রিচার্ড হেন্ডরিকের কবিতা : লকডাউন
কবি পরিচিতি ও প্রেক্ষাপট
আয়ারল্যান্ডের ফ্র্যানসিসকান ধর্মযাজক ব্রাদার রিচার্ড হেন্ডরিক দুনিয়া জুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ-জনিত কারণে লক্ষ জনতার লকডাউন হওয়ার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি কবিতাটি রচনা করেছেন। কবি হেন্ডরিক মার্চ মাসের তেরো তারিখে কবিতাটি শেয়ার করেন ফেসবুকের পাতায়। সাথে সাথে তা ভাইরাল হয়ে প্রচারিত হতে থাকে। ইন্ট্যারন্যাট সূত্র থেকে কবিতাটির ভাবতর্জমা উপস্থাপিত হচ্ছে।
হ্যাঁ, এটা সত্যি যে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক চতুর্দিকে
হ্যাঁ, বিচ্ছিন্ন আমরা আজ
দোকানের তাবৎ কিছু খরিদ করতে গিয়ে
কোনো পণ্য যদি না পাই—তার পেনিক হয়ে দাঁড়াচ্ছে বন্য
রোগের প্রাদুর্ভাব প্রকট হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে
হ্যাঁ, এটা সত্যি—সম্ভাব্য মৃত্যু নিয়ে কারো সন্দেহ নেই কোনো।
কিন্তু, সংবাদপত্রে চাউর হয়েছে—
অনেক বছর পর চীনদেশের উহানে
ফের শোনা যাচ্ছে পাখ-পাখালির কাকলি
সপ্তা কয়েক নিঝুম নিস্তব্ধতার পর
আকাশ থেকে তিরোহিত হয়েছে ধোঁয়ার কালো রেখা
পরিচ্ছন্ন দিগন্তে ঝলসাচ্ছে নির্মল নিলাদ্রী।
আসাসির উপদ্রুত জনপদে
আমজনতা একে অপরের সাক্ষাতে গেয়ে উঠছে সংগীত
সরণীর চারদিক ঘেরা ঘরবাড়িতে খুলেছে জানালা
যাদের প্রহর কেটেছে নিদারুণ উদ্বেগে এ কয়েকদিন
সম্পূর্ণ একাকী
তাদের ঘিরে দাঁড়িয়েছে পরিবারের সদস্যরা ফের।
শোনা যাচ্ছে—পশ্চিম আয়ারল্যান্ডের একটি হোটেল
ফ্রি খাবার বিলি করছে ঘুরে ঘুরে বাড়ি বাড়ি।
আজ আমার জানাশোনা একটি তরুণী
তার টেলিফোন নাম্বার দেয়া ফ্লায়ার
সাঁটছে মহল্লার সর্বত্র
যাতে পাড়ার নিঃসঙ্গ বয়োবৃদ্ধরা চাইলে কথা বলতে পারে
তার সঙ্গে।
আজ পৃথিবীর সর্বত্র—গির্জা, সিনেগগ, মসজিদ ও মন্দিরে
তৈরি হচ্ছে গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়স্থল
উদ্বিগ্ন ও রোগগ্রস্তদের জন্য ডাফ্ট হচ্ছে গেট ওয়েল সুন ম্যাসেজ।
পৃথিবী জুড়ে সর্বত্র—মানুষজনের দিনযাপনের গতি হচ্ছে মন্থর
প্রতিফলনে নিমগ্ন হচ্ছে তারা
মানুষ তাকাচ্ছে তাদের প্রতিবেশীদের দিকে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে
সুপ্তি থেকে জেগে ওঠে মানুষ আবাহন করছে নতুন বাস্তবতা
ভাবছে—আসলে আমাদের সামর্থ কতটুকু
তর্পণ করছে—পরিস্থিতির ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ
আসলে কত দুর্বল।
সংসারের ক্রান্তি-লগ্নে সবচেয়ে জরুরি যা
তা হচ্ছে—ভালোবাসা
সুতরাং আমরা যেন প্রার্থনায় স্মরণ করি
হ্যাঁ, আতঙ্ক চরাচরের সর্বত্র
কিন্তু ঘৃণার তো কোনো প্রয়োজন নেই
হ্যাঁ, বিচ্ছিন্নতা সর্বত্র
কিন্তু কাটাতে হবে দিনরাত্রি সম্পূর্ণ একাকী নিরালোকে নিঃসঙ্গ
এমন তো কোনো কথা নেই
হ্যাঁ, হাটে বাজারে কেনাকাটার প্রচণ্ড পেনিক
কিন্তু স্বার্থপর সংকীর্ণমনা হওয়ার তো কোনো প্রয়োজন নেই।
হ্যাঁ, এটা সত্যি যে—রোগজীবাণুর সংক্রমণ
তুমুল মাত্রায় ভয়াবহ
কিন্তু আমাদের আত্মাকে
রোগগ্রস্ত করে তোলার তো কোনো প্রয়োজন নেই।
হ্যাঁ, মৃত্যু সম্ভাবনা নিয়ে নেই কারো কোনো সন্দেহ
কিন্তু মনে রাখা জরুরি—ভালোবাসার পুনর্জন্ম চিরায়ত
সুতরাং সুপ্তি ভেঙ্গে জেগে ওঠো—
নিজের জন্য নির্বাচন করো নিজস্ব পদ্ধতি
কিভাবে বেঁচে থাকতে চাও তুমি।
আর আজ, এ মুহূর্তে—নিঃশ্বাস নাও প্রাণভরে
কান পেতে শোনো
প্রচণ্ড পেনিকের তীব্র কোলাহল ছাপিয়ে
পাখিরা কাকলিতে মেতেছে ফের
আকাশ—নির্জন-নীলে পরিচ্ছন্ন হচ্ছে আবার
নিসর্গের নিলয়ে শোনা যাচ্ছে বসন্তের সাবুজিক নির্ঘোষ।
আর আমাদের অন্তর চিরকাল আচ্ছন্ন থাকবে
ভালোবাসার জোৎস্না-চন্দনে
আত্মার দখিনা বাতায়ন খুলে রাখো আবার
হয়তো তোমার কণ্ঠস্বর পৌঁছবে না
নির্জন ময়দানের প্রান্তিকে
কিন্তু প্রাণ খুলে ফের গাও প্রবল সংগীত।