ঝুঁকির মুখে ঢাবির ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্য
দেশের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ স্থাপনারগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটির ঠিক পেছনের অংশে থাকা একটি ইউক্যালিপটাস গাছের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে এটি।
শিকড় বড় হওয়ায় তা ফেটে গিয়ে এখন পুরো ভাস্কর্যটি ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠা এ ভাস্কর্যটি, সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ভাস্কর্য থেকে প্রায় তিন ফুট দূরত্বে থাকা গাছটির চারপাশের বেষ্টনী ভেঙে গেছে।
ভাস্কর্য বিভাগের অনারারি অধ্যাপক মো. হামিদুজ্জামান খান বলেন, যে কোনো স্থাপনার পাশেই বড় গাছ থাকা ঝুঁকিপূর্ণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভাস্কর্যের বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিমা হক মিতু ও বুয়েটের একজন বিশেষজ্ঞ এসে ভাস্কর্যটি দেখে যান। পরে তারা ইউক্যালিপটাস গাছটি কেটে ফেলার পরামর্শ দেন।
ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিমা হক মিতু বলেন, সম্প্রতি অপরাজেয় বাংলা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার পর আমরা সেখানে কাজ করতে যাই। কাজ করতে গিয়ে পড়ি বিপাকে। ইউক্যালিপটাস গাছ এক ধরনের কষ নিঃসরণ করে। এ কষ এসে পড়ে অপরাজেয় বাংলার ওপর। যার কারণে ভাস্কর্যটির উপরের অংশজুড়ে কালো কালো দাগ হয়ে পড়েছে এবং এ দাগ কোনোভাবে মোছা সম্ভব হয়নি শ্রমিকদের পক্ষে। এভাবে পড়তে থাকলে একসময় কষগুলো ভাস্কর্যের ভেতরে চলে যাবে, কষের বিক্রিয়ার কারণে ভাস্কর্যটি দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তা-ছাড়া ভাস্কর্যটির নিচে এবং ইউক্যালিপটাস গাছের গোড়ার অংশে বড় জায়গাজুড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ গাছের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আরবারি কালচার সেন্টার। সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, স্থাপনার পাশে বড় গাছ সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে গাছের বয়স যখন বাড়ে তখন মানুষের মতো তার কর্মক্ষমতাও কমে যায়। তখন সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। ভাস্কর্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা ভালো বলতে পারবেন। আমি ইউক্যালিপটাস গাছটাকে নিয়ে বলি। এই গাছের ভালোও আছে খারাপও আছে। খারাপ দিক হলো এটা মাটি থেকে তাড়াতাড়ি বড় হয়। এর ফলে তাকে তাড়াতাড়ি খাবার তৈরি করতে হয়। এ কারণে গাছটার নিচ থেকে প্রচুর পানি নিতে হয়। পানি এমনি এমনি ওঠে না। পানি পাতা দিয়ে রস আকারে ওঠে। কারণ মাটিতে পানি আছে বেশি, গাছে কম আছে। ফলে বেশি জায়গা থেকে কম জায়গায় পানি ওঠে। এ কারণে মরুকরণ হয়। আশেপাশের অন্য গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অধ্যাপক সাহা মনে করেন, ইউক্যালিপটাস একটা দ্রুত বর্ধনশীল গাছ। সাধারণত যেসব গাছ বেশি বড় হয় ভাস্কর্য বা স্থাপনাগুলোর আশেপাশে এ ধরনের গাছ না রাখাটাই ভালো।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা জানায়, মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কোনো ধরনের ঝুঁকিতে না পড়ুক, তা আমরা কোন ভাবেই চাই না। একইসঙ্গে স্থাপনাটি আরও বেশি পরিষ্কার করে রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন, বলে মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গাছের বিষয়ে আরবারি সেন্টারের মতামত নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এটার ক্ষেত্রেও সেন্টারের মতামত জানতে চাওয়া হবে।