আমার বন্ধু রাজু



তানভীর মোহাম্মদ
অলঙ্করণ কাব্য কারিম

অলঙ্করণ কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

১.
প্রবল উদ্দীপনার সহিত, আমার বন্ধু রাজু একদিন আমাকে খাদ্যবস্তুরটির কথা বলল; যা নাকি খুবই লোভনীয় এবং উদ্দীপক। বেশ কিছু সময় আড্ডা না হইতে হইতে হঠাৎই আবির্ভূত হয়া তার এই প্রস্তাবনা। সেই সময়টিতে সে যে উক্ত খাদ্যবস্তুটির উদ্দীপনার ভার বহন কইরাই আমাকে ফুঁসলাইতেছে, এই মূলক ভাবনার অভ্যুদয় ঘটা সত্ত্বেও আমি আমার ইন বিল্ট কিউরিয়াসিটিকে অস্বীকার করতে পারলাম না। বরং ভাবলাম, এই সংযমী চিন্তাপ্রক্রিয়ার ফলেই তো আমি নিজেকে অবদমনের পথ থেকা বাঁচাইতে সক্ষম হই নাই এতটা দিন। রাজুর সাথে বিভিন্ন পর্বে না থাকলে আমি এখন কোথায়ই বা থাকতাম সেইটা কি আর বলি কাউকে। তথাপি বস্তুটি যে কিছুটা হইলেও ইলিগ্যাল সেইটা বুঝতে তার ভাবভঙ্গি আমাকে খুবই সহযোগিতা করল।

ক্লাস এইটে পড়া সময় স্কুলের পেছনটায় একটা পুকুরঘাট ছিল, পাশেই একটি পরিত্যক্ত সিনেমা হল। ভাইঙ্গাচূইড়া অলমোস্ট মাটি হয়া গেছে তা। সেইটার একটা ভগ্ন দেয়ালের ওপর বইসা রাজু আমাকে প্রথম সিগ্রেটে টান দেওয়া শেখায়। প্রথম টানে কাশি দেওয়ার, মিথের মতো যেই ব্যাপারটা, তা না ঘটায় রাজু খুবই আশাবাদী হয়া উঠছিল আমাকে নিয়া। আমাকে দিয়াই নাকি হবে।

তারপর রফিক স্যারের ক্লাস ফাঁকি দিয়া আমরা সিগ্রেট খাইতে যাইতাম নিয়মিত। তার আগের বাংলা ক্লাসেও চাইলে যাওয়া যাইত। কিন্তু বাংলার ম্যাডাম তার রূপ গুণ ইত্যাদিতে আমাদের পছন্দের শীর্ষে থাকায়; আবার একইসাথে রাজুকে তিনি অপছন্দ করা সত্ত্বেও, তার ক্লাসে বেরটা হওয়া হইত না কারোই।

রাজু কুলসুম নামের এক মেয়েকে ভালোবাসত। একচুয়ালি ভালোই বাসত কিনা জানি না। কিন্তু তার সেই ভালোবাসার প্রদর্শন ক্রমেই উত্যক্তকরণে পর্যবসিত হইল। আমি এতে প্রচণ্ড বিরক্ত ছিলাম। এবং রাজুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে স্কুলের অন্যান্য মেয়েদের সামনে যাইতেও আমার অস্বস্তি ফিল হইতেছিল।

আমি কুলসুমের আসার পথে একদিন অপেক্ষা করতে থাকলাম যাতে তার সাথে বিষয়টা নিয়া বিস্তারিত আলাপ করতে পারি। এবং অতি অবশ্যই একটা নিউট্রাল পজিশনে থাইকা। যেহেতু রাজুর পারসেপশন আমি কিছুটা জানিই। আমার মনে হইল কুলসুমের সাথে বিষয়টা নিয়া কথা বললে হয়তোবা একটা বিহিতমূলক পরিবেশ আমি তৈরি করতে পারব। সাথে আমিও এই ঘটনা থেকে বাহ্যিকভাবে মুক্তি পাব। আর যদি ঘটতেই থাকে এই ঘটনা, তবে অন্তত বায়াসনেস থেকা তো আমার নিষ্কৃতি। সার্বক্ষণিক একরকম ম্রিয়মাণ ক্রোধ পালন আমাকে ক্লান্তই কইরা তুলতেছে।

কিন্তু ঘটনার যে এতই দুর্গতি হবে তা কি আর জানতাম আমি। কুলসুম রাজুকে বইলা দিল আমার ব্যাপারে যেন সে সাবধান থাকে। সময়কালে আমি কতটা বিপদজনক হয়ে উঠতে পারি রাজুর জন্যে; এমনকি কুলসুমেরও জন্যে—তার মাত্রার বিষয়েও নাকি কুলসুম তার সাথে দীর্ঘ আলাপ সাইড়া নিছে।

পরদিন রাজুর সাথে সিগ্রেট খাওয়ার তালে সেই দেয়ালের ওপর যথারীতি মিলিত হইলাম। প্রতিদিনের মতো সে সিগ্রেট ধরানোর নাম নিয়া যেই প্রভাব বিস্তারের আয়োজন ঘটায়ে থাকে, তা আর আজকে ঘটাইতে আগ্রহী দেখা গেল না। আমাকে ম্যাচও বের করে দিলে—আমি সিগ্রেট ধরায়ে আকাশের দিকে ছুঁড়লাম। সূর্যের দিকে তাকানোর ভাব কইরা নার্ভাসনেস হয়তো কাটাইতে চাইতেছি। আচমকা ঘটল কেমন, রাজু আমাকে লাত্থি দিয়া ফালায়ে দিল। স্থলভাগের উষ্ণ আবরণ পুকুরে পড়ার চোটে নাই হয়া গেল। আমি অবাক এবং স্থির।

তারপর তো বইয়া গেল কতগুলা দিন। আজকে আমি আবারও নার্ভাস আমার বন্ধুর বিষয়ে। আমাদের সাততলা আন্ডার কনস্ট্রাকটেড বিল্ডিং জুইড়াই এখন অস্থিরতা। পার্টির হেড অফিস থেকা অর্ডার আসছে লালমাইয়ের এই রেপ কেসের আসামিদের শনাক্ত কইরা প্রশাসনের হাতে তুইলা দিতে। এর সাথে সংযুক্ত গোষ্ঠীর প্রত্যেকের নাম প্রত্যেকের জানা সত্ত্বেও, পূর্বের কিছু কেসের সূত্র ধইরা বর্শি এখন রাজুর গলায়।

