তলস্তয়ের “রেসারেকসন” ও আমাদের পাপবোধ



সৈয়দ কামরুল হাসান
অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্প্রতি আমার তীব্র সময়াভাবের মধ্যেও, মুষ্ঠিচালের মতো একটু একটু করে সময় বাঁচিয়ে অবশেষে তলস্তয়ের বিশাল ও মহাকাব্যিক উপন্যাস “রেসারেকসন”-এর পাঠ শেষ করেছি। “রেসারেকসন” প্রগতি প্রকাশনের বাংলা অনুবাদে “পুনরুজ্জীবন”। অনুবাদকের পটুত্বের কথা বলতেই হবে, এ-বিষয়ে তাঁদের কুশলতায় যে কোনো সংশয় নাই সে-কথা প্রগতির অনুবাদে যাঁরা রুশ সাহিত্য ছোটবেলা থেকে পড়ে আসছেন তাঁরা সকলে কবুল করবেন। কিন্তু তিনখণ্ডে সমাপ্ত সাতশো পৃষ্ঠার বইখানা কেবলমাত্র অনুবাদের গুণে নয়, স্বয়ং তলস্তয়ই আমার মতো ভক্তকে যে কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেছেন শেষ অবধি—সেই কথাটা আগেভাগে জানিয়ে রাখছি। সারা বিশ্বের মহাজনদের কাতারে অন্ততঃপক্ষে তাঁর ভক্তকূলের মধ্যে আমিও যে সামিল সে কথাটাও সবিনয়ে বলি; মহাত্মা গান্ধী যেমনটা জানিয়েছেন: “তলস্তয়ের প্রতি আমার সম্পর্ক—একনিষ্ঠ ভক্তের সম্পর্ক। জীবনের অনেক কিছুর জন্যে আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।”

“রেসারেকসন” তলস্তয়ের শেষ বয়সে—একটানা দশ বছর ধরে লেখা পূর্ণাঙ্গ রচনা। ইতোমধ্যে ওয়ার এন্ড পিস ও আনা ক্যারেনিনা লিখে কাল জয় করে ফেলেছেন তিনি, তাঁর মাথায় শোভা পাচ্ছে বিশ্বসাহিত্যে সর্বকালের সেরা ঔপন্যাসিকের রাজমুকুট। কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের বুঝি আরো খানিকটা বাকি ছিল—রেসারেকসন লিখে তা পূর্ণ হলো। সকলেই, নিদেনপক্ষে কষ্ট করে (!) পড়েছেন যাঁরা, তাঁরা জানেন বইটিতে কী আছে পাতায় পাতায়, পরতে পরতে। ঊনবিংশ শতাব্দীর রুশীয় সমাজজীবনে এক জমিদার-তনয় প্রিন্স নেখলিউদভ ও “নিম্ন” শ্রেণীভুক্ত এক নারী মাসলোভার অসম প্রেম পরিণতি পায় না। প্রেমিকের প্রগলভতায় ভীরু ও নিরুপায় কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা ও সামাজিকভাবে পরিত্যক্ত হয়ে দেহপসারিণীর জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়। অপরাধজগতের পাকচক্রে মিথ্যা মামলায় দণ্ডিত হয়ে সাইবেরিয়ায় নির্বাসন সাব্যস্ত হয় তার। মাসলোভার বিচারকার্জের অন্যতম জুরি প্রিন্স নেখলিউদভ কাঠগড়ায় মাসলোভাকে দেখে প্রথমে অপরাধবোধ ও পরে তীব্র পাপবোধে আক্রান্ত হয়। ধীরে ধীরে তার মধ্যে পরিবর্তনের সূচনা ঘটে। অনুশোচনায় তাড়িত প্রিন্স মাসলোভাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েই ক্ষান্ত হয় না, নানান মিথ্যা অজুহাতে দণ্ডিত আরো অসংখ্য কয়েদির সঙ্গে পথের কষ্ট-ক্লেশ উপেক্ষা করে মাসলোভার সঙ্গে সুদূর সাইবেরিয়ায় পাড়ি জমায়। মাসলোভার মিথ্যা দণ্ড মওকুবের জন্য নিজের প্রভাব খাটিয়ে প্রিন্স নেখলিউদভ বিচার ও আইন কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ পর্যায় এমনকি খোদ জার সম্রাটের কাছে আবেদনপত্র পেশ করে। নিজের জীবনকেও পাল্টে ফেলে প্রিন্স, নিজ জমিদারীর তাবৎ সম্পত্তি কৃষকদের (প্রজাদের) মধ্যে বিলি করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, ত্যাগ করে বিলাস-ব্যসন, চ্যালেঞ্জ করে সমাজের উঁচু তলায় এমনকি নিজের একান্ত ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্কও। ওদিকে মাসলোভারও ঘটে পরিবর্তন। “পুনরুজ্জীবন” এই আভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের বা বদলে-যাওয়ার গল্প। মোটা দাগে এটুকু ছাড়াও মূল কাহিনীর পাশাপাশি রয়েছে আরো আরো কাহিনী, আরো অনেক অনেক চরিত্র—তাদের জীবনের পতন কিংবা জাগরণ, সবটা মিলে বহুবর্ণিল এক মানবিক উপাখ্যান।

