একখানা স্বাদহীন দিবসের তরজমা বটে



এনামুল করিম নির্ঝর
লেখকের নিজস্ব আলোকচিত্র অবলম্বনে

লেখকের নিজস্ব আলোকচিত্র অবলম্বনে

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র বেগে ছুটে আসছে গজব!

গুডজব গুডজব বলে তখন হাততালি দিচ্ছে প্রকৃতি!

কৃতি পাগলেরা তবু কিছুতেই বোঝে না কোত্থেকে আসে তা; কেনইবা কী এমন কারণ তার!

চোখ দুটো ডান হাতের পিঠে ডলতে ডলতে আসেন পর্যবেক্ষক। তাঁর উঁকি দেওয়া অভ্যাস বেহিসেবী বাম হাত, কাৎ হয় রক্ষাকারীর চমকে দেওয়া ধমকে। তার মুঠোর ভেতর জাপটে ধরে রাখা ইবলিশ হ্রস্ব উ-কার! নড়ন-চড়ন বুঝে উড়তে উড়তে ঠিকঠাক বসে যায় গ অক্ষরের পুচ্ছদেশ বেশে!

ব্যাস, শুরু হয় খেলা! গজব গুজব হয়ে ডানা মেলে হুহু ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় বিস্তৃর্ণ তল্লাটে । খাটে বসে থাকা পক্ষাঘতে’র ঘানিটানা যে অর্বাচীন ছায়াব্যক্তি, সে এবার পর্যবেক্ষকের আদলটা বিনাশর্তে ধার নেয় এবং শুরু করে হাঁক-ডাক হৈ হল্লা। কল্লা বাড়িয়ে প্রতিবেশি মজমা নেয় নিচ্ছে বটে, তবে আমল দেয় না তাপে!

ব্যক্তি ডাকছে তার গিন্নীকে, কৈ গো কৈ গো কৈ গো কৈ গো!

স্বাধীন ব্যাংক এবং পরাধীন মগজ সঞ্চয় প্রকল্পের প্রীতি আয়োজনে খিঁচুড়ি উৎসব আজ! আমন্ত্রণ উদ্যোক্তা অউকওআবাচস-অবসরপ্রাপ্ত উন্নয়নকর্মী ও আদর্শবাদী রাজনৈতিক চর্চা সংঘে’র। হঠাৎই বাহারি নিমন্ত্রণপত্রখানা গিন্নী’র ছাপাছাপা শাড়ির মতো মেলে ধরে নিজেকে। ছায়াব্যক্তি ভাবে, তাজ্জব বিষয়! হয় কোনো বিশেষ ঘটনা অথবা কোনো অচেনা টান, খানখান ভাগ্যটা যাবে জোড়াতালি মেরামতে।

বহুবহুদিন পর নিজেকে বিশেষ কেউ ভাবার সামান্য ফুরসৎ পায় ভদ্রলোক...। আসলে এটাই ঘটনা হয়তো, কদিন থেকেই মনে হচ্ছিল, হবে কিছু একটা হবে এবার আলবৎ। তিনি আবার ডাকেন গিন্নীকে, কৈ গো কৈ গো কৈ গো কৈ গো! গোঁয়ার মনটা হুট করে উঠে জ্বলে তার, আগুন আগুন তাপে কাঁপে শরীর সাংসারিক আহলাদে! পাড়ার ঘুম ভাঙ্গা আওয়াজে সাড়া না পেয়ে বেশ গোস্বা গোস্বা কদমে হনহন করে ছুটতে শুরু করেন তিনি।

ভাত বেড়ে কেবল বসা গিন্নী তখন তেড়ে আসে রে রে রে রে করে।

: কানে শোনার মেশিন গিয়েছে পচে, কেনার মুরোদ নাই! খালি দোষ ধরে তেজ দেখাচ্ছো আজ। থামো তুমি, বলো আগে হঠাৎ কে দিল এমন তেল তোমার অবশ শরীরে?

: কেউ না, কেউ না... এএমনি টান

: নিশ্চই আবার দিয়েছো কোনো গুজবে তাহলে

আরে নাহ্, বলে মেলে ধরলেন বাহারি নিমন্ত্রণপত্রখানা তিনি।

: যাই বিশেষ দিবসে যাই কপালটা ঘষে দেখি গিয়ে, দেখি কিছু ঘটে কিনা সাজা ঘিয়ে । বাকি আছে যত দম, আরো যাবে পচে সংকোচে সংকোচে...
: কিন্তু এই বয়সে এমন বেহায়পনা? ছ্যাঁ ছ্যাঁ ছ্যাঁ… এমন ন্যাংটো হয়েই যাচ্ছো তুমি সেথা? অ্যাঁ ?

