শিশুতোষ বইয়ের মূল্য বেশি, ক্রেতা অসন্তোষ
বইমেলা প্রাঙ্গন থেকে: অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় চলছে শিশুপ্রহর। সকাল থেকে শিশু-কিশোর ও অভিভাবকগণের পদচারণায় মুখরিত শিশু চত্বর। এই চত্বরে আগত পাঠক ও দর্শনার্থীরা বই কিনতে ব্যস্ত সময় পার করছে। শিশুরাও তাদের পছন্দমত বই কিনছে। এর মধ্যে কেউ কেউ পছন্দের বই হাতে পেয়ে উল্লসিত, আবার কেউ কেউ পছন্দের বইটা না পেয়ে মন খারাপ করে মেলা চত্বর ছেড়েও যাচ্ছেন।
শিশু চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, স্টলগুলোতে রাখা অধিকাংশ বইয়ের গায়ে যে মূল্য লেখা সে অনুযায়ী স্বল্প ও নিম্ন আয়ের পরিবারের একাডেমিক পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে সন্তানের আলাদা পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তোলার আর্থিক সামর্থ্য নেই। এতে করে বইমেলা ও শিশু চত্বর দুই'ই তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে বলেও মনে করেন সাধারণ ক্রেতা ও পাঠক সমাজ।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শিশু চত্বরে কথা হয় সন্তানদের নিয়ে বইমেলায় আসা আবুল বাশির আহমেদের সাথে।
তিনি পেশায় একজন দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারী। তিন সন্তানের মধ্যে দুই সন্তানের জন্য বই কিনতে এসে সন্তানদের চাহিদা, বইয়ের দাম আর নিজের সামর্থ্যের সাথে সমন্বয় করে উঠতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, কোন রকম পড়ার মতো মানসন্মত একটি বইয়ের দাম সর্বনিম্ন ৮৫-৯০ টাকা। সেগুলো আবার বাচ্চাদের পছন্দ না। আমার আট বছরের ছোট ছেলের জন্য পাঁচটি বই কিনতে হয়েছে প্রায় ৯০০ টাকায়। বড় মেয়ের জন্য বই কিনেছি চারটি, তার আবদারে আরও একটি কিশোর উপন্যাস ছিল। কিন্তু বইটি পরে কিনে দিবো বলেছি। কিন্তু মেয়ে আমার অভিমান করেছে।আসলে সন্তানরা তো এই বয়সে বাবা-মায়ের সামর্থ্যের বিষয়টা বোঝে না।
ভাগিনা-ভাগিনীদের বই কিনে দিতে মেলায় নিয়ে এসেছেন আব্দুল্লাহ মাহফুজ অভি। বইয়ের দাম নিয়ে তিনি বলেন, বইমেলায় শিশু চত্বর ঘুরে মনে হলো, চাইলেও কোন নিম্ন আয়ের পিতা-মাতা তার সন্তানকে পাঠ্য বইয়ের বাইরে পাঠ অভ্যাস গড়ে তুলতে পারবেন না। তাদের এ অভ্যাস গড়ে তুলতে হলে নিয়মিত বইমুখী রাখতে হবে। এতে যে খরচ-এই বাজারে তা মেটানো সহজ কথা না...।
সন্তান নিয়ে বই কিনতে আরেক অভিভাবক জানান, তুলনামূলকভাবে শিশুদের বইয়ের দাম অনেক বেশি। সবার পক্ষে কেনা সম্ভব না। তার মানে দাঁড়ালো, শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণে একটা শিশুকে বই থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। আমাদের উচিত কি করে বইয়ের দাম কমিয়ে শিশুদের হাতে পৌঁছানো যায় সেদিকে মনোযোগ দেয়া।
কথা হয় শিশু চত্বরে শৈশব প্রকাশনীর স্টলের সার্বিক দায়িত্বে থাকা মুক্তার সাথে।
তিনি জানান, বইয়ের দাম এত বেশি কেন এমন প্রশ্নের সম্মুখীন প্রতিদিনই হতে হয়। পাঠক চাহিদা ও বইয়ের গুণগত মান ঠিক রেখে সবকিছু করতে গেলে দামটা একটু বেশি পড়ে। যেহেতু শিশু ও কিশোরদের বইগুলো সবদিক দিয়েই আকর্ষণীয় করতে হয় সে কারণে খরচটা একটু বেশি হয়। ফলে দামও বেশি।
তিনি আরও জানান, নিয়মিত পাঠকের পাশাপাশি অনিয়মিত পাঠকই বেশি আসে মেলায়। সারা বছর বই না কিনে বছরে একবার দুইবার বই কিনতে আসলে বইয়ের দাম একটু বেশি মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ছড়াকার ও শিশু সাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন বার্তা২৪.কম বলেন, এটা সত্য এবং দুঃখজনক ছোটদের বইয়ের দাম অনেক বেশি। এ কারণে নিম্ন ও অল্প আয়ের মানুষ বইগুলো কিনতে পারছে না। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বেই ছোটদের বইয়ের উৎপাদন খরচ বেশি। ছোটদের বইয়ের কাগজ, চার রঙে আঁকা বইয়ের পাতা এবং বাঁধাই অনেক মজবুত করতে হয় তাই বইগুলোর দাম বেশি। ছোটদের বই সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।
শিশুতোষ প্রকাশনা ঝিঙেফুল প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী ও প্রকাশক গিয়াসউদ্দীন খান বার্তা২৪.কম বলেন, অন্যান্য উন্নত সবগুলো দেশেই প্রকাশনাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে শিশুতোষ প্রকাশনাগুলোর জন্য যে কাগজগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো তারা পায় সরকারি দামে। এতে খরচ অনেক কমে যায়। আমাদের দেশেও যদি এই ব্যবস্থা চালু হলে শিশুতোষ বইগুলোর উচ্চ মূল্য কমানো সম্ভব হবে। তবে শিশু ও কিশোরদের চাহিদা অনুযায়ী বই করতে গেলে অনেক বাড়তি খরচ আছে। সরকার যদি কোন ব্যবস্থা নেয় তাহলে সব শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে এসব বই পৌঁছানো যাবে।
সব মিলিয়ে আর এক সপ্তাহ আছে অমর একুশে গ্রন্থ মেলা। সেই হিসেবে শেষ সময়ের বেচা বিক্রি চলছে শিশু চত্বরের স্টলগুলোতে। তার ওপর আবার ছুটির দিন থাকায় পাঠক ও ক্রেতা সমাগম অনেক বেশি আজ। এখন পর্যন্ত শিশুতোষ স্টলগুলোতে বেশি বিক্রি হচ্ছে ভূত ,বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনি ও কমিক্সের মতো বইগুলো। বই বিক্রি নিয়েও সন্তুষ্ট বিক্রেতা ও প্রকাশকরা।