কিন্তু কেবলমাত্র অসাধারণ কাহিনী-কাঠামোর জন্য নয়, “পুনরুজ্জীবন”-এর জোর বিপ্লব-পূর্ব রুশ সমাজব্যবস্থার যে মঞ্চে এই কাহিনী ও এর কুশীলবরা আবর্তিত হয়েছে সেই সমাজব্যবস্থার স্বরূপ উদঘাটনে। কারাগারের স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকারে মিথ্যা সাজায় দণ্ডিত দরিদ্র রুশীয় নারী, পুরুষ ও শিশুর যে অবর্ণনীয় দুর্দশা, তার পশ্চাতে নিয়োজিত খ্রিস্টধর্মের প্রাতিষ্ঠানিক বাতাবরণে নিরাপদ এক নিষ্ঠুর, পরাক্রান্ত অভিজাত আমলাতন্ত্র—এর প্রায় পুরোটাই তুলে এনেছেন তলস্তয় তাঁর অসাধারণ বর্ণনায়। একই সমান্তরালভাবে বর্ণিত হয়েছে বিশাল রাশিয়ার শোষিত কৃষক সমাজের কায়ক্লেশে বেঁচে থাকার অনুপুঙ্খ আলেখ্য। দেশ-জুড়ে ছড়িয়ে-পড়া নানান ভিন্নমতাবলম্বী বিপ্লবী রাজবন্দীর কাহিনী বর্ণনার মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে বিপ্লব-পূর্ব প্রস্তুতির কথাও। কলমের নিপুণ আঁচড়ে মহান শিল্পী যে সম্জাব্যবস্থার বিবরণী তুলে এনেছেন তা যেন যথার্থই অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে বলশেভিক বিপ্লব; বস্তুত এ ছিল এমনি এক সমাজব্যবস্থা যাতে আর সামান্য পরিমাণ ধাক্কা দেওয়া বাকি। প্রলেতারীয় লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি নেখলিউদভের চরিত্রের সঙ্গে স্বয়ং তলস্তয়ের চরিত্রকে একাত্ম করে দেখেছেন। নিজ সমাজব্যবস্থার স্বরূপ উদঘাটনে তলস্তয়ের দেনা স্বীকার করতে গিয়ে বিপ্লবী প্রলেতারীয় লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি লিখেছেন : “প্রিন্স নেখলিউদভ ৬০ বছর ধরে রাশিয়ার বুকে ঘুরে বেড়িয়েছে। ৬০ বছর ধরে ধ্বনিত হয়েছে সুকঠোর ন্যায়ের কণ্ঠস্বর, উদঘাটন করেছে সকলের এবং সবকিছুর স্বরূপ। আমাদের বাদবাকি সমস্ত সাহিত্যসৃষ্টি মিলে রুশ জীবনের যতটা বর্ণনা করেছে প্রায় ততটাই বর্ণিত হয়েছে এতে।”


বার্তা২৪.কম-এর শিল্প-সাহিত্য বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]


