মনের ঘূর্ণি থেকে
গল্পের ওপারে মৃত্যুর হাতছানি
জন্ম ১৮৯২ সালে মৃত্যু ১৯২৭ সালে মোট এই পঁয়ত্রিশ বছরের জীবনে লেখা ছাড়া তার মুহূর্তরা শূন্যতায় ভরা—জাপানে যাকে ছোটগল্পের জনক ভাবা হয় তাঁর ইতিহাস অদ্ভুত হতাশায় ভরা অথচ একের পর এক অপূর্ব জীবনরহস্যে ভরা গল্পে পরিপূর্ণ তিনি রিউনোসুকে আকুতাগাওয়া। টোকিওতে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পরিবারের তৃতীয় সন্তান বাড়ির একটিমাত্র ছেলে। শৈশবের একটা মুহূর্তের তথ্য তাঁকে মানসিক ভারসাম্যের আরো বিচ্যুতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তাঁর জন্মের পরেই তাঁর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে ফলে তাঁর এক মামা তাঁকে দত্তক নেয় তাঁর উপাধিও এই মামার বাড়ির সূত্রেই পাওয়া। জাপানে সাহিত্যকর্মের একটি বিশেষ সম্মান আকুতাগাওয়া পুরস্কার তাকে স্মরণ করে দেওয়া হয়। তাঁর বিশিষ্ট বন্ধু কান কিকুচি তাঁকে মনে করে ১৯৩৫ সালে এই পুরস্কারের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
শেষ জীবনে চূড়ান্ত হ্যালুসিনেশন তাঁকে মৃত্যুর কাছে আরো বেশি নিয়ে যাচ্ছিল এবং অদ্ভুতভাবে এটা যেন তার ধারণার অংশ হয়ে এসেছিল তাঁর মায়ের কারণেই হয়তো তাঁর এই বিভ্রম। ১৯২৭ তিনি আরো একজনের সঙ্গে যৌথভাবে মৃত্যুকে স্বেচ্ছায় কাছে টানতে চেয়েছিলেন। এইসময় আরেক বিশিষ্ট কবি সাইতো মোকিচির সংস্পর্শ পেয়েছিলেন যিনি মনোবিদ ছিলেন বলেও জানা যায় এবং এও শোনা যায় যে বারবিটলের অতিরিক্ত সেবনে তিনি নিজেকে শেষ করেন তা মোকিচির দেওয়া। বলা হয় জীবনের শেষমুহূর্তে তাঁর লেখাগুলো আসলে তাঁর নিজের জীবনের ঘনীভূত সময়কে কেন্দ্র করেই। এই ক্ষুদ্র জীবনেই তিনি দেড়শোর বেশি জনপ্রিয় ছোট গল্প লিখেছিলেন। ১৯৫০ সালে আকিরা কুরোসাওয়ার তার গল্প নিয়ে রশোমন নামে সেই বিখ্যাত ছবিটি তৈরি করেছিলেন। তাঁর হাইকুগুলি অদ্ভুতভাবে জনমানসে প্রভাব ফেলেছিল।
আরো পড়ুন ➥ আত্মঘাতের আলো কিম্বা অন্ধকার
তাঁর প্রথম সম্পর্ক অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিল পরবর্তীতে অবশ্য বিয়ে করে স্থিতি পেতে চেয়েছিলেন কিন্তু তা তাঁকে কতটা সম্পৃক্ত করতে পেরেছিল তা তাঁর জীবন থেকে সন্দেহের উদ্রেক করে। সেই সময়ের ডাজাইয়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তাঁর মৃত্যুর দিকনির্দেশ করে বলে অনেকের মনে হয়। ডাজাই নিজেও মৃত্যুর জন্য বারবার চেষ্টা করেছিলেন। ডাজাইয়ের মৃত্যুর ৬ দিন পর তাঁর লাশ উদ্ধার হয়েছিল। যখন তার পালিতা মায়ের কাছে আকুতাগাওয়া জেনেছিলেন তাঁর জন্মের পরে তাঁর মা অসুস্থ হয় তার পর থেকেই তাঁকে ঘিরে ধরেছিল হতাশার সব কঠিন কঠিন দিক—জীবনের মুহূর্তগুলোকে উজাড় করে কলমে লিখতে শুরু করেছিলেন ঠিকই কিন্তু কোথাও চূড়ান্ত অসম্পূর্ণতা মোকিচির দর্শন, নিজস্ব বিপরীত ভাবনায় দাঁড়াতে পারছিলেন না। হয়তো এই জটিল মুহূর্তগুলোই তার লেখনীর আলোকিত উপাদান। তাই তিনি লিখেছিলেন “A MAN SOMETIMES DEVOTES HIS LIFE TO A DESIRE WHICH HE IS NOT SURE WILL EVER BE FULFILLED.THOSE WHO LAUGH AT THIS FOLLY ARE, AFTER ALL, NO MORE THAN MERE SPECTATORS OF LIFE”