বুদ্ধিজীবীদের নিস্পৃহতায় বেদনাহত যতীন সরকার
অধ্যাপক যতীন সরকার। প্রগতিশীল চিন্তাবিদ ও বরেণ্য লেখক হিসেবে তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয়। ৮৮ বছরে পা দেওয়া স্বাধীনতা পদক জয়ী গুণী এই শিক্ষাবিদ শহুরে নাগরিক জীবনের আলোকছটা থেকে সব সময়ই থেকেছেন দূরে। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের যশস্বী অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন পার করলেও বহু দশক ধরে এই অঞ্চলের মানুষদের দুঃখ-বেদনার আখ্যানকে লেখনিতে মূর্ত করেছেন তিনি।
সমাজের ক্রমবিবর্তনের চিত্র নির্মোহভাবে প্রকাশিত হয়েছে তার পরিধিবহুল সাহিত্যকর্মে। পূজনীয় এই শিক্ষাবিদ ও লেখক দীর্ঘদিন থেকেই বাস করেন নেত্রকোনায় তার বাসগৃহ ‘বাণপ্রস্থে’। সেখান থেকেই তিনি প্রগতির আলোয় উদ্ভাবিত করেন দেশকে-সমাজকে।
বর্তমানে বার্ধক্যজনিত নানা ব্যাধিতে শয্যা নেওয়া বরিষ্ঠ এই চিন্তাবিদের সঙ্গে কথা বলেছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম। তার স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় সংক্ষেপে জানতে চাওয়া হয়েছিল জীবন সায়াহ্নে দেশের বর্তমান সমাজকে কিভাবে দেখছেন তিনি। প্রগতি ও সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনভর সচেষ্ট থাকা যতীন সরকার সংক্ষেপে জানিয়েছেন নিজের প্রতিক্রিয়া। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। টেলিফোন সংযোগ স্থাপনে সহায়তা দিয়েছেন নেত্রকোনার তরুণ কবি ও শিক্ষক সুমিত্র সুজন।
বার্তা২৪.কম: স্যার, আপনার সঙ্গে সংযুক্ত হতে পেরে অনেক আনন্দিত। আপনি জানেন, বর্তমানে আমরা একটি বিশেষ সময়ে দাঁড়িয়ে আছি। দেশের রাজনীতিতে এক ধরণের টানাপোড়েন চলছে, এর ফলশ্রুতিতে দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। এ ধরণের অসহিষ্ণু সমাজই কি আপনারা চেয়েছিলেন?
অধ্যাপক যতীন সরকার: এখন যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে এগুলোকে কোনমতেই স্বীকার করে নেওয়া যায় না। এটা সব দিক দিয়েই রাষ্ট্রের জন্য, সমাজের জন্য ক্ষতিকর হচ্ছে। আমার আর কি বলবার আছে...আপনারা নিশ্চয়ই সব দেখছেন..আমি মনেকরি এই অবস্থাটার পরিবর্তন করারা জন্য বুদ্ধিজীবীদের সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল। আপনারা যা দেখছেন, আপনারাও বোঝেন আমিও বুঝি..এটার জন্য যেভাবে আমাদের সত্যিকারের বুদ্ধিজীবীদের এগিয়ে আসা উচিত ছিল এই ব্যাপারটাকে (সংঘাতময় রাজনীতি) বিনষ্ট করার জন্য..কিন্তু আমরা সেই ভূমিকা বুদ্ধিজীবীদের থেকে পাইনি। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে কষ্ট ও বেদনার।
বার্তা২৪.কম: তার মানে আমরা অতীতে বুদ্ধিজীবীদের যেভাবে আলোকবর্তিকা হয়ে আবির্ভূত হতে দেখেছি, এখন তা দেখা যাচ্ছে না..
অধ্যাপক যতীন সরকার: হ্যা, তাই।
বার্তা২৪.কম: প্রগতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে, জীবনভর আপনিও লড়াই করেছেন লেখনির মাধ্যমে, অগণিত লোকবক্তৃতায়..আমরা কি তবে সেখান থেকে সরে গেছি?
অধ্যাপক যতীন সরকার: এই লক্ষ্যে আমাদের কোনো উন্নয়ন হয়নি, যা করা উচিত ছিল তা আমরা করিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে আমাদের যে প্রত্যয় ছিল সেখান থেকে অনেক দূরে সরে গেছি আমরা। এটা খুবই দুঃখজনক। এমনিতে আমি নিজে খুব আশাবাদী কিন্তু চারপাশে যা হচ্ছে তাতে খুব আশাবাদী হতে পারছি না। খুবই খারাপ লাগছে।
বার্তা২৪.কম: মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দলই সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, তবে কেন...
অধ্যাপক যতীন সরকার: আগে যে অঙ্গীকারের মধ্যে তারা ছিলেন এখন সেটা নেই। তারা প্রগতির সমাজ প্রতিষ্ঠায় কিছুই করতে পারেনি। এখন বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায় আছেন তারা তো মুক্তিযুদ্ধে বড় ভূমিকা নিয়েছেন কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম...আবার বলছেন ধর্ম নিরপেক্ষতাসহ চার মূলনীতি বহাল আছে। এ সমস্ত কথাগুলো আমি কোনমতেই বুঝে উঠতে পারি না, মেনে নেওয়া তো পরের কথা।
(অধ্যাপক সরকার অসুস্থবোধ করায় এই ফোনালাপ আর এগোয়নি...)
বার্তা২৪.কম: স্যার, আপনার আরোগ্য কামনা করি আমরা..
অধ্যাপক যতীন সরকার: বার্ধক্যের এই ব্যাধি আরোগ্যের সম্ভাবনা ক্ষীণ। আপনারা আমার খোঁজ নিয়েছেন, অনেক ধন্যবাদ। আমার পাঠকদের শুভেচ্ছো জানাবেন..