ব্যক্তি থামলেন, একটু ঘামলেন।

: তাই তো, ছেঁড়া প্যান্টখানা সেলাই করতে দিয়ে বেমালুম ভুলে বসে আছি দেখছি! শার্টটা পরেছি ঠিকই, কিন্তু নীচতলা তো একদম খালি ঘর-বারান্দা হে!

গিন্নী তখনো তাকিয়ে। যা দেখে পাল্টা জোর বেড়ে যায় ব্যক্তির মনের—
সবটাই জোড়াতালি ফালিফালি হাহাকার,
লজ্জা’র ব্যকরণে পড়াশোনা সমাহার!
ঘুরে ফিরে অজুহাত তুমি কে হে সর্দার
সময়ের ন্যাংটামো পরে আছো জামা কার?

: ফিরে তাকানোর সময় নেই আমার একদম। দুনিয়ায় কমবেশি সবই তো উলঙ্গ এখন, সেটা নিয়ে এত ঢং করার আছে! সবাই ন্যাংটা এখন... সবই ন্যাংটা, ন্যাংটো...

বলতে বলতে রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা কাগজ মুঠোয় আঁকড়ে ধরে লজ্জা ঢাকে সে । তারপর কদম চলে সাধারণ মানের চেয়ে একটু বেশি গতিতে। যেন কতদিন নিজেকে নিজের মতো মনে হয়নি তার। সর্বস্ব হারানো মানুষের ভেতরেও যে টিকে থাকা সামান্য আঁচ বেঁচে থাকে প্রচণ্ড উত্তপ্ত হবার আশায়! মনে হয় যেন কেউ তাকে কোনোদিন বোঝয়নি মুক্তি শব্দে’র যুক্তিটা আসলে কী! একটা স্বাদহীন স্বাধীনতার রুটি এপাশ ওপাশ করতেই খরচ হচ্ছে শ্বাস। যা হোক, এবার যাওয়া যাক আমন্ত্রণে...

মাঠে তখন মহাআড়ম্বর! খানিকটা থেঁতলে যাওয়া ঘাসের পিঠে বসে মহাসমরোহে বগল বাজায় আম খাওয়া জনগন। কাঁঠাল কেন জাতীয় ফল এবং রয়েল বেঙ্গল কেন জাতীয় পশু এনিয়ে চলছে চরম কুস্তী বিতর্ক। আশাবাদ ব্র্যন্ডের বাসি পাউরুটির নুয়ে পড়া একেকটা স্লাইস গুঁজে দেওয়া হচ্ছে সকলের পেতে রাখা হাতে। একটা বাচ্চা হাত বাড়িয়েছে দুবার । কেবল কথা বলতে শিখে খিদাটও বেড়েছে খুব তার। আর যায় কোথায়! বিতরণ বাহিনী জ্বলে উঠে হিংস্র জন্তুর মতো। মেজাজ মর্জিতে ঠান্ডা পানি ঢালবেন? কিন্তু পানি কই?

গজব গুজব, গুজব গজব ঢেকুর তুলে চলতি আবহওয়া’র হাতপাখা নাড়েন বিশেষ মহাজন। “তুই আমারে করলি দিওয়ানা” গান গাওয়া গর্ধভটাও হু হু করে বুক ফাঁটা কান্না কেঁদে বলে উঠে, আমরা আসলে ধংসের দারপ্রান্তে! রক্ষা করো মালিক। শালিক সংখ্যা নিয়ে মেতে থাকা তরুণী তখন মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে থাকে। একটা, দুইটা তিনটা...সংখ্যা আসলে কিছুই না। ভাগ্যে মাখন থাকলে এমনিই চকচকে হয়ে যায় সব।

মহাজন হাতপাখা নেড়ে লাথি মারে মাঠের থেঁতলে যাওয়া ঘসে।…নিয়ন্ত্রণ- কন্ট্রোল! ঢোল বাজাও, কিন্তু নিঃশব্দে। খাও, কিন্তু মুখে খাবার-দাবার না দিয়ে। কান্না, রান্না-বান্না, খিদা বা চাহিদা, চলন বলন, মন-মানসিকতা এবং আবেগ বেগের নিয়ন্ত্রণ অতিব জরুরি। চুপটি করে থাকো হে ভাবুক দল, তল থেকে উপর পর্যন্ত যত জিন্দা-মূর্দাছল, জল ফেললে ফেলে দাও। ফাঁকা করো ঘটি বাটি, শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণই হোক পরিপাটি!

