নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব বিষয়ক দুই বই নিয়ে টেরি ঈগলটন
সম্প্রতি প্রকাশিত দুটো বই নিয়ে করোনার এই সময়ে আলোচনা করেছেন বিশ্বখ্যাত সাহিত্যতাত্ত্বিক, সমালোচক ও বুদ্ধিজীবী টেরি ঈগলটন। প্রথম বইটির নাম, নিঃসঙ্গতার ইতিহাস—লিখেছেন ডেভিড ভিনসেন্ট। অন্যটি, একাকীত্বের জীবন-চরিত—এটি লিখেছেন ফে বাউন্ড আলবের্তি। প্রথম গ্রন্থটি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আজ এপ্রিলের ২৪ তারিখে প্রকাশনা সংস্থা পলিটি থেকে। দ্বিতীয়টি ইতোমধ্যে অক্সফোর্ড থেকে বেরিয়েছে। বিচ্ছিন্নতার এই সময়ের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ঈগলটনের এই আলোচনা এক ভালো উপায় হতে পারে। অপরদিকে তার অন্যসব সারগর্ভ আলোচনার মতো এই লেখাটিতেও ঘটেছে সাহিত্য, ইতিহাস আর সমাজ-রাষ্ট্রের নানামুখী চলকের সম্মিলন। যা পাঠকদের এক অন্য অভিজ্ঞতায় পৌঁছে দিতে পারে।
আলোচনাটি দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
নিঃসঙ্গতা আর একাকীত্ব এক কথা নয়। একাকী মানুষ সঙ্গের প্রয়োজন অনুভব করে আর নিঃসঙ্গ ধরনের মানুষ সঙ্গ থেকে নিষ্কৃতি বা অব্যাহতি চায়। ডেভিড ভিনসেন্ট তার চমৎকার নতুন এক অধ্যয়নে একাকীত্বের অনবদ্য একটা সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি একে ‘ব্যর্থ নৈঃসঙ্গ’ বলে অভিহিত করেছেন। এই দুইদল নিঃসঙ্গতা আর একাকীত্বের মধ্যে আরেকটি পার্থক্য করে থাকেন। তারা বলেন যে তপস্বী, ধীবর, মৌনব্রত সন্ন্যাসী আর রোমান্টিক কবিরা একা থাকতে পছন্দ করেন তবে কেউই চান না লোকজন তাদের ত্যাগ বা বর্জন করুক। ‘নিজে নিজের সঙ্গী’ হবার ব্যাপারটি হচ্ছে মনে করেন আপনি সিনেমা দেখবেন বলে নিজেই নিজের হাতটি ধরে বসেছেন। হতে পারে আপনার সত্যি সত্যিই খুব একা থাকতে ইচ্ছে করছে অথবা বিচ্ছিন্ন থাকাকে যে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয় তাকেই আপনি যুক্তিগ্রাহ্য করে তুলতে চাইছেন এভাবে। তবে যাই হোক না কেন সবচে বড় পার্থক্য হচ্ছে নিঃসঙ্গতায় কেউ মারা যায় না, কিন্তু একাকীত্ব আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতেও পারে। করোনাভাইরাসের যে তাণ্ডব শুরু হয়েছে এতে করে আমরা কেউ কেউ শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারি।
সপ্তদশ শতাব্দীর আলোকায়নের আবহে, একা একা নিজের মতো করে থাকার ব্যাপারটি ছিল মানবিকতার প্রকৃত রূপের ব্যত্যয়। অথচ প্রকৃতিগতভাবেই মানবিকতা একটি সামাজিক বিষয়। তবে রোমান্টিকদের হাত ধরে এর পরিবর্তন এলো। সাধারণের মধ্যে বিচ্ছিন্ন থাকার ধারণাটি বেশ পরিচিতি পেল। ফ্রাংকেস্টাইনের দৈত্যটি হচ্ছে ইংরেজি সাহিত্যের প্রথমদিককার স্নেহ-ভালোবাসা বঞ্চিত একটা চরিত্র যা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমানভাবে ধিকৃত ও প্রত্যাখ্যাত। তবুও আধুনিক যুগের একটা উপসর্গ হচ্ছে একাকীত্ব—নিঃসঙ্গতা হতে পারে যার সমালোচনা। এ হচ্ছে উত্তম কিছুর সংস্পর্শে আসার কয়েকটি উপায়ের মধ্যে একটি যা এভাবে আমাদের ক্রমবর্ধিষ্ণু বস্তুবাদী সমাজের ঘাটতিকে প্রকাশ করে। যখন ওয়ার্ডসওয়ার্থ লেখেন, তিনি মেঘের মতো একা একা ঘুরে বেড়ান তখন হয়তোবা তিনি শুধু বলতে চান তিনি একা আছেন অথবা তাঁর সঙ্গীর অভাব কিংবা একাকী থাকার ব্যাপারটা তাঁর নিজেকে জানার জন্য গভীর পারলৌকিক এক ধ্যানের সুযোগ এনে দিয়েছে।
সমগ্র বিশ্ব থেকে নিজেকে এভাবে সরিয়ে রেখে তবেই স্বরূপকে জানা—অন্তত প্রথমদিকে এ ছিল মরুভূমি অঞ্চলের খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের একটা বিশ্বাস। কিন্তু এই বইয়ে দেখানো হয়েছে যে, দিনে দিনে আধুনিক সমাজ আরো জনাকীর্ণ হওয়াতে আত্মকথনের প্রয়োজনও বেশি হয়ে পড়েছে। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকাটা ব্যয়সাপেক্ষও বটে। ভার্জিনিয়া উলফ এ ব্যাপারে জোর দিয়ে বলেছেন—এজন্য প্রত্যেকের আলাদা একটি কক্ষ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু সেই সময়ে শুধু উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষেই এই ব্যয় সংকুলান সম্ভব ছিল। বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটেনের জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ এভাবে আলাদা হয়ে একা একা থাকত। দু হাজার এগার সালে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে একত্রিশ শতাংশ বা আট লক্ষে পৌঁছে। এরপর নগরায়ন আর বড় বড় পরিবারগুলো বহুসংখ্যক মানুষকে এক জায়গায় এনে নিক্ষেপ করে; শিল্প ও পুঁজিবাদের বেনামি দুনিয়াও এদের বিচ্ছিন্ন করে দূরে সরিয়ে দেয়। গ্রামীণজীবন কঠিন হলেও আমরা জানতাম কারা আমাদের প্রতিবেশি। তাই একা থাকার বাসনা তীব্র হলেও একইসঙ্গে ভেতরে ভেতরে পরিত্যক্ত হবার ভয়ও কাজ করত।
নিঃসঙ্গতার ইতিহাস গ্রন্থটির দাবি এটি একটি ‘ব্রিটিশ সমাজের নিশ্চল ইতিহাস’ অথবা ‘অকর্মণ্য বসে থাকার ইতিহাস’। জন ক্লেয়ারের কবিতা থেকে শুরু করে ‘ইন্টারনেটের নিঃসঙ্গতা’ ধর্মানুষ্ঠানের প্রতি একনিষ্ঠতা—সবকিছু মিলিয়ে উল্লেখ করার মতো এটি একটি বহুমুখী অধ্যয়ন। একাকী হাঁটার ওপর চমৎকার একটা অধ্যায় আছে বইটিতে। আধ্যাত্মিক বিনোদনের জন্য বিংশ শতাব্দীর মধ্যবিত্তশ্রেণি একা একা হাঁটায় মন দিয়েছিল। ওয়ার্ডসওয়ার্থ তাঁর সমগ্রজীবনে ১৮০,০০০ মাইল হেঁটেছিলেন বলে জানা যায়। শ্রমিকশ্রেণীও কাজের অন্বেষণে হেঁটেছে বহুপথ। নিয়মিত একটানা এই হাঁটার বিষয়টি কৃষক আর অভিজাত শ্রেণীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল।
চাইলে যে কেউ একাকীত্বকে সঙ্গ হিসেবে বেছে নিতে পারে। মনস্তত্ত্ববিদ ডোনাল্ড উইনিকট মনে করেন কেবল বিশ্বস্ত একজন পূর্ণ বয়স্ক কারো উপস্থিতিতে একটা শিশু একলা থাকা শিখতে পারে। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে দেখা যায় নতুন এক ধরনের আশ্রমের ধারণায় মানুষ ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ হয় এবং বলা চলে এ ব্যাপারে বেপোরোয়া হয়ে ওঠে যেখানে স্ত্রীলোকেরা দলবেঁধে আলাদা থাকতে পারত। কারা-ব্যবস্থায় এরকম অপেক্ষাকৃত উচ্চ-মানের একাকী বন্দিত্বের ব্যবস্থা করা হতো। ইয়টসম্যান, রবিন নো জনসন মনে করতেন মানুষকে জেলবন্দী না করে যদি শাস্তি হিসেবে সমুদ্রপথে বিশ্বের সবজায়গায় একাকী পাঠানো হতো, তবে অপরাধ সংঘটিত হতো কম। পাথরের ওপর খোদাই করা একটা মণিযুক্ত মূর্তিতে দেখা যায় যুদ্ধপরবর্তী সময়ে ধূমপানের অভ্যেসে গির্জায় যাওয়ার চেয়ে নানান রকম প্রার্থনায় ভেতরের অস্থিরতাকে শান্ত করাকেই প্রাধান্য দিয়েছে মানুষ।
আধুনিক জীবনে একাকীত্বের যে তথাকথিত মহামারি, ভিনসেন্ট সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। তিনি দেখান যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সম্ভবপর ছিল বলেই নারী ও পুরুষ ক্রমে আরো ব্যাপকভাবে একা একা থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল। তবে যাই-ই হোক না কেন ব্যাপক এই একাকীত্বের ধারণা নতুন কিছু নয়। কোনো কোনো সমাজতাত্ত্বিকের মতে এই ধারণাটা যে আর প্রচার বা প্রসার পাচ্ছে না—এর সপক্ষে প্রমাণ খুব কমই রয়েছে। অন্যদিকে ফে বাউন্ড আলবের্তির একাকীত্বের জীবন-চরিত এ এই বিষয়টি আরো গভীর ও মূর্ত হয়ে ধরা দিয়েছে। ভিনসেন্ট সামাজিক ইতিহাসবিদ হলে ফে বাউন্ড হবেন আবেগের ইতিহাসবিদ যিনি বিশ্বাস করাতে সমর্থ হয়েছেন, মানবিক আবেগ বা অনুভূতি মোটেও নিরন্তর ও সার্বজনীন নয়, চিন্তা ও কাজের মতোই সেগুলো ঐতিহাসিকভাবে যেমন নির্ধারিত হয় তেমনি এর সবকিছুই আবার পরিবর্তনশীল। এই গ্রন্থে একটা বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে তা হচ্ছে—আমরা যেভাবে অনুভূতির প্রকাশ করি, আমাদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি তার রূপ দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রিয় কাউকে হারানোর শোকে অথবা ধূসর রঙের কোনো ভল্লুক জড়িয়ে ধরার কারণে আতঙ্কিত হলে আপনি ক্যানসাস নাকি ক্যাম্বোডিয়া থেকে এসেছেন এটা বিবেচ্য নয়। আবেগের মুহূর্তে যে মানসিক অবস্থা তা লিঙ্গভিত্তিক—এরকম বললে সন্দেহের উদ্রেক হবেই। এই বইয়ে সেটাই দেখানো হয়েছে। পাহাড় থেকে পড়ে গেলে একজন নারী কি সত্যিই একজন পুরুষের থেকে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়? আলবের্তি জোর দিয়ে বলেছেন—“সব আবেগ-অনুভূতিই রাজনৈতিক”। কিন্তু “সবকিছুই রাজনৈতিক”—এভাবে বললে ‘রাজনীতি’ শব্দটি অর্থহীন হয়ে পড়ে। যারা মনে করেন লর্ড চ্যান্সেলরের পদটি রাজনৈতিক নয় বরং স্বাভাবিক, সেক্ষেত্রে আলবের্তির এই যুক্তিটি ধোপে টেকে না।
এরপরও অনেক যত্ন নিয়ে লেখা বিস্তর এই অধ্যয়নে জোরেশোরে দাবি করা হয় যে একাকীত্ব আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৮০০ সালের দিকে। রবিনসন ক্রুশো একদা দ্বীপান্তরিত হয়েও কেন একাকী জীবনের জন্য তার কোনো অভিযোগ ছিল না এত্থেকে সেই কারণটা বোঝা সহজ হতে পারে। যখন ভিনসেন্ট বলেন ‘একাকীত্ব’কে নেতিবাচক আবেগ হিসেবে দেখা হয়েছিল শুধু এই সময়টাতে, তখন আলবের্তিও সেই সুরে সুর মেলান। কেউ একা একা থাকছে এই ব্যাপারটি এখন আর আগের মতো করে দেখা হয় না বরং নেতিবাচক অর্থে বোঝানো হয়, উপায়হীনভাবে জীবন এখন এভাবেই, বায়রনের বিষণ্ন নায়কেরা যেমন। আলবের্তি যুক্তি দেখিয়ে বলেন, যারা বেশি একাকী, তাদের অপেক্ষাকৃত কমবয়সে মৃত্যুর সম্ভাবনা যারা কম একাকী তাদের চেয়ে ৩০% বেশি। দরিদ্ররা ধনীদের চেয়ে বেশি একা, অপেক্ষাকৃত কমবয়সী তরুণ তরুণীরা আরো বেশি একা। একা হওয়ার অর্থ হচ্ছে “অর্থপূর্ণ উপায়ে অন্যদের থেকে দূরে সরে থাকা”।
চার্লস ডিকেন্সের উপন্যাস গ্রেট এক্সপেক্টেশন্স অবলম্বনে বিবিসি যে ড্রামা সিরিয়াল তৈরি করেছে তাতে প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুতে রানী ভিক্টোরিয়ার অতিরিক্ত শোক প্রদর্শনকে রাজতন্ত্র দ্বারা আক্রান্ত মিস হ্যাভিশাম—এই পরাবাস্তব চরিত্রটির বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। চমৎকার ভারসাম্যপূর্ণ একটি গ্রন্থ এটি। ভিনসেন্টের দৃষ্টিতে যা ‘নিঃসঙ্গতা’, এই বইয়ে সেটাকে ‘একাকীত্ব’ হিসেবে দেখানো হয়েছে—হতে পারে, সৃজনশীল কাজের জন্য মূল্য দিয়ে যেটিকে পেতে হয়। একাকীত্ব হচ্ছে নিজের কাছে প্রত্যার্পণ অথবা ধ্বংসের দিকে গমন কিন্তু কেবল তখনই যখন কেউ তা স্বেচ্ছায় বেছে নেয়। ঐতিহাসিকভাবে, নিজেকে নিজের ও সমাজের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চিন্তা থেকেই এর প্রসূন। কিন্তু এর শুরু হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীরও অনেক আগে, হ্যামলেট বা ওথেলো এর সাক্ষ্য দেয়। এই গ্রন্থটি ঊনবিংশ শতাব্দীকে আদর্শিকভাবে একটা “অপেক্ষাকৃত সমষ্টিগত বিশ্ব” হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করে—কর্মহীন আর ভবঘুরেদের কাছে যা আশ্চর্যের একটি বিষয়।
