টনি মরিসন : কৃষ্ণাঙ্গ সাহিত্যের নায়িকা



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
টনি মরিসন

টনি মরিসন

  • Font increase
  • Font Decrease

সদ্য প্রয়াত টনি মরিসন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগেই সুবিখ্যাত। বিগত আশির দশকে বিশ্ব সাহিত্যের আলোচিত লেখকদের মধ্যে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য। অবহেলিত কৃষ্ণাঙ্গ এবং সেই কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে অধিকতর অবহেলিত নারী সমাজের একজন সদস্য রূপে তিনি যখন পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন, তখন সবাই সচকিত হয়ে তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে। তার উত্থান হয়েছিল আফ্রো-আমেরিকান সাহিত্য ঘরানার নায়িকার মতো।

ক্লো আর্ডেলিয়া উওফোর্ড থেকে তিনি হয়েছিলেন টনি মরিসন। জন্ম ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ আর মৃত্যু ৫ আগস্ট ২০১৯ সাল। ৮৮ বছরের জীবনের পুরোটা সময়ই তিনি কাটিয়েছেন আমেরিকায় অভিবাসন গ্রহণকারী কৃষ্ণ নাগরিকদের আইডেনটিটির সন্ধানে। তাদের শেকড় আর আধুনিক কালের জীবন সংগ্রামের প্রপঞ্চ প্রাধান্য পেয়েছে টনি মরিসনের লেখায়।

একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার, সম্পাদিকা ও বিশ্বখ্যাত প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস প্রফেসর ছিলেন তিনি। তার উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য হলো মহাকাব্যিক রীতি, তীক্ষ্ণ কথোপকথন এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ চরিত্রায়ন। তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশ পায় ১৯৭০ সালে, নাম ‘দ্য ব্লুয়েস্ট আই’। অন্যান্য বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর মধ্যে টনি মরিসনের ‘সুলা’ (১৯৭৩), ‘সং অব সলোমন’ (১৯৭৭) এবং সবচেয়ে আলোচিত ‘বিলাভেড’ (১৯৮৭) অন্যতম।

১৯৮৮ সালে মরিসন তার ‘বিলাভেড’ উপন্যাসের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার এবং আমেরিকান বুক এওয়ার্ড বিজয়ী হন। এই গ্রন্থ ও পুরস্কারের মাধ্যমে তিনি বিশ্ব সাহিত্যের আলোচনায় চলে আসেন এবং তার নাম নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন তালিকায় আসতে থাকে। মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৯৩ সালে তিনি সাহিত্যের নোবেল পুরস্কারটি অর্জনও করেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/08/1565276118367.jpg
◤ নোবেল প্রাইজ গ্রহণ করছেন টনি মরিসন ◢


টনি মরিসন নোবেল পেয়েছেন নোবেল কমিটির পুরস্কার কাঠামোর ধ্যান-ধারণা ভেঙে। কারণ, পুরস্কারদাতা আলফ্রেড নোবেল তার উইলে বলে গিয়েছিলেন, এই পুরস্কার যিনি পাবেন, তাকে অবশ্যই আদর্শিক কিছু করে দেখাতে হবে। প্রথমদিককার নির্বাচকমণ্ডলী তার কথাগুলোকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন গোঁড়াভাবে। তাই তারা শুধুমাত্র আদর্শিক দিকটিই চিন্তা করেছেন। অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিক, যারা হয়তো বড় কোনো আদর্শের জন্ম দিতে পারেনি, তারা নোবেল পুরস্কার পায়নি। সাহিত্যে স্মরণীয় হলেও আদর্শের প্রশ্নে পুরস্কার না দেওয়ার নীতির জন্য নোবেল পুরস্কার বহুবারই বিতর্কিত হয়েছে।

