সাহিত্যে একত্রে ঘোষিত হলো দু বছরের নোবেল বিজয়ীর নাম

  • আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ওলগা তোকারচুক ও পিটার হ্যান্ডকি

ওলগা তোকারচুক ও পিটার হ্যান্ডকি

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের ১১৮ বছরের ইতিহাসে প্রথম ঘটল ব্যাপারটা। একই সাথে দুই বছরের নোবেলজয়ী সাহিত্যিকের নাম ঘোষণা করা হলো গত বৃহস্পতিবার। অস্ট্রিয়ান ঔপন্যাসিক এবং নাট্যকার পিটার হ্যান্ডকি এবং পোলিশ লেখিকা ওলগা তোকারচুক। যেখানে ২০১৮ সালেরটা পেয়েছেন ওলগা এবং ২০১৯-এর নোবেল বরাদ্দ হয়েছে পিটারের নামে।

পেছনে অবশ্য কারণ আছে। গত বছরের সাহিত্যে নোবেল, কেলেঙ্কারির অভিযোগে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের যৌন হয়রানির অভিযোগ এবং গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের পদত্যাগের ঘটনা সুইডিশ একাডেমিকে বেশ ঝাঁকি দেয়। সে যা-ই হোক, নোবেল পাওয়া এই দুই সাহিত্যিক খুব বেশি জনপ্রিয় নন। তাদের নিয়েই আজকের বিশেষ আয়োজন।

বিজ্ঞাপন

ওলগা তোকারচুক

তোকারচুককে ২০১৮ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসাবে ঘোষণা করা হয়। কৈফিয়তে বলা হয়েছে, “একটি বর্ণনামূলক কল্পনা জন্য; যা সর্বব্যাপী আবেগের সাথে বাঁধা অতিক্রমকে জীবনের ছাঁচ হিসাবে উপস্থাপন করেছে।” তোকারচুকের জন্ম ১৯৬২ সালে পোল্যান্ডের সোলেহও-তে। বর্তমানে তিনি ভ্রোকলভ-এ বসবাস করছেন। খুব তরুণ বয়স থেকেই সাহিত্যে তার আনাগোনা শুরু হয়। পিতামাতা ছিলেন শিক্ষক; যদিও বাবা নিজে আবার স্কুলের লাইব্রেরিয়ান ছিলেন। হাতের কাছে পাওয়া সম্ভাব্য সব বই-ই তিনি গোগ্রাসে গিলতেন। তার জীবনীতে নোবেল একাডেমিই সেকথা দাবি করেছে।

◤ শৈশব থেকেই পড়ুয়া হিসাবে প্রস্তুত করেছেন নিজেকে ◢


তার মাইলফলক হয়ে থাকা লেখা মূলত তৃতীয় উপন্যাস “Primeval and Other Time”। কোনো এক পৌরাণিক স্থানে একটি পরিবারের আখ্যান। নোবেল একাডেমি তার মাস্টারপিস বলে বর্ণনা করতে এনেছেন অন্য একটা নাম—‘দ্য বুক অব জ্যাকব’। অষ্টাদশ শতকের এক নেতা, যাকে তার অনুসারীরা নতুন মেসিয়াহ বলে মনে করে। গ্রন্থটি নাইকি পুরস্কার লাভ করে। বলে রাখা ভালো, এই পুরস্কার পোল্যান্ডের সম্মানজনক সাহিত্য স্বীকৃতি; যাকে পোলিশ বুকার বলেও আখ্যা দেওয়া হয়। ২০২১ সাল নাগাদ বইটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ পাবে।

বিজ্ঞাপন

◤ তোকারচুকের দুইটি বিখ্যাত বই ◢


তোকারচুক কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একদম নতুন মুখ না। গত বছরই প্রথম পোলিশ লেখিকা হিসাবে ম্যান বুকার পুরস্কার পান Flights উপন্যাসের কারণে। একুশ শতকের প্রান্তে গিয়ে মানুষকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এখানে। এবছর আবার নতুন বই Drive your plow over the bones of the dead ছিল একই পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকাতে। গল্পটা একটা খুনের; যেখানে জ্যোতিষবিদ্যা থেকে মামলার জটিলতা সামাধানের পথ পাওয়া যায়।

