মন জিনিসটা কী



টোকন ঠাকুর, কবি
অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পিজারোর মন যত না বাইবেলের দিকে, তার চেয়ে বেশি সোনার খনির দিকে।’-এটি প্রায় প্রবাদ আজ। এক রাজনৈতিক ভাষণে সেইন্ট কাস্ত্রো পিজারো সম্পর্কে এ কথা বললেন। বাঙালি পাঠক মাত্রই কি পিজারোকে চিনতে পারছেন? তা মনে হয় না।

পিজারো হচ্ছেন একজন স্প্যানিশ যাজক। তার হাতে বাইবেল। একদিন তিনি পৌঁছলেন ল্যাতিনো দেশের মাচ্চুপিচ্চুতে। মাচ্চুপিচ্চুর স্থানীয় আদিবাসীরা গভীর কৌতূহল নিয়ে পিজারোকে দেখতে থাকে। পিজারো মহান যিশুর ঐশী বাণী ছড়াতে ব্যস্ত হলেন। মাচ্চুপিচ্চুবাসীরা সে বাণী মুগ্ধ হয়ে শোনায় মনোযোগ দিল। পিজারো বাইবেল থেকে অনুবাদপূর্বক উচ্চারণ করে চললেন, ... হে মেষপালক, দ্যাখো, আকাশ কত নীল। অথচ নীল হচ্ছে নিছক দৃষ্টি সীমানার মরমি শূন্যতা, আর সমস্ত শূন্যতা জুড়ে থাকি আমি। আমাকে তুমি কোথায় খুঁজবে, বলো? শূন্য থেকে ক্রমাগত শূন্যতার অভিযাত্রায় দ্যাখো আমি তোমাকেই দেখা দেব বলে দীর্ঘকাল নীল হয়ে আছি, আকাশ হয়ে আছি। কত মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে কথা হয়ে, কত পাখি উড়ে যাচ্ছে সুরধ্বনি তুলে, কত রোদ ঝরে ঝরে পড়ছে গান হয়ে, কত প্রেম ঘনীভূত হচ্ছে কবিতা হয়ে...

যাজকের জলদ-গম্ভীর গলা শুনতে শুনতে মাচ্চুপিচ্চুবাসীদের চোখে ঘুম এসে যায়। তারা ঘুমিয়ে পড়ে নবনির্মিত চার্চের বারান্দায়, তারা ঘুমিয়ে পড়ে নক্ষত্রের পাশে। তাদের ঘুমন্ত শিয়রে ধবধবে ছায়া ফেলে রেখে হেঁটে বেড়ান যাজক পিজারো। ঘুম ভাঙলে তারা দ্যাখে, তাদের সোনার খনি লুট হয়ে গেছে, কিন্তু তাদের মাথার কাছে বাইবেল, তাদের হাতে হাতে বাইবেল। এরপর ইতিহাসের কালো পৃষ্ঠায় বহু রক্ত, গ্রন্থাগারের তাকে তাকে মাচ্চুপিচ্চুবাসীদের সারি সারি লাশ। তাদের সোনার খনি লুট হয়ে গেছে। পিজারোর মুখে ঐশী আভা, দিগবিজয়ীর চার্চীয় হাসি। একদিন কুব্যার রাজনৈতিক সেইন্ট ফিদেল কাস্ত্রো তার এক ভাষণে বললেন, ‘পিজারোর মন যত না বাইবেলের দিকে, তার চেয়ে বেশি সোনার খনির দিকে।’

দৃশ্যত, হাতে বাইবেল, কিন্তু লুট হয়ে গেল সোনার খনি- তাহলে মন কী জিনিস? মনের মধ্যে কত রাজনীতি! মনের মধ্যে কত যুদ্ধ, রক্তপাত? মনের মধ্যে কত ইতিহাস, গাথা, গান, কবিতা কিংবা ছটফটানি! মনের মধ্যে কত প্রেম, বিরহ, জ্বালা, অসুখ এবং উপশম! মন নিয়ে কত ছিনিমিনি। মন নিয়ে কত বাড়াবাড়ি, কত ভাব-অভাব! মনের কী প্রভাব! মনের কথা লিখে প্রকাশ, কীরূপে সম্ভব, হরি? মন কি কথা শোনে? মন কি বারণ শোনে? মন কি শোনে আদৌ? তবে কি মন বোবা-কালা-বধির? মনের কথা ভাষায় লেখা আর পানের দোকানদারের পক্ষে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সভাপতি হওয়া একই রকম দুরহ ব্যাপার।