এতক্ষণ এলোমেলো দৃশ্য কাঁধে ক্লান্ত ছায়াব্যাক্তি একটু দাঁড়াবেন। পেছন দিকটায় তখন মহড়া চলছে মহামাতব্বরদের! “আসলেই কি আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ” ছায়ব্যক্তি জিজ্ঞাসায় স্বাক্ষী হতে চান মিথ্যে বাস্তবতার। নিয়ন্ত্রণের চাবি, দাবি তোলা ভোলামনে সান্ত্বনা’র মাখন চিবুতে চায় বাদাম ভাজা হয়ে।

স্বচ্ছ হয় ব্যক্তি’র মশকরা শতকরা যত ভাগ। তত রাগ ঢেকে বোঝাই যায়, এই বিশেষ আয়োজনের রুমালটায় নকশা কাটা—হাজার কোটি টাকার বিশেষণ মাত্র।

তিনি তাকালেন ডান থেকে বামে এবং বাম থেকে ডানে। তারপর দিলেন একটা অট্টচিৎকার, ফুটবল কই ফুটবল?

পাশের এক ছাপোষা জনতা ডাবল মশলার পানের পিক্ ফেলে ফিক্ করে হাসে, পাগলটা দেখি ফুটবল আর ক্রিকেটের তফ্যাৎটাই বোঝে না!

: হ... বুইঝ্যা আপনি এক্কেরে আহসান মঞ্জিল কিইন্যা বুড়িগঙ্গার হাওয়া খাইতেসেন এক্কেরে!

ছায়াব্যক্তির চামড়ামোটা অনুভূতির তরমুজ দশা।

দেখে লাল, চেখে লাল। স্বাদ লাগে না ঠোঁটে একটুও! অশ্রাব্য, অকথ্য কোনো কথাই আজকাল লাগে না গায়ে একটুও।

কেবল হাত দু’খানা ক্ষ্যাপা শরীরের পেছন পেছন চুপসে যাওয়া নিতম্ব চুলকায় আর ভাবে, কেন আজ শান্ত স্বভাব অশান্ত পর্বত বেশে নির্বাক আড়মোড়া ভেঙ্গে ডাঙ্গায়, ভাঙ্গায় মোটা অংক নোট চোট খাওয়া অজস্র খুচরো সংখ্যার মতো।

চারপাশে তখন জনস্রোতে ভেসে যাওয়া ঢেউ। মাঠময় হাবাগোবা লোকেরা বসে বসে মুড়ি খায়। ব্যক্তির সুড়সুড়ি লাগে, হাসি পায়। কিন্তু বেরোয় না কিছুই, বরং মন থেকে গলা পর্যন্ত এসে একটা ময়লা ত্যানার মতো কাঁচুমাচু ভাঁজ হয়ে লেপ্টে থাকে শ্বাসে। তাঁর আগ্রহের দুরবিন, ক্ষীণ এক আশাবাদ শলাকা, বলাকা হয়ে মেলে ধরে পাখা।

চারপাশের মুড়িখেকো দর্শকের মাঝখানে বাহারী মঞ্চে শুয়ে বসে কথা কচ্ছেন সুবেশী অতিথিগণ। কথা কচ্ছেন স্বাধীন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহাশয়, স্বাধীন ব্যাংকের অর্থ কী? স্বাধীনভাবে টাকা দিবেন, টাকা নিবেন, টাকা রাখবেন, টাকা নিবেন। একটা স্বাধীন দ্যাশের স্বাধীন ব্যাংক তো এমনই হবার কথা হে, একটা স্বাধীন দ্যাশের স্বাধীন নাগরিকদের এমন চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা দিতে না পারলে সকল শহীদের রক্ত নর্দমার পানিতে ঠাঁই পাবে। শুনেছি আপনারা এটা ওটা কচ্ছেন! শুনেন , ধরেন একটা মাটির কলসে পানি ভরে রাখলেন রাতে বিছানায় যাবার পূর্বে। সকালে উঠে দেখলেন কলস ফাঁকা! হে হে এ তো অতি সাধারণ কাণ্ড। ছাগলও বুঝবে অংক না কষে। মাটির কলস তো ফুটো হবেই, হতেই পারে নাকি? এখন সেইটা নিয়ে ধরেন কিছু মরা ধনেপাতা এইটা-সেইটা কেচ্ছা তো বানাতেই পারে নাকি? গুনা গুনা বুঝেন গুনা, কবিরা গুনা সগিরা গুনা, সব খসে যাবে, কিস্যু থাকবেনা নে। ভাগ্যে’র ওপর কি গরুছাগল চরানো যায়? বলেন...