২.
এই পর্বে রাজুর সাথে আড্ডাবাজিতে অন্যান্যবারের মতো মেয়েকেন্দ্রিক ব্যস্ততা কমই ছিল। অবশ্য পুরাপুরি তাও বলা যায় না। কারণ এখন নানান যৌগিক ব্যস্ততা ঘইটা থাকতে থাকলেও মৌলিক ব্যস্ততাগুলো সেই মেয়েকেন্দ্রিকই। কিংবা সকল ব্যস্ততার পরিণতি বা সমাপ্তিতে সেই মেয়ে। বাট তার মাত্রা চেঞ্জ হইছে। প্রেম নিবেদন বিবর্তিত হয়া ভায়োলেন্স আসছে।

অ্যাম্ফেটামিনের পরশ নিয়া, রাজু অন্যান্য বন্ধুদের ইশারা দিলেই, আট নয় সদস্যের একটা টিম প্রস্তুত হয়া যাইত প্রণয়রত যুগলের খোঁজে। আমাকেও যাইতে হইত তার ঘনিষ্ঠতম সহযোগী হিসাবে।

আমার এতোদিনের বড় হওয়া—বুঝতে থাকা—দেখতে থাকা ইত্যাদিতে নৈতিকতার যে আঁচড় পড়ছিল, আমি তা নিয়া সন্দিহান হয়া তার নতুন মাপকাঠি তৈরিতে মনোনিবেশ করলাম এক পর্যায়ে। কারণ সুস্থতার বর্তমান মানদণ্ডে আমার এই সমস্ত কার্যক্রম চালানো এতই মুশকিল হয়া পড়ল, মানে এতই যে, আমি আতঙ্কে ঘুমটুম একপ্রকার ছাইড়াই দিলাম। আর আমার নয়া নৈতিকতার ফুয়েল হিসাবে বর্ডার পার হয়া আসতে থাকা সুঘ্রাণযুক্ত গুটিগুলা। আহা!

এই বস্তুটার জন্য আমি কি রাজুর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব নাকি আল্লাহর কাছেই কৃতজ্ঞ থাকি তা নিয়া দ্বিধায় কাটলাম। অধিকন্তু এমনও হইছে যে আজকে অন্তত তিনটা আল্লা হইলেই বাঁচি।

৩.
আমাদের হাতে দীর্ঘদিন যাবত কোনো কাজকর্ম নাই। আমরা বলতে আমাদের এই সাত তলা বিল্ডিংয়ের যারা তৃতীয় তলায় অবস্থান করতেছি গত বণ্টনের পর থেকা। রাজু একসময় সাততলায় ছিল। আমার সাথে যখন আবারও তার যোগ তৈরি হইল তখন সে পাঁচে। মানে আপগ্রেডেড হইছিল দুই তলা। এই প্রমোশনটুকু প্রত্যেকে পায়া থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বন্ধুর বদৌলতে। কিছুজন হয়তোবা পায় তার বিচক্ষণতা, কর্মপদ্ধতির অগ্রগতি বা তার টুলস হইবার অধিকতর যোগ্যতার মধ্যে দিয়া। যেমন রাজু।

বেশকিছু ঘটনায় আমাদের চতুরতার আশীর্বাদস্বরূপ আমি আর আমার বন্ধু রাজুসহ পাঁচজন তৃতীয় তলায় উন্নীত হই মাস তিনেক আগে। গ্রাউন্ড ফ্লোরের কাছাকাছি যাইতে যাইতে আমাদের ক্ষমতার যেই সিলসিলা, তার সম্পর্কে আমাদের একটু একটু কইরা সচেতন করা হইছে বোধ করি। আগে যেমনটা উদাসীনতার সুযোগ পাওয়া যাইত অবসরে, এখন অবচেতনেই তার আর অস্তিত্ব নাই। অর্থাৎ আমরা নৈতিকভাবে কনশাসনেসের মধ্য দিয়া আমাদের সিলসিলা লালন করতে শিখছি।

প্রথমত আমরা স্নেহ ও শাসনের বন্ধনে আবদ্ধ দ্বিতীয় তলার বড় ভাইদের তরে। অতঃপর এমনিভাবে প্রথম তলা, গ্রাউন্ড ফ্লোর— এবং পরবর্তীতে আমাদের প্রিয় শহরটির এমপি। (এর মাঝে পুলিশদের নানান কর্মকর্তা ক্ষণে ক্ষণেই আসবে। তাদের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া চলবে না আদর্শিক পাটাতনে দাঁড়ায়ে।) এই কইরা আমাদের সিলসিলাটি পরম স্পিডি মুডে চইলা যাবে একবারে রাষ্ট্রপ্রধানের দোরগোড়ায়। আমাদের এলাকা থেকা উদগত স্যুটেড ব্যুটেড বিক্রমশালী দারোয়ান সাহেবটি যেইখানে দণ্ডায়মান। সেই দরজা পেরুলেই আমাদের মুক্তি।

তবে আমাদের সব রকম অর্থের উৎসই যে সেই দরজা, তা ভাবাটা মস্ত ভুল কাজ। কর্মের বিনিময়ে বাঁচার মাহাত্ম্যও আমাদেরকে উৎসাহিত করে পদে পদে। রাজু সপ্তাহখানেক আগে একজন সম্মানিত প্রবাসীর থেকা অর্থ গ্রহণ করল। নগ্ন দাঁড়ায়ে জনাব প্রবাসী বারবার আমার দিকে দেখতেছিলেন। কোনো স্মৃতি হাতড়ায়ে মনে করার চেষ্টা কিনা কে জানে। আমি চিনি নাই তেমন। আমি কেবল তাকে প্রত্যেকের মতোই চিনি। একজন মাইকেল তিনি। এইতো।

মাইকেলরা বিদেশ থেকা যেই অর্থ নিয়া আসতেছেন আমাদের জন্য, তার পাওনা বাস্তবায়ন করতেই আমাদের এত চেষ্টা সাধনা ঘইটা থাকে প্রায় প্রতি মাসে। রাজুর সুন্দরী বান্ধবীগণ, শরীরের নানা ভঙ্গি এবং আকারের কারণে যারা শহরময় বিখ্যাত। তাদের কল্যাণেই আমরা এই সকল মাইকেলগণের সাক্ষাৎ পায়া থাকি নগ্ন ও নিবিড় অবস্থায়। এই মৌলিক শারীরিক গঠনে যেহেতু টাকার অংশ নাই, সুতরাং অর্জিত অতিরিক্ত বস্তুগুলাকে তিনারা আমাদের হাতে তুইলা দিবেন না কেন!

তাছাড়া প্রশাসনের লোকগুলারও তো বেতনের বাইরের কত আয়েশ দরকার এক জীবনে। আমরা কি তাও অস্বীকার করি?

