নাগরিক জীবনে দু-দণ্ড শান্তি দিবে শেকৃবির প্রকৃতি
রাজধানী ঢাকার প্রশস্ত রাস্তায় ধেয়ে চলা গাড়ির বহর কিংবা প্রচণ্ড ব্যস্তময় শহুরে জীবনের তিক্ততা থেকে মুক্তি দিতে পারে ৮২ একর জায়গা জুড়ে বিস্তীর্ণ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এই শহরের ধুলায় আবৃত সবুজ বিহীন অট্টালিকা দালানের বিস্তৃতির বিপরীতে গ্রামীণ আবহে খুবই মনোমুগ্ধকর অনুভব দিতে পারে এই ক্যাম্পাস। তাইতো ব্যস্তময় জীবনের ক্লান্তি দূর করতে, একটু প্রশান্তির উদ্দেশ্যে কিংবা একটু নিরিবিলি পরিবেশে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার প্রত্যয়ে মানুষ ছুটে আসেন এ্রখানে। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীর বাইরেও প্রতিদিন এই ৮২ একরে জড়ো হন অসংখ্য মানুষ।
তবে কিছুকাল আগেও পরিত্যক্ত জঞ্জালে আবৃত বিভিন্ন জায়গা, ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনের সামনে গরুর খামার, অপরিচ্ছন্নতায় আচ্ছন্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। সৌন্দর্যবর্ধন কমিটির ভিন্নধর্মী কিছু পদক্ষেপ এবং পরিত্যক্ত ভবন ভেঙ্গে জায়গা উন্মুক্তকরণ কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশগত পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশ পরিবর্তন ও কাঠামোগত উন্নয়ে ভূমিকা রাখা বিভিন্ন প্রকল্প ও কার্যক্রমের বিষয়ে বার্তা২৪ এর সঙ্গে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীবৃন্দ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল আহমেদ বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসে প্রথম যখন এসেছি ২০১৯ সালে ক্যাম্পাসের এলোমেলো পরিবেশ, অপরিচ্ছন্নতা, পরিত্যক্ত অনেক ভবন ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। বাইরে থেকে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা কেউ যখন আমার ক্যাম্পাসের অপরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কথা বলতো তখন কিছুটা খারাপ লাগতো। তবে বর্তমান সময়ে পরিবেশগত ব্যাপক পরিবর্তন সাধন হয়েছে। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে এলেমেলো ও পরিত্যক্ত যেসব বাসাবাড়ি ছিল আগে, যেগুলো দেখতে অনেকটা ভূতের বাড়ি বলে মনে হতো; এসব পরিত্যক্ত বাড়িগুলো ভেঙে্গ ফেলে জায়গা উন্মুক্ত করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রেখেছে। তবে পরিচ্ছন্নতা আরেকটু বৃদ্ধি করলে এবং রাস্তার দুইপাশে থাকা গাছগুলো না কাটলে হয়তো এই ক্যাম্পাস আরও আকর্ষনীয় হয়ে উঠতো। তবে সামগ্রিক পরিবেশগত পরিবর্তন ক্যাম্পাসকে মনোরম করছে। এর ফলে বাইরের মানুষদেরও ক্যাম্পাসে আনাগোনা বেড়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত এএসভিএম অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শীতকালীন সময়ে কুয়াশা আচ্ছন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম যখন প্রবেশ করি তখন মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে প্রথম মায়া অনুভব করি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। রাস্তার দুই ধারে সারি সারি গাছের বহর না থাকলেও পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে অসংখ্য সবুজের বিস্তার এবং এর মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলা আর শীতকালীন কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ভিন্নরকম এক অনুভূতি তৈরি করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু সুন্দর জায়গার মধ্যে ভিন্নধর্মী শহীদ মিনার, স্বাধীনতা স্তম্ভের সামনে আড্ডা দেওয়ার এক মনোরম পরিবেশ কিংবা স্টাফ কোয়ার্টার মসজিদের সৌন্দর্য আকৃষ্ট করেছে আমাকে। তবে স্টাফ কোয়ার্টার মসজিদ পার হয়ে কিছুটা অগ্রসর হয়ে যখন দেখি ক্যাম্পাসের অনেকটা জায়গায় গড়ে উঠেছে বস্তি তখন কিছুটা অবাক লাগে।’
ক্যাম্পাসের পরিবেশগত পরিবর্তনে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সৌন্দর্য বর্ধন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন,যেকোন সময়ের তুলনায় ক্যাম্পাসের বাহ্যিক পরিবেশ এখন অনেক বেশি নান্দনিক করে তোলা হয়েছে।বিভিন্ন জায়গায় মাটি ফেলে সমান করা হচ্ছে। কোন কোন স্থানে নতুন করে প্রথমবারের মতো বাগান সৃষ্টি করা হয়েছে। টিএসসি’র সামনের জায়গাটিতে মুক্তমঞ্চসহ সবুজায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।তাছাড়া পুরোনো ভবনগুলো অনেকদিন ধরেই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। দু’পাশে হলের মাঝখানে এসব ভবন বেমানান হয়ে পড়ে ছিল।পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও মুক্ত আলো, হাওয়া যুক্ত একটি অঙ্গন গড়ে তোলার জন্য এগুলো ভাঙ্গার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যা ক্যাম্পাসের পরিবেশগত পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে।
ক্যাম্পাসের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বৃদ্ধি ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আমরা সৌন্দর্য বর্ধনের নিমিত্তে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলমান। কর্মচারিরা পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় নিয়মিত কাজ করছে। কিন্তু সকলের সহযোগিতা ছাড়া ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখা দুস্কর।অনেকেই ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলেন।পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় আগত অতিথি, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রয়োজন।