একইভাবে, আলবের্তিও সঠিকভাবে একাকীত্বের রাজনীতিকীকরণ করেন, স্নায়ুবিজ্ঞানীরা এত্থেকে মুক্তি পাবার জন্য ঔষধের বড়ি আবিষ্কারের দিকে ছুটছেন। নিজেকে দিয়ে কিছু হচ্ছে না—এই অনুভূতি আর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের দাসত্বের ইতিহাস থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা যায় না। এই ইতিহাস পেছনের দিকে টেনে যতই লম্বা করা হোক না কেন, এমনকি লেখকের কল্পনাকে ছাড়িয়ে গেলেও তা সম্ভব নয়। তিনি দেখান, “একবিংশ শতাব্দীতে অর্থ ব্যয় না করে কেউ কারো সঙ্গে সুবিধাজনক কোনো স্থানে গিয়ে দেখা করবে, এ রকম জায়গা খুব কম”। এর বড় কারণ হচ্ছে নব্য-উদারনীতিবাদের নীতি এর কোনো প্রয়োজন দেখে না। এভাবে এই বইয়ে আছে এক খলনায়ক; অন্যদিকে ভিনসেন্টকে তার অনুধ্যানে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে দেখা যায়। তবে আরো বেশ কিছু বিষয় এসেছে বইটিতে যেমন—বৃদ্ধ বয়সের ওপর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, গৃহহীনতা, উদ্বাস্তু, আদর্শ জীবনসঙ্গী, ক্ষুধা নিয়ে যেসব শিল্পী কাজ করেন, সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো উত্তেজনা, মেদবহুল শরীর হওয়ার কারণে যে একাকীত্বের অনুভূতি—এইসব নানান জল্পনা-কল্পনা, সন্দেহ, ওয়াদারিং হাইটস উপন্যাসটিতে দেখানো হয়েছে হিথক্লিফ গাড়ি চালিয়ে বাড়ি আসতে ব্যর্থ হয়—এইসব মাথামুণ্ডুহীন অবান্তর বিষয়েরও অবতারণা হয়েছে।
এইসব ছাড়াও আরো নানান বিষয় আনা হয়েছে বইটিতে। এই অধ্যয়ন দুটোর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এদের গবেষণামূলক অনুসন্ধান ও সাধারণ ব্যাখ্যার মিশ্রণ। নিঃসঙ্গতা আর একাকীত্ব নিয়ে বিভিন্ন শতাব্দীতে যা যা ঘটেছে সেসবের লম্বা লম্বা আখ্যানের বর্ণনা রয়েছে তবে বিস্তর প্রমাণ-দলিলও দেওয়া হয়েছে সেগুলোর সপক্ষে। বইদুটোতে পাণ্ডিত্য ও সহানুভূতি, কবিতা ও মনস্তত্ত্ব এসবের যে সমন্বয় ঘটেছে তা সাধারণ পাঠক ও বিশেষজ্ঞদের কাছে সমানভাবে আবেদন সৃষ্টি করতে সক্ষম। একাকীত্ব ঘোচানোর একটা উপায় হচ্ছে নিঃসঙ্গতা। একাকী থাকাটা উপভোগ করা অথবা অন্তত একে সহ্য করাটা বেড়ে ওঠারই একটা অংশ। কিন্তু ভিনসেন্ট আর আলবের্তি উভয়েই কিভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কবিদের জন্য একাকীত্বকে ইতিবাচক করে তোলা সম্ভব, সেই বিষয়ের ওপর আলোকপাত করতে সচেষ্ট থেকেছেন, অন্যদিকে বাচ্চাদের লালনপালনে সময় কাটে যেসব নিঃস্ব, দরিদ্র গৃহিণীর, সামাজিক বিধি-বিধান যেখানে এর শাঁসটুকু পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে—সমাজের সেই শ্রেণীর কথা আদৌ বলা প্রয়োজন মনে করেননি তারা।