কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৪)



জিনি লকারবি ।। অনুবাদ : আলম খোরশেদ
বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈশ্বর আমাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন

[পূর্ব প্রকাশের পর] প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের জাতীয় সংসদ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার ঘোষণায় যেন বারুদে অগ্নিসংযোগ করা হলো। সংঘর্ষ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা আর আগুন ছড়িয়ে পড়ল সারা শহরে।

এক রাতে আমাদের গির্জার এক পুরোহিত আরেকটি গির্জাপরিবারের জন্য বিছানা, বালিশ, কাঁথা ইত্যাদি চাইতে এলো। তিনি আমাদের বলেন যে, বোমা আর মলোটোভ ককটেল বানানোর সময় বিস্ফোরণে তাদের পাহাড়ের পুরো ওপরের অংশটা জ্বলেপুড়ে গিয়েছিল।

পাকিস্তানি সেনারা ’দুর্বৃত্তদের’ (যারাই তাদের বিরোধিতা করত তাদেরকেই তারা দুর্বৃত্ত আখ্যা দিত) কব্জা করার জন্য অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তানিরা স্বীকার করে যে, হাঙ্গামা থামাতে গিয়ে তারা ১৭২ জন মানুষকে হত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল। লন্ডন অবজার্ভার পত্রিকার ঢাকা প্রতিনিধি অবশ্য এই সংখ্যাটিকে কেবল ঢাকা শহরেই ২০০০ বলে উল্লেখ করেন।

এইসব প্ররোচনা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা ঘোষণা করা থেকে বিরত থাকে। বরং, ৭ই মার্চ, জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন। তিনি জনসাধারণকে আহ্বান করেন কেন্দ্রীয় কোষাগারে কোনো খাজনা কিংবা কর জমা না দিতে এবং কোনোভাবেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা না করতে। তিনি রক্তপাত ও হত্যাযজ্ঞ থামানোরও আদেশ দেন। বাঙালি ও বিহারিদের মধ্যেকার দাঙ্গা ও সংঘর্ষ থামানোর জন্য তিনি এমনকি এটাও ঘোষণা করেন যে, “বাংলাদেশের অধিবাসী সবাই বাঙালি।”

দাঙ্গা এক পর্যায়ে থামে। ক্ষমতাসীনদের বিরোধিতায় পুলিশ কাজে যেতে অস্বীকার করলেও, অইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং রাস্তায় যানবাহনের চলাচল অব্যাহত থাকে।

ইয়াহিয়া খান ২৫শে মার্চকে জাতীয় সংসদ অধিবেশন বসার তারিখ হিসাবে নির্ধারণ করেন। শেখ মুজিব তাঁর অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা প্রদানে নিম্নোক্ত শর্তাবলি আরোপ করেন:

• সামরিক শাসন রদ করতে হবে।
• সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে।
• দেশের প্রধান শহরগুলোতে সামরিক বাহিনীর হাতে বাঙালি হত্যার তদন্ত করতে হবে।
• নবনির্বাচিত সাংসদদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

অসহযোগিতা আন্দোলন কার্যত দেশের বেসামরিক শাসনভার শেখ মুজিবের হাতেই অর্পণ করে, যদিও তিনি পাকিস্তানের অখণ্ডত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন তখনও, যা পূর্ব পাকিস্তানে অব্যাহত সেনা মোতায়েন সত্ত্বেও, বিভিন্ন আলাপ-আলোচনায় ও মধ্যস্থতাসভায় তাঁর অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিভাত হচ্ছিল। অবশ্য সার্বিক পরিস্থিতির পর্যালোচনায় এটা প্রতীয়মান ছিল যে, এইসব শান্তিআলোচনা স্রেফ লোকদেখানো ছিল; একটা সর্বাত্মক সামরিক দমনপীড়ন চালানোর জন্য যথেষ্টসংখ্যক সৈন্য আনতেই আসলে এই অপ্রয়োজনীয় সময়ক্ষেপণ।

