প্রজাপতি দিন



ক্যামেলিয়া আলম
অলঙ্করণ কাব্য কারিম

অলঙ্করণ কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

এক বেঞ্চিতে ঠাসাঠাসি করে বসতেই হবে। কুমকুম, কাজরী, সুবর্ণা, ক্যামেলিয়া, রীমা, নিশু আর এনি। প্রায় সময়ই মাঝের ধাক্কাধাক্কিতে কোনার দুইজনের বসে থাকাই দায় হয়। ফিসফিস শব্দের ধমকাধমকি, হাসাহাসি, খোঁচাখুঁচি করে সময় যায় সারা বেলা। পেছনের বেঞ্চিতেই বসে অনিতা আর মমতা। ক্লাসের প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারী। দুইজনের মাঝে তীব্র প্রতিযোগিতা। পড়াশোনার বাইরে অন্য কিছুতেই তাই মন দেয় না। সামনের বেঞ্চে বসা সাতজনের দিকে কটমট করে তাকায় একটু পর পর। এদের ফিসফিসানিতে জরুরি এক পড়া বুঝতে বেশ ঝামেলা হচ্ছে এই দুইজনের। মোটা মতো খুশি আপার ক্লাস। মোটা মানুষদের রাগ থাকে কম, তা ভুল প্রমাণ করতেই যেন খুশি আপার জন্ম। রাগী এই আপার ক্লাসেও ফার্স্ট বেঞ্চে বসা সাতজনের গুঞ্জন আজ থামছেই না। বিষয়টি গুরুতর। ক্যামেলিয়ার প্রেমে পড়েছে সুবর্ণার প্রতিবেশি ছেলে মুক্ত। এ নিয়ে কিছুক্ষণ পরে পরেই চলছে তর্ক বিতর্ক। এনি লজিক্যালি আর সুবর্ণা ইমোশনালি বিষয়টি দেখছে। স্কুল জীবনে প্রেম করা উচিত কী উচিত না, তা নিয়ে দুই পাশের লড়াইয়ের শব্দগুলো ক্যামেলিয়া মন দিয়ে শুনছে। এর মাঝেই বজ্র কণ্ঠের ধমকে আপাতত ইস্তফা দিতে হয়। বিষয়টি ফয়সালা হবে ছুটির পর।

স্কুল ছুটির পর প্রতিদিন এনি, রীমা, নিশু আর ক্যামেলিয়া হেঁটে বাড়ি ফিরে। কাজরী থাকে বেশ দূরে। যাত্রাবাড়ি। হাটখোলা থেকে অনেকটা পথ ফিরতে হয় বাসে করে। ফলে স্কুল ছুটির পর আর সময় করতে পারে না। স্কুল শেষে বেরুতে বেরুতে ক্যামেলিয়া মনস্থির করতে পারে না। তাঁকায় রীমার দিকে। রীমা সুবর্ণার দিকে তাঁকিয়ে বলে, রাজি হতে আবার এনির হরিণী চোখের ইশারায় বলে, “না না, রাজি হইস না। ছেলেরা খুব খারাপ হয়। এই ছেলে সিগারেট খায়, আমি শিওর। প্যান্টের পকেটের মাথা দিয়ে লাইটার বের হতে দেখেছি।”

সুবর্ণা দাঁত কিড়মিড় করে। রীমা চুপ হয়ে যায়। বহু তর্ক বিতর্কের পর এনিরে নিরাশ করে গেটের শেষ মাথায় গিয়ে ক্যামেলিয়ার হ্যাঁ সূচক শব্দধ্বনিতে বিজয়ী হয়ে সুবর্ণা ধরে বাড়ির পথ।

২.

প্রপোজালের পর প্রথমদিনের প্রেম। একা ছাড়া যাবে না। ছেলেরা খুব খারাপ হয়, একা পেয়ে হাত যদি ধরে ফেলে। ফলে মনস্থির হয় প্রত্যেকেই যাবে দেখা করতে। সবার যাবার যুক্তিসঙ্গত কারণ লাগে, কারণ তৈরি হয় নিশুর ফেইক জন্মদিন। আর উল্লেখযোগ্য কারণ না দেখাতে পারলে বাড়ি থেকে সেজেগুজে বেরিয়ে আসাও তো মঙ্গলে পাড়ি দেবার মতোন দুঃসাধ্য!

ক্যামেলিয়ার বাড়িতে এনির বিশ্বাসযোগ্যতা অন্যদের চেয়ে বেশি। ফলে এনির ওপর দায়িত্ব থাকে ক্যামেলিয়াকে বের করবার। আজীবন সততার সাথে চলা এনির মন সায় দেয় না, এমন অন্যায় করতে। কিন্তু বিধিবাম। প্রত্যেকেই চেপে ধরেছে ওকে। সুবর্ণার ব্যবহার সবচেয়ে হৃদয় বিদারক। রীতিমতো ভিলেন বানিয়ে ফেলছে। অবশেষে এনি রাজি হয়। বহুকষ্টে ক্যামেলিয়াকে বের করতে পারে নিশুর জন্মদিনের কথা বলে। রীমার বাড়ি ওয়ারী। বিশাল বাগানবাড়ি। প্রতি শীতে বন্ধুদের পিকনিক ওদের বাড়িতেই তাই হয়। রীমার বাড়ি থেকে সামান্য ঝামেলা পেরিয়ে বের করে সোজা নিশুর বাড়ির সামনে। “শোন, আমায় কিন্তু বাসা থেকে দুইশ টাকার বেশি দেয়নি”, নিশু জানায়।

প্রত্যেকেই সম্মত হয় সবাই মিলেই প্রথম প্রেমের দিন যার বাহ্যিক নাম নিশুর জন্মদিনের খাবারের বিল দেবার ব্যাপারে। শেষ যাত্রা সুবর্ণার বাসা। ওকে কোনো রকমে বের করতে পারলে আজকের এডভেঞ্চারের ষোলোকলা। সুবর্ণার বড় বোন টিংকুদি ভীষণ ভালো, গেলেই শরবত, এটা সেটা খাওয়ায়। আজই কেন যেন সুবর্ণাকে বেরুতে দিতে চাইছে না। কোনো রকমেই যখন রাজি করানো যাচ্ছে না, এবার বেশ উচ্চকিত স্বরে শুরু হয় সুবর্ণার আথালি পাথালি কান্না। বাকি ছয়জন অর্ধমৃত চেহারা নিয়ে বসা। নেত্রী ছাড়া আজকের পুরো প্ল্যান বাতিল। আহারে! প্রথম প্রেমের প্রথম দিনের সম্ভাব্য অপমৃত্যু! শেষমেষ টিংকুদির মন গলে। বেরিয়ে আসে সুবর্ণা।

