‘গত পাঁচ বছর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি রাষ্ট্র’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হক বলেছেন, আজকের দিনটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও স্বাধীনতা দিবস। বিগত ৫ বছর আমরা এখানে আসতে পারিনি। এই বিশ্ববিদ্যালয় ৫ বছর পরাধীন ছিল। পরিস্থিতি এমন ছিল যে দেখে মনে হয়েছিল রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আরেকটি রাষ্ট্র।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। যদি তা না হতো তবে ১৫ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটতো না। বঙ্গবন্ধুর উদারতার সুযোগে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি নিজেদের এমনভাবে জায়গা করে নিয়েছে যে তারা অনায়াসে ১৫ আগস্টের মতো হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পেরেছে। এবং পরবর্তী ২১ বছর ধরে তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজেদেরকে সুসংহত করেছে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য হিসেবে আপনি জানেন যে কমিশন থেকে বারবার অবৈধ নিয়োগ বন্ধ করার কথা বলা হলেও। অবৈধ নিয়োগ চলছিল। এমনকি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও নির্দেশনা এসেছিল। কিন্তু কোন কিছু তোয়াক্কা না করে সদ্য সাবেক উপাচার্য অবৈধ নিয়োগ দিয়েছেন। বিভাগ বলেছে, শিক্ষক লাগবে না কিন্তু প্রশাসন বলছে তাদেরকে পড়ানোর জন্য শিক্ষক লাগবে।
আব্দুল হক উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতার ঘোষক কে? পাঁচ বছর পরাধীনতার গ্লানি শেষে কারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে উদ্ধার করেছে? এই ঘোষক নির্ধারণের সময় এসে গেছে। আপনার কাছে (উপাচার্য) অনেকে গিয়ে বলবে যে আমি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছি। ইতিমধ্যে সেই লোকগুলো আপনার আশেপাশে এসেছে। ঘোরাঘুরি করছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য, শিক্ষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য যখন এই শিক্ষক সমিতি মানববন্ধন করে, তখন প্রশাসনের পক্ষের একদল শিক্ষক এসে অবৈধ মানববন্ধন মানি না বলে মানববন্ধন করেছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন পর্ষদে দায়িত্ব পালন করছে, একেকজন ৭-৮টি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য। শিক্ষক সমিতির সদস্য হয়েও শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে যা কিনা সমিতির মূলনীতির পরিপন্থী। এখন আমরা বলতে চাই না যে আপনি আপনার প্রশাসন পরিচালনার জন্য আমাদেরকে পছন্দ করুন। আমরা বলতে চাই শিক্ষক সমিতি কোনো ব্যক্তির পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেনি। আপনি সবই জানেন। প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে উদ্ধার করতে গেলে আপনার মতো একজন লোক দরকার। আপনি এই দায়িত্ব পেয়েছেন। এতদিন ধরে যাদের কারণে অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে তাদেরকে নিয়েই যদি আগের মতো সবকিছু শুরু করেন এমন যেন না হয়। আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনি একটি গভীর খাদের মধ্যে আছেন। গত পাঁচ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় একট গভীর খাদে নিমজ্জিত করা হয়েছে। সেখান থেকে উদ্ধার করতে হলে আপনার আশেপাশে যারা এসে ভীড় করছে তাদেরকে সরাতে হবে। এগুলো সরিয়ে একটা সিঁড়ি করে আপনাকে সমতলে আসতে হবে। যদি মনে করেন আপনি এখনই সমতলে আছেন তবে সেটা ভুল করছেন।