‘কটূক্তি ও গ্রেফতার’ কোনটিই সমর্থন করেন না প্রগতিশীল শিক্ষকরা
‘প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে কটূক্তি এবং তার জেরে দায়েরকৃত মামলায় মধ্যরাতে আবাসিক কোয়ার্টার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে গ্রেফতার’ দু’টির কোনটিই সমর্থন করে না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ।
শুক্রবার (১৯ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনলাইনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের স্টিয়ারিং কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বার্তা২৪.কম-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সিদ্ধান্তের বিস্তারিত লিখিত আকারে গণমাধ্যমে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান বলেও জানান তারা।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৭ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে রাবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারি অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে রাত ৯টার দিকে নগরীর মতিহার থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি ধারায় মামলা হয়।
মামলার এজহারে বাদীর অভিযোগ, গত ১, ২ ও ৫ জুন কাজী জাহিদুর রহমান তার ফেসবুকে পৃথক তিনটি স্টাটাস দেন। সেখানে তিনি মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে কটূক্তিমূলক মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করেন বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়।
এদিকে, আওয়ামীপন্থী শিক্ষক জাহিদুর রহমান গ্রেফতারের পর থেকে প্রগতিশীল শিক্ষকদের অবস্থান কী তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। শিক্ষক সমিতির অবস্থান কী তা নিয়েও আলোচনা তোলেন শিক্ষকরা। এর মধ্যেই শুক্রবার আহ্বায়ক কমিটির বৈঠক করলেন প্রগতিশীল শিক্ষকরা।
তবে বৈঠকের পর যোগাযোগ করা হলেও সংগঠনটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মজিবুর রহমান লিখিত বিবৃতি ছাড়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তাঁর মতে, ‘মৌখিকভাবে বললে- বিবৃতির তথ্য বিকৃত হওয়ার শঙ্কা থাকে।’
তবে আজ সকালে বৈঠক হলেও আজকের মধ্যেই বিবৃতি দিতে পারবেন না কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি অধ্যাপক মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আগে তো আমরা এক জায়গায় বসে আলোচ্যসূচি ঠিক করে সিদ্ধান্তগুলো লিখে নিতাম। কিন্তু অনলাইনে হওয়ায় এখনও লেখা হয়নি। লিখতে তো সময়ের ব্যাপার আছে। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তাই কখন যে বিবৃতি লিখিতভাবে দিতে পারবো তা বলতে পারছি না।’
তাঁর এমন বক্তব্যের পর স্টিয়ারিং কমিটির অন্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তারা বৈঠকের বিষয়ে জানান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারি অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমানের গ্রেফতার ছাড়াও সাম্প্রতিক অনেক বিষয় নিয়ে মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল- কাজী জাহিদুরকে গ্রেফতার ইস্যু।
নাম প্রকাশ না করে একজন সদস্য বলেন, ‘বৈঠকে প্রথমে কাজী জাহিদুর রহমানের স্টাটাসগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে তিনি যেসব কথা লিখেছেন, তা শিক্ষকসুলভ নয় বলে সবাই একমত হন। ফলে জাতীয় একজন নেতাকে নিয়ে শিক্ষকের কটূক্তি গ্রহণযোগ্য নয় বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’
স্টিয়ারিং কমিটির আরেকজন সদস্য বলেন, মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আবাসিক কোয়ার্টারে ঢুকে পুলিশ দ্বারা শিক্ষক গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়। কমিটির সদস্যরা এ নিয়ে মতামত দেন। অধিকাংশ শিক্ষকই ঘটনাটি ‘খারাপ নজির’ মন্তব্য করেন। ফলে মধ্যরাতে গ্রেফতারের বিষয়টিও সমর্থনযোগ্য নয় বলেও সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়।