মুক্ত ভাইয়ার বন্ধু মিতু ভাইয়ার গাড়িতে যাবে সবাই। আরেক বন্ধু পিয়াল ভাইয়াও যোগ দিয়েছে। মিতু ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে, সামনে পিয়াল আর মুক্ত ভাইয়া। পেছনে সাতজন। চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে ধাক্কাধাক্কি করতে করতে চাইনিজ রেস্টুরেন্টের গেটে নামে। মেঘলা দিনেও নিশু আজ সানগ্লাস পরেছে। ব্যতিক্রমী দেখাতে। গোলগাল, নাক খাড়া, ফর্সা চেহারার নিশুকে সানগ্লাসে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। এনির বিশাল চোখের সামনে গেলে কবিতা আসে গড়গড়িয়ে। সাজতেও পারে সুন্দর। আবেদনময়ী মুখ নিয়েও গম্ভীর হয়ে রাস্তায় চোখ দেওয়া। কিছুটা থমথমেও। মনের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ অপরাধের সাথী হতে হচ্ছে। কোঁকড়া লম্বা চুল, কোঁকড়ানো আইল্যাসের বাদামি চোখ আর ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙে রীমাকে দেখায় গ্রিক দেবীর মতোন। আজ সেও সাজার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ঠোঁটের লিপস্টিক আসতে আসতেই শেষ। আবরণটুকু সরায় ওর ফর্সা ধবধবে গোলাপী ঠোঁটগুলো আরো সুন্দর দেখাচ্ছে। সুবর্ণা সবচেয়ে লম্বা, একাহারা, দেবীর মতোন ভীষণ সুন্দর চেহারা নিয়ে সাজগোজ না করেও লাবণ্যময়ী হয়ে ঘুরে বেড়ায়। কাজরী সাজে না কখনোই। কথাও বলে কম, সবার কথা মন দিয়েই কেবল শোনে। কুমকুমকে আদর করে ঝাকড়ি বলে সবাই। কোঁকড়া দীঘল চুলগুলো কোমর ছড়ানো। কম উচ্চতার ক্যামেলিয়ার চেহারা ক্যাবলাকান্ত হতো পুরোই যদি গালে টোল না পড়ত। সবার মাঝে অসুন্দর হওয়ার মনোবেদনা দূর করতে বন্ধুরা তার শরীর খুঁটিয়ে দেখে এই একটা উপাদান বের করে এতই প্রশংসায় ভাসিয়েছে যে, যে কোনো কথায় গালের টোল দেখাবার চেষ্টায় হেসে হেসে কথা বলা তার রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

রেস্টুরেন্টের ভেতরেও নিশু চোখ থেকে সানগ্লাস খোলে না। কারণ আজ তার জন্মদিন। হোক না ফেইক। তবু ডিফরেন্ট এক লুক থাকা উচিত। খেতে খেতে চলে গল্প। প্রথম প্রেমের চোখাচোখি। দুরুদুরু বুক আর মুক্ত ভাইয়ার চাহনিতে ক্যামেলিয়া দিশেহারা মুখ থেকে থেকে গোলাপি হচ্ছে। হঠাৎই মনে হয়, সব নাই হয়ে যেত! মুখোমুখি বসত কেবল মুক্ত ভাইয়া। তা আর হবার না। প্রেম করা খুব খারাপ কাজ আর একা প্রেম করা তো খারাপের খারাপ। খারাপ কাজের ইচ্ছে এত বেশি কেন থাকে জীবনে? দীর্ঘশ্বাস চাপা দেয় ক্যামেলিয়া।

বিল আসলে এবার বিপদে পড়ে নিশু। গল্পে গল্পে নিশুকে সবাই টাকা দিতেই ভুলে গেছে। এদিকে সামনে তিনজন ছেলের সামনে প্রকাশ্যে টাকা চাওয়াও যাচ্ছে না। ওর কটমটে চোখেও প্রথমটায় বোঝে না কেউ। হঠাৎ মনে পড়লে সব তড়িঘড়ি করে টেবিলের নিচ দিয়ে হাতে হাতে টাকা পৌঁছায় নিশুর কাছে। হাসিমুখে নিশুর হাত এবার টেবিলের উপর ওঠে, “আর কিছু খাবা কেউ?”

৩.