ঠিক এ কারণেই হয়তো লিখে রেখেছি, ‘ভাষার সমস্যা আছে। সব কথা সে প্রকাশে সমর্থ নয়। যতই পণ্ডিতি করি, সান্ধ্য সুর ধরি, ঠিক যেন হলো না- মনের কী বলার ছিল? কী বলার মধ্যে আমি কী ভাব বোঝাতে চেয়েও, শেষ পর্যন্ত বাক্য যেন বাগে এলো না, বরং মহা বিট্রে করে বসল। কুয়োর মধ্যে হারিয়ে যাওয়া চৈত্র মাসের মহাজোছনা যেন আমি আর তুলে আনতে পারলাম না। ভাষায় আমি জোছনা দেখাতে পারছি না, সূর্যাস্ত দেখাতে পারছি না, যুদ্ধ দেখাতে পারছি না, রক্ত কতটা লাল দেখাতে পারছি না, বাতাসের বেয়াদপ আচরণ দেখাতে পারছি না। এমনকি আমার মন কতখানি অবাধ্য যে, সে আমার ঘরেই থাকে না, প্রত্যেকদিন একই রাস্তায় একই দিকে যায়- মনোগমনের এ বর্ণনা লিখে বোঝানো অসম্ভব! অ্যাবসার্ড! কারণ, ভাষা শিল্পকে যতটা সমর্থন করে বা শিল্পীকেও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে পারে কিন্তু শিল্প ও শিল্পীর মধ্যে যেটুকু প্রচ্ছন্ন দূরত্ব, যতটা লৌহবেদনা- ভাষা তা কখনোই স্পর্শ করতে পারে না। কতটা নির্মম, দুর্ভাগ্যপীড়িত, যদি বলো, এই ভাষাতেই আমাকে লিখে জানাতে হবে সেই প্রচ্ছন্ন দূরত্বের গল্প, লৌহবেদনার ইতিকথা! মন-আনমনা, বাক্য যেন ভাব বুঝল না, বাক্য মহা বিট্রে করে বসল। অথচ কুয়োর মধ্যে চৈত্র মাসের মহাজোছনা গড়াগড়ি যায়...’

কিন্তু মন যতই আনমনা হোক, মন যতই পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে চাক না কেন, এত সহজে আমরা মনকে ছেড়ে দিতে পারি না। মন নিয়ে যথেষ্ট মনোযোগ আমাদের দিতেই হবে। মনের সঙ্গে বা মনের কাছে হেরে গেলে চলবে না।

মন কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যে তার হুকুম মেনে চলতে হবে? মন কি পুলিশ, যে তেড়ে আসবে যখন-তখন? পুলিশের কথাই যখন এলো, তখন বলব, মন কি বিডিআর, বিদ্রোহ করেছে? মনের বিদ্রোহ দমন হয় একসময়, মনের নাম পাল্টে যায়। মন সীমান্ত প্রহরী হয়ে যায়। মন বর্ডার গার্ড দেয়। মন যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তার মানে মন সেনাবাহিনীও? মনকে কোথায় রাখি?