৪.
বিকাল সন্ধ্যা সময় হইলে আমরা মাঝেমধ্যে অদূরে ঘুরতে যাইতাম। শাহরের আশপাশেই। যেইখানে বসতি একটু কম। কিন্তু সময়ের পরম্পরায় শহর বড় হইতে হইতে একসময় ভইরা যাবে এই স্পেসগুলাও। শহরের ছেলেমেয়েরা এদিক ওদিক প্রেম করতে যায়। আমাদেরও আছে বটে প্রেম করার সাধ্য, তবে তা লালন করবার সময় কই। ফলে ভাঙচুরই আমাদের পছন্দের ক্ষেত্রে আগায়ে থাকে। গড়তে থাকার যেই প্রবৃত্তি, আমরা নির্বাণ লাভের পর তা ফালায়ে আসছি গোমতির পাড়ে। ওই বস্তু আমাদের প্রিয় নাই আর।

এই বিষয়ে আমার পূর্বের নৈতিকতা ভাঙতে সাহায্য করছিল রাজুই। তবে তার সবচাইতে বড় বেগটা মনে হয় পোহাইতে হইছে আমারই। এই ত্যাগ, আমার মতো আর রাজু কি বুঝবে?

ও আমাকে যেইটা বুঝাইতে চাইছিল, এই যে শহরের নীরব নির্জনে প্রেম করতে থাকা মেয়েগুলাকে; সূর্য নেভার পবিত্র সময়ে সঙ্গী থেকা সাময়িক কাইড়া নিয়া সেক্স করা, এইটাকে আধুনিক মনমানসের ধর্ষণ টার্ম দিয়া ডিল করাটা খুবই গরিবি কাজ কারবার এবং এতে বোল্ড মানসিকতা লুপ্ত হয়। সেইটা প্রকৃতির কখনোই কাম্য হইতে পারে না। প্রকৃতি তো এইসব ভাবালুতা কিছুতেই গায়ে মাখবে না। সে বোল্ড এবং ভায়োলেন্ট।

তাছাড়া, মূলত বাস্তবিক অর্থে মেয়েগুলাতো চায়ও সেক্স করতে নাকি? অথচ তার অথর্ব সঙ্গীটা তাকে দেখাইতেছে গাছ এবং লতাপাতা। বাতাসে কইরা কোনো গাছ কি তখন সেক্স কইরা ফেলল নাকি তার গল্পে গল্পে, সেই প্রেমিক কি তা জানে? এইটাকে তুই বরং লিফট হিসাবে দেখতে পারিস। ধর স্বর্গে যাইবার লিফট দিল তোকে মেয়েটা। কিন্তু সে এক্টিভ হইল না বোকা ছেলেটার মোহে পইড়া। প্যাসিভ লিফট।

আমি তখন যা ভাবতে থাকলাম, এবং পরবর্তীতে দেখতেও থাকলাম, তা হইতেছে উক্ত বস্তুটির ক্রিয়া। মানে যেই বস্তু খাইয়া আমরা মাঠেঘাটে নাইমা পড়তেছি ও আমার নাইমা পড়া লাগতেছে।

তা মোটেই ছোট কোনো ঘটনা নয়।

এই অমৃত গ্রহণের ফলে আমরা প্রত্যেকেই প্রবলভাবে আমাদের কনফিডেন্স দ্বারা তাড়িত হইতেছি। এবং বাস্তবিকই আমাদের সকলের কনফিডেন্স ও করতে চাওয়া, এক ধরনের না। সেইক্ষেত্রে সে ফোকাস করার জায়গাটা ধরায়ে দিচ্ছে মস্তিষ্কে। ফলে ক্রিয়াশীল রাজু এবং প্রতিক্রিয়াশীল অন্যান্যরা নব নব উদ্যমে তাদের নৈতিকতা ও সঠিকতা এই পৃথিবীর বুকে লেপ্টাইয়া বেড়াইতেছে। এবং ক্রমেই বেড়াইতেছি।

কিন্তু এর মধ্যে স্থিতি থাকার বিষয়টা নিয়া আমি সন্দিহান। আগে ঘোর বিরোধীই ছিলাম যদিওবা এই হিপোক্রেসির। সেক্স যখন আমাদের নিকট এতই মহাজাগতিক হয়া ধরা দিল যে আমরা সপ্তাহে দুই তিনবার কইরা স্বর্গে লিফট নিতেছি। তথাপি এক ক্ষমতাধর মাইকেল যখন আমাদের কথা ফাঁস কইরা দিল ভদ্রসমাজে, তখন আমরা সমাজের বিদ্যমান নৈতিকতারই শেল্টার নিলাম। সংরক্ষণ কইরা রাখা তার ফুটেজসমূহ দোকানে দোকানে থেকা জুম্মার মসজিদের বারান্দায়ও পৌঁছায়া গেল সুপরিকল্পিতভাবে।

অতঃপর অতিব্যস্ততার সাথেই জনগণ তাদের বসতিস্থল থেকা এই ব্যভিচারিকে বাইর কইরা দিল। এবং আমাদেরকে মসজিদে ডাইকা বলা হইল, তোমরা খারাপ নিয়তে করলেও যা করছো ভালোই করছো। আল্লাহর জমিনে এইসব ব্যভিচারী দম্ভ নিয়া বাস করতে পারে না। তাদের স্থান জাহান্নামে। আল্লাহ নিজগুণে এই কাজে তোমাদের ভুল ত্রুটিসমূহ ক্ষমা কইরা দিবেন। আশা রাখতে পারো।

৫.
তবে এবার বোধহয় ঘইটা গেল একটু ভিন্ন ঘটনা। আমি আর রাজু গুটি খায়া আবেগতাড়িত অবস্থায় বাইর হইলাম। উদ্দেশ্যে ছোটার পর যা ক্রমেই আগ্রাসে রূপ নিতেছিল। যুগল খুঁইজা পাওয়ার পর দেখা গেল, রাজু অন্যান্য সময় যা করে তার কিছুই সে করতেছে না। চরম উত্তেজিত ডিরেকশন দিতে লাগল। আমি কিছুই বুইঝা উঠতে পারতেছিলাম না। ফলে আচরণে একটা আড়ষ্ট ভাব গোপন হইতেছিল না কিছুতেই। পিস্তল বাইর কইরা রাজু প্রেমিকটার মাথায় বুকে এলোপাথাড়ি গুলি করল। মেয়েটা অজ্ঞান হয়া পইড়া যাইতেছে। কিন্তু আকস্মিক কোনো এক বিহবলতায় সে জাস্ট টলতেছে। খুব আস্তে বলল, রাজু আমি চইলা যাব ঢাকায়। আমাকে মাফ কইরা দেও।

আমি তখনও হা কইরা দেখতেছি আর একটু আধটু রাজুর নির্দেশ পালন করতেছি। কী হইতেছে কেন হইতেছে। সে কি রাজুর কোনো প্রেমিকা নাকি।

আমাকে এমন হতবিহ্বল অবস্থায় দেখতে রাজুর মেবি অস্বস্তি এবং প্রচণ্ড রাগ হইতেছিল। সে মেয়েটার মুখ চাইপা ধইরা আমার দিকে পিস্তল তাক করল। বলল, হারামজাদা হা কইরা আছোস ক্যান, চোদ!