আজীবন সুখ থাকে না। বিষাদের দিন ঘনিয়ে আসে। সামনে এসএসসি পরীক্ষা। আড্ডা, গল্পগুজব আর প্রেম পড়ার চাপে পুরোই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবার পথে। এর মাঝে ইংরেজির দুর্বলতা টের পেল ওরা। সুবর্ণা আর রীমা ছাড়া বাকিরা পড়তে এলো মহিউদ্দিন স্যারের কাছে। মেয়েদের দলের সাথে একদল ছেলেও পড়বে। ছেলে আর কেউ না। মমতার ভাই ফারুক আর ওর তিন বন্ধু। টেস্টের পর স্কুল বন্ধ। মুক্ত ভাইয়ার সাথে যোগাযোগের নাই কোনো উপায়। স্যারের বাসায় এসে হঠাৎ নতুন সুযোগ পেয়ে যায় ক্যামেলিয়া। রাগী মমতার ভাই ফারুক খুব ফ্রেন্ডলি। দ্রুত বন্ধু হয়ে যায় ক্যামেলিয়ার। এর মাঝে ফারুক চমৎকার এক নীল ডায়েরি উপহার দেয় ক্যামেলিয়াকে, ভেতরের পাতায় কত কথা লেখা। ক্যামেলিয়া বোঝে, ওকেই কাজে লাগানো যাবে প্রেমে। এদিকে মমতার জন্য ফারুকের সাথে একলা কথা বলার জোও নাই। একদিন হুট করেই আসে সুযোগ। মমতা অসুস্থ। আসেনি। ফারুক বন্ধু হিসেবে উপকার করতে রাজি কিনা, আগেই প্রশ্ন করে জেনে নেয়। উপকারটা কী, জানার আগেই ফারুক কথাই কেবল দেয় না, ইংরেজি খাতা মাথায় নিয়ে বিদ্যা বলে প্রতিজ্ঞাও করে। ফলে লেখা হয় প্রথম প্রেমের চিঠি। গোটা অক্ষরের চিঠিটি ফারুকের হাতে যখন দিয়ে অনুরোধ জানায় মুক্ত ভাইয়ার কাছে পৌছে দিতে, ফারুক নিজ কানে শুনেও বিশ্বাস করতে পারে না, ক্যামেলিয়া এত খারাপ! কিন্তু কিছুই করার নাই। প্রতীজ্ঞা তো করে ফেলেছে, তাও আবার এসএসসি পরীক্ষার আগে পড়ার খাতা ছুঁয়ে। আরেক কারণও ছিল, ফারুক বেশ কিছুদিন হিমু হবার চেষ্টা করছে। গোলাপ ফুল চিবিয়ে খেয়ে বন্ধুদের কাছে হিমুর বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরিও করেছে। হিমুদের কাজ প্রেম ভালোবাসাকে সমর্থন দেওয়া। ফলে বাজে মনে হলেও চরিত্রহীন ক্যামেলিয়ার প্রেমের চিঠি নিয়ে একটা পান কিনে খেতে খেতে ঝলসে যাওয়া দুপুরে ফারুক হাজির হয় মুক্ত ভাইয়ার বাড়ি। বাড়ির সামনে গিয়েই পিচিক করে পানের রস ফেলে খুঁজতে থাকে ভেতরে ঢোকার পথ।

৪.

পরীক্ষা শেষে রেজাল্টের দিনটি যেন এলো হরিণ বেগে। ছুটতে থাকা জীবনের প্রথম আঁচ আসে কিশোরীর জীবনগুলোয়। ভালো কলেজে ভর্তির ধাক্কা। নামকরা কলেজগুলোতে ভর্তি হবার প্রতিযোগিতায় আবারও বিষণ্ণ পড়ার জীবন। হঠাৎ করেই গল্প, আড্ডা আর বন্ধুতার হুল্লোড়ের ছেদ। অনিতা আর ক্যামেলিয়ার লড়াই হলিক্রস কলেজের জন্য। প্রবল লড়াই শেষে রেজাল্টের দিন সাদা বোর্ডের কালো সংখ্যাগুলোয় অনিতার রোল পাওয়া গেলেও, ক্যামেলিয়ার ক্রমশ কুয়াশা হয়ে আসা চোখ নিজের রোল খুঁজে বের করতে পারে না। ফেরার মুখে ক্যামেলিয়ার অধোবনত চোখের কান্নায় অনিতার মা পুরো রিক্সাজুড়ে বুকের মধ্যিখানে তাকে রাখে, জড়িয়ে বাসায় ফেরে। দুই তিনদিন পর পরের মেয়েটির জন্য পাগলের মতো ছুটে যায় হলিক্রসের প্রিন্সিপ্যালের রুমে। নাহ, হবে না। জ্ঞানের ব্রাহ্মণ্য রাজ্যে নমশূদ্রের জায়গা কোনো কালেই হয় না।

ভীষণ ভালো কলেজ না পেলেও সরকারি কলেজে ভর্তি হয় বন্ধুরা প্রায় সবাই। স্কুল জীবনের কড়াকড়ি সময়সীমা নেই। দারোয়ানকে অনুরোধ করে কলেজ ফাঁকি দেওয়া যায়, বুকের ওপরের নেমপ্লেট খুলে মার্কেটে মার্কেটে টাকা ছাড়াই নেইল পলিশ টেস্ট করার নামে দুই হাত রঙিন করে ফেরত আসা যায়, প্রবল ভিড়ে খাবার দোকানগুলোয় দাম না দিয়েই চলে আসা যায়।

মুক্ত ভাইয়ার সাথে ক্যামেলিয়ার সাময়িক বিচ্ছেদে প্রেমেও কেমন এক ভাটা চলে আসে। দেখা নাই, সাক্ষাত নাই, একটু একটু করে উবে যেতে থাকে চোখাচোখির প্রেম। এর মাঝেই খবর আসে, মুক্ত ভাইয়া এইচএসসিতে খারাপ করেছে। ক্যামেলিয়ারও দোটানা অবস্থা। মেয়েরা বরাবরই ক্লাসের ফার্স্ট বয়কেই বয়ফ্রেন্ড হিসেবে ভাবতে অভ্যস্ত। এদিকে আবার এই পরিস্থিতিতে ছেড়ে আসার কথা বলাও অমানবিক, রীতিমতো অপরাধের। বিষয়টি ইতোমধ্যে বন্ধু মহলের সবাই জানে। রাগী মমতার কানে যেদিন প্রথম যায়, দুই চোখের আগুনে সেদিন ভয়াবহ চিতায় জ্বলে বাসায় ফিরতে হয় ক্যামেলিয়ার।

কলেজ দূরে। ফলে মমতা আর ক্যামেলিয়া কলেজ-জীবনের যাত্রাসঙ্গী। যাত্রায় অনেক কথার সাথে ক্যামেলিয়ার মনোবৈকল্যের কথাও শোনে। ধীর স্থির হয়ে সেদিনই ক্যামেলিয়াকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরে। ফোনের সামনে দাঁড় করিয়ে বলে, “এখনই ‘না’ বল!”

৫.

