কুমিল্লা থেকে ডুয়ার্স: বিস্মৃতপ্রায় ডুয়ার্স গান্ধীর গল্প



ড. রূপ কুমার বর্মণ
কুমিল্লা থেকে ডুয়ার্স: বিশ্মৃতপ্রায় ডুয়ার্স গান্ধীর গল্প

কুমিল্লা থেকে ডুয়ার্স: বিশ্মৃতপ্রায় ডুয়ার্স গান্ধীর গল্প

  • Font increase
  • Font Decrease

উনিশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের প্রথমার্ধে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মুক্তিসংগ্রাম আধুনিক বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক বহুচর্চিত বিষয়। স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা-আন্দোলণের বহুকৌণিক বিশ্লেষণের পাশাপাশি সমান্তরাল ধারা হিসাবে সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত প্রধান নেতৃবর্গকে “আইকন” বানানোর প্রয়াস। এর অবশ্যম্ভাবী ফলস্বরূপ বিশ শতকের ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জাতীয় ইতিহাসে “ব্যক্তির ভূমিকা” শ্রেণিকক্ষের পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমেরও আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এর জন্যই আমরা রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩) শুরু করে ‘বঙ্গবন্ধু’ পর্যন্ত আরোও অন্যান্য জাতীয় চরিত্রকে আমাদের দৈনন্দিন আলোচনার বৃত্তে নিয়ে আসি। আর এক্ষেত্রে যার কথা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় তিনি হলেন “অহিংস আন্দোলনের পূজারি” মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বা মহাত্মা গান্ধী (১৮৬৯-১৯৪৮)। বস্তুতঃ ‘সত্যাগ্রহ আন্দোলন’ (১৯১৭), ‘অসহযোগ আন্দোলন’ (১৯২০-১৯২২),  ‘আইন-অমান্য আন্দোলন’ (১৯৩০-৩২) ও ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলনের’ (১৯৪২-১৯৪৪) মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠেছিলেন গণ-আন্দোলনের প্রতীক। তাঁর নেতৃত্ব ও সকলকে একত্রিত করে ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করার পদ্ধতি তৎকালীন ভারতকে (১৯২০-১৯৪৮) এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর মতো সংগ্রামী নেতা-নেত্রীদের তুলনার ক্ষেত্রে গান্ধীই হয়ে উঠেছিলেন Point of Reference। ফলে ঔপনিবেশিক শাসনের শেষ তিন দশকে ভারতীয় উপমহাদেশ হয়ে উঠেছিল ‘বহু গান্ধীর দেশ’। স্বাভাবিকভাবেই “সীমান্ত গান্ধী” (খাঁন আব্দুল গফফর খাঁন: ১৮৯০-১৯৮৮), মেদিনীপুরের “গান্ধী বুড়ি” (মাতঙ্গিনী হাজরা : ১৮৭০-১৯৪২), “উড়িষ্যা গান্ধী” (গোপবন্ধু দাস : ১৮৭৭-১৯২৮) বা “বিহারি গান্ধীর” (রাজেন্দ্র প্রাসাদ: ১৮৮৪-১৯৬৩) মতো আর অনেক স্থানীয় গান্ধীই স্থান পেয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। তবে অনেক গান্ধীই রয়ে গেছেন ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকের বাইরে। কেউবা আবার হারিয়ে গেছেন স্মৃতির অতল গহ্বরে। এরকমই একজন প্রায় বিস্মৃত গান্ধী ছিলেন “ডুয়ার্স গান্ধী” বা নলিনীমোহন পাকরাশী (১৮৯৪-১৯৭৬)।

