলেন।
একজন বললো, তিনি ঈশ্বরের হাত দিয়ে গোল করেছিলেন।
একজন বললো, তিনি ক্যানিজিয়াকে সুন্দর একটা পাস দিয়েছিলেন।
একজন বললো, তিনি গায়ে চে গুয়েভারার উল্কি এঁকেছিলেন।
একজন বললো, তিনি বিয়ের আগে দশবছর প্রেম করেছিলেন।
একজন বললো, তিনি অনেক বড় নেশাখোর ছিলেন।
একজন বললো, তিনি অনেক খেলায় জিতেছিলেন।
একজন বললো, তিনি অনেক খেলায় হেরেছিলেন।
শুধু ‘ফুটবল’ শব্দটি শোনা গেল না কারো মুখে
বড়আপা আনন্দের সঙ্গে সেইদিন
সকলের জন্য স্কুল ছুটি দিয়ে দিলেন
প্রহারাদর
সটান দাঁড়িয়ে থাকে গুলী-খাওয়া লাশ;
শ্মশানবন্ধুর সমীপে; মরার পরেও কেমন
চাগিয়ে আসে বুক; হাতে উঠে করে ধাওয়া বাঁশ;
দ্যাখ দেখি, ভান্ডহীন পান্ডবের কান্ড এ্যামন!!
আগুনের ফাগুনলাগা দাগাবুকে গাগা-সঙ্গীত;
আবার দাঁড়াবি যদি নিশ্চিত ছাড়াবি তুঁই
নাভীকুন্ডনদী; অগ্নিশতদলে লগ্নিক্ষতবলে।
আর কত লেলিহান জিভে শোনাবি গেঁজলানো গীত?
গতজন্মে তবে কি তুঁই-ই ছিলি গোজালা গুঁই?
দেড়কেজি ভস্মের নস্য নিতে বশ্যবহ্নি জ্বেলেছি জারুলে;
আর তাতে অতিবেগুনীরশ্মির লেগুনই জেগেছে রক্তে ও লালায়;
ভূত হয়ে, দূত হয়ে, ভূতের বাপের শ্রাদ্ধের ভূতলে
ভেঙচি কেটে আয়। লে পারু লে, লে দারু লে;
সব শালা হামাক দেখে পিরিতে পালায়
সোজাসাপ্টা
ঘুমিয়েই থাকে, ঘুমিয়েই ছিল সাপটা
ঘুমিয়ে থাকতো, ডেকে না-তুলতে যদি;
যেমন ঘুমায়, তলোয়ারটার খাপটা;
যেমন ঘুমায়, আঁকাবাঁকা-খা-খা নদী।
কুন্ডুলী ভেঙে ভন্ডুলই হলো ভাবটা
এতটা গরমে শরম ঢাকার শৈত্য;
চেষ্টার আগে তেষ্টার তণু-তাপটা
শীতল রক্তে ভক্তের দিশাদৈত্য।
ভর দিয়ে লেজে, নিদারুণ তেজে, দাঁড়িয়ে গেছে সন্ধ্যায়;
এমত কান্ডে বিষের ভান্ডে ফোঁসফোঁস;
বলক উঠেছে ঝলকে অলকানন্দায়;
লিপের ছোবলে টিপের নো-বোলে আফশোশ।
সাপটা সোজাই ছিল এতদিন; সোজাই সাপটা আছে;
সোজাসাপ্টার কাছে
আমিত্ব
আমিই ওষুধ
আমিই ঘা
আমিই তাতে শূশ্রুষা
অথচ মানুষ নিজেকে কখনো
প্রদক্ষিণ করতে পারেনা
মাথাপিছু
কথা কিছু জমেছে কোঁচায়।
মাথাপিছু হাউশের স্পাউচ;
মাথাপিছু গাড়ি-বাড়ি;
আত্মরক্ষার লাগি দাগী-দিব্যাস্ত্রধারী;
মাথাপিছু দিব্যগ্রন্থ ডাউশ;
আরো কিছু, তোমার মনে যাহা লয়
এবং মাথাপিছু মন্ত্রণালয়;
বরাদ্দ দিলাম আজ কলমের এক খোঁচায়
ব্রাত্য
ছিঁচকে ছিনতাইকারী,
নেইলকাটারের চাকু দেখিয়ে মারে
ডাকুর ভানকরা ঝাড়ি
সুইচ ব্যাংক লুট করার মতো
লুইচ আমরা যত
সাঁজোয়া-ঠ্যাংকসহ হুট ক’রে এসে
বুকে বেঁধে সুইসাইড বোম; বলি কেশে
হল্ট অ্যান্ড হ্যান্ডস আপ
বাপের উপরে থাকে বাপ
নো কাঁপঝাঁপ
হে ব্রাত্য,
এই হ’লো লুটেরার আভিজাত্য
কবি পরিচয়
জন্ম : ২১ ডিসেম্বর ১৯৭৮। বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। কাব্যগ্রন্থ : কান্নাদায়গ্রস্ত (২০০১), অন্ধ অক্ষরগুলো (২০০৪), ঘুম এক নিঃশর্ত প্রেমের দেশ (২০০৬), বিস্মরণগড়ের বার্তা (২০০৮), হাওয়াহ্রেষা (২০০৯), পাথরের পাঠশালা (২০০৯), গল্পগ্রন্থ : উপনামের উৎসব, উপন্যাস : শরীরের স্বরলিপি।