এইচএসসির পরই সব পুরোদস্তুর বিচ্ছিন্ন হয় পাকাপোক্তভাবে। ফারুকের সাথে ক্যামেলিয়ার কয়েক দফা ঝগড়ার সূচনা হয়েছিল এইচএসসির কিছুকাল আগে। কথা ছিল বন্ধ। হঠাৎ ক্যামেলিয়া একদিন খবর পায়, ফারুক চলে যাচ্ছে বিদেশ। পাগলের মতো ছুটে আসে, হাতে হুমায়ূন আহমেদের বই, হিমুকে নিয়ে গল্প। বহুদিন পরে দুই বন্ধু মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকে বাকশক্তিহীন হয়ে। দুজনের চোখেই নিঃশব্দ জল।

বাকিরা ঢাকায় থাকলেও ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। নতুন জীবনে নতুন বন্ধুদের পদচারণায় পুরনো ফিকে হতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মেই। মানুষের চলার জীবনে এত শত গলিপথ, তবু পুরনো পথে বারেবারেই তার ফিরে আসা হয় কী এক অদ্ভুত সুতোর টানে! গল্পটা এখানেই শেষ তবু আরো কিছু কথা।

মমতা জার্মানি এখন। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ আর নাই তেমন। নিশু আমেরিকার এক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। বাংলাদেশে আসার সময় ব্যাগভর্তি জিনিস নিয়ে আসে বন্ধুদের জন্য প্রতিদিনের কষ্টের টাকা জমিয়ে। কাজরী থাকে কানাডায়, আগের মতোনই নীরব, ফেইসবুকের নানান মন্তব্যে শান্তভাবে হাজিরা দেয় মাঝেমাঝে। কুমকুমের দশাও তা। থাকে ঢাকার বাইরে। বন্ধুদের সাথে দেখা আর হয় না। ভাইরাল যোগাযোগ ছাড়া। রীমা, এনি, সুবর্ণা থাকে ঢাকায় প্রাসাদোপম বাড়িতে, সংসার আর সন্তান নিয়ে ভীষণ কর্মব্যস্ততার মাঝে। বিদেশ থেকে ফিরে ফারুক এখন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। আগের মতোই ঝগড়াটে, কেবল ক্যামেলিয়ার সাথেই। কলেজের কর্মব্যস্ততায় ডুবে ক্যামেলিয়া পার করে জীবন। মধ্যবয়সের জীবন-সায়াহ্নের মানসিক ক্লান্তিতে রিক্সায় ফিরতে ফিরতে চোখ হঠাৎ ঝাপসা হতে থাকে, দেখতে পায়, পাশের রিক্সায় এনি আর সুবর্ণা চলছে। শাড়ি পরার অনভ্যস্ততায় এনির শাড়ি কখন হাতের কাছে লুটানো টেরও পায়নি ১৬ বছরের কিশোরী। এক চিলতে হাসি সারা মুখ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, সেই কিরণ মাখানো মুখ ঝিকমিক করে ওঠে বালুর মতোন। চারপাশের সাদা বরফে ঢাকা বাগান শার্সির এপাশ থেকে দেখতে দেখতে অনিতার ঘোর জাগে। নীরব তুষারপাত হয়ে যায় ঝিমঝিমে বৃষ্টি ভেজা দিন, চোখের সামনে আসতে থাকে একের পর এক মুখ, গলির শেষ মাথায় থাকে সামনের বেঞ্চের নচ্ছারগুলো যাদের জ্বালায় পড়া যদি একটু শুনতে পারা যায়!

   

দুই দেশের রং মিলেছে এক দেয়ালে



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রঙের শহর, হাসির শহর ব্যাংকক। দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করা শহর ব্যাংকক। ব্যাংককের প্রাণকেন্দ্র সিয়ামেই রয়েছে ব্যাংকক র্আট এন্ড কালচারাল সেন্টার (বিএসিসি)। বাংলাদেশ থেকে যারা ব্যাংককে বেড়াতে যান, তারা যদি এমবিকে মলের পাশ দিয়ে স্কাই ওয়াক হয়ে তৃতীয় তলায় প্রবেশ করেন তাহলে হাতের ডানে চোখ ফেললেই দেখতে পাবেন বাংলাদেশের রঙের খেলা আর জীবনযাত্রার চিত্র।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে গত ২৬ র্মাচ থেকে ব্যাংককের র্আট অ্যান্ড কালচারাল সেন্টারে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও থাই চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘ড্রীম অব কালারস’ বা ‘রঙের স্বপ্ন’ র্শীষক চিত্র প্রর্দশনী। ‘কানেক্টিং টু ল্যান্ডস এন্ড টুপিপলস’ স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের নিমিত্তেই এই আয়োজন।


তৃতীয় তলার করিডোর ধরে হাঁটতেই চোখে পড়বে শিল্পী মুস্তাফিজুল হকের নিহঙ্গ। ওয়াসি পেপারের ওপর জাপানি ধরনের চিত্রকর্মের জন্য প্রসিদ্ধ তিনি। ক্যানভাসের ওপর আর্কিলিকের চিত্রকর্ম ‘হর্স’ মনযোগ আকর্ষন করছিল দর্শনার্থীদের। তার চিত্রকর্মের বড় বৈশিষ্ট্য নাটকীয়তা এবং বিষয়ের গভীর উপস্থিতি।

নগরের জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে শিল্পী কামাল উদ্দিনের জুড়ি নেই। তবে এখানে ব্যক্তির পোর্ট্রেট নয় বরং পেস্টেলে তবলার রং ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী।

আবার থামাসাত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলার শিক্ষক খাজোনসাক মাহাকুন্নাওয়ানের তুলিতে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নগরের জীবন। রিকশার সঙ্গে যাত্রীদের ছুটে চলা। সময়কে যেন পাশ কাটিয়ে ছুটে চলছে তার চিত্রকর্ম।


ঢাকার গ্যালারি চিত্রকের ১৮ জন শিল্পী এবং থামাসাত ইউনিভার্সিটির ফাইন অ্যান্ড এপ্লাইড আর্টস বিভাগের ৪ জন শিল্পীর যৌথ অংশগ্রহণে চলছে এই আয়োজন। চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। গত ২৬ মার্চ চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহা. আব্দুল হাই।

চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন নিয়ে তিনি বলেন, দুটি দেশের ভূমি আর মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে এনেছে এই আয়োজন। চিত্রকর্মের মাধ্যমে যে যোগাযোগ সেটা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং আত্মার যোগাযোগ। শুধু দেশকে চেনায় না, বরং সেখানকার জীবনযাত্রার ধারণা দেয়, মানুষকে কাছে নিয়ে আসে।


