জুতা-২০ : কোভিড-১৯

  • মেহেদী উল্লাহ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

“মি. প্রেসিডেন্ট, আমি আপনাকে বারবার মনে করিয়ে দিব সেটা মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে আপনি এখনো সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছেন, আর তা পৃথিবীর মানুষকে আগামীর প্রয়োজনীয় দিনগুলোর জন্য সচেতন রাখবে”—প্রেসিডেন্টকে কথাগুলো বলতে বলতে ঘুম ভেঙে যায় আমাদের গল্পের একমাত্র চরিত্র কায়কোবাদের। স্বপ্নের রেশ কাটতে না কাটতেই তার মনে পড়ে, সপ্তাহখানেক আগেই বলা হয়েছিল আজ থেকে উঠে যাবে শহরের লকডাউন। দেয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডারে আজকের তারিখ ও বারের দিকে তাকিয়ে সশব্দে হাসতে থাকে কায়কোবাদ! বছরের প্রথম দিনটিতে শহরের মানুষেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০২০ এজন্যই বেশিবার লিখেছে, যে এটার গঠন সুন্দর, অথচ কয়েক মাস যেতেই তাকে ফিরতে হয়েছে ১৯ সংখ্যাটির কাছে, কোভিড-১৯! ১৯ সংক্রান্তি!

ভাবতে ভাবতে কায়কোবাদ খেয়াল করে তিনমাসে তার বাসায় পরতে থাকা স্যান্ডেলগুলোতে পায়ের ছাপ বসে গেছে, অথচ গত তিন বছরেও কম্পানির দাগ সরছিল না।

বিজ্ঞাপন

তারপর কায়কোবাদ দরজার কাছে যেয়ে আরো খেয়াল করে তার বাইরে পরার কালো রঙের স্যু-জোড়ায় ধুলা জমেছে। শহরের প্রতিটি বাসায় মানুষের বাইরে পরার জুতাগুলো ঘুমিয়েই পড়েছিল! এখন ধুলা মুছলেই সেগুলো জেগে উঠবে!

২.
কায়কোবাদ বেসিক্যালি জুতার শো-রুমের সেলসম্যান। হুট করে করোনা উপস্থিত হওয়ায় শোরুম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর অকার্যকর হয়ে পড়েছিল তার পাঁচদিনের ছুটি—বিয়ের জন্য নিয়েছিল, কিন্তু বিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গিয়েছিল! অবাক বিস্ময়ে কায়কোবাদ আরো খেয়াল করে, শহরের সবকিছুতে স্বাভাবিক গতি ফিরলেও জুতার দোকানে মানুষ নাই। শুরুর দিকে ভেবেছিল, এতদিন পর ছাড়া পেয়ে মানুষ নিশ্চই মাথায় সময় দিচ্ছে—সেও সেলুনেই গিয়েছিল প্রথমদিন। তারপর পায়ে নজর দিবে মানুষ। কিন্তু দিন যায়, সপ্তাহ যায় জুতার দোকানে লোকের পা পড়ে না।

বিজ্ঞাপন

কায়কোবাদ বোঝার আগেই কম্পানি বুঝে যায়, মানুষ ছিল ঘরে, জুতা ছিল পড়ে—যেমন জুতা তেমন ছিল! তিনমাসের একটা গ্যাপ হয়ে গেল সমস্ত জুতার জীবনে! কায়কোবাদ হতাশ! দুয়েকজন আসে কাস্টমার, সে বুঝতে পারে এরা ডাক্তার, নার্স আর পুলিশ!

কায়কোবাদ চমকে যায় পরের সপ্তাহে। ঝাঁকে ঝাঁকে নতুন জুতা আসতে শুরু করে শোরুমে। সে মহাচিন্তায়, কিনবে কারা এত জুতা, আগেরগুলোই বিক্রি হচ্ছে না! কিন্তু কায়কোবাদ খেয়াল করে, সন্ধ্যা থেকেই মানুষ আর মানুষ, জুতা নিয়ে যাচ্ছে। চালান শেষ! ঘটনা কী!

কায়কোবাদেরও লাগবে নতুন জুতা! দোকানে এসেছে বিশেষ একধরনের জুতা। শহরের মানুষ ২০২২ সাল পর্যন্ত পরতে চায় এসব জুতা। এ জুতার বিশেষত্ব, আরেক জোড়া জুতা এই জুতার তিন ফিট সীমানার মধ্যে এসে পড়লে লালবাতি জ্বালিয়ে ফোঁ ফোঁ করে সিগনাল দেয়।

কায়কোবাদ সামাজিক মানুষ। সেও ২০২২ পর্যন্ত পরার জন্য একজোড়া বাছাই করে নিয়েছে মনমতো!