বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে বিদেশিদের সম্মান প্রদর্শনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যটি একপলক দেখার জন্য আসেন

প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যটি একপলক দেখার জন্য আসেন

ঐতিহাসিক ধানমন্ডি-৩২ নম্বর সড়কে (বর্তমান ১০ নম্বর বাড়ি ও ১১ নম্বর সড়ক) বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সকাল ১১টায় উদ্বোধন করা হবে ‘শ্রদ্ধা’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। সাত দিনব্যাপি আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

সিডনি স্ট্রিট, পূর্ব লন্ডন শহরের টাওয়ার হ্যামলেটে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নান্দনিক আবক্ষ ভাস্কর্যটি ঘিরে বিদেশি বন্ধুদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মেলবন্ধনের ছবিগুলো নিয়ে ‘শ্রদ্ধা’ শিরোনামে উল্লেখিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন আলোকচিত্র শিল্পী ফোজিত শেখ বাবু।

১৭ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। কেননা এ দিনে জন্মেছিলেন রাজনীতির মহাকবি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার জীবনের মূল্যবান দীর্ঘ সময় অক্লান্ত সংগ্রাম, ত্যাগ ও সেই সাথে ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বাঙালি জাতির বহু বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে জন্ম নিয়েছে লাল-সবুজের বাংলাদেশ নামক এক নতুন জাতিরাষ্ট্রের।

বিজ্ঞাপন
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে বিদেশিদের সম্মান প্রদর্শন

লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য ঘিরে গড়ে উঠেছে বিদেশি বন্ধুদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মেলবন্ধন। সিডনি স্ট্রিট, পূর্ব লন্ডন শহরের টাওয়ার হ্যামলেটে স্থাপিত হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই নান্দনিক আবক্ষ ভাস্কর্যটি। ভারতীয় দু’জন শিল্পীর তৈরি পিতলের এই আবক্ষ ভাস্কর্যটি স্থাপনের জন্য আবেদনের পর ২০১৪ সালের জুলাই মাসে লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেটের কাউন্সিলের অনুমোদন পান প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আফসার খান সাদিক। বঙ্গবন্ধুর এই আবক্ষ ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয় সিডনি স্ট্রিটের আফসার খান সাদিকের বাসভবনের বাগানে। পরবর্তিতে-এর দুই বছর পর ১৭ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্যটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা প্রয়াত রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন। উদ্বোধনের সময় বিপুল সংখ্যক বিদেশি বন্ধু ও প্রবাসী বাঙালি উপস্থিত ছিলেন। পূর্ব লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় আফসার খান সাদিকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও নিজস্ব অর্থায়নে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যটি তৈরি করা হয়। ব্রিটেনের মাটিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন এটিই প্রথম। যার জন্য আফসার খান সাদিক বাঙালি জাতি ও বিদেশি বন্ধুদের কাছে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। পূর্ব লন্ডনের সিডনি স্ট্রিট বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা হলেও প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক লন্ডনের স্থানীয় বিদেশি বন্ধুরাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা আসছেন বঙ্গবন্ধুর এই আবক্ষ ভাস্কর্যটি একপলক দেখার জন্য। সিডনি স্ট্রিটে এসে ভাস্কর্যটি দেখে উৎসব-আনন্দে মেতে উঠছেন বিদেশি বন্ধুরা। ভাস্কর্যটির সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি অনুসারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ‘শ্রদ্ধা’ ও ভালোবাসা প্রকাশ করছে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক বিদেশি বন্ধুদের উপস্থিতিতে আফসার খান সাদিকের বাগান বাড়িটি এখন মিনি জাদুঘরে পরিণত হয়েছে।