ব্যাংককের বাংলাদেশ দূতাবাসের এই চিত্রপ্রদর্শনীতে রফিকুন্নবী, আব্দুস সাকুর শাহ, সৈয়দ আবুল বার্ক আলভি, শেখ আফজাল, মাহফুজুর রহমান, সুমনা হক, মুনিরুজ্জামান, জহির উদ্দিন, কনক চাপা চাকমা, বিপাশা হায়াত, মোহাম্মদ ইউনুস, সুলেখা চৌধুরী, রেজাউন নবী, কামাল উদ্দিন, পারভীন জামান, সুমন ওয়াহিদ, মোস্তাফিজুল হক, আহমেদ সামসুদ্দোহার চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে।

এছাড়াও থাইল্যান্ডের চিত্রশিল্পী খাওজনসাক মাহাকুন্নাওয়ান, ওয়ারাপান সামপাও, জিরাতচায়া ওয়ানচান, প্রারুনরপ প্রিউসোপির চিত্রকর্মও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

ব্যাংকক আর্ট অ্যান্ড কালচারাল সেন্টারে সকাল থেকেই বিভিন্ন বয়সী শিল্প প্রিয় মানুষের আনাগোনা থাকে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী উপভোগ করতে পারছেন দর্শনার্থীরা।

;

মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান

মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাসবিদ-দার্শনিক মুঈন উদ-দীন আহমদ খান জীবনব্যাপী জ্ঞানচর্চায় নিমগ্ন এক মনীষীর নাম। বাংলাদেশের বিদ্যাবৃত্তে ক্লাসিক্যাল চরিত্রের শেষ দৃষ্টান্ত ছিলেন তিনি। ২৮ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ৩য় মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা। 

মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান (১৮ এপ্রিল, ১৯২৫-২৮ মার্চ, ২০২১) নির্জলা তথ্যভিত্তিক ইতিহাসের খোঁজে সুদীর্ঘ জীবনব্যাপী জ্ঞানচর্চার কষ্টসাধ্য দিনগুলো অতিবাহিত করেন নি। তিনি মনে করতেন, ইতিহাসের সত্য সন্ধান শুধু তথ্য আর যুক্তি ভিত্তিক নয়। প্রকৃত ইতিহাস মূলত ইতিহাসের দর্শন, ইতিহাসের পুনর্গঠন, কল্পনা, সমকালীন পর্যালোচনা ও ইনটুইশনের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাঁর সান্নিধ্যে এলে সবাই এই সত্য টের পেতেন যে, ইতিহাস প্রধানত দর্শন ও সাহিত্যের সমধর্মীতায় বর্তমানের জ্ঞানতাত্ত্বিক ও বাস্তবতা ভিত্তিক সমস্যাগুলোকে বিশ্লেষণের এবং দিকনির্দেশনা দেওয়ার অপরিহার্য মাধ্যম। তাঁর স্বকীয় চিন্তার দ্যুতিতে তিনি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা চর্চা ও গবেষণায় একটি বিশিষ্ট ধারার প্রতিভূ রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এবং একটি পুরো জীবন সম্পূর্ণভাবে বিদ্যাচর্চার ধ্যানজ্ঞানে যাপন করেছেন। আর চট্টগ্রামের নিরিখে তিনি ছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাচর্চা কাঠামোর আদি নির্মাতাদের অন্যতম। যেমনভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র ড. আবদুল করিম ছিলেন ইতিহাসচর্চার প্রতিষ্ঠাতা, প্রফেসর মোহাম্মদ আলী ইংরেজির, ড. আর. আই চৌধুরী রাজনীতি বিজ্ঞানের, তেমনিভাবে তিনি ছিলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোবদ্ধ বিদ্যাচর্চা ধারার সূচনাকারী। চট্টগ্রামের আধুনিক উচ্চশিক্ষা বিস্তারের আদি মুঘলদের একজন ছিলেন তিনি।  

তিনি ছিলেন আড়ম্বরহীন জ্ঞানসাধক। নিজস্ব বিদ্যাবলয়ের বাইরে তাঁর কোনও আত্মপ্রচার বা আত্মগরিমা ছিল না। যদিও তাঁর জ্ঞানের পরিধি ও গভীরতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার মতো যোগ্য লোকের সংখ্যা তাঁর আশেপাশে খুব বেশি ছিল না, তথাটি যারা তাঁর রচনা খেয়াল করে পড়েছেন এবং তাঁর সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে কিংবা অনানুষ্ঠানিক পরিসরে আলাপ, আলোচনা, সংলাপ ও বিতর্কের সুযোগ পেয়েছেন, তাঁরা বিলক্ষণ জানতেন, কত ভাষা, কত বিষয়, কত তত্ত্ব ও তথ্যাদি সম্পর্কে অনায়াস দক্ষতা ও পা-িত্য ছিল প্রাচ্যদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের এই জ্ঞানতাপসের। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী চুনতী গ্রামের আদিবাস আর পুরনো চট্টগ্রাম শহরের রুমঘাটা থেকে এই মান্যবর জ্ঞানবৃদ্ধের কাছ থেকে বিচ্যুরিত দীপ্তি কিছু কিছু অনুভব স্পর্শ করেছে দেশে-বিদেশে তাঁর কর্ম ও গবেষণা ক্ষেত্র এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