নলিনীমোহন পাকরাশীর (ভট্টাচার্য) জন্ম ১৮৯৪ সালে ব্রিটিশ-শাসিত অবিভক্ত বাংলার কুমিল্লা (তিপ্রা/ত্রিপুরা) জেলায়। বহু পণ্ডিত ও সংগ্রামীর জন্মস্থান বাংলার অন্যতম সংস্কৃতিবান এই জেলার গুরুত্বপূর্ণ মহকুমা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানা এলাকায় ছিল তাঁর পৈত্রিক বাড়ি। মিথিলা থেকে ‘ন্যায়রত্ন’ উপাধিপ্রাপ্ত তাঁর পিতা নবীনচন্দ্রের যখন মৃত্যু হয় (১৯০৪ সালে) তখন নলিনীমোহনের বয়স তখন মাত্র ১১ বছর। স্বাধীনচেতা নলিনীমোহন বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের (১৯০৫) সময় থেকেই জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপের প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ও পারিবারিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নলিনীমোহনকে পাঠানো হয় ময়মনসিংহে। জমিদার, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান ময়মনসিংহে এসে নলিনীমোহন জড়িয়ে পড়লেন যুগান্তর দলের সঙ্গে। যুগান্তর দলের সুরেন্দ্র মোহন ঘোষের [১৮৯৩-১৯৭৬) সান্নিধ্যে এসে তিনি ঔপনিবেশিক শক্তির বিরোধিতার মনোভাবকে আরও শক্তিশালী করেন। কিন্তু পারিবারিক পরিস্থিতির চাপে নলিনীমোহনকে চলে আসতে হয় রংপুরে। এখানে উচু বেতনে কাজ নেন এক ঠিকাদারি সংস্থায়। তাঁর তত্বাবধানে তৈরি হয় রংপুরের কারমাইকেল কলেজের [Carmichael College (1916)] বাড়ি।

স্বাধীন রাজনৈতিক চিন্তা ও বহু মানুষকে একত্রিতভাবে কাজ করানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে নলিনীমোহন ডুয়ার্স অঞ্চলে আসেন ১৯২১ সালে। ততদিন ডুয়ার্সের রাজাভাতখাওয়ায় গড়ে উঠেছে জঙ্গলের কাঠ বিক্রির Auction Centre। বাবু রামরূপ সিংহের অধীনে ১৫০ টাকার বেতনে চাকরি নিয়ে ১৯২৯ থেকে নলিনীমোহন পাকাপাকিভাবে আলিপুরদুয়ারে বসবাস শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে ডুয়ার্স অঞ্চলের জাতীয় আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ভূটান থেকে অধিকৃত ডুয়ার্সকে নিয়ে ১৯৬৯ সালে গঠিত হয় জলপাইগুড়ি জেলা। জলপাইগুড়ি মহকুমার সঙ্গে আলিপুরদুয়ার মহকুমার বক্সা, ফালাকাটা, আলিপুরদুয়ার, কুমারগ্রাম, শামুকতলা, মহাকালগুড়ি, কামাখ্যাগুড়ি ও অন্যান্য অঞ্চলেও নতুন ধরনের ভুমি বন্দোবস্ত শুরু হয়। শুরু হয় কৃষিজমি, নদী, ঘাট ও হাট থেকে খাজনা আদায়ের নতুন প্রথা।

পাশাপাশি ইংল্যান্ডের “শিল্পায়নজনিত উদ্বৃত্ত মুলধনের” বিনিয়োগ করার জন্য আসাম ও ডুয়ার্স হয়ে ওঠে চা-বাগিচার বিকাশের কেন্দ্রবিন্দু। ডুয়ার্স রূপান্তরিত হয় “ঔপনিবেশিক শক্তির বাগানে” (Garden of the Empire)। আলিপুরদুয়ার মহকুমার ভুটান ঘেঁষা অঞ্চলে দেশীয় ও ইউরোপীয় উদ্যোগীদের প্রচেষ্টায় স্থাপিত বেশ কিছু চা-বাগান। কালচিনি, হ্যামিলটনগঞ্জ, মাদারিহাট, রাজাভাতখাওয়া, কার্তিক, রায়ডাক, তুরিতুরি ও কুমারগ্রামের চা-বাগানগুলি ভরে ওঠে আদিবাসী শ্রমিক ও বাঙালি ‘বাবুদের’ ভিড়ে।

চা-বাগান অর্থনীতি, কাঠ ও প্রশাসনিক কারনে জলপাইগুড়ি হয়ে ওঠে এক গুরুত্বপূর্ণ জেলা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, চা-নিলাম কেন্দ্র, আদালত, নগরায়ন ও ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার কেন্দ্ররূপে বিশ শতকের প্রথমার্ধে জলপাইগুড়ি শহর পরিণত হয় তার  প্রাণকেন্দ্রে। রাজনৈতিক চেতনা ও শিক্ষা-সংস্কৃতির মূল ধারক হয়ে ওঠে জলপাইগুড়ি শহরের পাশ্চত্য শিক্ষায় আলোকিত আইনজীবী ও তাদের সহযোগী শ্রেণি। খুব সংগত কারণেই ডুয়ার্সের চা-বাগানের শ্রমিক ও “উৎপাদনের প্রাথমিক ক্ষেত্রে নিযুক্ত” স্থানীয় জাতি-জনজাতি সম্প্রদায়গুলি থেকে যায় জলপাইগুড়ির “অভিজাত- নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক ক্ষমতার বৃত্তের” বাইরে।

অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি শহর থেকে অনেক দূরে অবস্থিত আলিপুরদুয়ার মহকুমা শহর ছিল অপেক্ষাকৃত অনুন্নত। গুটিকয় হাইস্কুল গড়ে উঠলেও এই শহরে ছিল না কোন কলেজ। পাশ্ববর্তী গ্রামগুলির অবস্থা ছিল আরও শোচনীয়। বিশ শতকের গোড়ায় মিশনারিদের চেষ্টায় বেশ কিছু প্রাইমারি ও মিডল ইংলিশ স্কুল গড়ে উঠলেও কুমারগ্রাম, মহাকালগুড়ি, কামাখ্যাগুড়ি, শামুকতলা, ফালাকাটা, মাদারহাটি ও বীরপাড়ার স্থানীয় মানুষেরা উচ্চশিক্ষায় সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। তাঁদের পক্ষে এলিট-রাজনীতির কেন্দ্রে প্রবেশ করা বা রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া ছিল একেবারেই অসম্ভব।

বিশ শতকের গোড়ার দিকের আলিপুরদুয়ারের এরকম পরিস্থিতিতে ১৯২১ এ নলিনীমোহন আলিপুরদুয়ারে এসে দেখলেন যে এখানে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ(১৮৮৩), কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ (১৮৯৯)  বা রংপুরের কারমাইকেল কলেজের মতো কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। নেই পূর্ববাংলার জমিদার শ্রেণির কৃষক শোষণ। এমনকি পূর্ববাংলার মতো রাজনীতি চেতনাও নেই। তবে এখানে আছে অন্য ধরনের শাসন ও শোষণ। শাসিতের হয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার মানুষের বড় অভাব। জলপাইগুড়ির এলিট নেতৃবর্গের ডুয়ার্সের সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার মতো মানসিকতাই ছিলোনা। এরকম পরিস্থিতিতে নলিনীমোহন চুপ থাকতে পাড়েননি। মাসিক ১৫০ টাকা বেতনের কাজ ছেড়ে নলিনীমোহন ঝাঁপিয়ে পড়লেন জনগণকে সংগঠিত করার কাজে। নিজেকে উৎসর্গ করলেন ডুয়ার্সের সাধারণ মানুষকে নেতৃত্ব  দেওয়ার জন্য। তাঁর নেতৃত্বে শামুকতলার শুক্রবারের হাটে সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন (১৯২৯) ও ফালাকাটায় আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০) তাঁকে ডুয়ার্সের রাজনৈতিক মহলে পরিচিত করে তোলে। কুমারগ্রামদুয়ার থেকে মাদারিহাট, ভলকা থেকে ফালাকাটা---ডুয়ার্সের সবত্রই নলিনীমোহন হয়ে ওঠেন “নলিনী ঠাকুর”। কুমারগ্রামদুয়ার, আলিপুরদুয়ার, ফালাকাটা ও মাদারিহাটের অন্যান্য কৃষক সম্প্রদায়ের ব্রিটিশ-বিরোধী মনোভাবকে সংগঠিত করেন নলিনীমোহন।