যে কারণে লিও তলস্তয়, হেনরিক ইবসেনের মতো সাহিত্য ব্যক্তিত্ব কিংবদন্তিতুল্য হয়েও নোবেল না পাওয়ায় নোবেল পুরস্কারের ইতিহাস কলঙ্কময় হয়েছে। অবশ্য পরবর্তীকালে পুরস্কারের নির্বাচকরা আরো উদার হয়েছেন। আদর্শিক নয় বরং কার সাহিত্য সকল যুগে মানুষের আবেগের ইন্ধন যোগাবে অর্থাৎ কোনটি অমরত্ব অর্জন করবে তার ভিত্তিতেই নির্বাচন করা হচ্ছে বিজয়ীদের। যে কারণে এমন অনেকে পুরস্কার পেয়েছেন যারা অতটা জনপ্রিয় বা পরিচিত নন, কিন্তু সাহিত্যে অভিনবত্ব ও সৃষ্টিশীলতার জন্য খ্যাত। এ তালিকায় ১৯৯৭ সালে নোবেল প্রাপ্ত দারিও ফো এবং ২০০৪ সালের পুরস্কৃত এলফ্রিদে ইয়েলিনেক-এর নাম করা যায়। টনি মরিসন তেমনই একজন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/08/1565276370185.jpg

◤ এলফ্রিদে ইয়েলিনেক┇দারিও ফো ◢


সাহিত্যকে আদর্শবাদের কাল্পনিক আখ্যান তৈরির জায়গা থেকে সরিয়ে টনি মরিসন নিরেট বাস্তবের পটভূমিকায় নিয়ে আসেন। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ জাতিসত্তার জীবন ও সংগ্রাম তিনি তুলে আনেন নিউইয়র্কের পথে পথে হেঁটে, কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত হার্লেম এলাকার তস্য গলির ভেতর থেকে। আমেরিকান তথা বিশ্ব সাহিত্যে ‘ব্ল্যাক ভয়েজ’কে জায়গা করে দিতে তার রয়েছে অনবদ্য অবদান। আফ্রিকান কমিউনিটিকে আধুনিক সাহিত্যে প্রতিস্থাপনের কষ্টকর কাজে টনি মরিসনের গভীর অনুসন্ধানের তুলনা মেলা ভার।

প্রবর্তনের পর থেকে এখন পর্যন্ত যে ১১৫ জন সাহিত্যিক নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে দুইজন নোবেল প্রত্যাখান করেন। অনেকে ধারণা করেছিলেন টনি মরিসন হবেন পুরস্কার প্রত্যাখ্যানকারী তৃতীয় জন। এমনটি হলে তিনি নাম লেখাতেন রুশ সাহিত্যিক বরিস পাস্তেরনাক ও ফরাসি পণ্ডিত জ্যাঁ পল সার্ত্র’র সাথে।

বরিস পাস্তেরনাক ১৯৫৮ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হলে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারের চাপে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। এ ঘটনার ছয় বছর পর ১৯৬৪ সালে জ্যাঁ পল সার্ত্র এই পুরস্কারে ভূষিত হলেও তিনি তার পূর্ববর্তী সকল সরকারি সম্মাননার মতো এই পুরস্কারও প্রত্যাখ্যান করেন। আফ্রিকান সাহিত্যিকদের অবমূল্যায়ন এবং আফ্রো ইস্যুগুলোকে অবহেলার অভিযোগে টনি মরিসন পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করতে পারেন বলে অনেকেই মনে করেছিলেন। কারণ টনি মরিসন সবসময়ই সোচ্চার ছিলেন সাহিত্যে কালো মানুষদের অধিকার ও ন্যায্য আসনের দাবিতে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/08/1565276228836.jpg

◤ বরিস পাস্তেরনাক┇জ্যাঁ পল সার্ত্র ◢


তবে টনি মরিসন ও আরো অনেকের মনোভাবের কাছে নতি স্বীকার করে নোবেল পুরস্কার রক্ষণশীল মূলনীতি থেকে সরে এসেছে। আদর্শবাদের নামে ইউরোপীয়-প্রধান ভাষার সাহিত্যকে পৃষ্ঠপোষকতা করার একচ্ছত্র মনোভাব নোবেল কমিটিকে ছাড়তে হয়েছে। পৃথিবীর প্রায়-সকল দেশের সাহিত্যের প্রতি তাদের নজর দিতে হচ্ছে। লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, মিশর, তুরস্ক, বেলারুশের সাহিত্য প্রতিভাকেও নতজানু হয়ে সম্মান জানাতে হচ্ছে।

১৮৩৩ সালে সুইডেনের স্টকহোমে জন্মগ্রহণকারী রসায়নবিদ, প্রকৌশলী ও উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেল জীবনে অনেকগুলো উইল করে গিয়েছিলেন, নোবেল পুরস্কার এর মধ্যে অন্যতম। ১৮৯৪ সালে তিনি একটি বফর লোহা ও ইস্পাত কারখানা ক্রয় করেন, যেটিকে পরবর্তী সময়ে একটি অন্যতম অস্ত্র তৈরির কারখানায় পরিণত করেন। তিনি ব্যালিস্টিক উদ্ভাবন করেন, যা সারা বিশ্বব্যাপী ধোঁয়াবিহীন সামরিক বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তার ৩৫৫টি উদ্ভাবনের মাধ্যমে তিনি জীবদ্দশায় প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হন যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ডিনামাইট।

১৮৮৮ সালে তিনি তার উদ্ভাবিত যুদ্ধাস্ত্রের মাধ্যমে মৃতদের তালিকা দেখে বিস্মত হন, যা একটি ফরাসি পত্রিকায় তাকে ‘এ মার্চেন্ট অব ডেথ হু ডেড’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। যেহেতু নোবেলের ভাই লুডভিগও মারা যায়, ফলে এই নিবন্ধটি তাকে ভাবিয়ে তোলে এবং খুব সহজেই বুঝতে পারেন ইতিহাসে তিনি নিকৃষ্টরূপে স্মরণীয় হতে চলেছেন। যা তাকে বারবার উইল পরিবর্তন করতে অনুপ্রাণিত করে।

ফলে নোবেল তার জীবদ্দশায় অনেকগুলো উইলের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষটি রচনা করেন মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগে ২৭ নভেম্বর ১৮৯৫ সালে। প্যারিসে অবস্থিত সুইডিশ-নরওয়ে ক্লাবে রচিত হয় এই উইল। বিস্ময় ছড়িয়ে দিতে নোবেল তার সর্বশেষ উইলে উল্লেখ করেন, তার সকল সম্পদ পুরস্কার আকারে দেওয়া হবে তাদেরকে, যারা রসায়ন শাস্ত্র, পদার্থ বিদ্যা, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে ‘বৃহত্তর মানবতার স্বার্থে’ কাজ করবেন। একজন বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক হয়েও তিনি ‘বৃহত্তর মানবতার স্বার্থে’ কাজ করতে পারেননি, যারা তা করেছেন বা করবেন নোবেল তাদের পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করে গেছেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/08/1565276474241.jpg

◤ আলফ্রেড নোবেল ◢


নোবেল তার মোট সম্পদের (৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা) ৯৪ শতাংশ এই পাঁচটি পুরস্কারের জন্য উইল করেন। ২৬ এপ্রিল ১৮৯৭ সালের আগ পর্যন্ত সন্দেহপ্রবণতার জন্য নরওয়ে থেকে এই উইল অনুমোদন করা হয়নি। নোবেলের উইলের সমন্বয়কারী রগনার সোলম্যান ও রুডলফ লিলজেকুইস্ট পরে নোবেল ফাউন্ডেশন তৈরি করেন, যা নোবেলের প্রদত্ত সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ ও নোবেল পুরস্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

১৮৯৭ সালে নোবেলের উইল অনুমোদন হবার সাথে সাথেই নোবেল পুরস্কার প্রদানের জন্য নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি নামক একটি সংস্থা তৈরি করা হয়। অতি শীঘ্রই নোবেল পুরস্কার দেবার অন্যান্য সংস্থাগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। নোবেল ফাউন্ডেশন কিভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে তার একটি নীতিমালায় পৌঁছায় এবং ১৯০০ সালে নোবেল ফাউন্ডেশন নতুনভাবে একটি বিধি তৈরি করে, যা রাজা অস্কার কর্তৃক জারি করা হয়। ১৯০৫ সালে সুইডেন ও নরওয়ের মধ্যে বন্ধন বিলুপ্ত হয়। তার পর থেকে নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি শুধুমাত্র শান্তিতে নোবেল পুরস্কার এবং সুইডেনের প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যান্য পুরস্কারগুলো প্রদানের দায়িত্ব পায়।

আলফ্রেড নোবেলের যুদ্ধাস্ত্র ছাপিয়ে তার পুরস্কার তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে। মেরি কুরি, টনি মরিসন এবং আরো শত শত পণ্ডিত, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক এই পুরস্কার গ্রহণ করে ১০ ডিসেম্বর ১৮৯৬ সালে ৬৩ বছর বয়সে তার নিজ গ্রাম স্যান রিমোতে মৃত্যুবরণকারী আলফ্রেড নোবেলকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ইতিহাসের পাতায়।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;