কোনো মুগ্ধতা, বিস্ময়, বিরাগের কাছাকাছি নেই বলে

  • জাহানারা পারভীন
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

সাপ

করিডোরে পড়ে আছে সাপের খোলস
তার মানে, উপদ্রপ এখানেও
উপদ্রুত এলাকা থেকে এসেছিল যারা,
যারা অলস মফস্বলের জলে কেটেছে সাঁতার
তাদের সহবাসে জন্ম যে নতুন প্রজন্মের,
তারাও রেখে গেছে বংশবীজ

বিজ্ঞাপন

পরিত্যক্ত খোলস দেখে ভাবি,
এই পোশাকের জন্য শোক আছে কোনো, কিংবা স্মৃতি?
যেমন স্মৃতির ভেতর ফোটে হলুদ শর্ষে
পাকা শর্ষের তৈলাক্ত হাসি, তার রঙ কি বৃদ্ধ গ্রামে
তিলক্ষেতে থাকা সাপের রঙের কাছাকাছি?
হাসি দেখে আজকাল কিছুই মনে হয় না,
কোনো মুগ্ধতা, বিস্ময়, বিরাগের কাছাকাছি নেই বলে
অন্ধকারে জ্বলে ওঠা সাপের মণিটিকে চেনা যায়,
চেনা যায় পোষা কবুতর,
সাপের মালা পড়ে, পায়ে, উড়ে গেছে নির্ভয়ে

এসব উড়াল অবমুক্ত করা হবে না? স্মরনিকায় ছাপা হবে না
রক্তাক্ত পায়ের জলছাপ, আকাশ থেকে ঝড়ে পড়া রক্তের চিহ্ন?

বহুদিন হাতের মুঠো খুলিনি

বিজ্ঞাপন

কেউ ভেবেছে এখানে একটি শর্ষেদানা আছে
সুগন্ধী তেজপাতা, অথবা সাপের খোলস...

হয়তো তুমিও ভেবেছো হাতের মুঠোতে
ঘুমিয়ে আছে কোনো অলস পিঁপড়ে
অথচ একটা সবুজ মার্বেল
যেখানে ভেসে উঠেছিল
হলুদ ক্যানভাসে আঁকা সূর্যমুখী
হয়তো সে ধানখেতে দাড়িয়ে থাকা কাকতাড়ুয়ার ভাই,
নয়তো অভিশপ্ত হাতে জন্ম নেওয়া তিল
নিষ্ঠুর বরফ গলা রাতে যে অদৃশ্য হয়ে গেছে
চৌরাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে থাকা হলুদ ডাকবাক্সের সাথে

বোতলে ভরা ভূত

হারিয়ে ফেলার পর খুঁজে পাওয়া যায়?
বেতফলের ঝোপ, আয়ু রেখা, সুহাসিনী গ্রাম!

বাঁধা নৌকার কাছে সব প্রতিশ্রুতি আদায় হলে,
গলুইয়ে ওঠা জল সেচে মিটিয়ে দিও বৈঠার দাবি;
হিসেবি প্রেমের আঁচ নিভে এলে, জ্বেলে দিও বন্ধুতার সলতে
ক্ষমা চেয়ে নিয়ো, ইনকাদের গ্রামে হাসের মমির কাছে
শিকারীরা যাকে গুলি করেছিল দুর্ধর্ষ রাতে
তুমি তো জানো জাদুঘরের স্বভাব,
ইতিহাসের প্রতি একমুখী মুর্খ প্রেম...
এই প্রেমের কাছে নতজানু চোখের জল ঢেলেছি
তৃষ্ণার্ত আগরের বনে, সুগন্ধের নাম গন্ধ নেই..

অসুখ

কথার ঘনত্ব কমে এলে টুকে রাখি বালিশের মাপ
তুলো, আর ধুলোর অপরাধ কেটে যায় পুণ্যস্নানের জলে
মনের দৈর্ঘ মাপার চেষ্টা চলছে ...

আপেলের বনে নিরপেক্ষতাও একটি রোগ
ভেষজ প্রতিষেধকের খোঁজে জঙ্গলে গেছেন যে হাকিম;
তার কন্যারা জানে, কোনো কোনো গাছের বাকলও অসুখের উৎস

ফাটা পায়ের ভাঁজে দাগ হয়ে বেঁচে থাকে এসব রোগ

মিথ্যেবাদী রাখাল

ঘামের ঘ্রাণে চেনা যায় না মানুষ;
তাই হাত থেকে খসে যায় হাত,
শহর থেকে দূরে সরে যায় নদী

ভেবেছি, একই কয়লা খনির শ্রমিক আমরা
মিলিয়ে নেব ভিটে হারানোর শোক

সুহাসিনী গ্রামে, বইয়ের হাটে প্রশ্নপত্র হাতে
দাঁড়িয়ে থাকা পর্যটক,
আমরা পৃথিবীর দুই শহরের অধিবাসী
তোমার হাতের রেখায় বেদনার সমার্থক সব শব্দ
আমার হাতে পৃথিবীর প্রথম পাঠশালার পুঁথি