প্রশাসনের রোষানলে চাকরি খোয়ালেন জবির পেশ ইমাম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমামকে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগে চাকরিচ্যুত করেছে জবি প্রশাসন। তাকে ঈদের আগে পরিবারসহ সরকারি বাসস্থান ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে ইমামের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগই মিথ্যা বলে স্বীকার করেছেন ঘটনায় সম্পৃক্ত মেয়েটি।
ঘটনার সূত্রপাত, গত ১৮ মে রাতে। শারীরিক অসুস্থতা থাকায় ভুলবশত এশার নামাজ আদায় শেষে একজন ছাত্রী জবির কেন্দ্রীয় মসজিদে মেয়েদের নামাজের স্থানে ঘুমিয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় রাতে মসজিদের পাহারাদার তালা লাগাতে গেলে ওই মেয়েকে দেখতে পান। পরে মসজিদের পাহারাদারের স্ত্রী মসজিদের ভেতর থেকে তাকে বের করে নিয়ে আসেন। তবে ইমাম বা পাহারাদার কেউই মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করেননি।
এ বিষয়ে ইমামের সাথে মেয়েটিকে জড়িয়ে অনেক ধরণের কুরুচিপূর্ণ অভিযোগ তুলা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ইমামকে ইমামতি করতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করা হলে মেয়েটি জানান, ঘটনাটি ছিলো ১৮ মে রাতে প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে। আমি ওই দিন মসজিদে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরবর্তীতে আমাকে মসজিদের দায়িত্বে থাকা একজন দেখতে পেলে তিনি তার সাথে একজন মহিলা (হয়তো ওনার স্ত্রী হবে) আমাকে ওই রুম থেকে বের করে আনেন। ইমাম সাহেব তখন ভেতরেই প্রবেশ করেননি। পরে বাইরে আসলে ঐখানে থাকা অবস্থায় ইমাম সাহেব প্রক্টর স্যারকে কল দেন। সেখানে প্রক্টর স্যারের সাথে মোবাইলে আমার কথা হয়। প্রক্টর স্যার আমাকে বলেন, তুমি তোমার হলের হাউজ টিউটরকে কল দাও। পরবর্তীতে আমি আমার হাউজ টিউটরকে কল দিলে উনি বলেন, তুমি হলে চলে আসো।
সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নিজেও গতরাতে নিউজটা দেখেছি। একটা সিম্পল ইস্যুকে অনেক বড় করে ফেলা হয়েছে। ঐখানে তেমন কিছুই ঘটেনি। ইমাম সাহেবের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা।
এর আগে, জবির প্রক্টর অভিযোগ করেন তিনি ঘটনাটি জানার পরে নাকি সেখানে একজন সহকারী প্রক্টর পাঠিয়েছেন। তবে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে মেয়েটি বলেন, আমাকে এমন কোনো বিষয়ে নিশ্চিত করা হয় নাই যে সেখানে সহকারী প্রক্টর আসছেন। আমি সরাসরি হলে চলে গেছি। এছাড়াও প্রক্টর অফিস থেকে অভিযোগ তুলা হয় যে, ইমাম সাহেবকে নাকি ঐ ঘটনা জানার পরে প্রক্টর নিজেই কল দিয়েছিলেন এবং ইমাম নাকি মেয়েটাকে ফোনের ওই পাশ থেকে কথা শিখিয়ে দিচ্ছিলো। এ বিষয়ে মেয়েটি বলেন ইমাম সাহেব নিজেই প্রক্টরকে কল দিলে আমি স্যারের সাথে কথা বলেছি। আর ইমামের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ তুলা হচ্ছে সব মিথ্যা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটি দ্রুত বিস্তারিত বিষয়টি তুলে আনবে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক লুৎফর রহমান বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় বিষয়টি তদন্তের জন্য দাফতরিক চিঠি পেয়েছি। এখন আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন তৈরি করব। তবে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ভেতরে অনুষ্ঠিত এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে জবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম পুরুষদের নামাজের অংশে অন্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষকদের নিয়ে পুরুষদের সামনে বক্তৃতা পেশ করেন। বক্তব্য দেওয়ার আগে উপাচার্যকে মসজিদে ভেতরে এভাবে বক্তব্য না দিতে অনুরোধ জানান ইমাম। আর এতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অনেকেই এই ঘটনায় ইমামের ওপর ক্ষুদ্ধ হন। ওই ইমাম বিগত ১৫-১৬ বছর এই মসজিদে ইমামতি করেন। তবে কখনো উনার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠেনি।