সুয়াদ

  • আহমেদ খান হীরক
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

কলিংবেলের আওয়াজ। এই দুপুরে কি, এখন এই লকডাউনে কারোই আসার কথা না। জানলা দিয়ে তাকালাম। আলতু দাঁড়িয়ে। চোখে চোখ পড়তেই বলল, সালামালাইকুম সার! ভালো আসেন?

মেজাজটা খিঁচড়ে গেল। এখন বুঝি কুশল বিনিময়ের সময়!

বিজ্ঞাপন

“কী ব্যাপার?”
“এই তো সার! এই দিক দিয়া যাইতেছিলাম। ভাবলাম কেমুন আসেন, দেইখ্যা যাই? ম্যাডাম ভালো আসে? আর মামুনিটা?”
“সবাই ভালো। তোমার রিকশা কই?”
“আর রিকশা সার... আদমই নাই কুনো বাহিরে... আচ্ছা সার, তাইলে সার... আসি সার!”

জানলা আটকে দিলাম আমি।

২.
দুপুরে একটু ঘুম ঘুম লাগে আজকাল। বাসায় থাকতে থাকতে শরীর শিখছে এইসব। বিছানায় শুতে যাব কি, রুনা গোসল সেরে এসে বলল, “কে আসছিল?”

বিজ্ঞাপন

আমি নিজেকে এলিয়ে দিতে দিতে বললাম, “আরে বইল না... আলতু... ওই যে... মহল্লায় রিকশা চালায় না! আরে সেইদিনও যার রিকশায় উঠলে!”
“কী বলে?”
“কী আবার বলবে... আমরা কেমন আছি জানতে আসছে! পাবলিক একটা!”

রুনা তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ আমার দিকে। আমি বললাম, “কী?”

রুনা মাথা নাড়াল শুধু। বেরিয়ে আবার জানলা খুলল। আমিও পিছে পিছে... “করছো কী? আছে নাকি সে এখন?”

রুনা আমার দিকে ঝটকায় তাকিয়ে বলল, “অবশ্যই আছে!”

ঠিকই। জানলা খুলতেই দেখা গেল আলতু বসে আছে। রুনাকে দেখামাত্রই দাঁড়িয়ে বলল, “সালামালাইকুম ম্যাডাম... ভালো আসেন?”

রুনা হাসল মিষ্টি করে। বলল, “আছি। আপনি কেমন আছেন? শোনেন না, আপনি আসায় খুব ভালো হইছে। আমাদের নিচটা ব্লিচিং দিয়ে ধুয়ে দিতে পারবেন না একটু?”

আলতুর চোখে ঝিলিক দিয়ে উঠল। মাথা নাড়াল, “হ হ। পারুম না আবার!”

আমি রুনাকে বললাম, “সকালেই না ধুলে তুমি?”

রুনা বলল, “চুপ থাকো তুমি...”

আলতু নিচ থেকে বলল, “ম্যাডাম, বালতি লাগব খালি একটা...”

রুনা বলল, “আসছি আমি...”

৩.
রুনা বালতি আর ব্লিচিং নিয়ে নিচে নেমেছে। তবে সঙ্গে নিয়েছে এক থালা ভাত মাছ। আলতুকে বলেছে কাজ করার আগে খেয়ে নিতে। আলতু খাচ্ছে। খেতে খেতে তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু মুখে তার হাসি ঠিকই আছে। হাসতে হাসতে বলছে, “ম্যাডামের রান্ধন খুবই ভালো! রুই মাছের এমন সুয়াদ আমি লাইফে পাই নাই সার!”