৬.
আস্তানায় পরদিন আসতে সময় দেখি শহরে তুলকালাম কাণ্ড। দুইটা মানুষ মারা গেছে প্রেম করতে গিয়া। তারা দুইজনই অবিবাহিত ছিল। তাহলে লালমাই এলাকায় ওরা ক্যান ফষ্টিনষ্টি করতে গেল? তার নিকাশ করতেও অনেককে ব্যস্ত দেখলাম। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে আমার মনে হইতেছে এই জনমতটিই হয়তো আবারও আমাদের রক্ষা করবে। আশার আলো দেখতে পাইলাম। কিন্তু অস্বস্তি ঝাড়তে পারলাম না পুরাপুরি।

কিন্তু এই জাজমেন্ট ফুরানোর পর পার্টির বিরোধী শক্তির তোলপাড় চোখে পড়ল। আমাদের বিল্ডিংয়ের সব গেট লাগানো। নিচ তালার বড় ভাইরা আসেন নাই। উপরে গিয়া দেখি পোলাপান গাঞ্জা খাইতেছে আয়েশ কইরা। পৃথক পৃথকভাবে রাজু আর আমি একই বিল্টিংয়ে আশঙ্কার দোলাচলে দুলতেছি।

রাত নামতে নামতে পরিস্থিতি বেশ ভয়ানক হয়া উঠল আমাদের জন্য। পার্টির সুনাম এবং কার্যক্রমে মারাত্মক বিঘ্নতা ঘটছে। এতে বড় ভাই থেকা শুরু কইরা দলের প্রত্যেকেই ক্ষুব্ধ। জাতীয় পর্যায়ে অভিযুক্তদের নিয়া আলাপ উঠল। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের পালানোর কোনো আদেশ আসে নাই। সুতরাং আমরা পলায়ে পূর্বেকার রীতি ভঙ্গ করতে পারি না। এবং এই অনুমতি ব্যতীত পলানোর যা শাস্তি হবে সেইটার মাশুল অনেক বড়। এবং ভয়ানক।
আমার ভাবনায় কোনো সুষ্ঠু সঠিকতাই খুঁইজা পাইতেছিলাম না এইসব ঘটনার। আমরা যাদের তরে, অর্থাৎ বিভিন্ন ঘটনায় আমাদের নানাবিধ কর্মকাণ্ডের যারা ভোক্তা, তাদের কেনইবা এতটা দায়মুক্তি থাকবে এই ঘটনা থেকা। সময়ে সময়ে আমাদের ভালো এবং মন্দ কর্মকাণ্ড তো সমানতালেই আলোচিত ছিল। যেগুলার ইমপ্যাক্ট তারা ভোগ করছেন স্থানীয় ও জাতীয় পরিসরে। আমরা তো তাদের পাওয়ার ব্যবহার করবার ফলেই এইখানে। নাইলে তো আমরা থাকতাম আমাদের মায়েদের মতোন ভালো আর কোমল।

রাত কিছুটা গভীর হইলে বড় ভাইরা একজন একজন আসতে লাগলেন নিচ তালায়। আমি আর রাজু ছাদে। উপর থেকা দেখতেছি ক্রিমিনালদের। পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নিতেছে, তা আমাদের কাছে একেবারেই পরিষ্কার। আমরা আর কারো ওপরই ভরসা রাখতে পারতেছি না। রাজুকে দেখলাম খুব ঋজু হয়া আছে। আমার ছোটবেলার সেই বন্ধুটা। আমি কি আরেকবার তার সাথে গুটি খাব কিনা সে জানতে চাইল। আমারও মনে হইল এতে হয়তো একটু রিলিজ পাওয়া যাবে এই অস্থিরতম সময়ে।

আমি আর রাজু। ছাদে গুটি খাইতেছি। আকাশে চাঁদ উঠছে একটা একেবারে গোল। মনে পড়ল ছোটবেলায় দৃশ্য আঁকতে গিয়া যখন চাঁদটা ডিমের মতো হয়া যাইত, রাজু আমাকে পানির বোতলের ঢাকনা দিত গোল কইরা আঁকতে। তারপর তো অনেক অনেকদিন একই জিনিস দিল গুটি খাওয়ার সময়। আজকে কিছুই নাই। এমনেই খাইতেছি আমরা। আমরা কই যাব একটু পর।

এইসেই ভাবতে ভাবতে আমি আবারও রাজুর লাত্থি খাইলাম। আমাকে ছাদ থেকা ফালায়ে দিল রাজু। কেন দিল। এইটা কি স্কুলের পাশের সেই ছোট্ট দেয়াল নাকি যে এইখান থেকা পইড়া আমি বাঁইচা থাকব। আমার কুলসুমের কথা মনে পড়ল। গতকাল তো সেই মেয়েটা কুলসুমই ছিল। আমি চিনলাম না কেন তখন। একটু মোটা হয়া গেছে তাই হয়তো। আমরাই কেবল হইলাম হাড্ডিসার। শেষ মুহূর্তে আরেকবার রাজুকে দেখার ইচ্ছা হইল। কিন্তু রাজু কি ওপর থেকা তাকায়ে আছে কিনা তাও তো দেখতে পাইতেছি না আমি। কিছুই তো দেখতে পাইতেছি না।

   

জাফরানি



শরীফুল আলম । নিউইয়র্ক । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ভাবছি এই বৈশাখের প্রথম পলাশটা আমি তোমাকেই দেবো
প্রথম চুম্বনটাও তোমাকে।
একটা দীর্ঘ শীত পাড়ি দিয়ে এসেছি,
তোমার খোঁপায় লাল গোলাপ দেবো বলে
চোখে কাজল, কপালে কাল টিপ
এই সব দেয়ার আগে কিছুটা খুনসুঁটি তো হতেই পারে ,
তুমি অনন্যা বলে কথা
তোমাকে উৎকণ্ঠা ও বলা যায়
কিম্বা সুনীলের কবিতা, অসমাপ্ত শ্রাবণ
তুমি আমার ওয়াল্ড ভিউ
তুমি আস্ত একটা গোটা আকাশ
চুরমার করা তুমি এক পৃথিবী ,
কখনো তুমি মুক্ত বিহঙ্গ, সুদূরের মেঘ
তুমি কখনো শান্ত মোহনা, কখনো মাতাল স্রোত
ভরা শ্রাবণ, শরতের স্তব্ধতা তুমি ,
তুমি কখনো আমার সুখের আর্তনাদ ।

