বৃষ্টিতে বইমেলায় স্টলের ভরসা পলিথিন
বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: বাংলাদেশের ঋতু অনুযায়ী ফাল্গুনের শুরুতে ঝড়-বৃষ্টি হয় আবহমান কাল থেকেই। চলতি সপ্তাহের আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কয়েক দফা। আর এই ফেব্রুয়ারিতেই প্রতি বছর আয়োজন করা হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ফাল্গুন শুরুর দিকের এই ঝড়-বৃষ্টিতে প্রতিবারই নষ্ট হয় মেলার হাজার হাজার বই। এতে মৌসুমের শুরুতেই আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় লেখকসহ প্রকাশনা সংস্থাগুলো। গত বইমেলাতেও ঝড়-বৃষ্টিতে হাজার হাজার বই একেবারে নষ্ট হওয়ার কথা জানিয়েছিল বইমেলা সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা সংস্থাগুলো।
এবারও এই ফাল্গুনেই আয়োজন করা হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ঝড়-বৃষ্টির কবল থেকে বই বাঁচাতে কি ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে? সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে বইমেলা ঘুরে স্টল মালিক, প্রকাশক ও বাংলা একাডেমি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তর।
জবাবে সোনামণি প্রকাশনীর প্রকাশক ও স্বত্বাধিকারী হূমায়ুন কবীর রাজা বলেন, আমরা প্লাস্টিকের পর্দা আর ওপরে দেওয়া টিনের ওপরেই ভরসা করে আছি।বাড়তি সতর্কতার জন্য রাতে স্টল বন্ধ করার সময় বইগুলো একত্রে একটি কোনায় রেখে যাই যেন বড় ধরনের ঝড় হলে বইগুলো একেবারে নষ্ট না হয়। স্টলের টিন আর সার্বিক অবকাঠামোর দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে এই প্রকাশক আরও বলেন, ওপরে যে টিন আর বাহিরের যে অবস্থা তাতে প্রবল বৃষ্টিতে ভেতরে পানি ঢুকবে এতে কোনো সন্দেহ নাই।
টোনাটুনি প্রকাশনীর বিপণন কর্মকর্তা বাদল আহমেদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমরা স্টলের পাটাতন উঁচু করে নিয়েছি যেন স্টলের ভেতরে পানি না জমে যায়। ওপরে টিন আছে আর বাড়তি সতর্কতার জন্য আছে পলিথিন। যদিও অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে টিনের ওপর ভরসা করা যায় না তবুও চালার নিচে যদি শক্ত কোনো পলেথিনের স্তর থাকতো তাহলে বেশিই নিরাপদ হতো।
লাইট অফ হোপ, সুলেখা লাইব্রেরি ও ঝিঙেফুল প্রকাশনীর স্টল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হলে তারাও জানান, ঝড়-বৃষ্টির কবল থেকে বই বাঁচাতে তাদের একমাত্র ভরসা পলিথিন ও মাথার ওপরে বাংলা একাডেমির দেওয়া নড়বড়ে টিন। ঝড়-বৃষ্টিতে বইয়ের নিশ্চিত ক্ষতি হবে জেনেই তারা স্টল নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কথা হয় বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা ও মেলার দায়িত্বে থাকা মোজাফফর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এটা খুবই ট্রাডিশনাল কথাবার্তা। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ওপরে টিন দেওয়া আছে এই জন্য ওপর থেকে পানি পড়বে না। স্টলগুলোর সাইডেও পর্যাপ্ত প্রোটেকশন আছে আর স্টল মালিকদের বলা আছে প্রত্যেকে যেন ভেতরে প্লাস্টিকের ত্রিপল রাখে, তাহলে ইনস্ট্যান্ট বৃষ্টির ঝাপটা থেকে বাঁচতে পারবে।
বৃষ্টি থেকে বই বাঁচাতে স্টলগুলোতে বাংলা একাডেমির দেওয়া ব্যবস্থা কতটুকু কার্যকর এমন প্রশ্নের জবাবে কথা প্রকাশনীর হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম সোহাগ বলেন, বাংলা একাডেমি যে ব্যবস্থা দিয়েছে সেটা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। একটু জোরে বৃষ্টি হলেই সব বই ভিজে নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা তো নিজেদের উদ্যোগে পানি নিষ্কাশনের যন্ত্র, পলিথিন ও স্টলের পাশগুলো বৃষ্টি নিরোধক ব্যবস্থা করেছি। আমাদের বড় প্রকাশনী আমরা এটা করতে পেরেছি। কিন্তু ছোট ছোট প্রকাশনী ও স্টলগুলোর এই সামর্থ্য নাই তাদের তো অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে ঝড়-ঝাপটায়।
তবে বাংলা একাডেমি ব্যবস্থা রাখুক আর না রাখুক প্রতিটি স্টলকেই নিজেদের ক্ষতির কথা মাথা রেখে পূর্ব প্রস্তুতি রাখা উচিত বলে মনে করেন কথা প্রকাশনীর এই কর্মকর্তা।
বই মেলা ঘুরে দেখা গেছে, হাতে গোনা বড় কয়েকটি স্টল নিজ দায়িত্বে এমন প্রস্তুতি নিয়ে থাকলেও ছোট ও মাঝারি স্টলগুলোর ভরসা টিন আর পলিথিনের ওপর। গত তিনদিন আগে বৃষ্টির সম্ভাবনায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে অনেক প্রকাশনী ও স্টল মালিকদের। কেউ কেউ সাধ্যমতো ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও ঝড়-বৃষ্টির মতো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অনেকেরই এখন পর্যন্ত নেই কোনো প্রস্তুতি।