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে আমাদের বার্ষিক ফিল্ড কাউন্সিল মিটিংয়ের সময় আমরা অনেকটা সময় ব্যয় করি আপৎকালীন সময়ের নানাবিধ পরিকল্পনা করে।

আমাদের মিশনটি দলগত কাজে বিশ্বাস ও তার চর্চাও করে। আমরা যে-কোনো সমস্যা বা পরিস্থিতিতে একটা সম্মিলিত সিদ্ধান্তে না পৌঁছানো পর্যন্ত তার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি। তবে এটা ছিল একেবারেই ভিন্ন পরিস্থিতি। অমরা অনুভব করি যে, দেশে থাকা কিংবা দেশত্যাগ করার সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তি কিংবা পরিবারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত; কাউকেই থাকার জন্য জোর করা হবে না, আবার কেউ চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিলে তাকেও পালিয়ে যাবার অপবাদ দেওয়া হবে না।

মালুমঘাট হাসপাতালের বিশাল মিশনারিদল নৌকা করে সাগরে গিয়ে অপেক্ষমাণ উদ্ধারকারী সমুদ্রগামী জাহাজের মাধ্যমে, অথবা প্রতিবেশী দেশ বার্মার ভেতর দিয়ে জরুরি নির্গমনের কথাও ভেবে রাখে।


আমরা যারা চিটাগাংয়ে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকগোষ্ঠীর সদস্য ছিলাম তাদের কাছে এই মর্মে চিঠি আসে, আমরা যদি দেশত্যাগ করতে ইচ্ছুক হই, তাহলে যেন একটি নির্দিষ্ট পাহাড়শীর্ষে অবস্থিত চত্বরে গিয়ে রাজকীয় বিমানবাহিনীর বিমানের জন্য অপেক্ষা করি।

২১শে মার্চ, রবিবার রাতে আমরা চিটাগাংয়ের কর্মীরা একত্রিত হই আমাদের পরিকল্পনাবিষয়ে আলাপ আলোচনা করার জন্য। আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই গুর্‌গানস পরিবারের ছুটিতে যাবার কথা ছিল। তাঁরা যুক্তি দেখান যে, এই প্লেনটা ধরাই তাঁদের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। জিন গুর্‌গানস চলে গেলে রিড মিনিখই হবেন মিশনের একমাত্র পুরুষ সদস্য—ফলে তাঁর যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। লিন সিলভারনেইল, যার সঙ্গে আমি শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি বাসা ভাড়া করে থাকতাম, এবং আমি, আমরা কেউই বাক্সপ্যাটরা বেঁধে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার তাড়না বোধ করিনি। আমরা তিনজন তাই থাকার পক্ষে ভোট দিই।

২৩শে মার্চ—পাকিস্তান দিবস! সরকারিভাবে এই দিনটি ছিল পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা ও অগ্রযাত্রা উদযাপনের জন্য নির্ধারিত, তবে এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণ করাটাও। বাংলাদেশের লাল, সবুজ আর সোনালি রঙের জাতীয় পতাকাখানি সেদিন শহরের সব বাড়ি, দোকানপাট ও গাড়িতে গাড়িতে উড়ছিল। কেবল ঢাকা বেতারকেন্দ্র আর সরকারি দপ্তরগুলোতে ছিল চাঁদতারার সমাহার।