তাঁর জ্ঞান, গবেষণা, মনীষা, বুদ্ধির দীপ্তি, বহু ভাষায় পারঙ্গমতা তাঁর সমকালে অন্য কারও মধ্যে বিশেষ পরিলক্ষিত হয় নি। বাংলাদেশে ইতিহাসচর্চায় প্রবাদপ্রতীম ড. আহমদ হাসান দানি যে তিনজন ছাত্রকে গবেষণায় প্রণোদিত ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন, মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান তাঁদের একজন। অন্য দুইজন হলেন আবদুল করিম ও মোহর আলী। এই তিনজনই বাংলাদেশের ইতিহাসচর্চায় সত্যিকারের মৌলিক অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে, মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান প্রাথমিক থেকে পিএইচডি পর্যন্ত শিক্ষাজীবনে প্রথম বিভাগ, স্বর্ণপদক, ফেলোশিপ ও বৃত্তি লাভ করেন একজন মেধাবী ছাত্র রূপে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে অনার্স ও মাস্টার্স করার পর তিনি মোটেই থেমে থাকেন নি। ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে কানাডার বিখ্যাত ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। ফিরে এসে খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ ড. আহমদ হাসান দানির তত্ত্বাবধানে ‘ফরায়েজি আন্দোলন’ বিষয়ে পথপ্রদর্শনকারী পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন করেন। তারপর পোস্ট গ্রাজুয়েট ফেলোশিপ লাভ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বার্কলের ‘ইন্সটিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ’-এ রাজনীতি বিজ্ঞানের ‘সেমিনার ইন ফিল্ড ওয়ার্ক কোর্স’ অধ্যয়ন করেন। তিনি কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের প্রখ্যাত প-িত, ইসলামিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা উইলফ্রেড ক্যান্টওয়েল স্মিথের সান্নিধ্যে এসে বহুবিদ্যায় পারদর্শী হন। যে কারণে, পরবর্তী জীবনে তিনি ইসলামিক স্টাডিজ ও ইসলামের ইতিহাসকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, বিজ্ঞান, বিশেষত এক্সপেরিমেন্টাল সায়েন্সের ক্ষেত্রেও নিজের অবদান রাখেন এবং তাঁর গুণমুগ্ধ শিক্ষার্থীদের ছাড়াও তাঁর মূল-বিষয়ের বাইরের লোকজনকেও প্রবলভাবে আকর্ষণ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন নেতৃস্থানীয় শিক্ষক যথাক্রমে মর্শন বিভাগের প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান বদিউর রহমান এবং কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন শব্বির আহমদ তাঁর অধীনে পিএউচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

গবেষণা তত্ত্বাবধানে তিনি ছিলেন প্রচ- রকমের শুদ্ধতাবাদী। একটি প্রকৃষ্ট গবেষণার জন্য ¯œাতকোত্তর ও এমফিল পর্যায়ের গবেষকদেরও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে নিয়োজিত করতেন, যাতে তারা ভবিষ্যতে গবেষক হিসাবে স্বাধীনভাবে কাজ করার দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। তাঁর সাথে গবেষণার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ড. আফম খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, “তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তাঁর অনুমোদন নিয়ে কলকাতা, লক্ষেœৗ, দিল্লি, তুঘলকাবাদ, করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, মক্কা ও মদিনা সফর করি।” কোনও মতে একটি ডিগ্রি দিয়ে দেওয়ার অসৎ পন্থার বিপরীতে গবেষণাকে বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর করতে তিনি ছিলেন একজন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী শুদ্ধতম তত্ত্বাবধায়ক। শেষজীবনে তাঁর সঙ্গে বা পরামর্শে যারা গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন, তাদের মানস গঠনে ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নির্মাণে তিনি শ্রমবিমুখ ছিলেন না। ঘন্টার পর ঘণ্টা তিনি তাঁদের সঙ্গে আলোচনা কিংবা বই-পুস্তক পর্যালোচনায় লিপ্ত হতেন। এমন চিত্র আমি নিজে তাঁর বাসভবনে উপস্থিত কালে লক্ষ্য করেছি। কখনও নবাগত গবেষকদের তিনি অন্যান্য শিক্ষক ও গবেষকদের কাছে পাঠাতেন। তাঁর রেফারেন্সে একাধিক তরুণ গবেষক আমার কাছে এসে নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং তাঁর রেফারেন্সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরিতে কাজ করেছেন। একটি বস্তুনিষ্ঠ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ গবেষণা সম্পন্ন করতে তিনি তত্ত্বাবধায়ত ও প্রণোদনাদাতা রূপে ছিলেন নিরলস।   

কঠোর তথ্যনিষ্ঠা ও শুদ্ধতার প্রতিফলন ঘটেছে মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খানের প্রতিটি রচনায়। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় রচিত তাঁর গবেষণা গ্রন্থ ও প্রবন্ধগুলো যে কারণে একই সাথে পাঠকপ্রিয় এবং অ্যাকাডেমিক জ্ঞান ভা-ারে মণি-মুক্তা তুল্য। তাঁর সবচেয়ে আলোচিত গ্রন্থ ‘হিস্ট্রি অব ফরায়েজি মুভমেন্ট ইন বেঙ্গল’ একটি পথিকৃৎ গবেষণা, যা ‘বাংলায় ফরায়েজি আন্দোলনের ইতিহাস’ নামে ইংরেজি থেকে অনূদিত হয়েছে। যে ফরায়েজি আন্দোলনকে ওয়াহাবি আন্দোলন বা তরিকা-ই-মুহাম্মদীয়া নামেই সবাই জানতো, তিনি তাঁর বহুমাত্রিক চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও প্রভাব গবেষণার মাধ্যমে উন্মোচিত করেন।  ফারায়েজি আন্দোলন যে কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনেই সীমাবদ্ধ ছিল না, ছিল বাংলার মুসলমানদের রাজনৈতিক সচেতনতা, সামাজিক গতিশীলতা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধের প্রথম ও আদি প্রচেষ্টা, তিনিই সর্বপ্রথম তা প্রমাণ করেন। বাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে উত্থিত এই আন্দোলনের গণমুখী চরিত্র, ঔপনিবেশিকবাদ বিরোধী বৈশিষ্ট্য, সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার বিরোধী মনোভাব এবং সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াকু মানসিকতার বিষয়াবলী তিনি ঐতিহাসিক তথ্য ও ধর্মতাত্ত্বিক মাত্রায় আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পটভূমিতে উপস্থাপন করেন। বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ ও বৃহৎ ক্যানভাসে গবেষণার কৃতিত্বে তিনি এই বিষয়ে এবং ঔপনিবেশিক বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাস বিনির্মাণের পথিকৃৎ প্রাণিত স্বরূপে সর্বমহলে সম্মানীত হয়েছেন। 