আমি সমুদ্র, আমি ক্ষণে ক্ষণে শিউরে উঠি
দিগন্ত রেখায় আমি তোমার অপেক্ষায় থাকি
আমি অপেক্ষায় থাকি তোমার ফোনের গ্যালারিতে
ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপে ,
আমি প্রলেপ বানাতে জানিনা
তাই ফাগুণের রঙকে আমি টকটকে লাল বলি
সিজোফ্রেনিক কে পুরোনো রেকাবি বলি
মূলত তুমি এক হরিয়াল ছানা
আড়ালে চিঁ চিঁ ডাক, উঁকি মার জাফরানি ।

আমার ভাললাগার টুনটুনি
এই শ্রাবণ ধারায় স্নান শেষে
চল ঝিলিমিলি আমরা আলোয় ঢেউ খেলি
ভালোবাসলে কেউ ডাকাত হয় কেউবা আবার ভিখারি ।

;

আকিব শিকদারের দু’টি কবিতা



আকিব শিকদার
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

যোগ্য উত্তর

‘তোমার চোখ এতো ডাগর কেন?’
‘স্বর্ণ দিনের স্বপ্নঠাসা দুচোখ জুড়ে।’

‘তোমার বুকের পাঁজর বিশাল কেন?’
‘সঞ্চয়েছি স্বদেশ প্রীতি থরেথরে।’

‘তোমার আঙুল এমন রুক্ষ কেন?’
‘ছদ্ধবেশীর মুখোশ ছেঁড়ার আক্রোশে।’

‘তোমার পায়ের গতি তীব্র কেন?’
‘অত্যাচারীর পতন দেখে থামবে সে।’

অনন্তকাল দহন

ঝিঝির মতো ফিসফিসিয়ে বলছি কথা আমরা দুজন
নিজেকে এই গোপন রাখা আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

বাঁশের শুকনো পাতার মতো ঘুরছি কেবল চরকী ভীষণ
আমাদের এই ঘুরে ঘুরে উড়ে বেড়ানো আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

তপ্ত-খরায় নামবে কবে প্রথম বাদল, ভিজবে কানন
তোমার জন্য প্রতিক্ষীত থাকবো আমি আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

তোমার হাসির বিজলীরেখা ঝলসে দিলো আমার ভুবন
এই যে আগুন দহন দেবে আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

;

তোমার বীণায় সুর ছিল



প্রদীপ্তকুমার স্যানাল
দৈনিক বসুমতীতে প্রকাশিত প্রদীপ্তকুমার স্যানালের সেই নিবন্ধ। ছবি: আশরাফুল ইসলাম

দৈনিক বসুমতীতে প্রকাশিত প্রদীপ্তকুমার স্যানালের সেই নিবন্ধ। ছবি: আশরাফুল ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘দিল্লী চলো, চলো দিল্লী’ সুভাষকণ্ঠে আটত্রিশ কোটি আশি লক্ষ হিন্দু-মুসলমানের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর যেন এই মুহূর্তে পাচ্ছি আবার শুনতে। দিল্লীর মাটিতে স্বাধীন বাংলার প্রথম রাষ্ট্রপতি পা দিলেন-অবিস্মরণীয় সেই মুহূর্তে শুনি বিস্ময়কর অভিভাষণ, ভারতের আকাশে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত সাড়ে সাত কোটির কণ্ঠস্বর একটি কণ্ঠে। মুজিবর রহমান ..সেই নাম। আমি জানি, নামমাত্র নয় সেই নাম; সমস্ত বাঙালীর সংগ্রামের নামান্তর সে নাম আমাদের আগামীকালের ইতিহাস গড়বে।

লন্ডনের হোটেলে ছিন্নবেশে পা দিয়েছিলেন তিনি যাঁর নির্দেশে বীণা তুলে নিয়েছে ছিন্নকণ্ঠ, মানুষ শুনেছে মৃত্যুর গর্জন সঙ্গীতের মতো। সেই নেতার গলায় স্বাধীন বাংলার প্রথম বরমাল্য তুলে দেওয়ার মহত্তম সৌভাগ্যের অধিকারী আমরা। ভারতবর্ষ তাঁর ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেছে কণায় কণায়। এই মুহূর্তে সমস্ত কিছুর রং বদলে গেছে। এপারের মানুষও উন্মাদ হয়েছে ওপারের মানুষের উদ্বেল হওয়ার মুহূর্তে।

স্বাধীন বাংলাদেশের মাটি থেকে-যে বিপ্লবী বীর এবং স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে অগ্রসর প্রথম পদাতিক মুজিব (?) তুমি আমাদের ..চিত্তের প্রণতি গ্রহণ করো। তোমার মুখে ‘আমার সোনার বাংলা তোমায় ভালোবাসি’ বাংলার জাতীয় সঙ্গীত হল..। কত আন্দোলনে যে বাংলা ভাষা প্রাণ ফিরে পেয়েছিল তা প্রাণবন্ত হল দিল্লীর জনসভায় তোমার অভিভাষণের জোযারে। দেশবন্ধুর মৃত্যুহীন প্রাণ নেতাজী, আর সেই প্রাণের নিঃসীম স্পন্দন তোমার নেতৃত্বের অঙ্গে অঙ্গে।