পাকিস্তানের অখণ্ডতাকে অটুট রাখার লক্ষ্যে ওই একই দিনে এম ভি সোয়াত নামে একটি পাকিস্তানি জাহাজ প্রাণসংহারী অস্ত্রশস্ত্রে বোঝাই হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে। অস্ত্রবাহী জাহাজ ভেড়ার খবরটা দ্রুত শহরময় চাওর হয়ে যায়, আর লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়ে। উৎপাটিত বৃক্ষ, আলকাতরার খালি ড্রাম, সিমেন্টের চাঙর, পরিত্যক্ত গাড়ি—হাতের কাছে যা পাওয়া গেছে তা-ই রাস্তায় ফেলে সৈন্য ও অস্ত্রসমূহ ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়ার পথে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। হাজার হাজার বাঙালি লাঠিসোটা নিয়ে বন্দর অভিমুখে যাত্রা করে অস্ত্রখালাস ঠেকানোর উদ্দেশ্যে। এটা বাস্তবিক একটি শোচনীয় দৃশ্য ছিল—এমন বিপুল সাহস পাশাপাশি প্রস্তুতি ও শৃঙ্খলার এমন সামগ্রিক অভাব!

শেখ মুজিবের আদেশে বন্দরশ্রমিকেরা অস্ত্র খালাস করতে অস্বীকার করলে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের এই কাজ করতে বাধ্য করা হয়। “যে-কোনো মূল্যে এই অস্ত্র খালাস করতেই হবে,” পশ্চিম পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ারেকে এই কথা বলতে শোনা গিয়েছিল। আর সেই মূল্য শোধ করা হয়েছিল বৈকি—বাঙালির রক্তে। সেদিন বন্দরে কত মানুষ মারা গিয়েছিল আর কতজন আহত হয়েছিল তার সংখ্যা কেউ কোনোদিন জানবে না।

জাহাজের ক্যাপ্টেন নিজেই ছিলেন বাঙালি। তিনি তাঁর নিজের মানুষেরই ধ্বংস বয়ে আনছেন তাঁর জাহাজে করে এই ভাবনা তাঁকে নিশ্চয়ই তাড়া করে ফিরছিল সর্বক্ষণ! বন্দরে পৌঁছানোর পর তিনি নিজেকে তাঁর কামরার শৌচাগারে আটকে রাখেন। তিনদিন পর বন্দরে সমাগত জনতার করুণার ওপর নিজেকে ছেড়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আসুন, যদি চান, আমাকে হত্যা করুন আপনারা।” বন্ধুরা তাঁকে উদ্ধার করে যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপদে লুকিয়ে রাখেন।

২৬শে মার্চ সকালে জেগে উঠে আমরা শুনি চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রসঙ্গে এই দিনটিকে উল্লেখ করা হচ্ছিল, “সংগ্রামের গৌরবময় পঁচিশতম দিন” হিসাবে। আমরা যা জানতাম না, এবং জানিনিও আরো বহু সপ্তাহ ধরে যে, ঢাকায় সেই ‘গৌরবময় সংগ্রাম’-এর ইতি হয়েছিল—অন্তত সাময়িকভাবে। টাইম ম্যাগাজিনের ৫ই এপ্রিলের সংখ্যায় ২৫শে মার্চের রাতটিকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছিল:

ঢাকায় ট্যাংক ও ট্রাকভর্তি বেয়নেটধারী সৈন্যরা আল্লাহু আকবর ও পাকিস্তান জিন্দাবাদ ধ্বনি দিতে দিতে বেরিয়ে আসছিল তাদের ঘাঁটি থেকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হওয়িৎজার ট্যাংক থেকে ছোড়া কামান ও রকেটের গোলায় ঢাকার একাধিক অঞ্চল কেঁপে উঠেছিল। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের ঝনঝনানির মধ্যে শোনা যাচ্ছিল গ্রেনেডের শব্দ, আর কালো ধোঁয়ার উঁচু স্তম্ভ শহরের মাথা ছাড়িয়ে উঠছিল ক্রমশ।

পরবর্তী সংস্করণ, ১২ই এপ্রিলের টাইম পত্রিকায় আরো বিশদভাবে লেখা হয়।

ঢাকা শহরের ওপর দিয়ে ট্যাংক গড়িয়ে চলে বাড়িঘর গুড়ো করে দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সৈন্যরা ঘুমন্ত ছাত্রদের হত্যা করে নির্বিচারে। নিউমার্কেটের সামনে উর্দুভাষী সৈন্যেরা বাঙালি নগরবাসীদের আত্মসমর্পণের হুকুম জারি করে এবং তারা তাতে তিলমাত্র দেরি করলে সঙ্গেসঙ্গে গুলি করে মেরে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণকবরে, পুরনো ঢাকায় এবং মিউনিসিপালিটির ময়লার ডিপোতে লাশের স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