পরবর্তীতে প্রকাশিত মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খানের গ্রন্থ ও প্রবন্ধে তিনি তাঁর মৌলিকত্বের ছাপ রেখেছেন। প্রতিটি লেখাতেই তিনি নিজস্ব চিন্তা ও বিশ্লেষণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর লেখায় দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস ইত্যাদি বহুবিদ্যার প্রকাশ ঘটেছে। শ্রেণিকক্ষের পাঠদান ও গবেষণার বাইরে তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো জ্ঞানচর্চা ও বিদ্যাধারাকে পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত করার প্রয়াস। তিনি ছিলেন ধ্রুপদী দার্শনিকদের মতো সংলাপ-প্রবণ ব্যক্তিত্ব। কেউ আগ্রহী হলে কিংবা কারো প্রতি তিনি আগ্রহী হলে তাঁকে বা তাঁদেরকে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়ে আলোচনায় লিপ্ত হতেন। তিনি তথাকথিত অ্যাকাডেমিশিয়ানদের মতো বইয়ের পাতার শুকনো অক্ষরে বন্দি ছিলেন না, জ্ঞানবৃত্তের মানুষের সঙ্গে প্রাণবন্ত সংলাপ ও সংশ্লেষের মাধ্যমে সদা জীবন্ত ছিলেন। চট্টগ্রামে তো বটেই, বৃহৎ বঙ্গদেশে খুব কম সংখ্যক প-িতই এমন ছিলেন, যারা জ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় অন্যকে প্রণোদিত করার ক্ষমতা ধারণ করতেন। ঢাকায় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক এবং চট্টগ্রামে ড. আবদুল করিম, ড. আর. আই. চৌধুরী ছাড়া কম প-িতই ছিলেন, যারা শিক্ষার্থীদের প্রাণিত করার ক্ষেত্রে মনীষী মুঈন উদ-দীন খানের সঙ্গে তুলনাযোগ্য।

জ্ঞানের সঞ্চার ও বিস্তারে তাঁর অসীম কষ্ট সহিষ্ণুতা, আগ্রহ ও বিনয় তাঁকে ক্লাসিক্যাল যুগের প্রাচীন জ্ঞানতাপসের আধুনিক প্রতিচ্ছবিতে পরিণত করেছিল। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সান্নিধ্যে এসে আমি তা স্পষ্টভাবে অনুভব করি। আমি তাঁর সরাসরি ছাত্র ছিলাম না। এবং বয়সের দিক থেকে তিনি ছিলেন আমার চেয়ে কয়েক প্রজন্ম অগ্রগামী। তথাপি অশীতিপর বয়সে এসেও তিনি আমার কোনও লেখার প্রতি আগ্রহী হলে নিজে ফোন করে জানিয়েছেন। ডেকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং বিষয়টিকে তত্ত্ব ও তথ্যগতভাবে আরও সমৃদ্ধ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেসব আলোচনায় জ্ঞানতত্ত্ব ও তুলনামূলক দর্শন সম্পর্কে তাঁর অতলস্পর্শী পা-িতের দীপ্তিমান প্রভার আঁচ পাওয়ার বিরল সুযোগ আমার হয়েছে। আমি লক্ষ্য করে দেখেছিল, বহু তরুণকে তিনি গবেষণার দিক-নির্দেশনা ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে মৌলিক ধারণা দিতে আগ্রহী ছিলেন। তাঁর মধ্যে পথ প্রদর্শনের একটি বিরল গুণ ছিল। আর ছিল জ্ঞানকে অকাতরে ছড়িয়ে দেওয়ার উদার মানসিকতা, যা আজকের অ্যাকাডেমিক প্রতিযোগিতার পঙ্কিল ও সঙ্কীর্ণমনা ধারার প্রেক্ষিতে অকল্পনীয় বিষয়। বড় মন ও মুক্ত মানসিকতার কারণে তিনি ‘বাংলাদেশের লিলিপুট প-িতদের সমাবেশে’ মহীরূহ-সম ব্যক্তিত্বে অধিষ্ঠিত হয়ে রয়েছেন।   

মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খানের মতো বিটপী ব্যক্তিত্বকে দৃশ্যপটে রেখে আজকের ক্ষুদ্রতর পরিসরে আলোচনা করা মোটেও সম্ভব নয়। কারণ, বর্তমানের ঊন-মানুষ ও ঊন-মানসিকতার পরিম-লে তাঁর মতো বড় মানুষের দেখা পাওয়াও দুষ্কর। তিনি এবং তাঁর সমগোত্রীয়রা শেষ মুঘলের মতো দৃশ্যপট থেকে চলে গিয়েছেন। কিন্তু রেখে গিয়েছেন ধ্রুপদী ঐতিহ্য, ব্যক্তিত্বের দীপ্তি ও বিভা। তিনি ছিলেন প্রথম প্রজন্মের আধুনিক বাঙালির হিন্দু ও মুসলিম নির্বিশেষে সকল অগ্রণী প-িত, গবেষক ও শিক্ষাব্রতীগণের শ্রেষ্ঠতম ও উজ্জ্বল প্রতিনিধি, যারা  জাগতিক প্রাপ্তির আশায় জ্ঞানের সাধনা করেন নি। জ্ঞানচর্চা ও বিদ্যাচর্চার নিতান্ত আবশ্যক পরিসীমার বাইরেও তাঁরা সচরাচর যান নি। তাঁদের নিতান্ত আবশ্যক বস্তুর তালিকায় সর্বাগ্রে ছিল জ্ঞানচর্চা, বিদ্যার্জন ও গ্রন্থপাঠ। বিষয় ভিত্তিক প্রয়োজনীয় বইয়ের বাইরেও অন্য বিষয় সংক্রান্ত রচনা তাঁরা পড়তেন আনন্দ ও কৌতূহল নিবৃত্তির সুতীব্র আকর্ষণে। কারও কারও পুস্তক সংগ্রহ আর রোজগারের মধ্যে কোনও ভারসাম্য থাকতো না। জাগতিক উন্নতির বিষয়গুলোকে তাঁরা তুচ্ছ বিবেচনা করে অবজ্ঞা করেছেন। ইতিহাসবিদ তপন রায়চৌধুরীর মতে, “যে জীবনে বৈষয়িক উন্নতির সম্ভাবনা বিরল, তার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু বিখ্যাত মানুষ সত্যিই সারস্বত-কর্মে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বর্তমানের বিশ্লেষণপ্রবণ গবেষণার ধারা তখনও প্রবল হয় নি। কিন্তু অনেক গবেষণাই গভীর পা-িত্যের ভিত্তিতে সুপ্রতিষ্ঠিত হতো।” মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান সম্পর্কে এই বক্তব্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য। আত্মমগ্ন ধ্যানীর মতো সারা জীবন তিনি জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত থেকে গভীর পা-িত্যের পরিচয় দিয়েছেন। শুধু নিজেই নন, প্রণোদিত করেছেন পরবর্তী বেশ কিছু প্রজন্মের উৎসাহী তরুণদের, যাদের অনেকেই বিদ্যাচর্চায় লিপ্ত রয়েছেন।