আরেকজন লিখিত বক্তব্য এনেছিলেন বটে, বার কয়েক চেষ্টাও করলেন চোখে চোখ রেখে ইঙ্গিত করার। আবেগী মনটা হাউমাউ করছে বেশ, এ্যাতগুলো কান একসাথে পাওয়া যায়! কথা তো সবারই আছে কিছু না কিছু। অবশেষে কাগজের ভাঁজটা খুলতেই শালা মাইক হারামজাদা বিগড়ে ক্যাঁও ম্যাঁও ক্যাঁও ম্যাঁও করলো শুরু বিভ্রাটে, তার মধ্যেই চিকন বাঁশির মতো হ্যালো হ্যালো আওয়াজ শোনা যায় ভাঙ্গাচোরা আন্দাজে।

মুড়িখেকো জনগন তখন—স্বাদহীন স্বাদহীন বলে উল্লাশে ভাসে সবাই আশেপাশে।

স্বাধীন ব্যাংকের চেয়ারম্যান বেশ বেপোরোয়া, শোয়া থেকে দাঁড়িয়ে এক কোয়া রসুন খায় চিবিয়ে। হাতের মুঠোয় নিয়ে অণ্ডকোষ জোড়া খানিক খোঁচাখুচি করে হাসে হে হে হে হে করে। বলে, আপনাদের আরো এক প্যাকেট করে মুড়ি দিতে বলব? খাবেন আপনারা?

উল্লাশে মেতে মুড়িখেকো পাবলিক বলে—স্বাধীন, স্বাধীন, স্বাধীন, স্বাধীন...

চেয়ারম্যানের খলখল হাসি দেখে ছায়াব্যক্তি ভাবলেন একটু পেচ্ছাপ করা দরকার। কিন্তু একটু পা চালাতেই আবার উটকো ধাক্কা। তাও আবার সেই ছাপোষা জনতার সাথে।

: আরে আপনাকে তো চেনা চেনা লাগছে ভায়া ।

: হ্যাঁ, সেই তো আপনাকে হতভাগা ক্লাবে দেখেছি তো। আহতভাগা আর নিহতভাগা’র ক্যারাম কম্পিটিশিনে আপনি খেলা না দেখে স্যুপ খাচ্ছিলেন ছুপ ছুপ করে। আমি গিয়ে বসলাম আর আপনি বললেন, আচ্ছা বলুন তো টাকাটা আসলে আমরা কবে কখন পেতে পারি, কোন আন্দাজ? সেদিনও পাশ থেকে একজন ফিসফিস করে বলেছিল, ইনি টাকা হারিয়ে পাগল হয়ে গেছেন পুরোপুরি। আজও আপনাকে তেমন পাগলই মনে হচ্ছে আমার। মনে হচ্ছে সেকারণেই আপনি শোকটা কাটিয়ে উঠেছেন সহজে। ঠিক?

ছায়াব্যক্তি প্রশ্ন শুনে পেছনে তাকালেন, গেলেন পেচ্ছাপের চাপ ভুলে। বিশাল এক মূর্তি দাঁড়িয়ে ভেংচি কাটছে তাকে। তারপাশে যে রঙিন পাতার গাছ, টুকটুকে লাল বর্ণ ফল ধরে আছে তাতে। জনতা চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে ছুটছে সেদিকে । মাইকে চলছে তৎপর চিৎকার—
গুজব গাছের গজব ফল
মনটা করে সমতল
গুজব গাছের গজব ফল
মুছবে এবার চোখের জল
গুজব গাছের গজব ফল
বানায় টাকা হাতের কল
গুজব গাছের গজব ফল
জবর খবর জলদি চল

ততক্ষণে বিনাশর্তে ধার নেওয়া পর্যবেক্ষকের আদলটা ফিরে যেতে শুরু করেছে ঠিক। দেখা যাচ্ছে রাস্তা, ছায়ার পাশে ছায়া। একেকটা রক্তাক্ত সিঁড়ি, বেহায়া সময়ের কবলে পড়ে ধার চাইছে মায়া!