কিন্তু আমরা চট্টগ্রামে এসবের কিছুই জানতে পারিনি। সকাল পৌনে নয়টায় ঢাকা বেতারকেন্দ্র থেকে জাতীয় সংগীত বেজে হঠাৎ করেই তা বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে কেবল রেকর্ড করা গান শোনা যাচ্ছিল।

আমাদের বন্ধু মিস্টার ও মিসেস টমাস দাশ সেদিন বেড়াতে এসেছিলেন। প্রাক্তন স্কুলশিক্ষয়িত্রী মিসেস দাশ ছিলেন লিন সিলভারনেইলের দেশি সহকর্মী। লিন, একজন নার্স, যে ভাষাতত্ত্বের প্রাথমিক জ্ঞান আয়ত্ত করেছিল, গত চারবছর ধরে বাইবেল অনুবাদ করছিল। সে মূল গ্রিক থেকে নিউ টেস্টামেন্টের বিভিন্ন পুস্তকের সহজ ইংরেজি সংস্করণ তৈরি করছিল। মিসেস দাশ ছিলেন তার বাঙালি সহযোগী। লিনের ইংরেজি অনুবাদ অবলম্বনে তিনি বাংলা নিউ টেস্টামেন্টের প্রথম খসড়া রচনা করছিলেন।

তবে মিসেস দাশ কাজ করতে আসেননি। তিনি এবং তাঁর দেবতুল্য স্বামী আমাদেরকে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সাবধান করতে এসেছিলেন। আমরা একসঙ্গে আলোচনা করি, গান গাই ও প্রার্থনায় যোগ দিই। মিসেস দাশ আমাদেরকে একটি নতুন গান শেখান, চমৎকার এক ভারতীয় সুরে গাঁথা এই গানখানি:
হে যিশু, তুমি আমার;
আমার জীবন বাঁচাও হে যিশু।

পাপী যারা তারা তাঁর কাছে যাবে;
প্রভু আমাকে ত্রাণ দাও।

নদী গভীর, নৌকা ছোটো,
প্রভু পার করো আমায়।

তোমাতেই জয়ী আমি,
এসো প্রভু, আমাকে শক্তি দাও।

আমাদের সবারই প্রভুর দেওয়া শক্তি দরকার, কেননা নদী ছিল গভীর আর নৌকাখানি ছোট।

বন্ধুরা থাকতে থাকতেই আমরা রেডিয়ো খুলি রাত দশটার খবর শুনব বলে। তার পরিবর্তে আমরা সামরিক শাসনের পনেরোটি নির্দেশনার ঘোষণা শুনি। তার মধ্যে ছিল:

পাঁচজনের বেশি মানুষ একসঙ্গে জমায়েত হতে পারবে না।
কোনো রাজনৈতিক সভা করা যাবে না।
সেনাদপ্তরে সকল অস্ত্র জমা দিতে হবে।
সকল ছাপা কিংবা অনুলিপি করার যন্ত্রও সেনাদপ্তরে জমা দিতে হবে।
সবাইকে দ্রুত কাজে যোগ দিতে হবে। ইত্যাদি, ইত্যাদি।

এই নির্দেশগুলো যখন আমরা ইংরেজিতে অনুবাদ করছিলাম তখনও বাইরে রাস্তায় বাঙালিদেরকে প্রতিবাদ করতে শুনছিলাম। দাশদম্পতি তাড়াতাড়ি বিদায় নেন নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য। তাঁরা চলে গেলে আমরা গাড়ি রাখার জায়গাটায় তাকিয়ে দেখি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আমলের পুরনো ট্রাকের ওপর লোকেরা জড়ো হচ্ছে। লাঠিসোটা হাতে তরুণে ঠাসা ট্রাকগুলো বেরিয়ে যাবার সময় চারপাশ জয়বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। সেই চিৎকৃত জয়ধ্বনির জন্ম হয়ে গিয়েছিল নয় মাস আগেই।

