গবেষণামূলক লোকসংস্কৃতির প্রামাণ্যদলিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ

  • আহসান ইমাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গবেষণামূলক লোকসংস্কৃতির প্রামাণ্যদলিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ

গবেষণামূলক লোকসংস্কৃতির প্রামাণ্যদলিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী জনপদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ। নদীমাতৃক দেশের মহানন্দার পাড়ে জনপদটি লোকসংস্কৃতির নানান বৈচিত্র্যের ধারক হয়ে আছে অনাদিকাল হতে। লকডাউনের ঘরবন্দী সময়ে ইন্টারনেট নির্ভর জীবনে হঠাৎ ইউটিউবে পেলাম একটি তথ্য সমৃদ্ধ সুনির্মিত গবেষণামূলক প্রামাণ্যচিত্র, যা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সার্বিক লোকসংস্কৃতিকে তুলে এনেছে। কাজটির পরিকল্পনা, গবেষণা এবং উপস্থাপনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন। যিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণা করছেন। তাঁর এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।


বিজ্ঞান নির্ভর লোকসংস্কৃতির নানা ভাবনা রয়েছে এখানে,রয়েছে লোকসংস্কৃতিকে ঘিরে এ জেলার পর্যটন সম্ভাবনা। প্রকৃতপক্ষে শেকড় বাদ দিয়ে কোন গাছ যেমন টিকে না তেমনি দেশীয় নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্যের চর্চা এবং জ্ঞানকে পাশ কাটিয়ে স্বাভাবিক বাসযোগ্য প্রকৃতি ও প্রতিবেশ তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। বর্তমান সময়ের সংক্রমণ সংকট আমাদেরকে আবারও সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। বিশ্ব ব্রক্ষাণ্ডের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদেরকে ঐতিহ্যের কাছে যাওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানের সঙ্গে ঐতিহ্যিক তথা বংশপরম্পরাগত অর্জিত জ্ঞানকে সমন্বয় করে যদি উন্নয়ননীতি প্রস্তুত করা হয়, তবে একটি সুস্থ, স্বাভাবিক, টেকসই প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

প্রামাণ্যটিতে “আমের রাজধানী”র যে বর্ণনা আছে তা নিয়ে কিছু বলা যাক লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায়:

গবেষক ও শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথমেই এ জেলার ইতিহাসের কথা বলেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, ঐতিহাসিক প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ। সোনা মসজিদ, তোহাখানা, তিন গম্বুজ মসজিদ, বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি, খলিয়াদিঘি মসজিদ, নাচোল রাজবাড়ি, কানসাটের জমিদার বাড়ি, শাহ নেয়ামতুল্লাহের মাজার, দারস বাড়ি মসজিদ, চামচিকা মসজিদ প্রভৃতি।

বিজ্ঞাপন

প্রাকৃতিক দৃশ্যে তিনি দেখিয়েছেন, মহানন্দা নদী, নদীকেন্দ্রিক নৌকাবাইচ, বিস্তৃত আমবাগান, কানসাটের আমের বাজার (যা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম আমের বাজার), বৈচ্যিত্রময় বরেন্দ্রভূমি, আল্পনা গ্রাম টিকলইল এবং বাবুডাইং।

ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের নানা দিক রয়েছে প্রামাণ্য এ দৃশ্যমান দলিলে। আঞ্চলিক ভাষা, কালাই রুটি, আদি চমচম, কাঁসা, পিতল, রেশম, তাঁত, নকশিকাঁথা, মৃৎশিল্প কোনটাই বাদ যায়নি এখানে। আরো দেখানো হয়েছে ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত গম্ভীরা আর আলকাপের মতো মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা।


লোকখাদ্যের পশরায় নানা রকমের ভর্তার সন্ধান পাওয়া গেছে প্রামাণ্যটিতে। বিশেষ করে কালাইরুটির অনুসঙ্গ খাদ্য হিসেবে ভর্তার বৈচিত্র্য চোখে পরার মতো।শিবগঞ্জের আদি চমচমের ভিডিও দৃশ্য পর্যটকের আগ্রহ তৈরি করবে বলে অনুমেয় হয়।

সুতার কাঁচামাল সম্পর্কে যে পরামর্শ এসেছে এখানে সেটি বোধকরি জাতীয়ভাবে গ্রহণ করার মতো যাতে রাজশাহী সিল্কের প্রচার, প্রসারের মাধ্যমে রপ্তানি নির্ভর অর্থনৈতিক সুবিধা আমরা পেতে পারি। এভাবেই বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির বিভিন্নশাখার পরিচয় পাবে বিশ্ববাসী।

সববিবেচনায়, প্রামাণ্যচিত্রটির মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরিচিতির সুযোগ তৈরি হলো আমাদের।বড় পরিসরে নিঃসন্দেহে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমন পিপাসা আরো বাড়বে। সেইসাথে এদেশের পর্যটন ব্যবস্থার সম্ভাবনাকে আরো সামনে নিতে এরকম গবেষণামূলক ভিজ্যুয়াল সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বিশেষকরেএমন গবেষণায় লোকসংস্কৃতি নির্ভর পর্যটন ব্যবস্থাপনায় বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও ডিজিটাল সময়ে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্য বিষয়ক ভিজ্যুয়াল লেকচার হিসেবে শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠনেও সহায়ক হবে প্রামাণচিত্রটি।

আহসান ইমাম, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়