নাভিকণ্টক জুড়ে রোডোডেনড্রন

  • সানজিদা আমীর ইনিসী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

মাই পার্নাসিয়ান

স্পন্দমান বাহু থেকে বিকিরিত হচ্ছে প্রেম
কেন সত্যিই জ্বলজ্বলে হয়ে চেয়ে থাকো ওইদিকে—
আশ্চর্য রমণীর ফের জাগা আশঙ্কায় পুরনো মানত
তার তুমি কতটুকু জানো,—পৃথিবীর সকল
পশমি শীতেও একান্ত বেলাভূমে
আমাদের একা থাকা দিন যায় কেটে
কী ঈর্ষায় সমুদ্র চেয়ে আছে তাঁবুর দিকে,
তেমনই ঈর্ষায় উড়াল উন্মাদনা—

বিজ্ঞাপন

তবু জল, সে তো পাতালেই পড়ে

আশ্চর্য রমণীর ফের জাগা আশঙ্কায়
তোমাকেই মানত মানতে হয় হে যূথত্রয়
আধেক ন্যস্ত হাত তোমার, শরীরে পড়ে আছে—
আমার
ইস্তেহারহীন সান্ধ্য আলোতে
হয়ে আছে যেন সব আশ্চর্য পাপেট—
ডুবে গিয়ে উৎখাত হতে হতে
ফের তবু ফিরে এসে
বাহু থেকে বিকিরিত প্রেম ঘিরে
আবারও কাদের ভেতর ভেঙেচুরে জন্ম বা হয়তো
পিপাসা—তৃণের ক্ষুধা হয়ে
আমাদের বিকীর্ণ হতে হবে, মাই
পার্নাসিয়ান!

প্রমত্তা

বিজ্ঞাপন

আমাদের বাসকে সাইড দিচ্ছে না যে বাস
ওরে আপাতত ভালো নজরে দেখতেছি
আছে সুনজর ওর প্রতি, দেখতেছি কতক্ষণ তোমারে ধরে
থাকা যায়

স্কোয়াশের গন্ধের মতো বিড়বিড় কোলাহল
একটা কথার সাথে আরেকটা কথার কোলাজ
ভেঙে দেয়
কোলাজ ভেঙে গেলে কি আর কথা বলা হয়—
কথা বলা না গেলে দীর্ঘ দিন আরো দিন হতে
থাকে

বিস্তীর্ণ রাস্তা
কতশত বাড়ি
বিড়বিড় কোলাহলে জ্যাম পড়ে থাকে—
অতটুকুই পাই
তোমাকে

ধীর গোসলের পর
লম্বা বারান্দায়—
বাইরে জ্যাম পড়ে থাকলে
সুনজরে দেখব না আর জ্যামকে
পড়ে আছে উপেক্ষিত
রেখে যে সন্ধ্যা নামবে এসে
আলেয়ার নিচে
ঘাসের ওপরে
নৃত্যরত থেকে আবছা অট্টখুশে
মানুষের তরে মায়া আলগোছে ঢেলে
বুকপিঞ্জর খালিখালি করে
কী তরিকায় আমার সমস্ত কথা
শুরু করব
—কে জানে!

আর্তি

ক্রমশ নাইমা আসা অন্ধকারে যে স্তবক পার হইয়া আমি
জেগে উঠি প্রতিদিন
আমি উঠে পড়ি সন্ধ্যায় কুয়াশার দেহে মিইশা
তার আমি যতখানি—
তার থেকে বেশি আছো তুমি
তিলে তিলে জেগে থাকা আমার ভেতরে আমি তোমাকে
জাগায়ে রাখতেছি বহুকাল

ঘন সন্নিবিষ্ট দুপুর পোহায়ে
আমি নির্ঝঞ্ঝাট বার্ধক্য করিয়াছি জয়
জয় করে জবাব আমি প্রশ্ন তুলেছি সকল মানুষের তরে
সকল সময়ের তরে
শুধু প্রেমকে উহ্য করে আমি অসত্য ছড়ায়ে দিয়ে গেছি
মৃদু কোমল স্বরে
এই পৃথিবী—
তার পরপারে গিয়ে যদি একদিন পাশাপাশি শুইয়া থাকার পাই ঠাঁই
যদি অমর শরীরের খাঁজগুলি লুটায় তখন তোমায়
আর তারপরই যদি চারপাশের সকল তারা খসে পড়ে
যদি ফিইরা আসতে হয় আমাকে
পৌষের কুয়াশায় আবার যদি ভাসতে হয় আকাশের
খিলান ভেঙে পড়া অলীক জলে
তখনও এক স্থির সত্য শরীরে করবে খেলা—
এই জীবন নিথর স্বপ্নকে ভালোবেসে আমি কাটায়েছি
ডুইবা মরার বাসনায় কাটায়েছি;

তবু ডুবি নাই কোনোকালে।

শীত বাবদ ভোর

একটা চাদরের কড়চা কই শেষ হয়

একটা গায়ের চাদর
শীতের শেষে গতর আর কই পায়—
মাঘ করে আসা ভোরে আমরা এই চাদর
জড়াইছিলাম
কী রকম কুয়াশা হুড়কা টেনে
দিছিল আমাদের ওপর
তুমি বললা, চাদর না আনলে
আমি কী করতাম
আমি জানি না ঠিক
জানতে ইচ্ছাও করল না
ইচ্ছা করল হাতের সমস্ত কিছু ফেলে
গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে
খালিখালি করা উঠানের ঘরে
তোমার মুখোমুখি বসতে
তোমাকে আমি ধরে রাখব না
আমাকে তুমি ধরে রাখলা না
তুমিও আমার সামনে আর
আমিও—
এই ভেবে মুখোমুখি বসা
আজকের মাঘ করা শীতে
এইটুকু প্রেম বেশ যশে লেগে
রয়—
চাদরের গায়ে
আমাদের গায়ে
চাদরের ওম থেকে তোমাকে
সরিয়ে রাখার অনাগত বিষাদ
তার সাথে একরত্তি সূর্যের রশ্মি এসে
চোখে লাগে
আরেকটা মাঘ করা শীত
আবার
হয়তো ধীর লয়ে শুরু হয়ে
আমাদের এনে
বিষমে বা তোমাকে
হারানোর বিষাদে
দাঁড় করাবে—এই চাদরের
শূন্য পাড়ার ইটের ঘরগুলোর
কড়চা আর সাথে থাকল বা না।

অলিম্পাস

নাভিকণ্টক জুড়ে রোডোডেনড্রন মাথা তুললে
তার আত্ততা কলেবর ছেয়ে যায়
তোমাকে মুখোমুখি পাব ভেবে সর্বত্র সব প্রাচীন ছায়ারা
সারি বেঁধে দাঁড়ায়
এহেন ছায়ায় প্রেমের সহজাত প্রতিভায়
আমি উঠে বসি
ঠিক তোমার মুখোমুখি বসে
তোমাকে ঘামতে দেখি
তোমাকে ক্লান্ত দেখি
তোমাকে তোমার মতো, এই পৃথিবীরই মতো বেসামাল দেখে
হাত প্রসারিত করি
তুমি নুইয়ে
ধীরে
আঁধারে
প্রসারিত হাতকে
অস্তাকাশে গুটিয়ে আনো।