অনুভব আহমেদের কবিতা
সমুদ্র বিচ্ছেদ
তোমাকে হাতড়ে বুঝতে পারি লবণাক্ত কতটা হয়েছো
ক্ষয়ে গেছ ভুল স্লেটে চিরকাল, তবু এখানে সরলরেখায়
দাঁড়িয়েছি সমস্ত
হারালে জেনো হারাচ্ছ পৃথিবী
আর সমস্ত আঘ্রাণ ঘিরে ভরা নিনাদ ,হলুদ পাতার বোঁটা থেকে খসে যাচ্ছে আত্মার নিনাদ
যেসব কলহ ঘিরে জন্মাচ্ছে ঊন ব্যথা, ঘর্মাক্ত পরিতাপ
তাদের থেকে বাঁচিয়ে আমরা আমাদের নিয়ে যাব দূর
যেখানে উদ্যান ভর্তি তুমি আমি, যেখানে সন্তানের শতনাম
যেখানে মায়ের মুখ কলকল মিসিসিপি, ব্যথার ভাষারা খরস্রোতা ভলগায়
আমি তবু ধরে আছি হাত, জেনো ভেঙেছে ঢেউ ঘর
আমি তবু ছাড়িনি তার ক্ষয়াটে কঙ্কাল
উপভাষা ঘিরে গভীর-
জনপদে ঘুমিয়ে আছি প্রাচীন প্রবাদ, আমাকে বয়ে বয়ে নিয়ে যায় ঠোঁট, মানুষের গেরস্থালি
তুমি ভাব শিলালিপি, উদ্ধার জানোনা মর্ম,
চিবুকে হেলান সমুদ্র, রোদ ডুবে গেছে গায়ে, উত্তাল কৈবর্তের নিশানা, সমুদ্র বিচ্ছেদে কাঁদে মীনও।
শরীর ভেজা দিনে
থামতে থামতে ভেসে গেছি, ঢেউ বলেছে এসো
বৃক্ষ শাখায় ব্যথার বেশে মানুষের মুখও
পাতায় দুলছে হাওয়া,
ঝরছে বুক ঢলোঢলো-
হৃদয় মর্মর মাটি, পায়ের তালু তৃণ
অইতো সর্বনাশের নদী-
খোলা মাঠে উদোম গায়ে ছুটছে জীবন ঝুঁকি
নগ্নতাকে আঁকড়ে ধরে বাজছে বীণা ধ্রুপদ
লহর থেকেই আসছে ভেসে বধ করা অসুর
বসে আছো ভোরের ভেতর ধোঁয়ায় উড়া মাছি,
কতযুগ পরের তুমি, কত যুগের আমি?
আমরা কেবল পুনরাবৃত্তি, নানা শরীরে ফিরি একই
ধ্বংসপ্রবণ এ অরণ্যে ঘুমিয়ে বনভূমি, চাঁদের ঘরে হুড়কো দিয়ে বসে আছো তুমি,
কাঁদছে ভূমি এ বনাঞ্চলের করাত করুণ সুরেই
ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে বিপন্নতার অঞ্চলে
গেছে চলে যাবার দূর,
তোমার ঘর কাছেই বাজছে বনভূমির গায়ে
সারাটা শরীর -
রোগের ভেতর বিসমিল্লার সানাই।
পৃথিবী ঘিরে শীত
জন্য তোমার চলে যাব, ভেবেছি রোদ পড়ে আছে
ওক গাছেরা নুয়ে
আছে সারাপথ
অনার্কিত মানুষের সমুদ্রে -
বেদনার পিচে লেপ্টে বিচ্ছেদ, বুকের ওপর হামাগুড়ি শিশুর
চেয়েছি আরও কিছুক্ষণ অবনত হও তুমিও আমার পাশে
দেহজ লতাপাতা ফেলে যাওয়া সঙ্গমে
এই হেমন্তে, আমি তোমার ঘরবাড়ি
তোমার অসতর্ক দাগে লেগে থাকা শার্ট
মদের বোতল লুকিয়ে ফেললেও প্রেম লুকায় এমন গোপন কোথাও খেয়ে ফেলা চুমু
আমরা চুপ করে থাকি, বারান্দায় মৃত তারার শব্দে চেয়ে আছে ঘরবাড়ি
তোমারও ফিরতে হয় বাড়ি, অপেক্ষার নাম অন্য
নেশা ছেড়ে গেলে, আমাকে ছেড়ে যাও প্রতিবার
আমি বলিনা কিছু
এখানে সারাদিন চড়ুই আসে, খুঁটে খুঁটে খায় আমাকে, তোমাকে
সমুদ্র হিমবায়ে লেখা থাকে প্রেমিকের কথা, প্রেমিকার কথা, যারা বাস করে অন্য কোথাও।
ঘ্রাণ
তোমার গায়ের ঘ্রাণে আহির ভৈরব
জেগেছে ভোর, গোয়াল থেকে তিড়িংবিড়িং বেরিয়ে নাচে বাছুর
তোমার গায়ের ঘ্রাণে মাঠের পাকা ধান
মধ্য দুপুর, হাতের চুড়িতে বাজে কৃষাণীর মন
তোমার গায়ের ঘ্রাণে কালনি সুরমা একাকার
চড়ুই খুটছে দানা, জড়িয়ে দেখছে ঝাউপাতারা ...
কুকুর
আমিও কুকুর। তুমি ডাকলে আজও দরোজায় এসে দাঁড়াই
তুমি ডাকলে এতোসব দুর্যোগের ভেতর যেনো আজও আমার উৎসব আছে
যেনো আমিও রুঢ়তা ভুলে জীভ বের করে দাঁড়িয়ে থাকা সহজ কলমীলতা
তুমি ডাকলে আমার ভেতরে আমি ভেজা বিস্কুটের মতো গলে গলে পড়া
অথচ কতবার ফিরিয়ে দিয়েছো
ডেকে বলেছো, দুঃখটা সেরে গেছে দরোজাটা ওদিকে
কতোবার তোমার নিষ্পাপ চোখ জানিয়েছে “ভালোবাসতে জানো তাই বলে কী দুঃখ দেবোনা!”
তুমি, আমার বিগত যাপনের আনন্দে পাওয়া শোকচিহ্ন।