গুচ্ছ কবিতা।। তিথি আফরোজ

  • তিথি আফরোজ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

রেশমি জরির ফড়িং

কোথায় যে মেঘ জমেছে!
দমকা হাওয়া, বিপদ সংকেতে
আকাশে পাতালে নাকি মাংস-মজ্জার জাদুর বাক্সে
বলে যাবে কে?
এ তল্লাটে কোনো তান্ত্রিক বাস করে না।
তন্ত্র ছাড়া জানা যায় কিছু!

বিজ্ঞাপন

নীলগিরি নীলাচলের পথে ফড়িং ছিল
তারা তরতর করে ওড়ে আর হাসে, তাদের পুচ্ছকেশে
রকমারি সাজ, পাঁজরে রেশমি কাপড়ের কুচি
দোলানো মোহন সুখ আর সুখ!

ভেবেছি একটা মনে জমে যাওয়া সব মেঘ উড়াবো
বনে বাদাড়ে ফেলবো তলানির যত অনুভূতি
যতবার উঁকি দেবে রোদ্দুর ততবার স্নানে শুকাবো
কলিজা;
আরও ভেবেছি, একটা জীবন ঘুরাবো রেশশি জরির
ফড়িংয়ের পিছু পিছু…

বিজ্ঞাপন

উজ্জীবন

জল পতনের শব্দে
চোখ খুলে যায় ঘুমের
ছুঁয়ে যায় অতপর…ঘোরগ্রস্ত ঘ্রাণের একটা জীবন
প্রথম প্রেমের মতো অশরীরী স্পর্শ বুকের ডান বাম করে
নেমে যায় জলে
তখন কাল বৈশাখীর মোহ পাকা ধানের পতনে ব্যস্ত
অথচ
গভীর স্নেহে কৃষক এক একটি পূর্ণিমার মৃত্যু দেখেছে;
গুনেছে অমাবস্যার অন্ধপাত।
বুকের আশা লুট হয়ে যায় এভাবেই…বেহায়া বাতাসে।
তবুও
আম্রকাননে মুকুল ফোটে; নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও
শিউলি জ্যোৎস্নায় স্নান করে;
ভেঙে যাবে ঘুম
জেনেও চোখে এসো,
আমরা ঘুমাবো উজ্জীবনের ঘুম…,

পাখি

পালকের স্পর্শে ভেঙে গেছে ঘুম…
এখন রাতভর জেগে থাকি পাখির স্বপ্নে
বিমূর্ত প্রেমের জৌলুস রঙ খেলে
জেগে আর ঘুমে শুধুই অঙ্কুরিত ভ্রম
আফ্রোদিতির আত্মা ভর করে দেহের গহীনে

এক পেগ মদ ঠোঁটে ঢেলে ফাঁদ পেতে থাকি
সোনাপাখির আদি-অন্তে সুখ ছড়াবো বলে।
সুখের অফুরন্ত বৃষ্টি আচ্ছন্ন করে ডুবিয়ে
তলিয়ে যায় সমস্ত জনপদ
যেখানে পাখি নেই কেবলি তার আবেশ
পালকে কাম, পালকে প্রেম-কাহারবা, দাদরা, ঝুমুর…

বিষণ্নতার দিন ভেঙে জ্যোৎস্নার উজ্জ্বলতায় গান হবে
ও পাখি, এসো জেগে আছি মহাকালের রথে,
তোমার ধ্রুপদী রঙে আমাকে সাজাবে বলে।

দাঁড়কাকের জীবন

করতালিতে মুখর হয়ে ভুলে যাইনি দাঁড়কাকের জীবন
একটা সাবানের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকা দৃষ্টি
বিড়ালের সাথে মিলে যায়।
বোনপ্লেটের উচ্ছ্বিষ্ট ফেলনা হলেও কৃপণতা
প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বড় বেশি চাকচিক্যের।