কিন্তু “পুনরুজ্জীবন”-এর অন্বিষ্ট শুধু সমাজব্যবস্থার উত্তরণ নয়; একই সাথে এ হলো ব্যক্তির নৈতিকতার উজ্জীবন, পাপবোধ থেকে এক শুভ্র সমুজ্জ্বল পবিত্র বোধে উত্থান। তলস্তয় উপন্যাসের পরতে পরতে দেখিয়েছেন কী করে তৃপ্ত, ভোগী, সম্রাটের চাটুকার আমলাশ্রেণী, সেনা, পুলিশ বাহিনী ও নতজানু পুরোহিত শ্রেণী নিজেদের কর্তৃত্ব ও ভোগের প্রয়োজনে এই সর্বত্র-জারি বিচার, দণ্ডনীতি ও জমিদারী ব্যবস্থা চালু রেখেছে। প্রাসাদোপম গির্জায় খ্রিস্টধর্মের জাঁকালো আনুষ্ঠানিকতার মোড়কে ও মহামান্য সম্রাটের পৃষ্ঠপোষকতায় এই অন্যায্যতা ও পাপ নিয়ত সংঘটিত হয়ে চলেছে; কিন্তু তার জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনা ও পাপবোধ তো কোথাও নেই! উপন্যাসে নেখলিউদভ তথা তলস্তয়ের মূল জিজ্ঞাসা সেখানেই। তাঁর মতে মানুষ এই পাপাচারের উর্ধ্বে উঠতে না পারলে তার পুনরুত্থান সম্ভব নয়। ব্যাক্তির নৈতিক ও আত্মিক পরিশুদ্ধি না ঘটলে সামাজিক মুক্তির স্বপ্নও অলীক, অবান্তর। অবশেষে নিজেকে সব পাপাচার থেকে মুক্ত করে, খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাস স্থাপনের মধ্য দিয়ে নেখলিউদভ নিজেকে মুক্ত করার উপায় খুঁজে পায়।

“খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাস স্থাপনের মধ্য দিয়ে নেখলিউদভের নিজেকে মুক্ত করার উপায় খুঁজে পাওয়ার” জন্য তলস্তয় সুদীর্ঘ উপন্যাসে মাত্র একটি ক্ষুদ্র অধ্যায় ব্যয় করেছেন—বইটির শেষ অধ্যায়। আমার কাছে মনে হয়েছে বইটির শেষ অধ্যায় না থাকলেও বইটির যেন খুব ক্ষতি হতো না। লেখকও কি জানতেন সে-কথা? কেন না, মূল কাহিনী ও চরিত্রগুলির স্বাভাবিক পরিণতি লেখক আগের অধ্যায়েই যেন শেষ করেছেন। বইটি পাঠের পর প্যারিস রিভিউ, দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট, তলস্তয় রিসার্চ সেন্টারসহ নামজাদা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা ঘেঁটে দেখেছি—আরো অনেকে বইটির শেষ অধ্যায়টি কবুল করেননি; এ-ব্যাপারে আমার অভিমতের সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খেয়েছে দি ইন্ডিপেডেন্টের আলোচনা ।

২.
“পুনরুজ্জীবন” পড়তে পড়তে আমাকে বারবার খুঁচিয়ে মেরেছে যে-প্রশ্ন তা হলো, প্রায় একই বিষয় ও প্রেক্ষাপট নিয়ে আমাদের এখানে কেন এমন সাহিত্য রচিত হলো না! কেন আজও রচিত হলো না এই যে আমাদের বিশাল গ্রামীণ সমাজ, মুসলিম ধর্মীয় বিশ্বাসে ভীরু কৃষক শ্রেণী, [স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরও] তাদের ওপর চেপে-বসা শ্রেণীশোষণ, মোল্লাতন্ত্র আর তাদের দোসর উঁচুতলার সমাজ যারা কিনা একই ধর্মীয় বিশ্বাসে সামিল, কিন্তু নিজেদের কৃতকর্মের জন্য পাপবোধে এতটুকু কাহিল নয়—এইসব নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস? এই রকম একটা প্রশ্ন আত্মজিজ্ঞাসার মতো আমাকে নিয়ত খুঁচিয়ে মারে! “পুনরুজ্জীবন”-এর মতো এরকম একটা সহজ ও সাবলীল আলেখ্য আমাদের ভাষায়ও রচিত ও বহুলপঠিত হলে আমরা আপন দর্পণে দেখতে পেতাম নিজেদের চেহারা অর্থাৎ কে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আর তাহলে নিজেদের সমাজ সংস্কারের কাজটাও ঠিক কিভাবে শুরু হতে পারে তার একটা দিকনির্দেশনা পাওয়া যেত।

