বৃষ্টিবিহীন নীলনদে প্লাবনের রহস্য
লাল ফরিঙ
অনেকটা পথ হেঁটেছো,
কিছুটা ক্লান্ত শরীর এলিয়ে রেখেছো
পাম বনে, মৃত শিমুলের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে—
তোমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।
পাম বনে তখন লাল ফরিঙদের পিকনিক চলছে
একটা লাল ফড়িঙ হাসতে হাসতে তোমার হাতের ওপর এসে বসল।
অথচ,
তুমি তখন ক্লান্ত, ভীষণ ঘুম পাচ্ছে তোমার
তবু তুমি হাত নাড়ছো না, তুমি হাত নাড়ছো না কারণ ভয় পাচ্ছো, তুমি ভয় পাচ্ছো—
হাত নাড়লেই লাল ফড়িঙটা উড়ে চলে যাবে
মিজোরাম মাউন্টেইন রেঞ্জে।
অদৃশ্যতা
যদি অদৃশ্য করার ক্ষমতা থাকে
তবে তাই করো
দৃশ্যে আমি বড় বেমানান
চিরহরিৎ অরণ্যে
আমি হেঁটে যাচ্ছি দৃশ্যের ভেতর—
বর্ষায় দু’ধারে উঁচু উঁচু বৃক্ষ,
গর্জন, চাপালিশ, ময়না আর তেলসুর
ঘন পত্র-পল্লবের আড়ালে ফোটে যদি
পারিজাত মান্দার
আর
চাঁদোয়া ছুঁয়ে যায় ছাতিমের ঘ্রাণ—
সব তো হয়ে যায় বলা
তোমার চোখের ভেতর চকমকি পাথর
যদি পুড়িয়ে ফেলতে পারো
তবে তাই করো
দৃশ্যে আমি বড় বেমানান।
প্লাবনের দেবতা
হাপিকে আমি বলেছি,
তিস্তা ধরলা আর করতোয়ার কথা;
বলেছি—
আষাঢ় মাসের একরাতে ভেসে গেছে
বিনুখালার বুকের শিশু আর গাভীন গরুর ওলান
হাপি জানালো
বৃষ্টিবিহীন নীলনদে প্লাবনের রহস্য
সে লুকিয়ে রেখেছে প্রতিটি নারীর বুকে
আর
সেখান থেকেই শুরু হয়েছে পলির বিস্তার।
ঈশ্বরের হাত
আয়নার ওপারের ভয়ার্ত অনুভূতি আমি কখনোই
কবিতায় রূপান্তরিত করতে পারিনি
তাই স্বপ্নে দেখি পুরু দেয়াল
খসে পড়া পলেস্তরা;
পুরাতন গির্জা অবলীলায় ঢুকে পড়ে কুয়াশার গর্তে—
আমি হাতড়ে বেড়াই ঈশ্বরের হাত
আমার শৈশব আটকে থাকে ফেনিল আবর্তে;
শুকনো পাতাদের মূকাভিনয়ে—
পাপড়ি মেলে এক একটি নক্ষত্রের রাত
আমি ছুঁয়ে দেখি নীলাভ ঈশ্বরের হাত।
একদিন
একদিন অনেক রাতে
যখন সানমারের বিশাল দালানটা
উঠে গিয়েছিল আকাশের অনেক উপরে—
দ্বিতল বাড়ির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে
তুমি সে দালানের নবম তলায়
দুটি শিশুর কান্না শুনেছিলে
তারা কাঁদছিল কারণ তারা বুঝে গিয়েছিল—
একদিন একটা ম্যাজিক কার্পেটে চড়ে
তারা অন্য এক দালানে উড়ে যাবে,
আর ঘুমাবে অন্য কারো পাশে
তাদের বৃদ্ধা মায়ের দিন কাটবে
অ্যালঝেইমার রোগীর প্রেসক্রিপশান দেখে
বাবা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে
মনে করতে পারবেন না পাশের বাড়িটা তাঁর না কি
পাশের বাড়ির আগের বাড়িটাই!
তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবেন—
এখন কি তার বাড়ি ফেরা উচিত না কি অন্য কোথাও!
ইতিহাসে পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায়
শিশুদুটি ফুঁপিয়ে ওঠার আগেই দৃশ্যকল্প সরে যায়;
আর তুমি
কামরার ভেতরে ঢুকে আয়নার সামনে দাঁড়াও।