সাক্ষাৎকারে এনামুল করিম নির্ঝর
“উপযোগিতা যদি হয় তবেই সেটা নান্দনিক।”
এনামুল করিম নির্ঝরের জন্ম ২৩ নভেম্বর ১৯৬২ সালে রাজশাহীতে। তিনি একাধারে স্থপতি, চলচ্চিত্র পরিচালক, আলোচিত্রী, লেখক, সুরকার ও গীতিকার। তাঁর পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আহা’ পেয়েছে শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ চারটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। নির্ঝর স্থাপত্যকলায়ও কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন দেশে বিদেশে অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার। ২০১৯ সালের এবং এ বছরও বিনা পারিশ্রমিকে অমর একুশে গ্রন্থমেলার নকশা করে দিয়েছেন তিনি। যা একই সাথে নান্দনিক এবং ক্রেতা-দর্শনার্থীবান্ধব হওয়ায় ইতোমধ্যেই বেশ প্রশংসিত।
বইমেলা উপলক্ষে বার্তা২৪-এর বিশেষ আয়োজন বইপ্রহরে কবি ও সাংবাদিক শিমুল সালাহ্উদ্দিনের মুখোমুখি হয়েছিলেন এনামুল করিম নির্ঝর। কথা বলেছেন বইমেলার নকশা, তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও প্রকাশিতব্য একটি বই নিয়ে। মেলার বিন্যাসে সীমাবদ্ধতা ও এর থেকে উত্তরণের জন্য তাঁর পরিকল্পনার বিষটিও উঠে এসেছে আলাপচারিতায়।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাংলাদেশের মাসব্যাপী চলা একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই এ মেলায় প্রচুর জনসমাগম ঘটে। বাংলা একাডেমির পক্ষে এই বিশাল জনসমাগমকে একটি নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে এনে সেবা প্রদান করা প্রায়শই অসম্ভব হয়ে পড়ে। এনিয়ে প্রতিবছরই লেখক-পাঠক-প্রকাশক-দর্শনার্থীদের অভিযোগের অন্ত ছিল না। গত বছর থেকে অপরিকল্পনার বেড়ি ভেঙে বইমেলায় একটি শৈল্পিক পরিকল্পনার ছাপ নিয়ে এসেছেন এনামুল করিম নির্ঝর।
এবারের বইমেলার বিন্যাসে নতুন কী যুক্ত হয়েছে?
জবাবে নির্ঝর বললেন, “জায়গাটা বড় হয়েছে, জ্যামিতিকভাবে আরো বেশি শৃঙ্খলার মধ্যে আমরা আনতে পেরেছি, যেটা গতবার ছিল না। বিন্যাসের বিষয়ে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল—কোন জায়গাটুকু পাব, সেটা আমরা জেনেছি দেরি করে, মেলার সামনে যে রাস্তার উন্নয়ন প্রকল্প ছিল সেটা মাথায় রেখে করা হয়েছে।”
অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ছেড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বর্ধিত হবার কয়েক বছর কেটে গেছে। গত বছর থেকে বইমেলার নকশা করছেন গুণী নির্মাতা ও স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় মেলার আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে বহুদিনের চর্চিত অভিযোগ কিছুটা হলেও স্তিমিত। এ বছরও অমর একুশে গ্রন্থমেলার নকশাকার এনামুল করিম নির্ঝর। কিভাবে বিন্যাস্ত হলো এবারের বইমেলা? স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে, কোনো প্রকার অর্থ না নিয়ে বইমেলার নকশা করে দেওয়া এই স্থপতি কথা বলেছেন বইমেলা নিয়ে বার্তার বিশেষ আয়োজন ‘বইপ্রহর’-এ
এবার বইমেলা স্বাধীনতা স্তম্ভের দুপাশে হচ্ছে। এর ফলে মেলার একটি প্রতিবম্ব তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “কনসেপ্টের ব্যাপারটা এমন হওয়া উচিত যে, পার্কের জায়গা দখল করে মেলা হয় না, পার্কের মধ্যে মেলা হয়।” এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রথম ধাপে এর খানিকটা বাস্তবায়িত হলেও, সমস্যাগুলো হুট করে মিটে যাওয়ার মতো নয়।
তাঁর মতে নান্দনিকতার অর্থ দেখার সৌন্দর্যে নয়। সেটা তাঁর কাছে খুবই পোশাকি এবং স্বল্প দৃষ্টিভঙ্গির একটি বিষয়। নির্ঝরের ভাষায়—“উপযোগিতা যদি হয় তবেই সেটা নান্দনিক।”
তিনি জানান, বইমেলার ইতিহাস এবং এর অন্তর্গত শক্তি মেলার সামগ্রিক কাঠামোতে প্রভাব ফেলেছে। বললেন, “আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, এর সাথে অনেকগুলো ইতিহাস আছে, বিশাল বড় একটা আকর্ষণের জায়গাছে আছে এখানে সেটি স্বাধীনতা স্তম্ভ—সেই স্তম্ভের সাথে যদি স্পিরিটটা এড না করতে পারি, তবে কিসের মেলা কিসের কি।”
বইমেলার সামগ্রিক নকশাকরণে নিজেসহ পুরো অফিসের স্বেচ্ছাশ্রম প্রসঙ্গে নির্ঝর বলেছেন, “আমার অফিসের সবাই এখানে জড়িত, আরো দুটো আর্কিটেক্ট প্রতিষ্ঠান—এরাও কাজ করছে। সেই সুবাদে আমার আগের যা যা চর্চা ছিল যেমন গ্রাফিক ডিজাইন, আর্কিটেকচারাল ডিজাইন, ভাষা নিয়ে কাজ, এই সবকিছুকে মিলিয়ে একটা সমন্বিত মাত্রায় নিয়ে আসতে পারছি।” স্বেচ্ছাশ্রমের সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন দেশের জন্য কিছু করার উন্নত মনোভাব।
বাংলা একাডেমি যদি সুযোগ দেয়, আগামী বছর অর্থাৎ স্বাধীনতার ৫০বছর পূর্তি পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বইমেলার নকশা করতে চান এনামুল করিম নির্ঝর।