এই গ্রন্থের প্রতিটা পাতাই ভেজা
সবুজ ঘাসের ওপর জমাট বেঁধে আছে রক্ত! কারো রক্ত আবার মিশে গেছে বেলাই বিলের স্বচ্ছ্ব জলে। এখানে সেখানে পড়ে আছে শেয়াল কুকুরে খাওয়া অসংখ্য বীভৎস শরীর ! দাউ দাউ পুড়ছে বাড়ি-ঘর। বাতাসে কেবলই লাশের গন্ধ ! ১৯৭১ সাল। ১৪ মে। শুক্রবার। দুপুর ১টার মিনিট দশেক আগে হঠাৎ করেই পাকিস্তানী বাহিনী আক্রমণ করে বাড়িয়া এলাকায়। মিশন মাত্র ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় হিন্দু অধ্যুষিত গাজীপুরের বাড়িয়া। তিন দিকে বেলাই বিলে বেষ্টিত বাড়িয়ায় নির্বিচারে চালানো হয় গণহত্যা। বিল সাঁতরে কিংবা নৌকায় চড়ে আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন শত শত নারী পুরুষ আর শিশু । পাকিস্তানী নরপশুদের হত্যা শিকারের উল্লাসের নিচে শহীদ হন অন্তত ২শ মানুষ। এঁদের কারোই ঠাঁই হয়নি স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রে।
সেইসব শহীদের নামে তালিকা ধরে প্রায় ৩ বছর অনুসন্ধানের পর কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক ইজাজ আহমেদ লিখেছেন ‘১৯৭১: বিধ্বস্ত বাড়িয়ায় শুধুই লাশ এবং’গ্রন্থটি। এই গ্রন্থের প্রতিটা পাতাই ভেজা ! প্রতিটা শব্দেই যেন লেগে আছে ছোপ ছোপ রক্ত ! প্রতিটা বাক্যই সাক্ষ্য দিচ্ছে- বইটা যেন একাত্তরের বধ্যভূমি। বিধ্বস্ত বাড়িয়ায় শহীদ হওয়া সেই সকল নারী পুরুষ ও শিশুদের নানা অজানা অধ্যায় ও বীভৎস সেই ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা উঠে এসেছে গ্রন্থটিতে।
বইয়ের ভূমিকায় বরেণ্য কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন লিখেছেন , বইটি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত ইজাজ আহমেদ মিলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিশেষ করে উল্লেখ্যযোগ্য মনে হয়েছে একটি এলাকাকে ঘিরে তার নানামুখী বর্ণনা একদিকে হৃদয় বিদারক,অন্যদিকে সাহসী চেতনায় দীপ্ত। স্বাধীনতা অর্জনের সময়ে পাকিস্তানি হানাদারদের গণহত্যার বিবরণের পাশাপাশি বাঙালির যুদ্ধে যাওয়ার অনুপ্রেরণার নানাদিক সুলিখিত ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। বাংলাদেশের একটি এলাকার বর্ণনা হলেও, দেশের প্রতিটি এলাকার এমন চিত্র নিয়েই আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
ইজাজ মিলনের লেখা ১৬০ পৃষ্ঠার এই বইটি প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ ( ২১ নাম্বার প্যাভিলিয়ন)। প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। উল্লেখ্য, দৈনিক সমকাল পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি ইজাজ আহমেদ মিলন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার জন্য এর আগে পেয়েছেন বজলুর রহমান স্মৃতি পদক। কাব্যগ্রন্থের জন্য লাভ করেছেন ‘সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ’ ও আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘বেদনা আমার জন্ম সহোদর’ গ্রন্তের জন্য দাগ সাহিত্য পুরস্কার।