২০১৮ সালে আলোকচিত্র শিল্পী ফোজিত শেখ বাবু বিশ্বের সবচেয়ে অবহেলিত জাতিগোষ্ঠী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশার চিত্র নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী করতে বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে যান। এসময় প্রদর্শনী চলাকালীন অবস্থায় কয়েকদিন আলোকচিত্র শিল্পী ফোজিত শেখ বাবু সিডনি স্ট্রিটের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটির সামনে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। এসময় আবক্ষ ভাস্কর্যটি ঘিরে বিদেশি বন্ধুদের ‘শ্রদ্ধা’ আর ভালোবাসা প্রকাশের ছবি তুলেন। দিনভর ভাস্কর্যটির সামনে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে উৎসব-আনন্দে সময় কাটান তিনি।

বিজ্ঞাপন
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন এক বিদেশি নাগরিক

আলোকচিত্র শিল্পী ফোজিত শেখ বাবু নিজেই ব্রিটেনের মাটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই ভাস্কর্যটি দেখে মুগ্ধ ও অভিভূত হয়ে যান। এবং তিনি সকলের প্রতি জোর দাবি করেন রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে লন্ডনের মতো বিশ্বের সকল দেশে এই ধরনের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হোক। এর ফলে দেশের মান মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরো পৃথিবীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘শ্রদ্ধা’ আর ভালোবাসার মানুষ হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন।

বাবু’র আলোকচিত্র প্রদর্শনী এটাই প্রথম নয়। দেশে ও দেশের বাইরে তিনি মোট ১৮টি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। ২০১৭ সালে ফ্রান্সের রাজধানীর প্যারিসে, বাংলাদেশে বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই দেওয়ার ছবি নিয়ে শিক্ষায় সফলতামূলক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘দুরন্ত শৈশবে বই আনন্দ’। ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের এজ হিল বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডন শিল্পকলা একাডেমিতে, ২০১৯ সালে কানাডার বারলিংটোন ওন্টারিও হলিডে ইন হোটেল, স্ট্রিট টরন্টোর মেট্রো হল, টরেন্টো ডেনটোনিয়া পার্কে এবং সাডবারির এক বাগান বাড়িতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘হু আর দা বোর্ড পিপল’-এর আয়োজন করেন। ২০১৪ সালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘স্টপ দা ক্লাইমেট চেঞ্জ’। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের, রূপগঞ্জ মুজাম্মেল হক কলেজে ও নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শীতলক্ষ্যা নদী দূষণ-দখলের প্রতিবাদে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘বাঁচাও নদী শীতলক্ষ্যা’। ২০১৬ সালে ধানমন্ডি আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীকে দখল-দূষণ মুক্ত করার দাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘বাঁচাও নদী বুড়িগঙ্গা’। ২০১৬ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শীতলক্ষ্যাকে দখলমুক্ত করার দাবিতে আলোকচিত্র মানববন্ধন ‘বাচাঁও নদী শীতলক্ষ্যা’। ২০১৭ সালে ধানমন্ডিতে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকায়, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সৌন্দর্য তুলে ধরে স্লাইড শো ‘প্যারিস কেন সুন্দর’। ২০১৮ সালে রাজধানীর পান্থপথের প্ল্যানার্স টাওয়ারে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার চিত্র নিয়ে স্লাইড শো ও আলোচনা সভা। ২০১৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ স্কুল অব বিজনেস বিভাগে রোহিঙ্গাদের দুঃখ দুর্দশার চিত্র নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও সেমিনার।

 ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন বিদেশিরা

২০২০ সালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ইটভাটা শ্রমিকের সন্তানদের শিক্ষার দাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘শিক্ষা চাই’। ২০২১ সালে শাহাবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধু ও বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে বিভিন্ন দেশের ভাস্কর্যের ছবি নিয়ে আলোকচিত্র মানববন্ধন ভাস্কর্য ও ১৯৭৭ সালে বিমানবাহিনীর সদস্যদের গুম হত্যার প্রতিবাদে আলোকচিত্র মানববন্ধন। ২০২১ সালে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বিষাক্ত বর্জ্য নিঃসরণকারী কলকারখানায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানোর দাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘সেভ দ্যা আর্থ’। ২০২২ ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে বাংলাদেশে বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই দেওয়ার ছবি নিয়ে শিক্ষায় সফলতামূলক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘দূরন্ত শৈশবে বই আনন্দ’।