ভারত শাসন আইন (The Government of India Act, 1935) গৃহিত হওয়ার পরে ১৯৩৭ এর বিধানসভার নির্বাচনে ডুয়ার্সের নির্বাচনী রাজনীতিতে ভাগ বসানোর জন্য এগিয়ে আসেন জলপাইগুড়ির এলিট-রাজনীতিকগন। প্রসন্নদেব রায়কত, খগেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত (১৮৯৮-১৯৮৫) ও উপেন্দ্রনাথ বর্মন (১৮৯৮-১৯৮৮) জলপাইগুড়ি থেকে বাংলার বিধানসভায় প্রবেশ করেন। জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি বিধানসভা ক্ষেত্রের তপশিলিজাতির প্রতিনিধি উপেন্দ্রনাথ ফজলুল হকের দ্বিতীয় মন্ত্রীসভার (১৯৪১-৪৩) মন্ত্রী হয়ে ডুয়ার্স অঞ্চলের কৃষকদের খাজনা কমানোর আর্জি জানিয়েছিলেন বিধানসভায়। কিন্তু এটা বাস্তবায়িত হয়নি। ডুয়ার্স অঞ্চলের মাটি পূর্ববাংলা বা দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির মতো এতোটা উর্বর ছিল না। ফলে এখানকার জোত জমির কৃষকদের পক্ষে ভূমি রাজস্বের হার হয়ে উঠেছিল একটা বড় বোঝা। কৃষকদের মনে দানা বাঁধতে শুরু করেছিল খাজনা না দেওয়ার প্রবণতা।  “No Rent” বা খাজনার বন্ধের আন্দোলন কুমারগ্রামদুয়ার এলাকায় প্রখর রূপ ধারন করেছিল নলিনীমোহনের নেতৃত্বে। কুমারগ্রামের জোতদার মঘা দেওয়ানী বা মদন সিং বরুয়ার মতো কংগ্রেসি কৃষকেরা খাজনা বন্ধের আন্দোলনকে গণ-আন্দোলনে রূপান্তরিত করেছিলেন। খাজনা বন্ধের প্রভাব পড়েছিল কুমারগ্রামের কুলকুলি, দলদলি ও শামুকতলার হাটেও।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন (১৯৩৯-১৯৪৫) ভারতের রাজনীতির জটিল পরিস্থিতিতে ১৯৪২ এর ৮ই আগস্ট জাতীয় কংগ্রেসের “ভারত ছাড়ো” (Quite India) আন্দোলনের ডাক দেয়। “করেঙ্গে-ইয়ে-মরেঙ্গে” ধ্বনিতে ভেসে ওঠে ভারতের আকাশ বাতাস। ৯ই আগস্ট গান্ধীজী সহ জাতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রিয় নেতৃবর্গকে গ্রেফতার করা হয়। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অভাবে স্থানীয় কংগ্রেসী নেতৃবর্গ তাঁদের নিজস্ব মত ও কর্মপন্থানুযায়ী ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতায় মেতে উঠেন। ব্রিটিশ শাসনের প্রতীক (বিশেষত রেললাইন, টেলিগ্রাফ, পোস্ট অফিস ও যোগাযোগ ব্যবস্থা) সমূহের উৎপাটনে মেতে উঠে উন্মত্ত জনতা। ডুয়ার্সের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলেও তাঁর প্রভাব অনুভূত হল। নলিনীমোহনের নেতৃত্বে কুমারগ্রাম থানা আক্রমন করে টেলিগ্রাম লাইন কেটে দিয়ে কাঠের তৈরি সেতুগুলির পাটাতন উপরে দিয়ে কুমারগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করেছিলেন এখানকার স্থানীয় জনগণ। ‘তারকাটা আন্দোলন’ নামে পরিচিত এই গন-আন্দোলনের পর নলিনীমোহন ডুয়ার্সের সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত হলেন “ডুয়ার্স গান্ধী” নামে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ইতিহাসের পরবর্তী পর্যায় আমাদের সকলেই জানা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর ভারতের রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের আলাপ-আলোচনার ফলস্বরূপ বিভিন্ন পরিকল্পনা গৃহিত হয়। ১৯৪৬ এর নির্বাচনের পর ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে গঠিত হয় ভারতের সংবিধান সভা (The Constituent Assembly)। ১৯৪৭ এর আগষ্ট মাসে ব্রিটিশ-ভারত দ্বিখন্ডিত হয়ে জন্ম নেয় ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি জাতিরাষ্ট্র (Nation State)। পশ্চিম বাংলার অন্যান্য জেলার মতো জলপাইগুড়িও ভরে যায় পূর্ববঙ্গীয় উদ্বাস্তুদের ভিড়ে। পূর্ববাংলার ময়মনসিংহ, পাবনা ও রংপুর থেকে উৎখ্যাত মানুষের ভিড়ে দ্রুত পাল্টে যায় ডুয়ার্সের জনবৈচিত্র। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ডুয়ার্সের জনগণ নলিনীমোহনকে ভুলতে শুরু করেন। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায় (১৯৭২-১৯৭৭) কোচবিহারে এসে নলিনীমোহনকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেও বা তাঁকে ‘স্বাধীনতা সংগ্রামীর’ পদক দিয়ে ভারত সরকার সম্মানিত করলেও পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্টের শাসনকালে (১৯৭৭-২০১১) নলিনীমোহনের মতো ‘ডুয়ার্স গান্ধী’ চলে যান বিস্মৃতির অন্তরালে।