পোলিশ রক্ষণশীলরা তাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখে না। বিভিন্ন ঘটনার জন্য তিনি বিতর্কিতও হয়েছেন। তারপরেও তার লেখাগুলো তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মানব-মনঃস্তত্ত্বকে সামনে আনতে। তার বর্ণনারভঙ্গি ব্যঞ্জনাপূর্ণ, সাবলীল এবং কবিত্বময়।

পিটার হ্যান্ডকি

২০১৯ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী পিটার হ্যান্ডকি। তাকে পুরস্কৃত করার কারণ হিসাবে নোবেল কমিটি বলেন, “তার ভাষাগত অকপটতার জন্য, যা তুলে এনেছে মানুষের অভিজ্ঞতার পরিধি এবং নির্দিষ্টতা।” তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ বলে নোবেল কমিটির দাবি Walk about the Village নামে নাটক এবং Repetition উপন্যাস। তার লেখাগুলোতে অস্তিত্বের উৎস খোঁজার এক বিরামহীন অভিযাত্রা ফুটে উঠেছে। A sorrow Beyond Dreams তার ছোট এবং সূক্ষ্ম বই হলেও খুব শক্তিমান সৃষ্টি বলে স্বীকৃত। একজন মায়ের আত্মহত্যা নিয়ে আখ্যান এগিয়ে গেছে।

◤ উপন্যাস থেকে সিনেমা—পিটারের মুনশিয়ানা ছিল সমানভাবে ◢


হ্যান্ডকির বর্তমান বয়স ৭৬। ১৯৪২ সালে দক্ষিণ অস্ট্রিয়ার গ্রিফেন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মা ছিলেন স্লোভানিয়ান সংখ্যালঘু গোত্রের মেয়ে আর বাবা জার্মান যোদ্ধা। পিতার সাথে তার যোগাযোগ হয় পরিণত বয়সে। শৈশব কাটে মা এবং সৎ পিতার সাথে। গ্রিফেনে আসার আগে পর্যন্ত প্রথম জীবন কেটেছে যুদ্ধে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া বার্লিনে।

হ্যান্ডকি পড়াশোনা করেন অস্ট্রিয়ার গ্র্যাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সমাপ্ত করতে পারলেন না। পড়ালেখায় আর মনোযোগ ছিল না বলাই বোধ হয অধিক যৌক্তিক হবে। কয়েক বছরের মাথায়ই লেখেন তার প্রথম উপন্যাস Die Hornissen, যা প্রকাশিত হয় ১৯৬৬ সালে। ১৯৯০ সালের পর থেকে জীবনযাপন শুরু করেন দক্ষিণ-পশ্চিম প্যারিসের এক শহরে।

◤ পিটারের দুইটি দুর্দান্ত সৃষ্টি ◢


তার কাজগুলো সাহিত্যের কোনো নির্দিষ্ট শাখায় সীমাবদ্ধ নয়। উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, চিত্রনাট্যসহ অন্যান্য অনেক শাখায় তার উল্লেখযোগ্য অবদান আছে। রাজনীতি থেকেও দূরে রাখেননি নিজেকে। ১৯৯০-তে ন্যাটো কসোভো যুদ্ধের সময় সার্বিয়ায় আকাশপথে হামলা চালালে তিনি তার বিরোধিতা করেছেন। সার্বিয়ান নেতা স্লোবোডান মিলোসেভিকের মৃত্যুতে তার দেওয়া বাণীও বেশ আলোচিত। যুদ্ধের সময় সার্বদের পক্ষ হয়ে কথা বলার জন্যেও তার সমালোচনা করা হয়। সে যা-ই হোক, তার পুরস্কারপ্রাপ্তি বিশেষ কিছু শ্রেণির কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বসনিয়া ও কসোভোতে বিক্ষোভ মিছিলও হয়েছে। তবে এই নোবেলপ্রপ্তির ঘটনা তার দীর্ঘ সাহিত্যিক জীবনের নিঃসঙ্গ পথচলায় একটা স্বীকৃতি।