দেশে আজ মন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হারানো মন অনুসন্ধান কমিটিও কাজ করে চলেছে। মন সংরক্ষণ ও বিকাশে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বাজেটে বরাদ্দ আছে। মন কী চায়, তার ওপরে রিসার্চ-ফেলো চলছে। মনোসমীক্ষকের আনাগোনা বাড়ছে। মন ঢুকে পড়ছে গানে গানে, কবিতায়। মন অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে নো-ম্যানস-ল্যান্ড ছাড়িয়ে পররাষ্ট্রের উঠোন বাড়িতে। মনকে কোনোভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না। মন যা চাচ্ছে, তা কিছুতেই মিলছে না। মন যা চাচ্ছে না, তাও কিছুতেই সরানো যাচ্ছে না। দিনে দিনে মন বারমুডা ট্রায়াঙ্গল হয়ে উঠছে। ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে, সর্বদা অদৃশ্য, মন। গগন হরকরা মনের মানুষ খুঁজতে খুঁজতে হন্যে হয়ে গেলেন, লালন ‘মনোবেড়ি’ দিতে চাইলেন, র. ঠাকুর মনের ওপর জমিদারিও দেখালেন, তবু মন কি কারও আয়ত্তে এলো? মনের কথা আমি কাকে বলব? কারে জানাব মনের দুঃখ গো, আমি কারে জানাব জ্বালা? আমার মনের ঘরে তালা।

দেখলাম, স্মরণ করতে পারি, সেই প্রথম, কিংবা তারও আগে ঘটে থাকতে পারে কিন্তু মনে পড়ছে সেই এক প্রথমেষু, আমার তাজা মন ভেঙে গেল। মনভাঙা কাকে বলে, জানা হলো। কারণ কী? মামাবাড়ির ইশকুলেই প্রথম ভর্তি হই, সেখানে বনভোজন হবে, তখনও আমি জানি না, বনভোজন জিনিসটি কী? তো পঞ্চাশ পয়সার চাঁদায় সেই ইশকুলের বনভোজনে আমার নাম লেখা হলো। আমার মন খুশিতে নেচে উঠল। বনভোজন হবে শনিবার। কিন্তু মামাবাড়ি থেকে বনভোজনের তিনদিন আগেই, কী কারণে যেন আমাকে দাদাবাড়ি নিয়ে যাওয়া হলো। তখন আমি পড়ি হয়তো ওয়ানে। দাদাবাড়িতে যাওয়ার দু`দিন পর, বনভোজনের আগের দিন আমার মন খারাপ হলো। সন্ধ্যায় মন আরও খারাপ হতে লাগল। রাত পোহালেই শনিবার, মামাবাড়ির ইশকুলে বনভোজন। মামাবাড়ির ইশকুলের পেছনে সত্যি সত্যি একটা বড় বাগান ছিল। বনভোজন হবে সেই বাগানে।

তো মন আমার যতই খারাপ হোক, বাড়ির বড়রা তা তেমন আমলে নিল না। রাতে আমার ঘুম হলো না। ভাবলাম, সকালে আমাকে ঠিকই নিয়ে যাওয়া হবে মামাবাড়িতে। তারপর আমিও যোগদান করব বনভোজনে। যাই হোক, সকাল হলো। আমার মন খারাপ আরও বাড়ল। আশা করলাম, আমার মন খারাপ দেখে কেউ আমাকে ঠিকই নিয়ে যাবে জোড়াদহে, ভায়নায়। কিন্তু সে রকম কোনো সম্ভাবনা দেখতে না পেয়ে আমি কান্না শুরু করলাম। আমি জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম। আমি কাঁদতে কাঁদতে উঠোনে গড়াগড়ি দিলাম। আমার কান্নায় বাড়ির কারও মন গলল না। ফলে আমার মন ভেঙে গেল। ভীষণ মন ভেঙে গেল। সেটাই কি আমার প্রথম মনভাঙা? এর কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই।

দাদাবাড়ির ইশকুলে, মধুপুরের পাশে গাড়াগঞ্জে পাকাপাকিভাবে চলে আসার পর, ক্লাস টুতেই ভালো লেগে গেল ঊর্মিকে। ঊর্মিরা একদিন বদলি হয়ে চলে গেল। খুব মন খারাপ হলো। এক রাতে, বাড়ি থেকে পালিয়ে বাজারে আসা কমলা সার্কাসের তেলেসমাতি খেলা দেখতে গেলাম। যাবার পথে, কোথাও যেন এক ছাতিম ফুলের ঘ্রাণে, সেই জোছনা রাতে, রূপোলি আলোয় ভেসে যাচ্ছিল চরাচর। মন কেমন করে ওঠা রাত। মন হুহু করে যাওয়া রাত। মন পু পু করে যাওয়া জোছনা। মন ধু ধু করে যাওয়া ছাতিমের আগ্রাসী ঘ্রাণ, ঘ্রাণজুড়ে চরাচর কিংবা চরাচর জুড়ে ঘ্রাণ- সেই ঘ্রাণে মন কেমন করে? সে বয়সে, একটি ঘটনা খুব মনকে নাড়া দিয়ে গেল। আমাদের ইশকুলেরই নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী কাকে যেন ভালোবেসে শেষে ধানগাছে দেওয়া ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করল।