রিড তাঁর কোনার বাড়ি থেকে হেঁটে আসেন আমাদের ঘরে। “তোমরা সবশেষ নির্দেশগুলোর কথা শুনেছো?” তিনি জিজ্ঞেস করেন। “এসব কিন্তু ভালো মনে হচ্ছে না।”
“আপনি যদি আমাদের এখানে থাকেন তাহলে আমরা একটু নিরাপদ বোধ করব।” আমি কবুল করি।
“ঠিক আছে, আমি কিছুদিনের জন্য থাকব, কিন্তু আমার পক্ষে তো অনির্দিষ্টকাল ধরে থাকা সম্ভব নয়।” তিনি জবাব দেন।

সেই শুক্রবার রাতে আটটা বাজার আগে আগে আমরা রেডিয়ো খুলি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের জাতির উদ্দেশে ভাষণ শোনার জন্য।

হঠাৎ রাস্তায় আমরা একটা জোরালো গুঞ্জনের শব্দ শুনতে পাই। আমরা ভেবেছিলাম এটা আরো বুঝি নতুন কোনো নির্দেশ প্রচার-করা লাউডস্পিকারের শব্দ। বারান্দা দিয়ে দেখি, যে-বাড়িতেই রেডিয়ো রয়েছে তার সামনে লোকের জটলা। আমরা আমাদের রেডিয়োর ডায়াল ঘোরাই যতক্ষণ না বাইরের রেডিয়োগুলোর শব্দের সঙ্গে আমাদেরটা মিলেমিশে এক হয়ে যায়। তখন আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণার কথা শুনতে পাই।

তিনি জনগণের উদ্দেশে বলছিলেন: “আপনাদের হাতে যাকিছু অস্ত্র আছে তা নিয়েই ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসুন। যে-কোনো মূল্যে শত্রুর মোকাবিলা করুন, এদেশের পবিত্র মাটি থেকে শেষ শত্রুটিও নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত।”

আমরা জানতাম না যে, এটা ছিল একটা পূর্বে ধারণকৃত টেপ। কারণ এর আগের রাতেই, আলাপ আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর, মধ্যরাতে ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করেন। অনেক পরে আমরা একটা গুজব শুনেছিলাম যে, সেদিন তার মালামালের সঙ্গে একজন রাজনৈতিক বন্দীকেও বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তিনি আর কেউ নন, শেখ মুজিবুর রহমান।

ঠিক সময়েই ইয়াহিয়া তাঁর ভাষণ শুরু করেন। কিছু ভূমিকা সেরে তিনি শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু করেন।

“এই লোকটি ও তার দল পাকিস্তানের শত্রু। এই অপরাধকে আমরা বিনা শাস্তিতে যেতে দেব না। আমরা কিছু ক্ষমতালোলুপ, দেশদ্রোহী গোষ্ঠীকে আমাদের দেশটিকে ধ্বংস করে দিয়ে এর ১২ কোটি লোকের ভাগ্য নিয়ে খেলতে দেব না।”

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবকে একজন বিশ্বাসঘাতক বলেন। তিনি বলেন যে, তিনি নিজে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে আসতে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু মুজিব যুক্তির কথা শুনতে সম্মত ছিলেন না। তিনি তখন পুরো আওয়ামী লীগকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। (এটার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, নিক্সন নির্বাচনে জয়ী হওয়াতে তাঁর রিপাবলিকান পার্টিকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।)