আবার পাশাপাশি এটুকু ভেবেও হতাশা বোধ করি—তাৎক্ষণিকতার এই যুগে এত বড় উপন্যাস লেখার দরকারই বা কী আর তার পাঠকই বা কোথায়—সমাজ সংস্কারের এজেন্ডা নিয়ে মিডিয়া তো আসর সরগরম রাখছেই। সত্যি বলতে কী, আমরা তো আর তলস্তয়ের যুগে পড়ে নেই! আমি না হয় প্রথম যৌবনের খোঁয়াড়িতে আটকে আছি বলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা গলাধকরণ করছি: রেসারেকশনে তলস্তয় পাতার পর পাতা ব্যয় করেছেন শুধু নেখলিউদভের মনোবিশ্লেষণে, প্রচলিত নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে তার সংঘাত ও সংশ্লেষের বর্ণনায়। প্রতিটি ঘটনা, দৃশ্য ও চরিত্রের জন্য লেখক ব্যয় করেছেন গভীর অভিনিবেশ, শ্রম ও নিষ্ঠা দিয়েছেন, প্রতিটি চরিত্রকে দিয়েছেন স্বতন্ত্র মর্যাদা। খুঁটিনাটি বর্ননায় তা এমনই জীবন্ত ও বাস্তবানুগ যে একলহমায় তারা এক শতাব্দী পাড়ি দিয়ে, তাদের খিটিমিটি নামের বানান উপেক্ষা করেও কী দিব্যি আমার পড়ার টেবিলের চারিধারে সমবেত হয়েছে আর ঝুঁকে পড়েছে আমার দিকে : “আজি হতে শতবর্ষ পরে, কে তুমি...!”

কিন্তু কারই বা এমন দায় পড়েছে আজকাল অমন ভক্তির—সে-কথার অকাট্য প্রমাণও যে আছে একটা! কিছুকাল আগে এক পাঠিকা বান্ধবীকে পড়ার জন্য ধার দিয়েছিলাম বইটি (অখণ্ড সংস্করণ)। তিনি ক’দিন নেড়েচেড়ে ফেরত দিতে গিয়ে লঘুস্বরে বলছিলেন : আচ্ছা, বইটির একটি সংক্ষিপ্ত রূপও তো লেখক লিখে যেতে পারতেন। এতে সময় যেমন বাঁচত, আমরাও মহান লেখকের সান্নিধ্য সুখ পেতাম!

এই রকম অকাট্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আমার আক্ষেপ থেকেই যায় : আমাদের সাহিত্যে “রেসারেকসন” বা “পুনরুজ্জীবন”-এর মতো একটি মহাগ্রন্থের অভাবে নিজেদের পাপবোধ থেকে আমরা কত দূরেই না আছি!

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীতকিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান

ছবি: সংগৃহীতকিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিষ্ঠ চিকিৎসক, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ্ব ডা. এ. এ. মাজহারুল হক এবং রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ ছয় কীর্তিমানকে সম্মাননা প্রদান করেছে।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকালে কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান।

এতে সম্মাননা বক্তৃতা করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ।

বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

অনুষ্ঠানে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননাপ্রাপ্তদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের আইনপেশার কৃতীজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হক।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ পেয়েছেন ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, প্রবীণ সাংবাদিক মু আ লতিফ ও আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন এবং প্রয়াত শাহ আজিজুল হকের পরিবারের পক্ষে ভাতিজা এডভোকেট শাহ আশরাফ উদ্দিন দুলাল ও মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবীর পক্ষে তার মেয়ে গৌরি রাণী দেবী সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।

 এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বাদল রহমান।


অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলু, বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সমাজকর্মী আবদুর রহমান রুমী, সাংবাদিক শেখ মাসুদ ইকবাল, সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সম্মননা অনুষ্ঠান শেষে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ২০১৫ সাল থেকে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে।