সেই মেয়েটির নাম কী? ভুলে গেছি। কিন্তু তার কবর দেখতে গিয়েছিলাম। তার জন্য যে কী পরিমাণ মন খারাপ হয়েছিল সেসময় কিছুদিন, আমি জানতাম, সেই মন খারাপ থেকে আমি আর বেরুতে পারব না। সেই মেয়েটির নাম আমার ডায়েরিতে লেখা আছে। কিন্তু সে সময়ের ডায়েরি আর আমার এ সময়ের ইতিহাস কত বিস্তর ফারাক। আমি ডায়েরি লিখতাম।


আমার সে সময়েরই কোনো এক ডায়েরিতে পাওয়া যাবে আরও এক মেয়ের নাম, যে মেয়েটিও একদিন পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করল এক সীমান্ত-মালামাল পাচারকারীকে। তাতেই মন খারাপ হলো। খুব মন খারাপ হলো। একদিন তাদের ঘরে একটি সন্তান এলো। একদিন সেই পালিয়ে যাওয়া মেয়েটিকে তার ঘরেই ফ্যানে ঝুলন্ত পাওয়া গেল। তার স্বামীকে পুলিশ জেলে নিয়ে গেল। একদিন জেল থেকে বেরিয়েও এলো সে। বারবার মন খারাপ হলো। কিছুই করার থাকল না।

মন ছমছম করে গেল। পৌর শ্মশানে সারারাত সাহস-পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গিয়ে, আমি আর আমার বন্ধু রাজু ঝুঁকি নিয়ে শ্মশানেই কাটিয়ে দিলাম। ফাঁকা মাঠের মধ্যে গিয়ে হঠাৎ চৌদিকে তাকিয়ে দেখি, কেউ নেই। লোকালয় কত দূরে। সন্ধ্যা আসন্ন। মন নিঃসঙ্গ হয়ে গেল। মন খুব লোনলিনেসে আক্রান্ত হলো। মন কাগজের নৌকা হয়ে ভেসে চলল। মন ভেসে গেল ভরা বর্ষায়, উঠোনের জমে যাওয়া জলে।

মন ভায়নার কালীতলার পুজোর মেলায় বুড়ো বটগাছের শিকড়ে বসে থাকল। মন ঝিনেদার দেবদারু এভিনিউতে কত কত সন্ধ্যা, বিকেল, রাত বসে বসে নবগঙ্গার জলে তালের ডিঙি হয়ে গেল। মন ভেসে চলল মুরারীদহের দিকে। মন পরিত্যক্ত রাজবাড়ির চিলেকোঠায় হারিয়ে যাওয়া গল্পের পেছনে ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে শতবর্ষ পূর্বের এক সন্ধ্যায় পৌঁছে গেল। মন সেখানে যুবরাজ, মনের সামনে যুদ্ধ, মন যুদ্ধে যুদ্ধে ক্লান্ত হলো। তবু মন ক্লান্ত হয় না। মন আবার উঠে দাঁড়ায়। মন রায়মঙ্গলা নদীতীরের জোছনায়, জোয়ারের ঢেউয়ে ঢেউয়ে কল্লোল তুলে গেল। মন চন্দ্রবিন্দুর হাওয়ায় কুড়িয়ে ফের হাওয়ায় হারিয়ে ফেললাম। মাতাল রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মন চাঁদে পৌঁছে গেল। সেখানে চাঁদের দেশে, দলছুট শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরী মন নিয়ে গান-সুর বেঁধে চলেছেন। মন দিয়ে শুনি সেই গান...