ডান কানে শোনা যাচ্ছে ছাপোষা জনতার বয়ান, ওই যে কোকিলের ভাষা বুঝে ব্যখ্যা দিতে জানত যে প্রকৃত বসন্তের। যার নিঃশ্বাসে ভাসত কবিতা আর বিশ্বাসে প্রেমময় গল্প-আভাস!

: এই লোক কি সেই লোক? আমাদের টাকা পয়সা জমা ছিল যার কাছে?

: টাকা যার কাছে, সেইটা তার! আর শুনেন, এইসব এখন জিগায়েন গুগলরে! ...স্বাদহীনতা মানেই স্বাধীনতা। মানলে মান, নাহলে পাছাটা দে আগায়া...এবং সেটাই আর্থিক সেবা।

বামকানে গিন্নীর ডাক, বেঁচে থাকলে উঠে পড়ো জলদি ।

ভদ্রলোক উঠে পড়েন এবং দ্যাখেন একটা গজব ফল রাখা আছে বিছানার পাশে। টকটকে রং, তাকাতেই এমনভাবে মিষ্টি হেসে ডাকল। কিছুতেই ফেরানো গেল না মনটাকে। হোক স্বাদহীন, দিই একটা কাঁমড়!

কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান



কনক জ্যোতি,  কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান

কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান

  • Font increase
  • Font Decrease

আন্তর্জাতিক কবিতা দিবসে ছায়ানট (কলকাতা) এবং লা কাসা দে লোস পলিগ্লোতাস যৌথভাবে আয়োজন করে একটি কবিতা সন্ধ্যার। অনুষ্ঠানটি হয় কলকাতায় অবস্থিত একটি স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট তাপাস্তে - তে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ছায়ানট (কলকাতা)-এর সভাপতি সোমঋতা মল্লিক এবং পরিকল্পনা করেন  লা কাসা দে লোস পলিগ্লোতাস-এর প্রতিষ্ঠাতা শুভজিৎ রায়।

এই বিশেষ দিনে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করা হয় বাংলা এবং স্প্যানিশে। বিশ্ব কবিতা দিবসে কবিতার ভাষায় এক হয়ে যায় বাংলা এবং স্পেন। এক করলেন কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা এবং স্প্যানিশ দুই ভাষাতে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে এই আয়োজন।

বাংলায় কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করেন সৌভিক শাসমল, তিস্তা দে, দেবলীনা চৌধুরী এবং স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ ও পাঠ করেন শুভজিৎ রায়। অনুষ্ঠানটি দর্শকদের প্রশংসা লাভ করে।

বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষ্যে ছায়ানট (কলকাতা) এবং কৃষ্ণপুর নজরুল চর্চা কেন্দ্র যৌথভাবে আরও একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শরৎচন্দ্র বাসভবনে। প্রায় ৫০ জন কবি এবং বাচিক শিল্পী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম সহ বিভিন্ন কবির কবিতা এই অনুষ্ঠানে শোনা যায়।

;

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;

বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্বে শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ও মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ও কিশোরগঞ্জ নিউজ'র নিয়মিত লেখক।

বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি,শিল্প, সংগীত, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার বহুল কার্যক্রম নিয়ে দেশের প্রাচীনতম ও অগ্রণী প্রতিষ্ঠা নবঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র এক সভা এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শনিবার (১১মার্চ ২০২৩) বিকেল ৪-৩০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় নাট্যশালার কনফারেন্স হলের ভিআইপি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বরেণ্য শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্হিতিতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা
কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ। এতে সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সঞ্চালনা করেন।