তাঁর সঙ্গে ইতিহাসের আরেক মহান সাধক যদুনাথ সরকারের কিছু কিছু বিষয় তুলনীয়, যার মধ্যে রয়েছে প্রবল পরিশ্রম, জ্ঞান তৃষ্ণা এবং অনুসন্ধান। যদুনাথের বিশ্লেষণের নিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে বিতর্ক থাকার পরেও ইতিহাসচর্চায় তিনি সর্বজনমান্য আচার্য। তিনি নিজের কর্ম ও জীবন আলোচনা করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে উদ্ধৃতি করতেন: “পথের প্রান্তরে করি নাই খেলা/শুধু বাজায়েছি বসি সারাবেলা/ছিন্নতন্ত্রী বীণা।” মনীষী প্রফেসর ড. মুইন উদ-দীন আহমদ খানও সারাজীবন জ্ঞানচর্চার বাঁশরী বাজিয়েছেন। একটি আস্ত জীবনকে উৎসর্গ করেছেন জ্ঞানের সাগরে অবগাহনের মাধ্যমে। বিদ্যার্চচাকে পেশাগত পরিম-লে জিম্মি না করে জীবন ও যাপনের মূলমন্ত্রে পরিণত করেছিলেন তিনি। আর সব কিছুই তিনি করেছেন নিজের সুমৃত্তিকা ও মানুষকে কেন্দ্র করেই। জীবনের পর্বে পর্বে নানা দেশে, নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেও তিনি অবশেষে ফিরে এসে আলোকিত করেছেন প্রিয় মাটির প্রিয় মানুষদের, প্রিয় জনপদকে। জীবনের দিনগুলোর মতোই মৃত্যুর পরেও তিনি আলোর দিশারী হয়ে দেদীপ্যমান রয়েছেন জ্ঞানচর্চা ও বিদ্যামুখী অভিযাত্রীদের চৈতন্যের মর্মমূলে।  

ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম  সেন্টার ফর রিজিওন্যাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

;

জাফরানি



শরীফুল আলম । নিউইয়র্ক । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ভাবছি এই বৈশাখের প্রথম পলাশটা আমি তোমাকেই দেবো
প্রথম চুম্বনটাও তোমাকে।
একটা দীর্ঘ শীত পাড়ি দিয়ে এসেছি,
তোমার খোঁপায় লাল গোলাপ দেবো বলে
চোখে কাজল, কপালে কাল টিপ
এই সব দেয়ার আগে কিছুটা খুনসুঁটি তো হতেই পারে ,
তুমি অনন্যা বলে কথা
তোমাকে উৎকণ্ঠা ও বলা যায়
কিম্বা সুনীলের কবিতা, অসমাপ্ত শ্রাবণ
তুমি আমার ওয়াল্ড ভিউ
তুমি আস্ত একটা গোটা আকাশ
চুরমার করা তুমি এক পৃথিবী ,
কখনো তুমি মুক্ত বিহঙ্গ, সুদূরের মেঘ
তুমি কখনো শান্ত মোহনা, কখনো মাতাল স্রোত
ভরা শ্রাবণ, শরতের স্তব্ধতা তুমি ,
তুমি কখনো আমার সুখের আর্তনাদ ।

আমি সমুদ্র, আমি ক্ষণে ক্ষণে শিউরে উঠি
দিগন্ত রেখায় আমি তোমার অপেক্ষায় থাকি
আমি অপেক্ষায় থাকি তোমার ফোনের গ্যালারিতে
ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপে ,
আমি প্রলেপ বানাতে জানিনা
তাই ফাগুণের রঙকে আমি টকটকে লাল বলি
সিজোফ্রেনিক কে পুরোনো রেকাবি বলি
মূলত তুমি এক হরিয়াল ছানা
আড়ালে চিঁ চিঁ ডাক, উঁকি মার জাফরানি ।

আমার ভাললাগার টুনটুনি
এই শ্রাবণ ধারায় স্নান শেষে
চল ঝিলিমিলি আমরা আলোয় ঢেউ খেলি
ভালোবাসলে কেউ ডাকাত হয় কেউবা আবার ভিখারি ।

;

আকিব শিকদারের দু’টি কবিতা



আকিব শিকদার
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

যোগ্য উত্তর

‘তোমার চোখ এতো ডাগর কেন?’
‘স্বর্ণ দিনের স্বপ্নঠাসা দুচোখ জুড়ে।’

‘তোমার বুকের পাঁজর বিশাল কেন?’
‘সঞ্চয়েছি স্বদেশ প্রীতি থরেথরে।’

‘তোমার আঙুল এমন রুক্ষ কেন?’
‘ছদ্ধবেশীর মুখোশ ছেঁড়ার আক্রোশে।’

‘তোমার পায়ের গতি তীব্র কেন?’
‘অত্যাচারীর পতন দেখে থামবে সে।’

অনন্তকাল দহন

ঝিঝির মতো ফিসফিসিয়ে বলছি কথা আমরা দুজন
নিজেকে এই গোপন রাখা আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

বাঁশের শুকনো পাতার মতো ঘুরছি কেবল চরকী ভীষণ
আমাদের এই ঘুরে ঘুরে উড়ে বেড়ানো আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

তপ্ত-খরায় নামবে কবে প্রথম বাদল, ভিজবে কানন
তোমার জন্য প্রতিক্ষীত থাকবো আমি আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

তোমার হাসির বিজলীরেখা ঝলসে দিলো আমার ভুবন
এই যে আগুন দহন দেবে আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

;