আহা বিড়াল! আহা দাঁড়কাক!
তোদের সাথে সইপাতা জীবনের মর্ম আকাশে ভাসে
আর জানালা দিয়ে ভেসে আসে সাকুরার সৌরভ
এসো তালপাতা, আমরাও মাতাল হই বৃষ্টিবেলায়

যদি এক ঝাঁক চাঁদ পায়ে লুটিয়ে প্রণাম করে…
তবে কি ভুলে যাবো বিড়ালের সাথে উচ্ছিষ্টের প্রেম!
যদি দেয়াঙ পাহাড় মাথায় করে গান করে শুক্লাপক্ষে
আর নেমে আসে ঝিরঝিরিয়ে ঝর্ণা দেহের ভাঁজে ভাঁজে
তবে কি ভুলে যাবো দাঁড়কাকের লোভাতুর প্রেম!

একদিন ভুলে যাবো, যাবো কল্কে হাতে ননীদের পাড়ায়
মহল্লাজুড়ে নাচবো…আর ভুলে যাবো দাঁড়কাকের জীবন

ওড়ার কৌশল

একটা বালুর ঘর অথবা কাগজের নৌকা
চারু ও কারু ক্লাসে শিখাতে পারি।

শিক্ষক সব শিখাতে পারেন
কিভাবে পাতার নিচে আঠা দিয়ে ফুল বানানো যায়
আর ছেঁড়া কাগজ দিয়ে স্বপ্নের মেঘ।

আমি সাদামেঘের ভেতর উড়তে চেয়েছিলাম
কৌশলটা শিখাতে পারেননি আমার জীববিজ্ঞান শিক্ষক।
কিন্তু আমি উড়েছি, উড়ছি সাত স্তবক আসমান
মেঘেদের দেশ আমার খুব চেনা।
যে বৃষ্টি ঝরে অথবা ঝরবে ঝরবে করছে
তাদের ইতিহাস আছে আরও আছে প্রেম।

তুমি উড়তে, বসবাস করতে
অথবা অঙ্গে মেখে মজা লুটতে পারবে
শিগগিরই যোগাযোগ করো
এসো ফুলেদের হিম-সন্ধ্যায়
যেখানে থোকা থোকা প্রেম থাকে
ফুল আর প্রেম
প্রেম আর ফুল
শেখাবে কৌশল।

তিথি আফরোজ: শূন্য দশকের কবি তিথি আফরোজ। স্কুল জীবনেই তার কবিতা লেখা এবং প্রকাশ শুরু। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার লিটলম্যাগাজিনের মাধ্যমে তার কবিতার যাত্রা শুরু হলেও পরে জাতীয় দৈনিক অনলাইন পোর্টালগুলোতে তার কবিতা প্রকাশিত হতে শুরু করে। কবিতায় ভিন্নধর্মী ও অসঙ্কোচপ্রকাশের সাহসিকতায় তিথি আফরোজ খুব দ্রুতই সাহিত্য সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন।

তিথির জন্ম নওগাঁ জেলার তুলসীগঙ্গার তীরে বোয়ালিয়া গ্রামে। পিতা: মরহুম আমির আলী সরদার। মাতা: আলতাফুন নেসা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম. এস. এস। বর্তমানে বাংলাদেশ বিদুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনস্থ একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে কর্মরত। জীবনসঙ্গী কামাল হোসেন শিকদার প্রবাসী। হৃদিকা ও কৃতিত্ব কথা নামের দুই সন্তান নিয়ে তিথির জীবনসংসার। প্রকাশিত কবিতার বই: ছন্দপতনের শব্দ, ওড়ার কৌশল, তিথির তিরিশ, দ্যা ব্ল্যাইন্ড গড, তিথিতীর্থমায়া। সম্পাদনাঃ পুনশ্চ (যৌথ), ধূলিপথ। সম্মাননা: কবি জসীমউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার ( চব্বিশ পরগনা, ভারত)।