শেখ মুজিব তাঁর বক্তৃতায় বলেছেনঃ আমি মানুষ, আমি বাঙালী, আমি মুসলমান। বাঙালীর হৃদয় থেকে উৎসারিত যত কথা যত ভাব সব নেতার একটি ঘোষণায় সুস্পষ্ট চেহারা নিয়েছে। এর চেয়ে সত্য ভাষণ আর কি হতে পারে! সবার উপরে মানুষ সত্য-মনুষ্যত্বের দাবী সবার আগে। মানুষের বাঁচার অধিকার প্রতিষ্ঠায় পৌঁছবার লক্ষ্যে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, তার প্রথম পর্যায় সমাপ্তির মুখে। এর চেয়ে সত্যোন্মুক্ত বাণী নেতৃত্বের জবানীতে আর কি হতে পারে? সর্ব প্রথম মানবমুক্তি তার পর অন্য প্রয়োজন। ভাই শেখ সাহেব তাঁর ভাষণের প্রথমেই বলেছেন, প্রতিহিংসার নয় ক্ষমার ক্ষমা সুন্দর মুখকে বাঙালী নিভৃতেও ফুটিয়ে তোলার কথা। এই অন্যায় অবিচারের তুলনা বিরল, দুর্ঘটনায় পরিসমাপ্তির সন্ধিক্ষণে শত্রুকে ক্ষমা করার ঔদার্যে মহিমান্বিত প্রসন্নোক্তি আর কবে কোথায় শোনা গেছে? দেশের মানুষকে কবে কোথায় কোন নেতৃত্বের অভয়বাণী যুদ্ধের অব্যবহিত পরেই শোনাতে পেরেছে শান্তির ললিতবাণী। তাই মনুষ্যত্বের কথা, মানুষের কথা ওঁর মুখে মানায়। অসহযোগ আন্দোলন পূর্ণতম সাফল্যকে সর্বাত্মক মুক্তির আগমন মুহূর্তে সশস্ত্র সংগ্রামে রূপ দেওয়া যাঁর নেতৃত্বে সম্ভব সেই নেতার মুখেই মানায় শান্তির বাণী। দুর্বলের মুখে শান্তির প্রয়াস হাস্যকর নয় শুধু অট্টহাসিকরও বটে।

বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম শুরু হওয়ার পরেই-বিভিন্ন মুখে শুনেছি এর নানা বিশ্লেষণ, বৃহত্তর হিসেব নিকেশ। তবু যা একবারও শুনিনি, একটি মানুষের মুখেও যে সত্য উক্তি একবারের জন্যও শোনা যায়নি, তা হল, এ সংগ্রাম সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর সংগ্রাম, এ সংগ্রাম বাঙালীর জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম। সেই দুর্ণিবার জাতীয়তাবোধকে ইজমের ধোঁয়ায় অন্ধকারে যদি বিপথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হত তবে ইয়াহিয়া চক্রের পক্ষেও সম্ভব ছিল এ যুদ্ধ জয় করা। বাঙালীয়ানাই বাঙালীর সবচেয়ে উজ্জ্বল সত্য চরিত্রচিত্র। তাই দিল্লীর জনসভায় মুজিবের কম্বুকণ্ঠে যখন শুনিঃ

‘‘আমি জানতাম না আবার আপনাদের মধ্যে ফিরে আসতে পারব। আমি ওদের বলেছিলাম তোমরা আমাকে মারতে চাও, মেরে ফেল। শুধু আমার লাশটা বাংলাদেশে আমার বাঙালীদের কাছে ফিরিয়ে দিও।’’

তখন তাঁকে শুধু বাংলা বলব, না, সমস্ত মানুষের দুঃখে তার নেতার কণ্ঠে একে বেদনার করুণ বিপ্রলম্ভ বলব। তবু এত ভালবাসা, এত ¯েœহসিক্ত আনন্দের নির্ভরতা বাঙালীর জাতীয়তাবোধ ছাড়া আর কোন পথে আসা সম্ভব। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ জাতীয় সঙ্গীতের এই প্রথম লাইনেই বঙ্গহৃদয় সোনা হয়ে গেছে। এই গান মুখে নিয়ে বাঙালী প্রাণ দিয়েছে। তবু এই সংগ্রামকে যদি বাঙালী জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম না বলি, তবে মিথ্যা ভাষণের ফল আমাদের পেতেই হবে। বাঙালীর বাঁচারও বটে মরারও বটে একমাত্র প্রশ্ন তার ভাষা। এ সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মুহূর্তে। বাঙালীর সবচেয়ে কোমল সবচেয়ে নিভৃত মর্মকোষ তার ভাষা। সেই কোমল স্থানেই আঘাত করে শাসনচক্র চেয়েছিল বাঙালীকে নিশ্চিহ্ন করতে। বেদনায় বিক্ষত বাঙালী হৃদয় কঠিনতম প্রতিজ্ঞায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। সে প্রতিজ্ঞা সফল হয়েছে। সেই সফলতার উৎসে বাঙালীর সবচেয়ে প্রাণের কবি রবীন্দ্রনাথ। বাঙালী কবি। তাই কবিতাই তাকে রক্তাক্ত করেছে, করেছে সুজলা সুফলা।

এমন কঠোরে, কোমলে, আনন্দ বেদনায়, হাসিকান্নার হীরাপান্নায় আর কোন দেশের ইতিহাস হয়ে আছে গাঁথা। ধর্ম নিয়ে অধর্মের রাজনীতি করার পুরণো পথ পরিত্যাগ করেছে বাংলাদেশ। দুর্দিনে অশ্রুজলধারায় বাঙালীর চেতনা থেকে ধর্মান্ধতার ক্লেদ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে। বাঙালী মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ অথবা খৃষ্টান এসব কিছুই নয়। বাঙালীর একমাত্র পরিচয় যে বাঙালী। এই সত্যটুকু বাঙালীকে বুঝে নিতে রক্তের মূল্য দিতে হয়েছে বারংবার। যতদিন বাঙালী হিন্দু, মুসলমান অথবা বৌদ্ধ, খৃষ্টান ছিল, ততদিন জঙ্গীশাহীর শোষণের থাবাও ছিল অপ্রতিহত শক্তিতে উদ্যত। যে মুহুর্তে বাঙালীর মুখ থেকে খসে পড়েছে ধর্মীয় বাধানিষেধের মিথ্যে মুখোশ সেই ক্ষণ থেকেই শোষণে কায়েমী সিংহাসন বাংলার মাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে গেল। কারণ এই ধর্মীয় বাধানিষেধকে সম্বল করেই দীর্ঘদিনের শোষণে পাক জঙ্গীচক্র বাংলার মানুষকে নিঃস্ব করেছে, সব কিছু লুঠে নিয়েছে বাংলার বুক থেকে। রক্তস্নাত বাংলা আজ শোষণহীন, বাঙালীর আজ একটি মাত্র পরিচয় সে-বাঙালী।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক এবং সবার বড় কথা সে আজ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। মুসলিম ইতিহাসে এ এক বিরাট নজির। ধর্ম আজ বাংলাদেশে ব্যক্তিগত বিষয় ছাড়া কিছুই নয়। তার নেতার কণ্ঠেও আজ এরই প্রতিধ্বনি। বাংলাদেশের সাথে ভারতবর্ষের পরবর্তীকালে কি সম্পর্ক দাঁড়াবে তা এই প্রথম দিনেও সুস্পষ্ট। বাংলা এবং ভারতের নীতি এক এবং সে নীতি দুর্ণীতির মুলোচ্ছেদ। বাংলাদেশের পাশে বন্ধুত্বের দাবী নিয়ে এগুতে পেরে, পৃথিবীর পৃথিবীর মহত্তম স্বাধীনতা সংগ্রামের পাশে একমাত্র সাহায্যদাতা হিসেবে থাকতে পেরে ভারতবর্ষ বিশ্বের শক্তির ভারসাম্য সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। অন্যের কৃপাকণায় বেঁচে থাকার দুর্দিন আজ ভারতবর্ষের সৌভাগ্যের ঊষা লগ্নে অপসৃত। মুজিবের কণ্ঠে কৃতজ্ঞতার সহৃদয় সম্ভাষণ ভারতবর্ষের মানুষকে ঘিরে, ইন্দিরাকে ঘিরে। বাংলাদেশ তার চরম দুর্ভাগ্যের মধ্যে ভারতবর্ষকে যে বন্ধুত্বের মর্যাদায় বসিয়েছে তা ক্ষুন্ন হওয়া কোন চক্রান্তেই সম্ভব নয় আর।

বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে সাফল্যের দ্বারে উপনীত করার প্রতিটি পদক্ষেপে নেতা মুজিব পেয়েছেন নেতাজীর ভাব নির্দেশ। আমরা আজ গর্বিত। বাংলার মানুষের দুঃখের বটে সুখেরও বটে সমান অংশীদার ভারতবর্ষ। মুজিবের নেতৃত্বে নেতাজীর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে আসমুদ্র হিমাচল। (নিবন্ধে প্রদীপ্তকুমার স্যানাল ব্যবহৃত বানানরীতি অবিকৃত রাখা হয়েছে)।

প্রথম প্রকাশ: রবিবারের বসুমতী সাময়িকী, ১৬ই জানুয়ারি ১৯৭২; দৈনিক বসুমতী

সংগ্রহ ও সম্পাদনা: আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম

ঋণস্বীকার: ন্যাশনাল লাইব্রেরি, কলকাতা।

;

ফিলিস্তিন: যুদ্ধ, গণহত্যা, নব্য-বর্ণবাদ, জাতিগত হিংসা



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
ফিলিস্তিন: যুদ্ধ, গণহত্যা, নব্য-বর্ণবাদ, জাতিগত হিংসা

ফিলিস্তিন: যুদ্ধ, গণহত্যা, নব্য-বর্ণবাদ, জাতিগত হিংসা

  • Font increase
  • Font Decrease

মানবিকভাবে বিপর্যস্ত গাজ়ার ঘটনাবলি ইসরায়েল সম্পর্কে কয়েকটি মারাত্মক বিষয় উন্মোচিত করেছে। কয়েকটি জরুরি প্রশ্ন সম্পর্কেও গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে বিশ্ববাসীকে। যেমন: ১. গণহত্যা কাকে বলে, ২. নব্য-বর্ণবাদের স্বরূপ কেমন, ৩. জাতিগত হিংসার নৃশংস চেহারা কত ভয়াবহ।

এইসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য তাকাতে হবে, বাস্তব গবেষণাগার ফিলিস্তিনের ক্ষুদ্র জনপদ গাজায়, যেখানে প্রশ্নগুলোর ‘প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস‘ বা ‘মডেল টেস্ট‘ করছে, ইসরায়েল। রক্ত, মৃত্যু, ধ্বংসের ইসরায়েলি পাইলট প্রজেক্ট তথাকথিক মুক্ত-গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিকারহীনভাবে দেখছে। আরব তথা মুসলিম বিশ্বও এত বড় একটি গণহত্যার বিষয়ে নির্বিকার। 

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ফিলিস্তিন: যুদ্ধ, গণহত্যা, নব্য-বর্ণবাদ, জাতিগত হিংসা‘ (প্রকাশক: শিশুকানন/রকমারি) শিরোনামে আমার প্রকাশিত বইটিতে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পটভূমিতে ফিলিস্তিন পরিস্থিতি ও জায়নবাদী নীতির ঐতিহাসিক ধারাক্রমের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কোনো ঐতিহাসিক বিপর্যয়ের সময়ে গণ-নিষ্ক্রমণের ছবিটা বাস্তবে আসলে কেমন হয় আর প্রতিশোধজনিত হিংসার কারণে জাতি, বা রাষ্ট্র, বা তার ধ্বজাধারীরা কতটা হিংস্র হয়ে উঠতে পারে, এসব কথাও আলোচিত হয়েছে।

বাস্তবে ইসরায়েলের হিংস্রতা কল্পনার দানবকেও হার মানিয়ে গেছে। ‘গাজায় গণহত্যা বন্ধ হবে‘, মানবিক বিশ্বের এমন শুভ-আশাকে দুরাশায় পর্যবসিত করেছে, ইসরায়েল। গত অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সেখানে নিহত হয়েছেন মোট ৩২ হাজার ৭০ জন ফিলিস্তিনি। সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ৭৪ হাজার ২শ ৯৮ জন। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় গড়ে নিহত হচ্ছেন ১০০ জন এবং আহত হচ্ছেন ১৫০ ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই নারী, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ রোগী। ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় বাড়িঘর হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজার ২২ লাখ বাসিন্দার ৮৫ শতাংশ।

গাজায় ‘ইসরাইল-ফিলিস্তিন’ সংঘাতকে 'যুদ্ধ' বলা হচ্ছে। আসলে তা মোটেও ‘যুদ্ধ’ নয়, স্রেফ ‘গণহত্যা’। যুদ্ধে সৈন্য মারা যায়। সামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গাজায় মরছে সাধারণ মানুষ, জনতা। জনতাকে বেপরোয়া হত্যা করা যুদ্ধ নয়, নগ্ন গণহত্যা। যুদ্ধের ছদ্মাবরণে গণহত্যায় মেতে গত ৭৫ বছর ইসরাইল নব্য-বর্ণবাদী আগ্রাসন, জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ফিলিস্তিনে, যার সর্বসাম্প্রতিক হিংস্রতম পর্যায় চলছে গাজায়। সেখানে অসুস্থ রোগী, ডাক্তার, শিশু, বৃদ্ধ, নারী, কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। খ্রিস্টানদের বড়দিনে এবং মুসলমানদের  রমজান মাসের পবিত্রতাকেও পরোয়া করা হচ্ছে না। রমজানে গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশেও বাধা দিচ্ছে, জায়নবাদী ইসরায়েলি বাহিনী। বুলেটের আঘাতে আর খাদ্য, পথ্য ও ঔষধের অভাবে মরছে মানুষ গাজা উপত্যকায়।