লক্ষ্য করার বিষয় হল জাতিয়তাবাদী দৃষ্টিতে লেখা পাঠ্যপুস্তকে ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিবাচক সুযোগ থেকে বঞ্চিত ও ঔপনিবেশিক শাসনের দ্বারা সরাসরি শোষিত ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল, কৃষক, আদিবাসী, শ্রমিক ও অন্যান্য প্রান্তিক মানুষেরা গুরুত্ত্ব পান নি। মার্ক্সবাদী ও নিম্নবর্গীয় ঐতিহাসিকেরা কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনকে ইতিহাসের আলোচনায় স্থান দিলেও তাঁরা ডুয়ার্স অঞ্চলের ঔপনিবেশিক শক্তির বিরোধিতার আন্দোলন বা নলিনীমোহনের মতো নিস্বার্থ দেশসেবকের অবদানকে স্বীকৃতি দেননি। তবে ঔপনিবেশিক শাসন-সৃষ্ট আধুনিক শিক্ষা, মুদ্রনযন্ত্র, সংবাদ পত্র ও সাহিত্যের দ্বারা প্রভাবহীন ডুয়ার্সের সাধারণ মানুষের ঔপনিবেশিক শক্তির বিরোধিতাকে অনুভব করতে হলে ‘কুমিল্লা থেকে আসা নলিনীমোহনের ডুয়ার্স গান্ধী হয়ে ওঠাকে’ স্মরণ করতে হবে ।

ড. রূপ কুমার বর্মণ, কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আম্বেদকর চর্চা কেন্দ্রের সমন্বয়ক

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;

বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্বে শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ও মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ও কিশোরগঞ্জ নিউজ'র নিয়মিত লেখক।

বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি,শিল্প, সংগীত, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার বহুল কার্যক্রম নিয়ে দেশের প্রাচীনতম ও অগ্রণী প্রতিষ্ঠা নবঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র এক সভা এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শনিবার (১১মার্চ ২০২৩) বিকেল ৪-৩০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় নাট্যশালার কনফারেন্স হলের ভিআইপি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বরেণ্য শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্হিতিতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা
কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ। এতে সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সঞ্চালনা করেন।

সভায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সদস্য বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর লেখক, কমামিস্ট ও গীতিকার শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ’র কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা গঠনের দায়িত্ব আরোপ করে তার হাতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র ইশতেহার তুলে দেন বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং অন্যান্য নেতৃবর্গ ।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গীয়'র জার্মানির সভাপতি কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক আমিনুর রহমান বেদু, রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবিশ, ইউনেস্কোর ব্রান্ড এম্বাসেডর নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাত, বঙ্গীয়'র সভাপতি পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, বঙ্গীয়'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলী নিয়ামত, কবি নাঈম আহমেদ, বঙ্গীয়'র কেন্দ্রীয় সদস্য কবি মীনা মাশরাফী, কবি পারভিন আক্তার সহ প্রমুখ।

সভার প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র সম্মিলন উদযাপন বিষয়ক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কবি আজিজুর রহমান আজিজকে আহবায়ক এবং সংগীতশিল্পী শামা রহমানকে সদস্য সচিব করে উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে বঙ্গীয়র সভাপতি পর্ষদের সকল সদস্য, রবীন্দ্র একাডেমির নির্বাহী শাখার সকল সদস্য, বঙ্গীয়র যুগ্ম সম্পাদকবৃন্দসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্টজনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।

