কারমাইকেলের শতবর্ষ পূর্তিতে আসেননি আমন্ত্রিতরা
রংপুর অঞ্চলের অবহেলিত মানুষকে আলোকিত করার প্রথম বাতিঘর সেখানকার স্থানীয় কারমাইকেল কলেজ। এ কলেজের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে শত শত খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বের নাম। যারা বেশ সুনামও কুড়িয়েছেন দেশ-বিদেশে। হাজারো শিক্ষার্থীর প্রাণের স্পন্দন এ কলেজ ১০৩ বছর অতিক্রম করে ১০৪-এ পা রেখেছে। ২০১৬ সালে শতবর্ষ পূর্তি উৎসবের আয়োজন হবার কথা থাকলেও নানা জটিলতার কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি।
সব জটিলতাকে কাটিয়ে চলতি বছরের ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর দু’দিনব্যাপী শতবর্ষ পূর্তি উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। হঠাৎ করে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে। এরপরও বহু আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রাণের ক্যাম্পাসের টানে এসেছিলেন নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিশেষ অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা আসবার কথা থাকলেও কেউ আসেননি। এতে করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, খাবার না পেয়ে নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীরা কয়েক দফায় বিক্ষোভ করে। শুধু তাই নয় অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অগোছালো আয়োজনে বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতারা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিবকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন। পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল না কোনো অতিথি। শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত উপকরণ (টি-শার্ট, ব্যাগ) ছিল নিম্নমানের, শহরে নামকরা হোটেল থাকলেও কনফেকশনারির খাবার সরবরাহ করা হয়। অধ্যক্ষের ‘একগুঁয়েমি’ ও উদযাপন কমিটির দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরিফুল নামের এক শিক্ষার্থী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘কোনো অতিথি ছাড়া হয়ে গেল কারমাইকেল কলেজের শতবর্ষ পূর্তি। ধন্যবাদ শিক্ষক পরিষদ ও কলেজ শাসনকে অতিথি ছাড়াই আমাদেরকে কপাল পোড়া করার জন্য। শুধুমাত্র টাকাকে হালাল করার জন্য এ প্রোগ্রাম। যদি কলেজ প্রশাসন কমিটির সব কাজ সব কমিটিকে মানভাবে ভাগ করে দিত, তাহলে আজ খাবার নিয়ে মিছিল করতে হতো না। নামমাত্র প্রোগ্রামে শিক্ষক মহোদয় বুঝিয়ে দিলেন কীভাবে কালোকে সাদা করা যায়।’
২০০৭-০৮ সেশনের শিক্ষার্থী নুর আলম সিদ্দিকী বার্তা২৪.কম-কে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এর আগে অনুষ্ঠানটি হওয়ার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলাম যে হউক। কিন্তু আজ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে মনে হচ্ছে এরকম দায়সারা অনুষ্ঠান না হওয়াই ভালো ছিল। পুরো অনুষ্ঠানকে ঘিরে যে স্বপ্ন ছিল তা কল্পনাতেই রয়ে গেল।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক শিক্ষক বার্তা২৪.কম-কে জানান, অধ্যক্ষের একক সিদ্ধান্ত ও একগুয়েমিতার কারণে আজ এত বিশৃঙ্খলা। দফায় দফায় উদযাপন কমিটির সদস্য পরিবর্তন, অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূতভাবে দরপত্র আহ্বান, টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে জটিলতাসহ নানা সমস্যাকে দায়ী করছেন ওই শিক্ষক।
শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মো. আখতারুজ্জামান চৌধুরী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে আসার কথা ছিল। তারা রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেনি।’