;

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্য রক্ষায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা রয়েছে: ড. মাহফুজ পারভেজ



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

  • Font increase
  • Font Decrease

বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন'র নির্বাহী পরিচালক ড. মাহফুজ পারভেজ বলেছেন, 'বাংলার গৌরবদীপ্ত জনপদ কিশোরগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিকাশ ও রক্ষায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা রয়েছে।'

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকালে কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম স্মরণ, দোয়া ও ইফতার মাহফিল এবং আনুষ্ঠানিকভাবে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি সম্মাননা বক্তব্য প্রদানকালে আরো বলেন, 'অবক্ষয়, অন্ধকার ও অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে আলোকিত সমাজ গঠনে ইতিহাস-ঐতিহ্যের শিক্ষা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।'

বরিষ্ঠ চিকিৎসক, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ্ব ডা. এ. এ. মাজহারুল হক এবং রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক স্থানীয় ছয় কীর্তিমানকে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার।

মাজহারুন-নূর সম্মাননা অনুষ্ঠান

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান। এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বাদল রহমান।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলু, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি আবদুর রহমান রুমী, সাংবাদিক শেখ মাসুদ ইকবাল, সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, মহিলা পরিষদ সম্পাদক আতিয়া রহনান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এতে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও নানা শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, মহিলা পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিক, সাহিত্য সম্পাদক বাবুল রেজা, ছড়াকার সামিউল হক মোল্লা, ঈসাখাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান বদরুল হুদা সোহেল, কিশোরগঞ্জ নিউজ প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননাপ্রাপ্তদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের আইনপেশার কৃতীজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হক।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ পেয়েছেন ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, প্রবীণ সাংবাদিক মু আ লতিফ ও আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন এবং প্রয়াত শাহ আজিজুল হকের পরিবারের পক্ষে ভাতিজা এডভোকেট শাহ আশরাফ উদ্দিন দুলাল ও মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবীর পক্ষে তার মেয়ে অধাপিকা গৌরি রাণী দেবী সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।

সম্মননা অনুষ্ঠান শেষে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে স্মরণ সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ইফতারের পূর্বে দোয়া পরিচালনা করেন জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, অ্যাডভোকেট গাজি এনায়েতুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন সংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু। অনুষ্ঠানে স্পন্সর হিসাবে যুক্ত ছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড।

প্রসঙ্গত, ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ২০১৫ সাল থেকে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

;

কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান



কনক জ্যোতি,  কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান

কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান

  • Font increase
  • Font Decrease

আন্তর্জাতিক কবিতা দিবসে ছায়ানট (কলকাতা) এবং লা কাসা দে লোস পলিগ্লোতাস যৌথভাবে আয়োজন করে একটি কবিতা সন্ধ্যার। অনুষ্ঠানটি হয় কলকাতায় অবস্থিত একটি স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট তাপাস্তে - তে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ছায়ানট (কলকাতা)-এর সভাপতি সোমঋতা মল্লিক এবং পরিকল্পনা করেন  লা কাসা দে লোস পলিগ্লোতাস-এর প্রতিষ্ঠাতা শুভজিৎ রায়।

এই বিশেষ দিনে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করা হয় বাংলা এবং স্প্যানিশে। বিশ্ব কবিতা দিবসে কবিতার ভাষায় এক হয়ে যায় বাংলা এবং স্পেন। এক করলেন কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা এবং স্প্যানিশ দুই ভাষাতে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে এই আয়োজন।

বাংলায় কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করেন সৌভিক শাসমল, তিস্তা দে, দেবলীনা চৌধুরী এবং স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ ও পাঠ করেন শুভজিৎ রায়। অনুষ্ঠানটি দর্শকদের প্রশংসা লাভ করে।

বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষ্যে ছায়ানট (কলকাতা) এবং কৃষ্ণপুর নজরুল চর্চা কেন্দ্র যৌথভাবে আরও একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শরৎচন্দ্র বাসভবনে। প্রায় ৫০ জন কবি এবং বাচিক শিল্পী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম সহ বিভিন্ন কবির কবিতা এই অনুষ্ঠানে শোনা যায়।

;

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;