শৈশবে সমবয়সীদের অবজ্ঞা কবি বানিয়েছে আজকের নীহার লিখনকে

  • শাহ মখদুম, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নীহার লিখন

নীহার লিখন

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এ বৈভব থেকে প্রকাশিত হয়েছে নীহার লিখনের চতুর্থ কবিতার বই ‘পিনাকী ধনুক’। মেলা চলাকালীন প্রকাশিতব্য তাঁর পঞ্চম কবিতার বই ‘মনসিজ বাগানের শ্বেত’ আসছে কবি মানস থেকে।

নীহার লিখনের জন্য একই বইমেলায় একত্রে দুটি কবিতার বই প্রকাশের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৭ সালের বইমেলায়ও তাঁর দুটি কবিতার বই ‘ব্রহ্মপুত্র’ ও ‘আমি আপেল নীরবতা বুঝি’ যথাক্রমে মেঘ ও প্রিন্ট পোয়েট্রি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

আগেও একই বইমেলায় একত্রে দুটি কবিতার বই বেরিয়েছিল। এবারও তাই। এর পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে কি?—জানতে চাইলে বার্তা২৪.কমকে নীহার লিখন বলেন, “আসলে এর পেছনে তেমন বিশেষ কোনো কারণ নেই। আমি চেষ্টা করি প্রত্যেকটা বইয়েই একটু স্পেসেফিক টোন বা মেজাজে কবিতাগুলোকে রাখতে।”

তিনি বলেন, “২০১৭ সালের বইমেলায় আমার দুটো বই এসেছিল—সেবার ‘ব্রহ্মপুত্র’ নামে যে বইটি বেরিয়েছিল সেখানে আমি কাজ করতে চেয়েছিলাম একটু মহাকাব্যিক ফ্লেভারে। বিষয় বা মিথিক্যাল গ্রাউন্ড আমার সেই চিন্তাটিকে উস্কেই দিয়েছিল বলে আমি মনে করি।

‘ব্রহ্মপুত্র’ বইটির পরে আমি সেই ঘোরটিকে ওখানেই শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। বস্তুত আমি ভাবি যে, একটি বই যতটুকু সম্ভব তার স্বাতন্ত্র্য মেজাজ ও পোয়েটিকসকে রিপ্রেজেন্ট করবে, এবং সেই সাথে কবির ক্রিয়াশীলতা—সেটা টেক্সট বা ন্যারেশন, বা আঙ্গিক, মোদ্দা কথা সবকিছুকেই।

প্রকাশিত ও প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ

আমি আসলে একটা প্রজেক্টের মতো করি ভাবি বিষয়টাকে, তাই একই মেলায় দুটো বা তিনটে বই বা আরো বেশি বই আসাটাকে আমি ভিন্ন ভিন্ন প্রজেকশনের বাস্তবায়ন হিসেবেই দেখি। এখন এক্ষেত্রে বিবেচনার বিষয়টা থাকতে হবে, বা সেই মুন্সিয়ানাটাও যে, নামের ভিন্নতাতেই শুধু দুটো ভিন্ন বই হয়ে যাচ্ছে না তো আবার!”

২০১৮ সালে মেঘ থেকে প্রকাশিত হয়েছিল নীহার লিখনের তৃতীয় কবিতার বই ‘ব্ল্যাকহোল ও পড়শি বাড়ি’।

কিভাবে কবে থেকে কবিতা লিখতে শুরু করলেন?
নীহার লিখন: ঠিক কবে থেকে কবিতা লেখার শুরু সেটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারব না, তবে নিশ্চিত অর্থে যেটা আমার মনে হয় আমার শৈশব ঠিক অতোটা সহজ আর স্বাভাবিক ছিল না। স্কুল লাইফের সেই দিনগুলোতে যদ্দূর মনে পড়ে আমি শারীরিকভাবে ছোটখাটো গড়নের ছিলাম বলেই হয়তো আমার সহপাঠীরা আমাকে তাদের থেকে একরকম জুনিয়র ট্রিট করত, এবং নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে সিংগল ইস্যু হিসেবে একরকম লোনলিনেসের ভিতর দিয়েই আমাকে বড় হতে হয়েছে।

আমার মনে আছে তখন আমি ডাইভার্স এইজ গ্রুপের লোকের সাথে দলছুট চলতাম, এবং মাঠে ঘাটে ঘুরতাম। আমার সেই এইজ গ্রুপের সব প্রত্যাখ্যানগুলোর বিকল্প হতো শিশুর হিজিবিজি খেলায় শামিল, নয়তো বৃদ্ধের কাছে সাবেকি গপ্প শোনার বিষয়। এর বাইরে এলাকার কামারের দোকান, বা একটু দূরের প্রিয় লেটার প্রেসের শব্দ আর আর শিশার অক্ষর কুড়ানো, বা অন্যদের বিনোদনে প্যাসিভ থাকাগুলো—ব্যাস এগুলোর মধ্যে আমি আমার সাথেই বিভিন্ন কাল্পনিক সত্তায় ভিন্ন ভিন্ন কথা বলার অভ্যাস করে সময় পার করা, হয়তো এই কথাগুলোর মধ্যে দিয়েই কবিতা লেখা শুরু হয়ে গেছিল সাবকনশাসে, আর সেটাই বহন করি আজও।

এই বইমেলায় প্রকাশিত বই দুটির একটির সাথে অন্যটির ভিন্নতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নীহার বলেন, “পিনাকী ধনুক বইটিতে থাকছে—অনেকটাই ন্যারেটিভ, ওপেন এন্ডেড ফ্রি ভার্সের আধিক্য, এবং কনটেম্পোরারি সেন্সুয়ালিটির বয়ানকে প্রাধান্য দিয়েছি আমি। আর মনসিজ বাগানের শ্বেত বইটিতে আমি ভারতীয় পুরাণকে নিয়ে খুব ডেডিকেটেডলি কাজ করেছি।”

এবার কি বইমেলায় আসছেন? আমরা জানি আপনি ঢাকার বাইরে থাকেন অথচ আপনার কবিবন্ধুদের অনেকে এবং ভক্তপাঠকদেরও বড় একটা অংশ ঢাকায় থাকে। তাছাড়া আপনার বই বের হচ্ছে।
নীহার লিখন: হ্যাঁ, আমি আসব, না আসলেও প্রাণটা কিন্তু পড়েই থাকে বইমেলায়। আর যদ্দূর আমার মনে হয় ঢাকায় আমার যে বন্ধু-ভক্তরা থাকেন, থাকছেন বা আছেন, শুধু মাত্র দেশের অন্যান্য শহর বা অঞ্চলগুলোর প্রয়োজনীয় বিকাশের অভাবেই। তাই বলি, অন্তত বাংলা একাডেমি যদি একটা কিছু ভেবে মেলাটিকে তার মূল ক্যাম্পাসের পাশাপাশি একযোগে দেশের আরো কিছু জায়গায় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তাহলে মন্দ হয় না কিন্তু।

ইতোমধ্যে প্রকাশিত তাঁর চতুর্থ কবিতার বইটি মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে বৈভবের ৭১৮ নং স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। বিনিময় মূল্য ২৮০ টাকা। প্রকাশিতব্য পঞ্চম বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী নিখিলেস রায়। এটি পাওয়া যাবে কবি মানসের ৫৬৮ নং স্টলে।