আমি রাত এগারোটার দিকে শোয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম যখন ভয়েস অভ আমেরিকা খবরে বলে, “শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেছেন এবং তার নামকরণ করেছেন বাংলাদেশ।” [চলবে]


কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৩)

কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ২)

কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১)

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;

বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্বে শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ও মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ও কিশোরগঞ্জ নিউজ'র নিয়মিত লেখক।

বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি,শিল্প, সংগীত, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার বহুল কার্যক্রম নিয়ে দেশের প্রাচীনতম ও অগ্রণী প্রতিষ্ঠা নবঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র এক সভা এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শনিবার (১১মার্চ ২০২৩) বিকেল ৪-৩০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় নাট্যশালার কনফারেন্স হলের ভিআইপি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বরেণ্য শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্হিতিতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা
কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ। এতে সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সঞ্চালনা করেন।

সভায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সদস্য বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর লেখক, কমামিস্ট ও গীতিকার শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ’র কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা গঠনের দায়িত্ব আরোপ করে তার হাতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র ইশতেহার তুলে দেন বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং অন্যান্য নেতৃবর্গ ।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গীয়'র জার্মানির সভাপতি কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক আমিনুর রহমান বেদু, রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবিশ, ইউনেস্কোর ব্রান্ড এম্বাসেডর নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাত, বঙ্গীয়'র সভাপতি পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, বঙ্গীয়'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলী নিয়ামত, কবি নাঈম আহমেদ, বঙ্গীয়'র কেন্দ্রীয় সদস্য কবি মীনা মাশরাফী, কবি পারভিন আক্তার সহ প্রমুখ।

সভার প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র সম্মিলন উদযাপন বিষয়ক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কবি আজিজুর রহমান আজিজকে আহবায়ক এবং সংগীতশিল্পী শামা রহমানকে সদস্য সচিব করে উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে বঙ্গীয়র সভাপতি পর্ষদের সকল সদস্য, রবীন্দ্র একাডেমির নির্বাহী শাখার সকল সদস্য, বঙ্গীয়র যুগ্ম সম্পাদকবৃন্দসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্টজনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।

দ্বিতীয় পর্বে অযুত তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু সম্মিলন, দ্বিশতজন্মবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মরণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে লেখক কবির আলোচনা সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড নেশন্সের ব্রান্ড এম্বাসেডর জনাব নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাতকে সভাপতি পর্ষদের সদস্য, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবির ঢালীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , সংস্কৃতি সেবক রোকনউদ্দীন পাঠানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, কবি আনোয়ার কামালকে লিটল ম্যাগ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সাংবাদিক শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে নির্বাহী সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক, কবি মীনা মাশরাফীকে নীলফামারী জেলার সমন্বয়ক, জনাব এ এইচ এম সালেহ বেলালকে গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা লেখক কবি আবদুল হালিম খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, কবি মানিক চন্দ্র দে, কবি অর্ণব আশিক, কবি বাবুল আনোয়ার, দৈনিক বঙ্গজননীর সম্পাদক কামরুজ্জামান জিয়া, কবি শাহানা জেসমিন, কবি গবেষক আবু সাঈদ তুলু, চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. বিশ্ব রায় (কলকাতা), বঙ্গীয় চট্রগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফ্যাশন ডিজাইনার আমিনা রহমান লিপি, শিল্পী শাহরিয়ার পিউ, কবি সোহরাব সুমন, কবি সরকার পল্লব, কবি রহিমা আক্তার মৌ, কবি লিলি হক, কবি আকমল হোসেন খোকন, শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, হিরা পারভেজ, ড. দিপু সিদ্দিকী, শিক্ষক ও কবি রওশন ই ফেরদৌস, কবি পারভীন আক্তার, কবি শিল্পী মাহমুদা, পূর্বধলার মো. জাকির হোসেন তালুকদার, কবি আনারকলি, কবি অপরাজিতা অর্পিতা, ডা. নূরুল ইসলাম আকন্দ, আবৃত্তিশিল্পী যথাক্রমে রূপশ্রী চক্রবর্তী, রবিউল আলম রবি সরকার, জেবুন্নেছা মুনিয়া, চন্দনা সেনাগুপ্তা, কবি সংগঠক রাজিয়া রহমান, কবি শামীমা আক্তার, শিল্পী সাদিয়া শারমিন, কবি কনক চৌধুরী, কবি তাসলিমা জামালসহ প্রমুখ।

