গি দ্য মোপাসাঁর জীবন এবং তার কয়েকটি উক্তি
গি দ্য মোপাসাঁ ছিলেন ঊনিশ শতকের একজন চূড়ান্ত সৃষ্টিশীল লেখক। যাকে আধুনিক ছোটগল্পের জনক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। প্রায় তিনশোরও অধিক ছোটগল্প আছে এই লেখকের। এইসব ছোটগল্পে তিনি ওই সময়কার ফ্রেঞ্চ সংস্কৃতির নানাবিধ দৃষ্টিভঙ্গিকে উপস্থাপন করেছেন।
বিশেষত, ফরাসি-প্রুশিয় যুদ্ধের দুর্বিষহ সব চিত্রকে তিনি তুলে ধরেছিলেন তার লেখালেখির মাধ্যমে। এই যুদ্ধে যেই সাধারণ মানুষেরা আক্রান্ত হয়েছিল তাদের দুর্বিষহ পরিণতির কাহিনী তিনি বলেছিলেন। ২০ বছর বয়সে পড়াশোনা বাদ দিয়ে তাকেও বাধ্য হয়ে এই যুদ্ধে অংশ নিতে হয়েছিল। গি দ্য মোপাসাঁ ছোটগল্প ছাড়াও উপন্যাস, কবিতা এবং ট্রাভেলিং বই লিখেছেন।
১৮৫০ সালের ৫ আগস্ট তিনি ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গুস্তাভ দ্য মোপাসাঁ, আর মায়ের নাম লরা লি পয়টিভিন। এগারো বছর বয়সে তার বাবা এবং মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদের পরে তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকতেন, আর স্থানীয় চার্চে পড়াশোনা করতেন। তাঁর মা ম্যালানকোলিয়ান নামক একটি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, তার বাবা-মায়ের এই বিচ্ছেদ আর মায়ের এই অসুস্থতা—এই দুই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতাই তাকে সাহিত্যচর্চার প্রতি ধাবিত করে তুলেছিল। মায়ের অনেক চারিত্রিক প্রভাব তার মধ্যে লক্ষ করা যেত, যেমন মায়ের মতোই তিনি ছিলেন লাজুক ধরনের একজন মানুষ।
হাইস্কুলে পড়ার সময়ে ১৮৬৭ সালে তিনি গুস্তাভ ফ্লবেয়ার নামের একজন ফ্রেঞ্চ লেখকের সঙ্গে দেখা করেন। মূলত তার মা-ই তাকে গুস্তাভ ফ্লবেয়ারের সঙ্গে দেখা করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। কেননা, তার মা স্পষ্টভাবেই তার সাহিত্যপ্রীতির ব্যাপারটি বুঝতে পেরেছিলেন। আর তিনি নিজেও সাহিত্যের একজন বিশেষ অনুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। মোপাসাঁর মায়ের প্রিয় লেখক ছিল উইলিয়াম শেক্সপিয়ার।
ফ্লবেয়ারের সঙ্গে মোপাসাঁর এই সাক্ষাত তার পরবর্তী জীবনেও প্রভূত উপকার বয়ে এনেছিল, অর্থাৎ নানাভাবেই ফ্লবেয়ার তার প্রতি সদয় হয়েছিলেন। ফ্লবেয়ারের এই পাশে দাঁড়ানো তার জীবনের প্রায় প্রধানতম এক ঘটনা। জীবন প্রসঙ্গে মোপাসাঁ লিখেছেন, ‘জীবনকে অর্থবহ করে তুলবার জন্যই এই জীবনের লড়াই’।
ফ্লবেয়ারের সাহায্যেই মোপাসাঁ নানান পত্রপত্রিকায় নিজের নামে ছোটগল্প আর আর্টিকেল প্রকাশ করতে আরম্ভ করেছিলেন। মোপাসাঁকে তিনি নিজের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন আর সত্যিকার অর্থেই তার অভিভাবক হয়ে উঠেছিলেন। ফলে মোপাসাঁর সাহিত্য এবং সাংবাদিকতার শুরু এই লেখকের হাতে হওয়াই স্বাভাবিক ছিল।
১৯৮০ সালে ‘ব্যুল দ্য সুইফ’ নামে তার একটি ছোটগল্প প্রকাশিত হয়, সেটাই তাকে লেখক হিসেবে বৃহৎ পরিণতি প্রদান করে। আজও এই গল্পটিকে মোপাসাঁর সেরা একটি গল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৩৪ সালে এই গল্প থেকে নির্মাতা মিখাইল রম একটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছিলেন।
১৮৮০ সাল থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে মোপাসাঁ ছয়টি উপন্যাস প্রকাশ করেছিলেন। যদিও লেখালেখির এই স্বচ্ছন্দ্য-ধারাবাহিকতা আরো দীর্ঘকাল বজায় থাকতে পারত, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি হয়নি। ১৮৯২ সালে তিনি মাত্র ৪২ বছর বয়সে মারা যান।
মোপাসাঁ সিফিলিসে আক্রান্ত ছিলেন। ১৮৯২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি গলার রগ কেটে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। এই ঘটনার ৬ মাস পরে, জুলাই মাসের ৬ তারিখে এই লেখকের প্রয়াণ ঘটে।
ক্যালেন্ডারের পাতায় আজকের দিনটিও ৬ জুলাই, কেবল মাঝখানে কেটে গেছে একশো সাতাশ বছর। মৃত্যুর একশো সাতাশ বছরে পরেও বিশ্বসাহিত্যে গি দ্য মোপাসাঁ বহুলচর্চিত একটি নাম হিসেবেই জারি আছেন।
বার্তার পাঠকদের জন্য গি দ্য মোপাসাঁর বিখ্যাত কিছু উক্তি পেশ করা হলো। উক্তিগুলো পড়লে বোঝা যাবে, মোপাসাঁ একই সঙ্গে যেমন ছিলেন প্রেমিক মানুষ, তেমনই ছিলেন মানবতার প্রতি পরম অনুরাগী একজন লেখক।