সভায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সদস্য বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর লেখক, কমামিস্ট ও গীতিকার শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ’র কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা গঠনের দায়িত্ব আরোপ করে তার হাতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র ইশতেহার তুলে দেন বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং অন্যান্য নেতৃবর্গ ।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গীয়'র জার্মানির সভাপতি কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক আমিনুর রহমান বেদু, রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবিশ, ইউনেস্কোর ব্রান্ড এম্বাসেডর নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাত, বঙ্গীয়'র সভাপতি পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, বঙ্গীয়'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলী নিয়ামত, কবি নাঈম আহমেদ, বঙ্গীয়'র কেন্দ্রীয় সদস্য কবি মীনা মাশরাফী, কবি পারভিন আক্তার সহ প্রমুখ।

সভার প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র সম্মিলন উদযাপন বিষয়ক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কবি আজিজুর রহমান আজিজকে আহবায়ক এবং সংগীতশিল্পী শামা রহমানকে সদস্য সচিব করে উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে বঙ্গীয়র সভাপতি পর্ষদের সকল সদস্য, রবীন্দ্র একাডেমির নির্বাহী শাখার সকল সদস্য, বঙ্গীয়র যুগ্ম সম্পাদকবৃন্দসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্টজনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।

দ্বিতীয় পর্বে অযুত তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু সম্মিলন, দ্বিশতজন্মবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মরণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে লেখক কবির আলোচনা সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড নেশন্সের ব্রান্ড এম্বাসেডর জনাব নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাতকে সভাপতি পর্ষদের সদস্য, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবির ঢালীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , সংস্কৃতি সেবক রোকনউদ্দীন পাঠানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, কবি আনোয়ার কামালকে লিটল ম্যাগ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সাংবাদিক শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে নির্বাহী সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক, কবি মীনা মাশরাফীকে নীলফামারী জেলার সমন্বয়ক, জনাব এ এইচ এম সালেহ বেলালকে গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা লেখক কবি আবদুল হালিম খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, কবি মানিক চন্দ্র দে, কবি অর্ণব আশিক, কবি বাবুল আনোয়ার, দৈনিক বঙ্গজননীর সম্পাদক কামরুজ্জামান জিয়া, কবি শাহানা জেসমিন, কবি গবেষক আবু সাঈদ তুলু, চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. বিশ্ব রায় (কলকাতা), বঙ্গীয় চট্রগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফ্যাশন ডিজাইনার আমিনা রহমান লিপি, শিল্পী শাহরিয়ার পিউ, কবি সোহরাব সুমন, কবি সরকার পল্লব, কবি রহিমা আক্তার মৌ, কবি লিলি হক, কবি আকমল হোসেন খোকন, শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, হিরা পারভেজ, ড. দিপু সিদ্দিকী, শিক্ষক ও কবি রওশন ই ফেরদৌস, কবি পারভীন আক্তার, কবি শিল্পী মাহমুদা, পূর্বধলার মো. জাকির হোসেন তালুকদার, কবি আনারকলি, কবি অপরাজিতা অর্পিতা, ডা. নূরুল ইসলাম আকন্দ, আবৃত্তিশিল্পী যথাক্রমে রূপশ্রী চক্রবর্তী, রবিউল আলম রবি সরকার, জেবুন্নেছা মুনিয়া, চন্দনা সেনাগুপ্তা, কবি সংগঠক রাজিয়া রহমান, কবি শামীমা আক্তার, শিল্পী সাদিয়া শারমিন, কবি কনক চৌধুরী, কবি তাসলিমা জামালসহ প্রমুখ।

;

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব



মাহমুদ হাফিজ
কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় শুরু হয়েছে রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসব। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতি সভাগৃহে বিকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, পরিব্রাজক ও ভ্রমণগদ্য সম্পাদক মাহমুদ হাফিজ, স.ম. শামসুল আলম, নাহার আহমেদ, ড. নাঈমা খানম প্রমুখকে সম্মানিত করা হয়।

বিকালে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা। বিশিষ্ট নাট্যকার চন্দন সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও কবি সব্যসাচী দেব। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাধারণ সম্পাদক কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য। এতে সমাপণী বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি কবি স্বপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।

আজ ও আগামীকাল ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি হলে বিকাল থেকে কবিতা ও গল্পপাঠ, আলোচনা, শ্রুতিনাটক, সঙ্গীত অনুষ্ঠিত হবে। রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, নেপাল, আসাম, ত্রিপুরার কয়েশ’ কবি লেখক অংশগ্রহণ করছেন।

;