একবার রুমাবাজার থেকে পায়ে হাঁটা ঝিরিপথে বগা লেক হয়ে পরদিন কেওক্রাডংয়ের চূড়োয় উঠলাম, সুন্দরবনের ভেতরে লালকমল-নীলকমল গিয়েছি, সেন্টমার্টিন দ্বীপাঞ্চল চষে বেড়িয়েছি, কেন? সম্ভবত, হারিয়ে যাওয়া মনটার খোঁজে। কান্তজীর মন্দিরে গিয়ে মন হারিয়ে এসেছি। স্মরণীয়া নদীর ঢেউয়ে মন খুইয়ে ফেলেছি। শীতের কুয়াশায় ছদ্মবেশে মেঘ নেমে এসেছিল একবার, সেবার মনটাও হারালাম সেই ছদ্মবেশী কুয়াশায় আবছায়া নৈঃশব্দ্যে। দেখেছি, নিঃশব্দেই মন রক্তাক্ত হয়ে গেছে। অথচ মনের কোনো আকার-প্রকার নেই। মন অনেকটা ঈশ্বরগোত্রীয়। দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না কিন্তু প্রভাব ক্রিয়াশীল।

কাগজে প্রথম কবিতা ছাপা হওয়ার ফল কী দাঁড়িয়েছিল? মন কতখানি উৎফুল্ল হতে পারে, এর আগে সে ধারণা ছিল? নিজের লেখা, নিজের নাম বর্ণমালায় ছাপানো দেখার সেই কয়েকটা দিন মন আর মন ছিল না। মন হয়ে পড়েছিল অন্য কিছু। অন্য কিছুটা কী? প্রথম পথ ভুল করে অন্য রাস্তায় চলে গিয়েছিলাম, প্রথম রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলাম, প্রথম আত্মরতি করেছিলাম, প্রথম ভেঙে পড়েছিলাম, প্রথম পাখির মতো আকাশে উড়েছিলাম, প্রথম মাছের মতো মরে ভেসে উঠেছিলাম- কবে? সে-সব আর মনে নেই। তাই ‘ব্ল্যাকআউট’ নামে একটা ছবি তৈরি করলাম, বাংলা নাম দিলাম ‘মনে নেই’। কী মনে নেই, যা আমার মনে নেই। যা-টা কী? তা তো মনেই নেই।

মনের অজান্তে’ বলে একটা কথা আছে। তার মানে মন যা জানে না বা জানত না, তাই? কী কী ঘটে গেল মনের অজান্তে? কী কী সায় ছিল মনের? কী কীতে ছিল না? মাঝে মধ্যেই ভাবি, আমার মনের বয়স কত? দুই কুড়ি চার? নাকি তিন নং সাতাশ? কত কবিতায় মন ঢুকে ঘাপটি মেরে আছে। ছাপার অক্ষরে মন লুকিয়ে আছে। আঁকানো রঙে মন রাঙা হয়ে আছে। নির্মিত দৃশ্যে মন সৃজিত হয়ে আছে। তবু মন কি কোথাও আছে, আদৌ? মন জিনিসটা কী?

মনের সঙ্গে আর কত কথা বলব? মনকেও আর কত কথা শোনাব? কত ছবি আঁকলাম, মনে মনে। কত কবিতা লিখলাম, মনে মনে। কত উড়াল দিলাম, পাখির মতো, মনে মনে। কত সাবমেরিন হলাম, জলের গভীরে, মনে মনে। কত না পারাকে পারলাম, মনে মনে। মনে মনে আমি খুনও করেছি। ভালোবেসেছি, মনে মনে। তবু মনের ঠিকানা খুঁজে পাইনি। খোঁজ পাইনি, জানিও না, মন কোথায় থাকে? মন কি খায়? মন কী ঘুমায়, ক্লান্ত হলে? মনের মৃত্যু হলে কবর হয় কোথায়? মনকে কি পোড়ানো হয়? শেষ হবে না। শেষ হয়ও না। তাই শেষ কথা বলি?