দ্বিতীয় পর্বে অযুত তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু সম্মিলন, দ্বিশতজন্মবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মরণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে লেখক কবির আলোচনা সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড নেশন্সের ব্রান্ড এম্বাসেডর জনাব নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাতকে সভাপতি পর্ষদের সদস্য, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবির ঢালীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , সংস্কৃতি সেবক রোকনউদ্দীন পাঠানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, কবি আনোয়ার কামালকে লিটল ম্যাগ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সাংবাদিক শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে নির্বাহী সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক, কবি মীনা মাশরাফীকে নীলফামারী জেলার সমন্বয়ক, জনাব এ এইচ এম সালেহ বেলালকে গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা লেখক কবি আবদুল হালিম খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, কবি মানিক চন্দ্র দে, কবি অর্ণব আশিক, কবি বাবুল আনোয়ার, দৈনিক বঙ্গজননীর সম্পাদক কামরুজ্জামান জিয়া, কবি শাহানা জেসমিন, কবি গবেষক আবু সাঈদ তুলু, চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. বিশ্ব রায় (কলকাতা), বঙ্গীয় চট্রগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফ্যাশন ডিজাইনার আমিনা রহমান লিপি, শিল্পী শাহরিয়ার পিউ, কবি সোহরাব সুমন, কবি সরকার পল্লব, কবি রহিমা আক্তার মৌ, কবি লিলি হক, কবি আকমল হোসেন খোকন, শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, হিরা পারভেজ, ড. দিপু সিদ্দিকী, শিক্ষক ও কবি রওশন ই ফেরদৌস, কবি পারভীন আক্তার, কবি শিল্পী মাহমুদা, পূর্বধলার মো. জাকির হোসেন তালুকদার, কবি আনারকলি, কবি অপরাজিতা অর্পিতা, ডা. নূরুল ইসলাম আকন্দ, আবৃত্তিশিল্পী যথাক্রমে রূপশ্রী চক্রবর্তী, রবিউল আলম রবি সরকার, জেবুন্নেছা মুনিয়া, চন্দনা সেনাগুপ্তা, কবি সংগঠক রাজিয়া রহমান, কবি শামীমা আক্তার, শিল্পী সাদিয়া শারমিন, কবি কনক চৌধুরী, কবি তাসলিমা জামালসহ প্রমুখ।

;

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব



মাহমুদ হাফিজ
কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় শুরু হয়েছে রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসব। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতি সভাগৃহে বিকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, পরিব্রাজক ও ভ্রমণগদ্য সম্পাদক মাহমুদ হাফিজ, স.ম. শামসুল আলম, নাহার আহমেদ, ড. নাঈমা খানম প্রমুখকে সম্মানিত করা হয়।

বিকালে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা। বিশিষ্ট নাট্যকার চন্দন সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও কবি সব্যসাচী দেব। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাধারণ সম্পাদক কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য। এতে সমাপণী বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি কবি স্বপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।

আজ ও আগামীকাল ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি হলে বিকাল থেকে কবিতা ও গল্পপাঠ, আলোচনা, শ্রুতিনাটক, সঙ্গীত অনুষ্ঠিত হবে। রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, নেপাল, আসাম, ত্রিপুরার কয়েশ’ কবি লেখক অংশগ্রহণ করছেন।

;

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাকালে বন্ধ থাকার পর আবারো 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কার্যক্রমে ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ রচিত 'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের একশত কপি শুভেচ্ছামূলক প্রদান করা হবে। 

উল্লেখ্য, আগেও ইংরেজি নববর্ষে এবং ভাষার মাসে শত বিশিষ্টজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থ উপহার দিয়েছিল ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ. এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প-সাহিত্য-সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আনসার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার নামে গঠিত 'শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশন'। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল স্থানীয় নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে জানানো হয়েছে যে, বরকতময়, নেয়ামতপূর্ণ মাহে রমজানের সঙ্গে অন্য কোনো মাসের তুলনা চলে না। রোজা হলো মাহে রমজানে অবশ্য পালনীয় ফরজ আমল, যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নিজে দেবেন। মানবজীবনে রোজা একজন বান্দার আত্মীক ও শারীরিক কল্যাণের ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। তদুপরি, রমজান মাসকে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা তাঁর অপার ক্ষমা, দয়া আর অপরিসীম করুণা দিয়ে বান্দাদেরকে উপহার দিয়েছেন। রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত রোজা সঠিকভাবে পালন করলে রোজাদার নবজাতক শিশু মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানব জীবনে ও সামাজিক ব্যবস্থায় রমজান মাস ও রোজার গুরুত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে ফাউন্ডেশন প্রদত্ত গ্রন্থে। এ গ্রন্থ রমজান মাসের তাৎপর্য এবং রোজার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পাঠকদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে ৩০টি সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ের মাধ্যমে।