;

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব



মাহমুদ হাফিজ
কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় শুরু হয়েছে রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসব। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতি সভাগৃহে বিকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, পরিব্রাজক ও ভ্রমণগদ্য সম্পাদক মাহমুদ হাফিজ, স.ম. শামসুল আলম, নাহার আহমেদ, ড. নাঈমা খানম প্রমুখকে সম্মানিত করা হয়।

বিকালে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা। বিশিষ্ট নাট্যকার চন্দন সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও কবি সব্যসাচী দেব। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাধারণ সম্পাদক কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য। এতে সমাপণী বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি কবি স্বপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।

আজ ও আগামীকাল ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি হলে বিকাল থেকে কবিতা ও গল্পপাঠ, আলোচনা, শ্রুতিনাটক, সঙ্গীত অনুষ্ঠিত হবে। রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, নেপাল, আসাম, ত্রিপুরার কয়েশ’ কবি লেখক অংশগ্রহণ করছেন।

;

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাকালে বন্ধ থাকার পর আবারো 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কার্যক্রমে ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ রচিত 'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের একশত কপি শুভেচ্ছামূলক প্রদান করা হবে। 

উল্লেখ্য, আগেও ইংরেজি নববর্ষে এবং ভাষার মাসে শত বিশিষ্টজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থ উপহার দিয়েছিল ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ. এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প-সাহিত্য-সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আনসার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার নামে গঠিত 'শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশন'। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল স্থানীয় নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে জানানো হয়েছে যে, বরকতময়, নেয়ামতপূর্ণ মাহে রমজানের সঙ্গে অন্য কোনো মাসের তুলনা চলে না। রোজা হলো মাহে রমজানে অবশ্য পালনীয় ফরজ আমল, যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নিজে দেবেন। মানবজীবনে রোজা একজন বান্দার আত্মীক ও শারীরিক কল্যাণের ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। তদুপরি, রমজান মাসকে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা তাঁর অপার ক্ষমা, দয়া আর অপরিসীম করুণা দিয়ে বান্দাদেরকে উপহার দিয়েছেন। রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত রোজা সঠিকভাবে পালন করলে রোজাদার নবজাতক শিশু মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানব জীবনে ও সামাজিক ব্যবস্থায় রমজান মাস ও রোজার গুরুত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে ফাউন্ডেশন প্রদত্ত গ্রন্থে। এ গ্রন্থ রমজান মাসের তাৎপর্য এবং রোজার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পাঠকদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে ৩০টি সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ের মাধ্যমে।

