হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা

  • হাসান হাফিজ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা

গন্দমের আবিষ্ট পতনে

মরমে শরমে মরি, ওলো প্রিয়ে চন্দ্রাবলী সহচরী
বিষপাত্র কানায় কানায় ভরো আঁজলা পূর্ণ করো
দংশিয়ে ছলনাসূত্রে নীলবর্ণ বাগদত্তা হাতজোড়া ধরো
ব্রহ্মাস্ত্র তোমারই একা নিনাদিত, নাই কোনো তড়িঘড়ি
স্বপ্নে হোক স্মৃতিচর্চা গন্ধমের মগ্নচর্চা আলুথালু জড়াজড়ি
কূলভাঙা গাঙে ডোবে অধমের নিরাশ্রিত ভাঙাফুটা তরী

বিজ্ঞাপন

মরমে শরমে মরি, তোমরা বলো ভূষণ লজ্জারই মিহি লতা
ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে দেহেমনে সংক্রমণ জ্বোরো তিতা ব্যথা
এর চাইতে ভালো ছিল প্রত্যাখ্যানই আধো আবছা নীরবতা
কী কবো কাহিনিগল্প পরাস্ত পুথির সেই মর্মচেরা গাথা কল্পকথা
জীয়ন্ত মরণকষ্টে মুখ ফুটে বলা যায় না সে তথ্য বারতা

শরম ভরম সবই লুকোছাপা নিরজনে সন্তর্পণ নিঝুমে লুকাও
প্রবাহে ধুয়েছো পাপ এইক্ষণে শঙ্কামুক্ত গাঢ় নিদ্রা যাও

বিজ্ঞাপন

দ্বন্দ্বে ছন্দে দূরবর্তী

নিদ্রা আর জাগরণ একাকার
রাত্রি দিনও এক লপ্তে একাকার
কিন্তু কেন বিরহ-মিলন দুয়ে দূরবর্তী রয়?
বুঝে পাই না জেগে থাকে অলক্ষ্য সংশয়
তাহলে প্রাপ্তির লোভ সত্য কিছু নয়?
জাগরূক ঝাউপাতা রাতচরা পাখির প্রণয়
সন্দেহের প্রবণতা জেগে থাকে এবং খোঁচায়
মিলনের পথ চেয়ে বিরহের বুক ভেঙে যায়
মিলন কেন যে এত বিরহকে বেহুদা ডরায়
বুঝি না সে কেন ছোটে অন্য দিকে ভিন্ন ঠিকানায়...

কেন স্বপ্নে ভাঙচুর

নদী বললে ছলোছল
অমৃত সে কলরোল
নদী কেন নির্বাসন
বংশীতান আউলা মন
নদী কেন চোখের উপমা
জলের ঘূর্ণনে জমা
কত শ্রান্তি কতটুকু ক্ষমা?
নদী বললে স্বপ্নাতুর ক্রোধের ফসিল
পরিত্যক্ত বাঁজা বালুচর
জলের অধ্যাসে কেন ভেসে যায়
গরিবের ভাঙাচুরা ঘর?

সপ্তসুরের আলো

ছন্দের সুগন্ধে গাঁথো বিনিসুতো মালা
আঁধার তোমার কণ্ঠে সে মালা পরাবো।
আলো থাক দূর
জোনাকি নক্ষত্র মিলে ঐকতানে
তৈরি করবে মগ্ন সাত সুর...

বিফল বৈকল্য

মন ভাঙলে জোড়া লাগবে এমন মলম
আছে কি না জানা নাই
মনের ব্যারাম হলে
দেহে মনে ভিতরে উপরিতলে
দরকারি ন্যূনতম উপশম
ত্রিভুবনে খুঁজিয়া বেড়াই
মন ওরে পোড়াধুড়া মন
কোথায় যে এলোমেলো করো বিচরণ
নিষ্কৃতি অনেক দূর কতটুকু পাই
মনোচাষ করতে থাকি হয়তো বৃথাই...

বিচ্ছেদিয়া তুষ্টি সুখ

পুবালী বাও পুবালী বাও
একটুখানিক পরশ দিয়া যাও
দুঃখ যাতন আমার থাকুক
সেসব আমার জ্বলন্ত সুখ
আনন্দটুক নিংড়ে চেঁছে নাও!
যে দেয় ব্যথা তার দখলে দাও
তাও সে নারী সুখে থাকুক তাও
সহ্য করি, নাই প্রতিবাদ রাও!

ভুল করে ভালোবাসলে

কে বলে বিস্মৃতিধুলো সেই ছবি আড়াল করেছে
দেখি আরো জ্বলজ্বলে, আরো সত্য, আরো দৃঢ়মূল
যে বলে ভুলেছি সব, এই কথা ডাহা মিছে ভুল
ভুলে যাওয়া অতটা সহজ নয়, যতটুকু ভাবি
কী করে যাবে তা ভোলা, নৃত্যময়ী সেই দুল
ঘামের বিন্দুর সঙ্গে মিতালি করেছে ওই প্রিয় নাকছাবি
স্মৃতি নয় কুয়াশা ঝাপসা নদী, বহে নিত্য নিরবধি
আমি তাকে ভুল করে সর্বাত্মক ভালোবাসি যদি
তাহলে কীভাবে সম্ভবপর বিস্মৃতির খাবিখাওয়া ভয়
ভুলিনি ভোলার মতো এই স্রোতের পরম্পরা কোনোদিনই
যে আমাকে পোড়ায় জখম করে, আনন্দ সে কুড়ায় নিশ্চয়।