‘এক পৃথিবী লিখব..’ বলেও কেন কবিতা প্রকাশে ইতি দিলেন জয় গোস্বামী

  • নিউজ ডেস্ক
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জয় গোস্বামী

জয় গোস্বামী

আর কবিতা লিখবেন না জয় গোস্বামী; প্রথম কবিতা প্রকাশের পর কেটে গেছে ৫০ বছর, সেই প্রথম কবিতা প্রকাশের ৫০ বছর পূর্তিতে এসে এ সিদ্ধান্ত নিলেন কবি! জানালেন, তিনি আর কবিতা প্রকাশ করবেন না।

সম্প্রতি নিজের কবিতা প্রকাশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত কবিতা প্রকাশের ৫০ বছরে নামের এক পুস্তিকায় দীর্ঘ একটি লেখার মাধ্যমে জয় গোস্বামী এ ঘোষণা দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

যিনি একদিন বলেছিলেন, ‘এক পৃথিবী লিখব বলে একটি খাতাও শেষ করিনি!’ তাঁর এমন ঘোষণায় সাহিত্য জগতে আলোড়ন ফেলেছে।

কেউ কেউ  একে অনন্য নজির দাবি করছেন। তবে এই পথে একা জয় গোস্বামী হাঁটেননি। এর আগেও কবি সমর সেন মাত্র ১২ বছর কবিতা লেখার পর বন্ধ করে দেন লেখা। এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কবি তন্ময় দত্তের নামও। কিন্তু তাঁরা কেউই ঘোষণা করে কবিতা লেখা বন্ধ করেননি যা জয় গোস্বামী করলেন।

বিজ্ঞাপন

তবে জয় গোস্বামী জানিয়েছেন, এখন থেকে তিনি নীরবে-নিভৃতে লিখে যাবেন। যদি আর পাঁচ–সাত বছর বেঁচে থাকেন, তখন ভেবে দেখবেন, কবিতা প্রকাশ করবেন কি করবেন না।

২০২৩ সালের বড়দিনের সময় কবিতা প্রকাশের ৫০ বছরে নামে এক পুস্তিকায় প্রকাশ করেছেন জয় গোস্বামী। তাঁর এই বইটির কোনও দামও রাখা হয়নি। অর্থাৎ বিনামূল্যে কেনা যাবে এই বইটি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বইয়ের প্রকাশক অভিরূপ মুখোপাধ্যায় তেমনটাই জানিয়েছেন। তাঁর কথা অনুযায়ী মাত্র কয়েকটি দোকানেই পাওয়া যাবে বইটি।


জয় গোস্বামী তাঁর এই সদ্য প্রকাশিত পুস্তিকায় লিখেছেন যে তাঁর লেখার যে মূল দীপ্তি সেটা থেকে একটা সময় তিনি সরে এসেছিলেন একপ্রকার বাধ্য হয়ে। তিনি জানিয়েছেন বিষ্ণু দে, শক্তি চট্টোপাধ্যায় বা অমিয় চক্রবর্তীদের মতো কবিদের তুলনায় তাঁর ক্ষমতা সীমিত। তিনি নিজেই নিজের লেখার মধ্যে জানিয়েছেন আমাদের সকলের মধ্যেই লুকিয়ে আছে হিটলার যে সমস্ত কিছু প্রাপ্তির পরেও অন্যের সর্বস্ব দাবি করে। তাই কবির প্রশ্ন এখন সবটা পাওয়ার পর তিনি সাহিত্য জগতের থেকে আর কতটা বা কী চাইতে পারেন, বা চাইলেও সেটা কতটা সঙ্গত হবে?

তবে তিনি যে কেবল কবিতা প্রকাশ বন্ধ করে দিচ্ছেন সেটাই নয় তিনি জানিয়েছেন যে আর কেউ যেন তাঁর নাম আর কোনও পুরস্কারের জন্য বিবেচনা না করেন। জয় গোস্বামী দুবার আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত বজ্রবিদ্যুৎ-ভর্তি খাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার পান। এ ছাড়া বঙ্গভূষণ, বঙ্গবিভূষণ, সাম্মানিক ডি লিটও লাভ করেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় এই কবি।

নিজের এ সিদ্ধান্তকে জয় গোস্বামী ‘আত্মপরীক্ষা’ বলে উল্লেখ করে পুস্তিকায় জয় গোস্বামী লিখেছেন, ‘আমার ৫০ বছর কবিতা প্রকাশের পূর্তি আমি আমার রচনা প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েই উদ্​যাপন করতে চাই। যেসব সম্পাদক আমার লেখা সম্মান দিয়ে এত বছর প্রকাশ করে এসেছেন, তাঁদের কাছে আমার আভূমি-নত কৃতজ্ঞতা অর্পণ করি। পাশাপাশি আমার কাছে আর লেখা চেয়ে চিঠি না দেওয়ার অথবা ফোন না করার জন্যও মিনতি জানাই। তাঁদের “না” বলতে আমার দুঃখ হবে, অথচ “না” তো বলতেই হবে আমার আত্মপরীক্ষার জন্য। তাঁরা যে আমাকে দুঃখ দিতে চান না, এ-কথা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি!’

সম্প্রতি ৭০ বছরে পা রেখেছেন জয় গোস্বামী। এত বছর লিখেও নিজে কবিতা লেখা শেখেননি বলে জানিয়েছেন এই কবি।  বলেছেন, ‘৫০ বছর ধরে আমার কবিতা ছাপা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কবিতা লেখা কি আমি শিখতে পেরেছি? নিজের কাছে কারচুপি করব না এই বয়সে। স্বীকার করে নেব—না, কবিতা কী করে লিখতে হয় আমি আজও শিখিনি। মুদ্রণ-উপযোগী কিছু লাইন “কবিতা”র নামে ছাপিয়েছি শুধু।’

এবার তিনি নিজের কাব্যভাষা খোঁজার চেষ্টা করবেন জানিয়ে বলেন, এখন নিজেকে খোঁজার জন্য, নিজস্ব নিভৃতিতে বসে কাব্যরচনার প্রয়াস নেওয়ার সময় এখন তাঁর। লেখা প্রকাশের বাসনা থেকে নিবৃত্তি নিয়ে শুধু লেখার উত্তেজনাকে জাগিয়ে রাখা সম্ভব কি না, সেই নিরীক্ষায় তিনি প্রবেশ করতে চান।

আনন্দবাজারকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি কবি জানান, তিনি ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫টি কবিতার বই এবং ৩টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা এবং প্রকাশিত শেষ বইটির নাম বাণপ্রস্থ।