'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের লেখক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ। তাঁর পিতা: ডা. এ.এ, মাজহারুল হক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা: নূরজাহান বেগম, সমাজসেবী। ড. মাহফুজ পারভেজের জন্ম: ৮ মার্চ ১৯৬৬, কিশোরগঞ্জ শহরে। পড়াশোনা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচ,ডি)। পেশা: অধ্যাপনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি, গবেষণা ও সাহিত্য সাধনায় ব্রতী। প্রকাশিত গ্রন্থ কুড়িটি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- গবেষণা-প্রবন্ধ: বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরো। দ্বিশত জন্মবর্ষে বিদ্যাসাগর। উপন্যাস: পার্টিশনস, নীল উড়াল। ভ্রমণ: রক্তাক্ত নৈসর্গিক নেপালে। গল্প: ইতিহাসবিদ, ন্যানো ভালোবাসা ও অন্যান্য গল্প। কবিতা: মানব বংশের অলংকার, আমার সামনে নেই মহুয়ার বন, গন্ধর্বের অভিশাপ। অধ্যাপনা ও গবেষণা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের শীর্ষতম মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর এবং কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা কিশোরগঞ্জ নিউজ'র উপদেষ্টা সম্পাদক রূপে সংযুক্ত রয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের  'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজিত হবে রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক, ইতিহাসবিদ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ। সমন্বয় কমিটিতে আরো রয়েছেন কিশোরগঞ্জ নিউজ'র প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ ইসকান্দার আলী স্বপন, সাংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু ও চিকিৎসক নেতা ডা. গোলাম হোসেন।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে আরো জানানো হয় যে, ইতিপূর্বে ঘোষিত ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর সম্মাননা বক্তৃতা ২০২০ এবং ২০২১ করোনাকালের বিরূপ পরিস্থিতিতে স্থগিত থাকায় তা যৌথভাবে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. এএ মাজহারুল হক এবং সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' কর্তৃক কিশোরগঞ্জের জীবিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জীবনব্যাপী বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করতে ২০১৫ সাল থেকে এ সম্মাননা বক্তৃতা আয়োজন করা হচ্ছে, যা বক্তৃতা ও লিখিত আকারে প্রদান করেন মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' গতানুগতিক সম্মাননার বদলে ব্যক্তির কর্ম ও কীর্তির বিশ্লেষণমূলক-মূল্যায়নভিত্তিক সম্মাননা বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত স্বরূপ চিহ্নিত করে এবং এরই ভিত্তিতে জ্ঞাপন করা হয় যথাযথ সম্মান। সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি লিখিত আকারে বক্তৃতা-পুস্তিকায় চিত্রিত হন সম্মাননা প্রাপ্তগণ। মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এই বুদ্ধিবৃত্তিক-একাডেমিক আবহে ধারাবাহিকভাবে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে, যা কিশোরগঞ্জে তো বটেই, বাংলাদেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। শুরু থেকে সম্মাননা বক্তৃতা প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. মাহফুজ পারভেজ, যিনি কিশোরগঞ্জে পাবলিক লেকচার সিরিজের মাধ্যমে গণবুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর তৈরির পথিকৃৎ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রথম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান শিক্ষাবিদ প্রাণেশ কুমার চৌধুরী, ২০১৬ সালে দ্বিতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান দীপ্তিমান শিক্ষকদম্পতি: অধ্যক্ষ মুহ. নূরুল ইসলাম ও বেগম খালেদা ইসলাম, ২০১৭ সালে তৃতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘প্রজ্ঞার দ্যুতি ও আভিজাত্যের প্রতীক: প্রফেসর রফিকুর রহমান চৌধুরী’ এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘ঋদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র: শাহ্ মাহতাব আলী’। ২০১৯ সালে পঞ্চম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা দেয়া হয় 'স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষায় পথিকৃৎ চিকিৎসক-দম্পতি' প্রফেসর ডা. আ ন ম নৌশাদ খান ও প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুনকে। ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ প্রদান করা হয় নাসিরউদ্দিন ফারুকী, ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হককে। এ উপলক্ষে ‘কিশোরগঞ্জে আইন পেশার নান্দনিক বিন্যাস’ শীর্ষক সম্মাননা বক্তৃতা বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ প্রদান করা হয়েছে ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু.আ. লতিফ,  মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ ঊষা দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরীকে, যারা কিশোরগঞ্জের সামাজিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসে স্বকীয় কৃতিত্বের প্রভায় উজ্জ্বল। জীবনব্যাপী কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের জন্য শৈল্পিক দ্যোতনায় নান্দনিক বর্ণালী সৃজন করেছেন এই তিন গুণান্বিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ জানান, ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২০ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২১ একসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা মার্চ মাসের শেষ দিকে আয়োজিত হবে।

;