বিশ্বের ইতিহাসে, সভ্যতার পথ-পরিক্রমায়, এমনকী, যুদ্ধের রক্তাক্ত প্রান্তরেও যা ঘটেনি কোনোদিনও, তেমন অকল্পনীয়, অভাবনীয় ও অদৃশ্যপূর্ব বর্বরতা-নারকীয়তা প্রদর্শন করছে ইসরায়েল। জীবিত মানুষদের হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণের পর লাশের ওপর দিয়ে বুলডোজার উঠিয়ে দিয়েছে। এতদিন ইসরাইলি নৃশংসতা ছিল জীবিত গাজাবাসীর ওপর। এবার তা-ও অতিক্রম করেছে। কমপক্ষে চারটি মৃতদেহ ও অ্যাম্বুলেন্সের ওপর দিয়ে বুলডোজার উঠিয়ে দিয়ে তা থেঁতলে দিয়েছে।

বীভৎস, ন্যক্কারজনক এই ঘটনা ঘটছে মুসলিমদের ঘরের ভিতরে, চোখের সামনে। চারপাশে মুসলিম দেশ- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিশর, ইরান, ইরাক, কাতার, তুরস্কসহ আরও কত দেশ। তারা কীভাবে এই নৃশংসতাকে সহ্য করছে!

সহ্য করছে, রাজনৈতিক স্বার্থগত কারণে। অধিকাংশ আরব দেশই স্বৈরশাসকের কব্জায় রয়েছে, যারা টিকে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দুনিয়ার ইচ্ছায়। মার্কিন-ইসরায়েল অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস ও শক্তি আরব দেশগুলোর নেই। অনুগত দাসের মতো তারা মার্কিন মদদপুষ্ট ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনের গণহত্যার দর্শক হয়ে আছে। আরব দেশগুলোর এই হলো বাস্তবচিত্র।

তুরস্ককে বেশ সাহসী ও উদ্যোগী মনে করা হলেও বাস্তবে তুরস্ক কৌশলজনক অবস্থানে থেকে ‘না ধরি মাছ, না ছুঁই পানি‘ নীতিতে নিজেকে নিরাপদ রাখছে। নতুন কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে চায় না তুরস্ক। 

বাদ থাকে ইরান। ইরান ও তার সহযোগী সিরিয়া, লেবানন ও ইয়ামেনের কিছু গ্রুপ মাঝে মাঝে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইরান নিজে মাঠে নামছে না। নানা গ্রুপকে কাজে লাগাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ-ইসরায়েল সমর্থনের বিপরীতে রাশিয়া ও চীন সুস্পষ্ট কোনো ভূমিকা নিয়ে সংঘাতের অবসানে কাজ করছে না। তারা নিজ নিজ স্বার্থ ও কৌশলের আলোকে কার্যক্রম চালাচ্ছে। বড় ও শক্তিশালী দেশ দুটি ফিলিস্তিনে গণহত্যার ঘটনায় মোটেও কাতর হচ্ছে না এবং বাস্তবক্ষেত্রে ইসরায়েলকে বিন্দুমাত্রও অসন্তুষ্ট করছে না।

বস্তুতপক্ষে বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহর অংশ হলেও মধ্যপ্রাচ্যে তিনটি জাতি (আরব, তুর্কি, ইরানি) আঞ্চলিক ক্ষমতা কাঠামোর নেতৃত্বে আসীন হওয়ার জন্য  পারস্পরিক লড়াইয়ে লিপ্ত। এই ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম ঐক্য ও সংহতিতে ক্ষয় ধরিয়ে দিয়েছে, যার ফায়দা লুটছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তি অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে এবং পশ্চিমাদের দোসর ইসরায়েল একতরফাভাবে ফিলিস্তিনে নিধনযজ্ঞ পরিচালনার মাধ্যমে। আর  অধিকাংশ আরব দেশই অবৈধ শাসকের অধীনে থাকায় বৈধতার অভাবের জন্য কোনো পদক্ষেপ তো দূরের বিষয়, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জোর গলায় কথা পর্যন্ত বলতে পারছে না। 

রাষ্ট্র ও সরকারসমূহের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যেও রয়েছে দুর্বলতা। ফিলিস্তিন নিয়ে বিশ্বের সকল মুসলমানের মধ্যেই তীব্র ‘আবেগ‘ আছে, কিন্তু ‘অনুধ্যান‘ নেই। 'অনুধ্যান' শব্দটি আমি এখানে খুব সচেতনভাবেই ব্যবহার করেছি, যার অর্থ: সর্বদা চিন্তা বা স্মরণ, শুভচিন্তা, নিরন্তর চিন্তা, অনুচিন্তন, সর্বদা স্মরণ, সর্বদা ধ্যান করা। অনুধ্যান শব্দে অর্থ ও প্রতিশব্দগুলো ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হচ্ছে না। চিন্তা ও গবেষণায় ফিলিস্তিনের ঘটনাবলি এবং সেখানকার গণহত্যা, নব্য-বর্ণবাদ ও জাতিগত হিংসার জায়নবাদী চক্রান্তের বিষয়গুলো উন্মোচিত করা হচ্ছে বলেও মনে হয় না। ফিলিস্তিন সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানের পরিধি ও অনুধ্যান বাড়ছে না।

বরং আমজনতা ও নেতৃবৃন্দ ফিলিস্তিন প্রশ্নে কাজে লাগিয়েছে আবেগকে। প্রচণ্ড আবেগে মিছিল, সমাবেশ, দোয়া করার পর অনেক দিন ফিলিস্তিন ইস্যুতে চুপ মেরে থাকাই হলো নির্মম বাস্তবতা। এমনটি কতটুকু সঠিক, তা চিন্তার বিষয়। ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনে সুপরিকল্পিতভাবে এবং সুচিন্তিত কার্যক্রমের দ্বারা ইসরায়েল যা করে চলেছে, তা ধারাবাহিক গবেষণা-অধ্যয়নের পথে গভীরভাবে অনুধ্যান ও আত্মস্থ করাই ছিল জরুরি। তাহলেই আবেগ আর যুক্তির সমন্বয়ে বিপন্ন-নির্যাতিত ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ানো এবং জায়নবাদী, বর্ণবাদী ইসরায়েলের জাতিগত হিংসা ও গণহত্যার অর্থবহ প্রতিবাদ ও বিরোধিতা করা সম্ভব হবে।

লেখক: প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওন্যাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

;