'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের লেখক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ। তাঁর পিতা: ডা. এ.এ, মাজহারুল হক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা: নূরজাহান বেগম, সমাজসেবী। ড. মাহফুজ পারভেজের জন্ম: ৮ মার্চ ১৯৬৬, কিশোরগঞ্জ শহরে। পড়াশোনা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচ,ডি)। পেশা: অধ্যাপনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি, গবেষণা ও সাহিত্য সাধনায় ব্রতী। প্রকাশিত গ্রন্থ কুড়িটি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- গবেষণা-প্রবন্ধ: বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরো। দ্বিশত জন্মবর্ষে বিদ্যাসাগর। উপন্যাস: পার্টিশনস, নীল উড়াল। ভ্রমণ: রক্তাক্ত নৈসর্গিক নেপালে। গল্প: ইতিহাসবিদ, ন্যানো ভালোবাসা ও অন্যান্য গল্প। কবিতা: মানব বংশের অলংকার, আমার সামনে নেই মহুয়ার বন, গন্ধর্বের অভিশাপ। অধ্যাপনা ও গবেষণা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের শীর্ষতম মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর এবং কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা কিশোরগঞ্জ নিউজ'র উপদেষ্টা সম্পাদক রূপে সংযুক্ত রয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের  'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজিত হবে রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক, ইতিহাসবিদ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ। সমন্বয় কমিটিতে আরো রয়েছেন কিশোরগঞ্জ নিউজ'র প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ ইসকান্দার আলী স্বপন, সাংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু ও চিকিৎসক নেতা ডা. গোলাম হোসেন।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে আরো জানানো হয় যে, ইতিপূর্বে ঘোষিত ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর সম্মাননা বক্তৃতা ২০২০ এবং ২০২১ করোনাকালের বিরূপ পরিস্থিতিতে স্থগিত থাকায় তা যৌথভাবে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. এএ মাজহারুল হক এবং সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' কর্তৃক কিশোরগঞ্জের জীবিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জীবনব্যাপী বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করতে ২০১৫ সাল থেকে এ সম্মাননা বক্তৃতা আয়োজন করা হচ্ছে, যা বক্তৃতা ও লিখিত আকারে প্রদান করেন মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' গতানুগতিক সম্মাননার বদলে ব্যক্তির কর্ম ও কীর্তির বিশ্লেষণমূলক-মূল্যায়নভিত্তিক সম্মাননা বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত স্বরূপ চিহ্নিত করে এবং এরই ভিত্তিতে জ্ঞাপন করা হয় যথাযথ সম্মান। সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি লিখিত আকারে বক্তৃতা-পুস্তিকায় চিত্রিত হন সম্মাননা প্রাপ্তগণ। মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এই বুদ্ধিবৃত্তিক-একাডেমিক আবহে ধারাবাহিকভাবে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে, যা কিশোরগঞ্জে তো বটেই, বাংলাদেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। শুরু থেকে সম্মাননা বক্তৃতা প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. মাহফুজ পারভেজ, যিনি কিশোরগঞ্জে পাবলিক লেকচার সিরিজের মাধ্যমে গণবুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর তৈরির পথিকৃৎ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রথম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান শিক্ষাবিদ প্রাণেশ কুমার চৌধুরী, ২০১৬ সালে দ্বিতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান দীপ্তিমান শিক্ষকদম্পতি: অধ্যক্ষ মুহ. নূরুল ইসলাম ও বেগম খালেদা ইসলাম, ২০১৭ সালে তৃতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘প্রজ্ঞার দ্যুতি ও আভিজাত্যের প্রতীক: প্রফেসর রফিকুর রহমান চৌধুরী’ এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘ঋদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র: শাহ্ মাহতাব আলী’। ২০১৯ সালে পঞ্চম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা দেয়া হয় 'স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষায় পথিকৃৎ চিকিৎসক-দম্পতি' প্রফেসর ডা. আ ন ম নৌশাদ খান ও প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুনকে। ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ প্রদান করা হয় নাসিরউদ্দিন ফারুকী, ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হককে। এ উপলক্ষে ‘কিশোরগঞ্জে আইন পেশার নান্দনিক বিন্যাস’ শীর্ষক সম্মাননা বক্তৃতা বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ প্রদান করা হয়েছে ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু.আ. লতিফ,  মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ ঊষা দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরীকে, যারা কিশোরগঞ্জের সামাজিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসে স্বকীয় কৃতিত্বের প্রভায় উজ্জ্বল। জীবনব্যাপী কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের জন্য শৈল্পিক দ্যোতনায় নান্দনিক বর্ণালী সৃজন করেছেন এই তিন গুণান্বিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ জানান, ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২০ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২১ একসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা মার্চ মাসের শেষ দিকে আয়োজিত হবে।

;