‘সিয়েনা শহর পুড়ে গেছে।

সেই পোড়া শহরের কালারই হচ্ছে বার্নটাসিয়েনা। যারা ছবি আঁকে, তাদের কেউ কেউ এই কালারটা পছন্দ করে বটে। হঠাৎ রোদ মিষ্টি লাগে। হঠাৎ চৌচির করে দিয়ে যায় বখাটে হাওয়া। ঠেকানো যায় না, এমন দুর্বার, এমন মাতাল। এমনকি কী নেই কী নেই বলে বুকের মধ্যে উষ্ণজলের গুড়গুড়ি বেজে ওঠে, খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগে, স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে একা বসে থাকি। একটা শালিক আরেকটা বালিকা শালিকের খোঁজে ছটফট করতে থাকে। তখন, রোদ মিষ্টি, হাওয়া চৌচির। হঠাৎ ভালোবাসার আঁচে, আভায়, লাভায় মন পুড়ে যায়।


কৃষ্ণচূড়ার ফুল কিংবা ভার্মিলিয়ন রেড ঝুপঝাপ ঝরে পড়ে শূন্যপটে। কুয়াশার আধিক্য এমন যে, এক হাত সামনে-পেছনেও কিছু দেখা যায় না। যথেষ্ট বিভ্রম ছড়ানো পথে বাড়ি ফেরা দায় হয়ে যায়। পুরো শীতকাল ভালোবাসা শিশির হয়ে ঝরে। ভোরবেলা হাঁটতে গেলেই মাথা ভিজে যায়। পা ভিজে যায়। সমস্ত শরীর ভিজে ওঠে। এরপর আসে বসন্ত। কুয়াশা তখনও কিছু অবশিষ্ট উঁকি মারে আর তলে তলে মন বেলেসিঁদুরে লেপ্টে যায়। এক কথায়, ভালোবাসা সন্ত্রাস ঘটাতে চায়।

বনে বনে অর্কেস্ট্রা বাজে। খুব ভালো লাগে, লাগে বলেই হঠাৎ ভালোবাসা রিভার্স হয়, তখন আর মোটেই ভালো লাগে না। লোনলি লোনলি লাগে। ভালোবাসার ফর্ম চেঞ্জ হয়ে যায়। পোড়াশহর, পোড়ামনের আলাদা-আলাদা কালার ফুটে ওঠে। তখন হয়তো কবিতা লেখা হয়, সেই কবিতা ছাপাখানায় যায়। তারপর সেই কবিতা কেউ হয়তো পড়ে, পুড়ে যাওয়ার আশায়, ঘৃণায়, ভালোবাসায়।

মন এমন, কদিন ধরেই ঘুঁই ঘুঁই করছে, সে আমাকে দিয়ে বলিয়ে দিতে চাচ্ছে, তোমাকে খুব ভাল্লাগছে। তোমাকে আমার ভালোবাসতেও ভাল্লাগবে...

অলংকরণে ব্যবহৃত ছবি: রকি হকিন্স, আমেরিকান চিত্রকর

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীতকিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান

ছবি: সংগৃহীতকিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিষ্ঠ চিকিৎসক, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ্ব ডা. এ. এ. মাজহারুল হক এবং রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ ছয় কীর্তিমানকে সম্মাননা প্রদান করেছে।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকালে কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান।

এতে সম্মাননা বক্তৃতা করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ।

বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

অনুষ্ঠানে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননাপ্রাপ্তদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের আইনপেশার কৃতীজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হক।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ পেয়েছেন ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, প্রবীণ সাংবাদিক মু আ লতিফ ও আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন এবং প্রয়াত শাহ আজিজুল হকের পরিবারের পক্ষে ভাতিজা এডভোকেট শাহ আশরাফ উদ্দিন দুলাল ও মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবীর পক্ষে তার মেয়ে গৌরি রাণী দেবী সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।

 এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বাদল রহমান।


অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলু, বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সমাজকর্মী আবদুর রহমান রুমী, সাংবাদিক শেখ মাসুদ ইকবাল, সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সম্মননা অনুষ্ঠান শেষে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ২০১৫ সাল থেকে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে।

;

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্য রক্ষায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা রয়েছে: ড. মাহফুজ পারভেজ



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

  • Font increase
  • Font Decrease

বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন'র নির্বাহী পরিচালক ড. মাহফুজ পারভেজ বলেছেন, 'বাংলার গৌরবদীপ্ত জনপদ কিশোরগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিকাশ ও রক্ষায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা রয়েছে।'

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকালে কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম স্মরণ, দোয়া ও ইফতার মাহফিল এবং আনুষ্ঠানিকভাবে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি সম্মাননা বক্তব্য প্রদানকালে আরো বলেন, 'অবক্ষয়, অন্ধকার ও অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে আলোকিত সমাজ গঠনে ইতিহাস-ঐতিহ্যের শিক্ষা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।'

বরিষ্ঠ চিকিৎসক, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ্ব ডা. এ. এ. মাজহারুল হক এবং রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক স্থানীয় ছয় কীর্তিমানকে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার।

মাজহারুন-নূর সম্মাননা অনুষ্ঠান

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান। এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বাদল রহমান।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলু, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি আবদুর রহমান রুমী, সাংবাদিক শেখ মাসুদ ইকবাল, সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, মহিলা পরিষদ সম্পাদক আতিয়া রহনান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এতে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও নানা শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, মহিলা পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিক, সাহিত্য সম্পাদক বাবুল রেজা, ছড়াকার সামিউল হক মোল্লা, ঈসাখাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান বদরুল হুদা সোহেল, কিশোরগঞ্জ নিউজ প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননাপ্রাপ্তদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের আইনপেশার কৃতীজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হক।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ পেয়েছেন ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, প্রবীণ সাংবাদিক মু আ লতিফ ও আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন এবং প্রয়াত শাহ আজিজুল হকের পরিবারের পক্ষে ভাতিজা এডভোকেট শাহ আশরাফ উদ্দিন দুলাল ও মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবীর পক্ষে তার মেয়ে অধাপিকা গৌরি রাণী দেবী সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।

সম্মননা অনুষ্ঠান শেষে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে স্মরণ সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ইফতারের পূর্বে দোয়া পরিচালনা করেন জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, অ্যাডভোকেট গাজি এনায়েতুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন সংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু। অনুষ্ঠানে স্পন্সর হিসাবে যুক্ত ছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড।

প্রসঙ্গত, ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ২০১৫ সাল থেকে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

;

কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান



কনক জ্যোতি,  কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান

কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান

  • Font increase
  • Font Decrease

আন্তর্জাতিক কবিতা দিবসে ছায়ানট (কলকাতা) এবং লা কাসা দে লোস পলিগ্লোতাস যৌথভাবে আয়োজন করে একটি কবিতা সন্ধ্যার। অনুষ্ঠানটি হয় কলকাতায় অবস্থিত একটি স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট তাপাস্তে - তে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ছায়ানট (কলকাতা)-এর সভাপতি সোমঋতা মল্লিক এবং পরিকল্পনা করেন  লা কাসা দে লোস পলিগ্লোতাস-এর প্রতিষ্ঠাতা শুভজিৎ রায়।

এই বিশেষ দিনে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করা হয় বাংলা এবং স্প্যানিশে। বিশ্ব কবিতা দিবসে কবিতার ভাষায় এক হয়ে যায় বাংলা এবং স্পেন। এক করলেন কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা এবং স্প্যানিশ দুই ভাষাতে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে এই আয়োজন।

বাংলায় কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করেন সৌভিক শাসমল, তিস্তা দে, দেবলীনা চৌধুরী এবং স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ ও পাঠ করেন শুভজিৎ রায়। অনুষ্ঠানটি দর্শকদের প্রশংসা লাভ করে।

বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষ্যে ছায়ানট (কলকাতা) এবং কৃষ্ণপুর নজরুল চর্চা কেন্দ্র যৌথভাবে আরও একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শরৎচন্দ্র বাসভবনে। প্রায় ৫০ জন কবি এবং বাচিক শিল্পী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম সহ বিভিন্ন কবির কবিতা এই অনুষ্ঠানে শোনা যায়।

;

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;